মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
গুয়াদিয়ানা নদীর তীরবর্তী একটি ছোট্ট শহর মের্তোলায় একটি ডুমুর গাছের নীচে পাওয়া মৃৎশিল্পের টুকরো দিয়ে এটি শুরু হয়েছিল। প্রত্মতাত্তি¡ক ক্লোদিও টরেস ১৯৭৬ সালে ঐতিহাসিক আন্তোনিও বোর্জেস কোয়েলহোর সাথে প্রথম পরিপাটি শহরে গিয়েছিলেন। তারপরে লিসবন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যযুগীয় ইতিহাসের প্রভাষক, টরেসকে তার এক শিক্ষার্থী মের্তোলাতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। টরেস এবং কোয়েলহো শহরের মধ্যযুগীয় দুর্গের কাছে কিছু ইসলামিক সিরামিকে হোঁচট খেয়েছিলেন। ৮১ বছরের টোরেস খনন শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৭৮ সালে তিনি মের্তোলার প্রত্মতাত্তি¡ক ক্ষেত্রটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরিবারের সাথে শান্ত শহরে চলে আসেন।
গত ৩০ বছর ধরে প্রত্মতাত্তি¡ক সাইটে কর্মরত গবেষক ভার্জিলিও লোপেস ব্যাখ্যা করেন, মের্তোলা আমাদের যুদ্ধ দেখায় না। ‘এটি আমাদের দেখায় লোকেরা কীভাবে একসাথে বাস করত। এই শিলার নীচে সহাবস্থান সম্পর্কে এই অসাধারণ ধারণা রয়েছে’। মধ্যযুগীয় দুর্গের পাশে অশ্বচালনা খিলানযুক্ত একটি গির্জা রয়েছে, একটি গোলাকার অভ্যন্তর এবং একটি মিহরাব একটি মসজিদের প্রাচীরের অর্ধবৃত্তাকার স্থান যা প্রার্থনার দিক-নির্দেশ করে। প্রত্মতাত্তি¡করা একটি ইহুদি স¤প্রদায়ের চিহ্ন খুঁজে পেয়েছিলেন এবং আবিষ্কার করেছিলেন যে, চার্চটি যেখানে একসময় রোমান গির্জা এবং পরে একটি মসজিদ ছিল তার উপরে দাঁড়িয়ে আছে।
মের্তোলার প্রত্মতাত্তি¡ক ক্ষেত্রের গবেষক এবং এভোরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যযুগীয় ইতিহাস ও প্রত্মতত্তে¡র অধ্যাপক সুসানা মার্টিনেজ ব্যাখ্যা করেছেন, ‘১৫ শতাব্দীর শেষ অবধি এখানে বিভিন্ন স¤প্রদায় একসাথে বাস করে’। তিনি আরও যোগ করেন, ‘উত্তরের খ্রিষ্টানরা সকলের ওপর তাদের বিশ্বাস চাপিয়ে দেয়ার কারণে ইহুদি ও মুসলমানদের দীর্ঘকালের সহাবস্থান ভেঙে যায়।
মের্তোলায় প্রত্মতাত্তি¡কেরা সহাবস্থানের একটি অতীত উন্মোচন করেছিলেন যা পর্তুগালে ইতিহাসের কথা বলার উপায়কে চ্যালেঞ্জ জানায়। টরেস বিশ্বাস করেন যে, সহিংস বিজয়ের ফলে নয়, ইসলাম এ অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল কয়েক শতাব্দীর বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমে।
এটি ব্যাখ্যা করতে পারে কেন, ৭১১ সালে প্রথম বিজয়ের পরে যখন তারিক ইবনে-জিয়াদের নেতৃত্বে আরব ও অ্যামাজিগ সেনাবাহিনী উত্তর আফ্রিকা থেকে জিব্রালার স্রোত পার হয়ে আইবেরিয়ান উপদ্বীপের দক্ষিণের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল, মুসলমানরা বেশিরভাগ অঞ্চল যৎসামান্য বাধা পেরিয়ে জয় করতে সক্ষম হয়েছিল। উদার আত্মসমর্পণের শর্তাবলীর অর্থ হিংসাত্মক লড়াইয়ের চেয়ে আরও বেশি শান্তিপূর্ণ বন্দোবস্ত ছিল যার ফলে মুসলমানরা পর্তুগাল এবং স্পেনের বেশিরভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ কেবল কয়েক বছরের মধ্যে নিতে সক্ষম হয়।
