Inqilab Logo

রোববার, ২৩ জুন ২০২৪, ০৯ আষাঢ় ১৪৩১, ১৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আমের মান ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রক্ষা করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৩ মে, ২০২০, ১২:০৩ এএম

মধুমাস জ্যৈষ্ঠ সমাগত প্রায়। যে মৌসুমী ফলের কারণে এ মাসকে মধুমাস নামে আখ্যা দেয়া হয়, তার মধ্যে আম অন্যতম। আমের আরেক নাম অমৃত। আমের রয়েছে নানা জাত, বর্ণ ও স্বাদের বৈচিত্র্যসহ অসাধারণ পুষ্টিগুণ ও আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা। যতই দিন যাচ্ছে, দেশে আমের চাহিদা ও উৎপাদনের সাথে সাথে আন্তর্জাতিক বাজারেও কদর বাড়ছে। ঠিকমত পরিচর্যা ও বাজার ধরতে পারলে আম রফতানির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব বলে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন। আমের বিভিন্নতা এবং স্বাদের দিক থেকে বাংলাদেশের আম ইতিমধ্যেই আন্তজার্তিক বাজারে প্রভাব সৃষ্টির সম্ভাবনা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এর অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে যখন আম পাকে তখন আম উৎপাদনকারি বেশিরভাগ দেশেই আম থাকে না। এই সুযোগে বাংলাদেশের আম ইউরোপের বাজারে ভাল অবস্থান গড়ে তুলতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন সমন্বিত পরিকল্পনা ও উপযুক্ত বাজারব্যবস্থাপনা ও আন্তর্জাতিক প্রমোশনের কার্যকর উদ্যোগ। তবে তার আগে প্রয়োজন জাতভেদে প্রাকৃতিক ও অর্গানিক আমের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য, মান, স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বজায় রাখা। প্রতিবছরের মত এবারো মৌসুম শুরুর আগেই কিছু জাতের আম বাজারে আসতে শুরু করেছে। পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে, আম পরিপক্ক হওয়ার আগেই কাঁচা আমে কার্বাইড দিয়ে পাকিয়ে, কৃত্রিম রঙে লোভনীয়ভাবে বাজারে তোলা হচ্ছে। দেখতে আকর্ষণীয় হলেও এসব আমের না আছে প্রকৃত স্বাদ, না আছে পুষ্টিগুণ। উপরস্তু কার্বাইড দিয়ে পাকানো ও ফরমালিনে সংরক্ষণ করা এসব আম খেয়ে নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
দেশে এখন করোনা মহামারীর দুর্যোগ চলছে। কেনো ভ্যাকসিন বা কার্যকর চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় মানুষের ইমিউন সিস্টেমের উন্নয়ন ঘটানোকেই করোনা থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করছেন ডাক্তার ও ভাইরোলজিস্টরা। বৈশ্বিক মহামারীতে সম্ভাব্য খাদ্য সংকটে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ রসালো ফল হিসেবে আমের চাহিদা সারাবিশ্বে বেড়ে যাওয়া তথা আমের বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এক শ্রেণীর অসাধু আমচাষী এবং লোভী ব্যবসায়ী আম পাকার আগেই রাসায়নিক দিয়ে কৃত্রিমভাবে পাকিয়ে অতি লাভের আশায় বাজারে আনছে। এসব আম বিষ ছাড়া কিছুই নয়। অথচ আর দুদিন পরেই মধুমাস জ্যৈষ্ঠ শুরু হচ্ছে। ফলে এমনিতেই পরিপক্ক ও গাছপাকা ফল বাজারে উঠতে থাকবে। এই অল্প কয়দিনের অপেক্ষা না করেই প্রতিবছর একশ্রেণীর আম চাষী ও ব্যবসায়ী বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে আম পাকিয়ে বাজারে নিয়ে আসছে। এতে আমের সম্ভাব্য রপ্তানির বিশ্ববাজারে এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়া স্বাভাবিক। ইতোমধ্যে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে শত শত টন জাটকা নিধন করা হয়েছে। এসব জাটকা বড় হওয়ার সুযোগ পেলে