পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বঙ্গোপসাগরেসৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আম্ফান গত কয়েকদিনে গতি ও শক্তি সঞ্চয় করে ভয়ংকর রূপ নিতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরসমূহ থেকে এর অবস্থান এখনো ১২শ থেকে ১৩শ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে হলেও ইতোমধ্যে বন্দরসমূহকে ৪নং স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের ওপরে থাকা ঘূর্ণিঝড় আমফান এখন ভয়াবহ চেহারা পাচ্ছে। ঘুরতে ঘুরতে এগিয়ে আসছে স্থলভাগের দিকে। ইতোমধ্যে এর গতিবেগ বেড়েছে। আগামীতে এই গতিবেগ ১৭০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির এখন পর্যন্ত গতিমুখ ভারতের উড়িষ্যা উপকূল হয়ে পশ্চিবঙ্গের দিকে। এরপরই তা ধেয়ে আসতে পারে খুলনা-সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলের কিছু অংশে। আগামী বুধবার নাগাদ আমফান বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে। উল্লেখ্য, বন্দরসমূহে স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলার পাশাপাশি মাছধরা ট্রলারসহ সব নৌযানকে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। এরই মধ্যে অধিকাংশ ট্রলার ও নৌযান ফিরে এলেও এখনো অনেক ট্রলার ও নৌযান সমুদ্রে রয়েছে। আমফান উপকূলে আঘাত কিংবা উপকূল অতিক্রমনের আগে-পরে প্রবল বৃষ্টিপাত ও জলোচ্ছ্বাস হতে পারে, যাতে উপকূলীয় জনপদ, খেত-খামার, মাছের ঘের ইত্যাদি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমুহূর্তে উপকূলীয় এলাকায় বিশেষত দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলের মানুষের মধ্যে গভীর উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা,ভীতি ও শংকা দেখা দিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আমাদের দেশে নতুন কিছু নয়। প্রায় প্রতিবছরই এর আঘাতে উপকূলীয় এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে যায়, সম্পদ ও ফসলহানি ঘটে, শত শত, হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ১৯৭০ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস ৫ লাখের অধিক মানুষ মারা যায়, ১৯৯১ সালে মারা যায় প্রায় দেড় লাখ। এরপর ২০০৭ সালে সিডর ২০০৯ সালের আইলাও প্রচন্ড আঘাত হানায় সম্পদ-সম্পত্তির বেশুমার ক্ষতি হয়। তবে এই দুই ভয়ংকর ঘূণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে মানুষের মৃত্যু হয় তুলনামূলকভাবে অনেক কম। বলা বাহুল্য, কোনো বড় ধরনের ঘূণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আশংকা দেখা দিলে দেশের মানুষের দুশ্চিন্তা ও আতংকের অবধি থাকেনা।
এবার এমন এক সময়ে ঘূণিঝড় আমফানের ব্যাপক তান্ডবের আশংকা করা হচ্ছে, যখন বৈশ্বিক মহামারী করোনা দেশের সর্বত্র দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে। এরূপ ঘোরতর দুঃসময়ে নতুন বিপদ হিসাবে দেখা দিয়েছে ঘূর্ণিঝড় আমফান। এ মুহূর্তে দেশ কার্যত লকডাউনে। সব কিছু বন্ধ। সামান্য সংখ্যক শিল্প-কারখানা, দোকানপাট খুলে দেয়া হলেও বেশিরভাগ শিল্প-কারখানা ও দোকানপাট বন্ধ। ঘরে থাকার নির্দেশনা থাকলেও ঘরের বাইরে মানুষের আনাগোনা, উপস্থিতি বাড়ছে; তবে খুব বেশি নয়। সামাজিক দূরত্ব নির্দেশনা লংঘিত হলেও মানুষ যতটা সম্ভব এই নির্দেশনা মেনে চলার চেষ্টা করছে। এরকম একটি অসম্ভব-অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানলে অবস্থা কী হবে বা হতে পারে সহজেই অনুমেয়। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কায় সব সময় উপকূলীয় এলাকা থেকে মানুষজনকে সরিয়ে নিয়ে নিরাপদ স্থানে বা আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পর মানুষের ঘরে ফেরানো, ত্রাণ ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে তাদের জীবনযাপন নিরাপদ ও স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলে। এবার করোনাকারণে মানুষজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কোনো নিরাপদ এলাকায় নিয়ে যাওয়াও একই রকম ঝুঁকিপূর্ণ। এতে ঘরে থাকা কিংবা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাও যাবে না। এতে করোনা বিস্তারের ব্যাপক আশংকা থেকে যাবে। আবার দুর্গত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম চালাতে গিয়ে ও একইরকম ঝুঁকির আশংকা থাকবে। বিপন্ন মানুষ ও ত্রাণকর্মীদের মধ্যে করোনা ছড়িয়ে পড়ার ভয় থাকবে।
স্বীকার করতেই হবে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আমাদের ব্যাপক অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতা অর্জিত হয়েছে। ঘূণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের ক্ষেত্রে মৃত্যুর সংখ্যা পর্যায়ক্রমে কমে যাওয়ার তথ্য এর একটি উল্লেখযোগ্য প্রমাণ। অভিজ্ঞতা ও প্রস্তুতির দুর্বলতা সত্তে¡ও করোনা মোকাবিলায় আমাদের প্রশাসন, সশস্ত্রবাহিনী, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃংখলা বাহিনী, যা করছে তাতে তাদের ধন্যবাদ না জানিয়ে পারা যায়না। করোনার কারণে একটি ইতিবাচক পরিস্থিতি দেশে এখন বিরাজ করছে। লকডাউন বাস্তবায়নে ঘরে থাকা ও সামাজিক দূরত্ব নির্দেশনা কার্যকর করতে প্রশাসন ও বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা মাঠপর্যায়ে রয়েছে এবং কাজ করছে। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কারণে সৃষ্ট বিপর্যয় মোকাবিলায় তারা মাঠ পর্যায়ে থেকেই ভূমিকা রাখতে পারবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে উপকূলীয় জনগণকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর, যথাযথ তত্ত্বাবধান ও ত্রাণ এবং সামাজিক দূরত্ব নির্দেশনা মানতে বাধ্য করার ক্ষেত্রে তারাই ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে। সরকার উপকূলীয় এলাকায় দায়িত্বশীল প্রশাসন, কর্মরত সশস্ত্রবাহিনী এবং পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীকে এ ব্যাপারে এলার্ট করার ব্যবস্থা নেবে বলে আমরা আশা করি। প্রসঙ্গত আরো একটা বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন, উপকূলীয় সুরক্ষাবাঁধ, সবুজ বেষ্টনী ও অন্যান্য সুরক্ষা ব্যবস্থা অক্ষত-অটুট থাকলে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ক্ষয়ক্ষতি কম হতে পারে। সিডর ও আইলার আঘাত কীভাবে সুন্দরবন প্রতিহত করে দেয়, তা কারো অজানা হয়। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, উপকূল রক্ষাবাঁধ সিডর ও আইলায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা এখনও অনেক জায়গায় মেরামত করা হয়নি। এ ধরনের দায়িত্বহীনতা অমার্জনীয়। অবশ্যই উপকূল রক্ষার সম্ভাব্য সকল ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস নিয়ে এত আশঙ্কিত ও বিচলিত হতে হবে না।
দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, উপকূল রক্ষাবাঁধ সিডর ও আইলায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা এখনও অনেক জায়গায় মেরামত করা হয়নি। এ ধরনের দায়িত্বহীনতা অমার্জনীয়। অবশ্যই উপকূল রক্ষার সম্ভাব্য সকল ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস নিয়ে এত আশঙ্কিত ও বিচলিত হতে হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।