পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশে গ্যাস, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। গ্যাসের অভাবে গ্যাসভিত্তিক বেশ কয়েকটি বিদ্যুতকেন্দ্র বন্ধ থাকায় বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণে সারাদেশে গড়ে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা লোডশেডিং করতে বাধ্য হচ্ছে সরকার। ঢাকার বেশিরভাগ এলাকায় আবাসিক গ্যাস লাইনে দিনের বেশিরভাগ সময় গ্যাসের চাপ না থাকায় রান্না-খাওয়ায় নগরবাসিকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ ঢাকার আশপাশের এলাকায় আবাসিক ও শিল্পকারখানার গ্যাস লাইনগুলোতে চাপ না থাকায় তীব্র সঙ্কট চলছে। গ্যাসের সঙ্কটে নাগরিক জীবনে ছন্দপতনের পাশাপাশি রফতানিমূখী পোশাক শিল্পকারখানাসহ শিল্পবাণিজ্য ও অর্থনৈতিক খাতে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বৈধ গ্যাস লাইনে গ্যাসের চাপ না থাকলেও তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির হাজার হাজার অবৈধ গ্যাস লাইন চলছে একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারির যোগসাজশে। দেশে গ্যাসের সংকট হঠাৎ করেই দেখা দেয়নি। এক দশকের বেশি সময় ধরে বিদ্যমান গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে যাওয়া এবং গ্যাস লাইনে চাপ কমে আসায় সম্ভাব্য সংকটের আশঙ্কা প্রকাশিত হচ্ছে। নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার, পুরনো গ্যাসক্ষেত্রগুলোর সংস্কার ও উন্নয়নের পাশাপাশি অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার উপর গুরুত্ব আরোপ করে আসছেন দেশের জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
বিদ্যুতকেন্দ্র, ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্ট, সার কারখানা, শিল্পকারখানা, সিএনজি স্টেশন ও বাণিজ্যিক গ্যাস সংযোগ এবং সাড়ে ২৮ লাখের বেশি আবাসিক সংযোগ মিলে বিগত অর্থবছর পর্যন্ত তিতাস গ্যাসের বৈধ সংযোগ সংখ্যা ২৮ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে আভ্যন্তরীণ বাস্তবতার নিরিখে বারবার গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর পরও সর্বশেষ হিসেব অনুসারে, তিতাস গ্যাস কোম্পানি শত শত কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে। কোম্পানির এই লোকসানের নেপথ্যে রয়েছে লাখ লাখ অবৈধ সংযোগ। চলতি বছরের মার্চ মাসে তিতাস গ্যাসের শতভাগ মূল্যবৃদ্ধি প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে অনুষ্ঠিত বিইআরসি’র গণশুনানিতে অংশগ্রহণকারি একজন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ দাবি করেছেন, তিতাসের অবৈধ সংযোগ সংখ্যা বৈধ সংযোগের চেয়ে কম হবে না। এ এক ভয়াবহয় ঘটনা। একদিকে রাষ্ট্রীয় স্বায়ত্বশাসিত বৃহত্তম গ্যাস কোম্পানিটি গ্রাহকদের কাছ থেকে ক্রমাগত বর্ধিত হারে মূল্য আদায় করেও শত শত কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে, অন্যদিকে লাখ লাখ অবৈধ সংযোগ থেকে কোম্পানি এবং সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। এর ফলে বৈধ লাইনে গ্যাসের চাপ না থাকায় সাধারণ গ্রাহকরা নিয়মিত গ্যাসের বিল পরিশোধ করেও সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দারা অব্যাহত গ্যাস সংযোগের বিরুদ্ধে গত মাসে তিতাস গ্যাস কোম্পানির স্থানীয় কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে। তারা অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নের দাবিও জানিয়েছে। বছরের পর বছর ধরে আবেদন করেও বৈধভাবে গ্যাস সংযোগ না পেলেও প্রতিমাসেই অবৈধ সংযোগে সংখ্যা বাড়ছে বলে জানা যায়। এহেন বাস্তবতায় তিতাসের বিশেষ অভিযানে গত মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার একটি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের শত শত অবৈধ গ্যাস সংযোগ মূল পাইপলাইন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিলে ভুক্তভোগী স্থানীয় জনসাধারণ মহাসড়ক অবরোধ করলে ২ ঘন্টা দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। অবৈধ গ্যাস সংযোগ এমন এক সাধারণ বাস্তবতায় পরিনত হয়েছে যে, বিচ্ছিন্ন করতে গেলে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে, যা কোনোভাই কাম্য হতে পারে না। তবে গ্যাসের মত জাতীয় সম্পদের এমন অপচয়, হরিলুট ও জনভোগান্তি লাঘবে তিতাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। এসব অবৈধ সংযোগ কিভাবে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গেল। এর নেপথ্যে কারা, তাদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
তিতাস গ্যাসের লোকসান কমিয়ে কোম্পানিকে লাভজনক অবস্থায় নিয়ে আসা এবং সাধারণ বৈধ গ্রাহকদের স্বাভাবিক প্রাপ্য সেবা নিশ্চিত করতে হলে প্রথমেই অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। তিতাসের একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারি অবৈধ গ্যাস সংযোগ থেকে শত শত কোটি টাকার মালিক হওয়ার তথ্য বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে। অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়ন্ত্রণে ২০১০ সালের গ্যাস আইনে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের বিরুদ্ধে আর্থিক ও কারাদণ্ডের শাস্তির বিধান রয়েছে। তিতাস গ্যাস কোম্পানি নিয়মিত সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ অভিযানের পাশাপাশি কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ করলে লাখ লাখ অবৈধ সংযোগের কোনো সুযোগ থাকতে পারে না। বৈধ গ্রাহকদের গ্যাস থেকে বঞ্চিত করে অবৈধ গ্রাহকদের জন্য আবেগ দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। অবৈধ গ্যাস সংযোগের কারণে বৈধ গ্রাহকদের সমস্যা ও চাপে পড়তে হবে, তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অবিলম্বে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নে সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযান চালাতে হবে। এ ক্ষেত্রে যেকোনো স্থানীয় ও রাজনৈতিক প্রভাবকে কঠোর হাতে মোকাবেলা করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।