ইলিশের উৎপাদন অনেক বেশি বেড়ে যেত। অর্থাৎ একটি শ্রেণী বিভিন্ন ক্ষেত্রে অতি লাভের আশায় অপরিণত ও অপরিপক্ক মাছ ও ফলফলাদি ধ্বংস করে দেয়ার কাজে লিপ্ত, যা খাতগুলোর সম্ভাবনাকে বিনষ্ট করে দিচ্ছে। একসময় চিংড়ির ওজন বাড়ানোর জন্য তাতে লোহা ঢুকিয়ে ইউরোপের বাজারে রপ্তানি করে ধরাও পড়েছে। এতে এ খাতের যথেষ্ট বদনাম হয়। ইতোমধ্যে কৃত্রিম উপায়ে পাকানো অপরিপক্ক আমে বাজার সয়লাব হয়ে উঠেছে। এটিও বিশ্ববাজারে বদনাম সৃষ্টি করছে। এহেন বাস্তবতায় প্রতিবছরই ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালিত হয়। এবারো শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে রাজধানীর কয়েকটি বাজারে এবং রাজশাহীর আমবাগান ও পাইকারি বাজারে অভিযান চালিয়ে হাজার হাজার কেজি আম জব্দ ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে লাখ টাকা জরিমানার সংবাদ ছাপা হয়েছে। তবে সাংবাৎসরিক তৎপরতা থেকেই বোঝা যাচ্ছে, এ ধরনের বিচ্ছিন্ন অভিযান যথেষ্ট নয়। মানুষের খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তা এবং আমের মত বৈশ্বিক চাহিদাসম্পন্ন ফলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখতে এবং তা কাজে লাগাতে হলে প্রথমেই এর প্রাকৃতিক মান ও গুণ কঠোরভাবে রক্ষা করার উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে।
করোনা পরবর্তি খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় কৃষিই হতে পারে আমাদের জন্য প্রধান অবলম্বন। এ কারণে কৃষিতে অর্থনৈতিকভাবে সম্ভাবনাময় খাতগুলো চিহ্নিত করে তা কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে। গার্মেন্টস বা তৈরী পোশাকের পাশাপাশি যেভাবে চিংড়ি বা হিমায়িত খাদ্য রফতানি আমাদের রেমিটেন্স আয়ের অন্যতম উৎসে পরিণত হয়েছে, একইভাবে আম এবং ইলিশের মত ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন কৃষিপণ্যের মান ও উৎপাদন বাড়িয়ে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অক্ষুন্ন রাখা সম্ভব। ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে জাটকা সংরক্ষণে সরকারি উদ্যোগগুলো যথেষ্ট সফল হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। গত দুই দশকে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। একশ্রেণীর জেলের বেপরোয়া জাটকা নিধন শক্ত হাতে বন্ধ করা গেলে তা আরো কয়েকগুন বাড়ানো অসম্ভব নয়। একইভাবে আমের আভ্যন্তরীণ চাহিদা পুরণের পাশাপাশি এর আন্তর্জাতিক বাজারের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগানোর বাস্তবসম্মত উদ্যোগ প্রয়োজন। এর জন্য প্রথমেই প্রয়োজন আমের যথাযথ মান ও গুণাগুণ রক্ষায় সময়ের আগেই রাসায়নিক দিয়ে আম পাকিয়ে বাজারে ছাড়ার অশুভ তৎপরতা বন্ধ করা। আর্ন্তজাতিক বাজার ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা বাদ দিলেও জনস্বাস্থ্য ও জনস্বার্থের খাতিরে মৌসুমী ফলে রাসায়নিক মেশানোর আত্মঘাতি প্রবণতা বন্ধ করতে কঠোর মনিটরিং এবং জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। বিচ্ছিন্ন অভিযানে দু’চারজন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করে এ তৎপরতা বন্ধ করা যাবে না। আরো কঠোর শাস্তির বিধানসহ বাগান ও বাজার মনিটরিং জোরদারের পাশাপাশি আমসহ মৌসুমী ফলে রাসায়নিকের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। সেই সাথে জনসাধারণকেও সচেতন হতে হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আম

২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন