২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
ধূমপান সত্যি সত্যি বিষপানের শামিল। ধূমপানের ইতিহাস খুবই পুরনো। সেই পুরনোকাল থেকেই এই সর্বনাশা অভ্যাসটি মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে বিভিন্ন ঘাতকব্যাধি। তবু মানুষ ধূমপান করেই চলেছে। পৃথিবীতে বর্তমানে ১৩০ কোটি ধূমপায়ী, যা কিনা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ। প্রায় ৩০ লাখ লোক প্রতি বছর ধূমপানজনিত বিভিন্ন রোগের কারণে মৃত্যুবরণ করছে, যা হিসাব করলে দাঁড়ায় মিনিটে প্রায় ছয়জন। এই হতভাগ্য ধূমপায়ীদের বেশিরভাগই বাস করে আমাদের মহাদেশে। চলুন তাহলে জেনে নেই- ধূমপান কেন ত্যাগ করবেন? ধূমপান কেবলই (শতকরা ১০০ ভাগ) অকল্যাণ ও অসুন্দরের বাহক। ধূমপয়ী ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, অর্থনীতি ও রাষ্ট্র সব ক্ষেত্রেই কেবল অকল্যাণ বয়ে আনে। ধূমপানের ফলে ব্যক্তি নিজে ও তার অর্থনীতি, ব্যক্তির পরিবার, ব্যক্তির প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব এবং কর্মক্ষেত্রের সহকর্মীসহ সমাজ ও রাষ্ট্রের সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
ধূমপায়ী ও অধূমপায়ী সবার ক্ষেত্রেই বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে। তন্মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে- * হার্ট অ্যাটাক। * উচ্চ রক্তচাপ। * ডায়াবেটিস। *ফুসফুসের সমস্যা (ক্যান্সার, ব্রংকাইটিস ও অ্যাজমা)। *স্ট্রোক ও প্যারালাইসিস। * দেহের বেশির ভাগ ক্যান্সার । * পায়ের পচন (গ্যাংগ্রিন) ।* পায়ের রক্ত চলাচলের সমস্যা। * পাকস্থলীর আলসার (ক্ষত) । * রক্তে কোলেস্টেরলের আধিক্য ইত্যাদি।
(ক) নিজেকে প্রশ্ন করুন? * আগে সময় নিয়ে চিন্তা করুন, আপনি কী ধরনের ধূমপায়ী । স্বল্পমেয়াদি, দীর্ঘমেয়াদি বা সামাজিক ধূমপায়ী? * কোন কোন মুহূর্তগুলোতে আপনার বেশি ধূমপান করতে ইচ্ছা হয়? * আপনি প্রতিবার খাবার গ্রহণের পরপরই ধূমপান করেন? *আপনি কি কেবল সামাজিকতা রক্ষার্থে ধূমপান করে থাকেন? * আপনি দৈনিক কয়টি সিগারেট পান করে থাকেন? আপনি কি পানের সাথে তামাক পাতা ও জর্দা গ্রহণ করে থাকেন? *আপনি কি মানসিক উদ্বিগ্নতা বা হতাশা নিবারণের নিমিত্তে ধূমপান করে থাকেন? *এমন কোনো পরিস্থিতি বা সঙ্গী-সাথী আছে যার কারণে আপনি ধূমপান করতে উদ্বুদ্ধ হন? * ধূমপানের সাথে অন্য কোনো নেশার (যেমন-মদপান, জুয়া ইত্যাদি) সংযোগ আছে কি? * আপনি কি সত্যিই ধূমপান ত্যাগে আগ্রহী এবং এ বিষয়ে কোনো বিশেষজ্ঞ বা ডাক্তারের সাথে কথা বলতে আগ্রহী? * আপনি কি শরীর গঠনমূলক প্রোগ্রামে অংশগ্রহণে আগ্রহী যা আপনার ধূমপান ত্যাগে সহায়ক হবে?
(খ) ধূমপানকে দৃঢ়তার সাথে না বলতে একটি তারিখ নির্দিষ্ট করুন- কমপক্ষে ২০ সপ্তাহ সময় হাতে রেখে সময় নির্ধারণ করুন, যাতে ধূমপান ত্যাগের জন্য নিজেকে মানসিকভাবে পুরোপুরি প্রস্তুত করে নিতে পারেন। যারা মূলত কর্মক্ষেত্রেই বেশি ধূমপান করে থাকেন তারা ধূমপান বর্জনের সপ্তাহের শেষে যেকোনো একটি দিন বাছাই করে নিতে পারেন।
(গ) পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও কর্মক্ষেত্রের সহকর্মীদের আপনার ধূমপান ত্যাগের সিদ্ধান্তের বিষয়টি অবহিত করুন যাতে আপনি তাদের কাছ থেকে সর্বপ্রকার সহযোগিতা, উৎসাহ ও পরামর্শ পেতে পারেন।
(ঘ) এমন কোনো ব্যক্তিকে খুজে নিন যিনি আপনার মতো ধূমপান ত্যাগে আগ্রহী। এর ফলে পারস্পরিক পরামর্শ ও উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে কঠিন মূহূর্তগুলো সহজে কাটিয়ে দেয়া সম্ভব হবে।
(ঙ) ধূমপান ত্যাগের ফলে আপনি যেসব সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন তা শক্তভাবে মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। ধূমপান ত্যাগের ফলে অনেকেই বিভিন্ন রকমের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার সম্মুখীন হন। বেশির ভাগ লোকই ধূমপান ত্যাগের তিন মাসের মধ্যেই পুনরায় ধূমপান আরম্ভ করেন। তাই ধূমপান ত্যাগের সাথে সাথে ধূমপান বর্জনের ফলে সৃষ্ট শারীরিক ও মানসিক সমস্যাগুলো এবং পুনরায় ধূমপান করার অদম্য আগ্রহকে অবশ্যই শক্তভাবে মোকাবেলা করার জন্য মানসিক প্রস্তুতি শুরু থেকেই গ্রহণ করতে হবে।
(চ) আপনার বাড়িঘর, গাড়ি ও কর্মক্ষেত্র থেকে সিগারেটসহ ধূমপানের অন্যান্য উপকরণ অপাসারণ করুন-সিগারেট, লাইটার, অ্যাশস্ট্রে ও দিয়াশলাই দূরে ছুড়ে ফেলুন। আপনার পরিধেয় কাপড় ও অন্যান্য ব্যবহার্য দ্রব্যাদি থেকে ধূমপানের দুর্গন্ধ দূর করতে তা ধুয়ে পরিষ্কার করুন। আপনার গাড়িটি শ্যাম্পু দিয়ে ধৌত করুন, ঘরের পর্দা ও কার্পেট পরিষ্কার করুন এবং চেয়ার, টেবিলসহ অন্যান্য ফার্নিচার পানির পাম্পের মধ্যে কিছুক্ষণের জন্য রাখুন।
(জ) যেসব বিষয় বা অবস্থা আপনাকে পুনরায় ধূমপানের দিকে ধাবিত করতে পারে তা যথাসম্ভব পরিহার করে চলুন। যখন বন্ধুবান্ধব, পরিবারের সদস্যদের কেউ অথবা কর্মক্ষেত্রের সহকর্মীদের কেউ ধূমপান করতে আরম্ভ করে তখন তা পরিহার করা কঠিন হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে আপনার প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের অবহিত করুন, যাতে তারা আপনার সাথে যেকোনো ধরনের সামাজিক বা পারিবারিক অনুষ্ঠানে ধূমপান না করেন। আর আপনার কর্মক্ষেত্রের ধূমপায়ী সহকর্মীদের সাথে চা বা কফির বিরতিতে না গিয়ে অধূমপায়ী সহকর্মীদের সাথে বসুন, গল্প করুন এবং চা পান করুন। বেশির ভাগ ধূমপায়ী ব্যক্তিই খাবার গ্রহণ শেষে সিগারেট জ্বালিয়ে বসেন অথবা পানের সাথে জর্দা বা সাদাপাতা গ্রহণ করে থাকেন। সেক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের সামাজিক বা পারিবারিক ভোজের শেষে অন্য রকম পরিবেশ বা আবহ সৃষ্টির জন্য ফলমূল অথবা স্বাস্থ্যসম্মত মিষ্টান্ন অথবা চকলেট খাওয়ার আয়োজন করা যেতে পারেন।
(ঝ) ধূমপান ত্যাগের জন্য রমজান মাস একটি উপযুক্ত সময়।
(ঞ) ধূমপান ত্যাগের ফলে সৃষ্ট সমস্যাগুলো মোকাবেলা করার জন্য পদক্ষেপ-সমস্যাগুলো নিম্নরূপ-*পুনরায় ধূমপান করার প্রচন্ড ইচ্ছা জাগ্রত হওয়া; * হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হওয়া; * বিষণœতা ও ঘাবড়ে যাওয়া; * অমনযোগিতা; * অস্থিরতা; * খাবার গ্রহণের আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়া; * মাথাব্যথা হওয়া; * নিদ্রাহীনতা; *হাতে কাঁপানো হওয়া; *অনিয়ন্ত্রিক কাশি হওয়া; * ক্লান্তি অনুভব হওয়া; * কোষ্ঠকাঠিন্য বা পেটের সমস্যা হওয়া; * হৃদকম্পন হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি। সমস্যা অনুযায়ী পদক্ষেপ সমস্যা সময়কাল পরিত্রাণের উপায় : * পুনরায় ধূমপানের ইচ্ছা জাগ্রত হওয়া ১ম সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকুন। * হাঁটতে শুরু করুন। * গল্প করুন। * কুরআন তেলাওয়াত করুন বা শ্রবণ করুন অধৈর্য বা অস্থির হয়ে পড়া ২য় সপ্তাহ তেকে ৪র্থ সপ্তাহ নিয়মিত ব্যায়াম করুন। *উষ্ণ পানিতে গোসল করুন। *নিজের ব্যাপারে উচ্চ ধারণা রাখুন। * যথা সম্ভব চা-কফি পরিহার করুন নিদ্রাহীনতা ২য় সপ্তাহ থেকে ৪র্থ সপ্তাহ সন্ধ্যা ৬ টার পর থেকে চা-কফি পরিহার করুন। * মনকে যথেষ্ট বিশ্রাম দিন। *নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস করুন ক্লান্তি বা অবসাদ দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে চর্তুথ সপ্তাহ হালকা ঘুমিয়ে নিন। * নিজের মনের শক্তি বাড়ান মনোযোগের অভাব কয়েক সপ্তাহ পরই কাজে চাপ কমিয়ে আনুন। * মানের ওপর চাপ-হ্রাস করুন ক্ষুধা বৃদ্ধি পাওয়া চর্তুথ সপ্তাহ থেকে ষষ্ঠ সপ্তাহ বেশি পরিমাণে পানি পান করুন। * কম ক্যালরিযুক্ত পানীয় পান করুন। * কম ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন শুষ্ক কাশি হওয়া, গলা শুকিয়ে যাওয়া ও সর্দি হওয়া চর্তুথ সপ্তাহ থেকে ষষ্ঠ সপ্তাহ প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। * প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেটে গ্যাস হওয়া চর্তুথ সপ্তাহ থেকে ষষ্ট সপ্তাহ প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। *ফাইবারযুক্ত খাবার বেশি গ্রহণ করুন অনিয়ন্ত্রিত সমস্যার জন্য যেকোনো সময় নির্ভরযোগ্য ডাক্তার বা বিশেষজ্ঞ বা মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করুন।
পরিশেষে বলতে চাই-একটি সুস্থ ও ভারসাম্যমূলক সামাজিক ব্যবস্থা নির্মাণে ধূমপানের মতো মারাত্মক ক্ষতিকর নেশা পরিত্যাগ করা একান্ত জরুরি। যারা এখনো ধূমপান ত্যাগ করেননি, তারা মনোবল দৃঢ় করে এখনই এ নিকৃষ্ট নেশা পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন এবং ভবিষ্যতে সুস্থ ও ব্যাধিমুক্ত জীবনযাপনের উদ্যোগ নিন। সিগারেটের বাক্সটি পেছনে ফেলে আসুন সত্য ও সুন্দরের পথে।
ডা: মাও: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট,
মোবাইল: ০১৭১৬২৭০১২০।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।