লোপেস ব্যাখ্যা করেন, ‘স্কুলে আমাদের যে দুর্দান্ত বিভক্তি শেখানো হয় তা বাস্তবে রূপ নেয়নি’। মোর্তোলা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি আমাদের দেখায় ধারাবাহিকতা, সেই মুহূর্তগুলো যখন বিভিন্ন ধর্মের মানুষ সহাবস্থান করে, মানুষের মধ্যে সংযোগ সাধিত হয়’।
কল্পনা করা শক্ত যে, ভ‚মধ্যসাগরের উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে কঠোর সীমানা এবং কঠোর বিভাজনের সময়ে সমুদ্রটি একদা সংযোগকারী হিসাবে কাজ করেছিল। তবে মের্তোলায় প্রতœতাত্তি¡কেরা এটি খুঁজে পেয়েছেন। জাতীয়তাবাদের তৈরি করা বিভাজন সত্তে¡ও ভ‚মধ্যসাগরের উভয় তীরে একটি সাধারণ সংস্কৃতি এবং ইতিহাস বিদ্যমান রয়েছে।
লোপেস বলেন, ‘আমাদের ভ‚মধ্যসাগরের দক্ষিণের দিকে তাকানো উচিত নয় যে, আমাদের কোনও বিভাজন রয়েছে, সেই লোকেরাও আমাদের মানুষ। জেনেটিক ও সাংস্কৃতিকভাবে আমরা খুব কাছাকাছি আছি’। ভ‚মধ্যসাগর জুড়ে ধারাবাহিকতার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিকতায় প্রশ্ন উঠেছে যা মুসলমানদের ‘অন্যান্য’ হিসাবে দেখায়, তবে জাতীয় পরিচয় এবং ইতিহাস সম্পর্কে গভীরভাবে নিবদ্ধ ধারণাগুলি পরিবর্তন করতে সময় লাগে।
মার্টিনেজ বলেন, ‘আমাদের ধারাবাহিকতার গল্প বলা চালিয়ে যাওয়া দরকার। অভিজাত ও তাদের যুদ্ধের কাহিনী নয়, সাধারণ মানুষের গল্প এবং তারা যেভাবে মিথষ্ক্রিয়া চালিয়েছিল, যেভাবে তারা একইরকম জীবনযাত্রা ভাগ করে নিয়েছিল। এই গল্পগুলো গৎবাঁধা এবং অন্যের সম্পর্কে যে কুসংস্কার আমাদের থাকতে পারে সেগুলি মন থেকে মুছে ফেলার একটি শক্তিশালী উপায়’।
তবে সম্ভবত কিছুই ধারাবাহিকতা এবং স্পষ্টতই একটি ভাগ করা ভ‚মধ্যসাগর হিসাবে ক্লোদিও টরেসের নিজস্ব অভিজ্ঞতার গল্প বলে না। ১৯৬০ এর দশকে, টরেস ছিলেন এক ছাত্র এবং এক অসন্তুষ্ট, যাকে স্বৈরাচারী শাসনকালে গ্রেফতার এবং নির্যাতন করা হয়েছিল। পর্তুগালের ঔপনিবেশিক যুদ্ধে সেবা করার জন্য যখন একটি চিঠি এসে পৌঁছে, তখন তিনি পালানোর সিদ্ধান্ত নেন।
ফ্রান্সে পৌঁছানোর জন্য চোরাচালানকারীদের পারিশ্রমিক বহন করতে না পেরে তিনি একটি ছোট মোটরবোটে পর্তুগাল ছেড়ে মরক্কোতে পালিয়ে গিয়েছিলেন। ঔপনিবেশিক যুদ্ধ এবং একনায়কতন্ত্র থেকে পলায়নপর অন্যান্য পর্তুগিজকে বহন করে তার নৌকা প্রায় একটি বিপজ্জনক ভ্রমণে ডুবে যাচ্ছিল যা ৬০ বছর পরে মোস্তফা আব্দুস সত্তারের সমুদ্র পারাপারের চেয়ে ব্যতিক্রম নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।