পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন উপকূলবাসীর অমোঘ নিয়তি। প্রায় প্রতি বছর অক্টোবর-নভেম্বরে সমুদ্র ফুঁসে ওঠে। তাতে ঝড় জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকার ব্যাপক ক্ষতি হয়। ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় উপকূলীয় অঞ্চল। গত এক যুগে সিডর, আইলা, আম্পানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অথচ আগাম প্রস্তুতি থাকলে এ ক্ষয়ক্ষতি অনেক কমানো সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ঘূর্ণিঝড় শুরুর কয়েকদিন আগে থেকে এ সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক করলে ফসলসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব। এবার ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ৭ থেকে ৮ ফুটেরও বেশি উঁচু জলোচ্ছ্বাসে কোথাও কোথাও বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, সবজি ক্ষেত, কলার বাগান, ভেসে গেছে মাছের ঘের। অনেকের ঘরবাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে নিঃস্ব করে দিয়েছে। অথচ আগাম প্রস্তুতি নিলে এমনটি হতো না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদফতর থেকে শুরু করে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো পূর্ব প্রস্তুতি নিলে ক্ষয়ক্ষতি আরও অনেক কমানো যেত। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতা এবং তাদের কাজের সমন্বয় না থাকায় ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব হয়নি।
পানি সম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং আসছে এটা আরো অনেক আগে জানা ছিল। কিন্তু সে অনুপাতে সরকারের পূর্বপ্রস্তুতি খুব একটা লক্ষ্য করা যায়নি। আসলে সরকারের বিভিন্ন দফতরে কোনো জবাবদিহিতা নেই। সর্বত্রই অনিয়ম আর দুর্নীতির চিত্র লক্ষ্য করা যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতি বছর বেড়িবাঁধ মেরামত করে আবার ভাঙে। জবাবদিতা থাকলে যারা এ কাজের সাথে জড়িতদের বিচার হতো। তা হয় না। সরকারের টাকা কুলামকুচির মতো খরচ হচ্ছে, কিন্তু মানুষের কোনো উপকারে আসছে না। ৮ হাজার কোটি টাকা দিয়ে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার তোড়জোড় চলছে। কর্মকর্তার জন্যে তিনতলা বাড়ি নির্মাণে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা ব্যয় করতে পারে সরকার। কিন্তু মানুষের মঙ্গলের জন্য বেড়িবাঁধ নির্মাণে সরকার ৮শ’ কোটি টাকা দিতে পারে না। ঘূর্ণিঝড় শুরু হওয়ার পর সতর্ক করে লাভ কী। ফসল কাটার কথাতো আরো এক সপ্তাহ আগে বলা উচিত ছিল। এখন মনিটরিং সেল খুলে লাভ কী? আগে প্রস্তুতি নিলে অনেক ক্ষয়ক্ষতি কমানো যেত, কিন্তু তা করা হয় না। ‘সুপার সাইক্লোন ধেয়ে আসছে’ গত ১৩ অক্টোবর দৈনিক ইনকিলাবে এ শিরোনামে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। পরদিন ইনকিলাবের সম্পদকীয়তে এ বিষয়ে করণীয় কী তাও বলা হয়েছে। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সিত্রাং মোকাবেলায় আগাম কোনো প্রস্তুতি গ্রহণ করেনি। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর ক্ষতি থেকে আমন ফসল রক্ষার জন্য গত ২৩ অক্টোবর অর্থাৎ সিত্রাংয়ের প্রভাব শুরুর পর জরুরি পরামর্শ দিয়েছে। আমন ধান ৮০ শতাংশ পরিপক্ক হলে অতিসত্বর কেটে নেওয়ার জন্য সংস্থাটি কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছে। এই পরামর্শ আরো এক সপ্তাহ আগে দিলে কৃষক হয়তো তাদের ক্ষেতের ধান কাটতে পারতো। এখন ঝড়বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর কৃষক তাদের ক্ষেতের ধান কিভাবে কাটবে। অনেকের মাছের ঘের ভেসে গেছে। আগে থেকে সতর্ক করলে তারা ঘের রক্ষায় নানাভাবে চেষ্টা করতে পারতো, অথবা ঘেরের মাছ বিক্রি করতে পারতো। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো এর কিছুই করে নাই।
আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় ১৯টি জেলার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চট্টগ্রাম, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি, নোয়াখালী, ফেনীর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে স্বাভাবিক জোয়ার থেকে ৫ থেকে ৮ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কার কথা এ সংস্থাটি বলছে। অমাবস্যা হওয়ার কারণে বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোতে ৭ থেকে ১০ ফুট, খুলনা বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোতে ৫ থেকে ৮ ফুট উঁচু এলাকা ও নোয়াখালীর চর অঞ্চলগুলোতে ১০ থেকে ১২ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস হওয়ার প্রবল শঙ্কা দেখা যাচ্ছে। অথচ তারা এ তথ্য আরো অনেক আগে থেকেই জানতো। ঘূর্ণিঝড় এলে কী কী হবে এগুলো আবহাওয়া অধিদফতর আরো অগে থেকে প্রচার করে জন সচেতনতা তৈরি করতে পারতো। কিন্তু তারা এসব তথ্য প্রকাশ করেনি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বলছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ১৩ জেলায় ক্ষতির আশঙ্কা বেশি। এসব জেলার মধ্যে রয়েছে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি, ভোলা, পটুয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বরিশাল। চট্টগ্রাম খুলনা এবং বরিশাল বিভাগের বেশিরভাগ জায়গায় এটি আঘাত হানবে এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের দ্বীপ অঞ্চলগুলো বিশেষ করে মহেশখালী, সন্দীপ ঝুঁকিপূর্ণ। এ মন্ত্রণালয়ও ঘূর্ণিঝড় শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। অগাম পদক্ষেপ নিলে, জনগণকে সচেতন করলে মানুষের এক ক্ষয়ক্ষতি হতো না।
খুলনা এলাকার বেড়ি বাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক। এ ছাড়া অন্যান্য উপকূলীয় অঞ্চলের বাঁধগুলোও মধ্যে অনেক জায়গায় নড়বড়ে অবস্থা। পানি উন্নয়ন বোর্ড এগুলো আগে থেকে ভালভাবে মেরামতের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। যদি এসব নড়বড়ে বাঁধ ভালভাবে মেরামত করা হতো তা ভেঙে বিশাল এলাকা ভাসয়ে নিয়ে যেত না। অনেক মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হতো না। ফসলের ক্ষেত তলিয়ে যেত না, শত শত মাছের ঘের ভেসে যেত না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।