পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে জনস্বাস্থ্য রক্ষা এবং প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ-২০৪০’ বাস্তবায়নে গণপরিবহন ও টার্মিনালগুলোতে ধূমপানমুক্ত সাইনেজ স্থাপন নিশ্চিত করতে হবে। এরপরও এখন পর্যন্ত সকল পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে ধূমপানমুক্ত সাইনেজ দেখা যায় না। তাই সকল পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে ধ‚মপানমুক্ত সাইনেজ প্রদর্শন ব্যবস্থা করতে হবে এবং এ বিষয়ে মনিটরিং ব্যবস্থা জোড়দার করতে হবে। পাশাপাশি এ বিষয়ে দায়িত্বরত সকলকে আরও অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর বিশ্বে ৬ কোটি মানুষ ধ‚মপানজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করে যার মধ্যে ৬ লাখ পরোক্ষ ধূমপানজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভের (গেট্স) প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জানা যায় যে, গণপরিবহনে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ প্রতিবছর পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন। ২০১৭ সালে প্রকাশিত গেটস’র ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ‘পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষিদ্ধ হওয়ার পরও প্রতিবছর গণপরিবহনে যাতায়াতের সময় প্রায় আড়াই কোটি মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন।’
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রয়োগের বিষয়ে ডাস্ পরিচালিত ২০২০ সালের জরিপ অনুযায়ি ৩৮৬ জন মানুষের মধ্যে ৫২ শতাংশ মানুষ গণপরিবহণে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়েছে। পাবলিক পরিবহণে ধূমপানের কারণে শাস্তির বিধান থাকলেও ৮৪ শতাংশ যাত্রীকে কখনও মোবাইল কোর্টের সম্মুখীন হতে দেখা যায়নি। জনগণকে পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা ও প্রধানমন্ত্রীর ২০৪০ সালের মধ্যে ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ ভিশন অর্জনের লক্ষ্যে বাস টার্মিনালসমূহে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে ধূমপানমুক্ত পরিবেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষে কাজ করা একান্ত জরুরী।
তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক আর্ন্তজাতিক ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) তে বিশ্বের স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম। বাংলাদেশ তাৎক্ষনিকভাবে চুক্তিটি অনুস্বাক্ষর করার পর ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করে। আইনটিতে এফসিটিসি এমপাওয়ারের কিছু বিধানাবলী সম্পৃক্ত রয়েছে যেমন- ধূমপান মুক্ত বিধি, বিক্রয় কেন্দ্রগুলিতে তামাকের বিজ্ঞাপন নিষেধাজ্ঞা, যুবা/শিশুদের কাছে তামাক বিক্রির নিষেধাজ্ঞা এবং প্যাকেটে বাধ্যতামূলক সচিত্র সর্তকতামূলক বাণী প্রকাশ এবং তামাক সরবরাহে নিয়ন্ত্রণ। ২০১৩ সাল থেকে সারাদেশ জুড়ে এই নীতিগুলোর বাস্তবায়ন /প্রয়োগের কমবেশি অগ্রগতি হয়েছে। তা সত্বেও বাংলাদেশে প্রতি বছর তামাক সেবন জনিত কারণে ১ লাখ ৬১ হাজার ২৫৩ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করছে।
বিআরটিএ এবং বাংলাদেশ যাত্রী কল্যান সমিতির মতে ঢাকা থেকে সারাদেশে প্রায় ৩০ হাজার আন্তঃজেলা বাস চলাচল করে যার মাধ্যমে প্রতিদিন প্রচুর সংখ্যক যাত্রী বাস টার্মিনালগুলো দিয়ে যাতায়াত করছে। কমলাপুর রেলস্টেশনে একটি দ্রুত তাৎক্ষণিক সমীক্ষা থেকে জানা যায় এই স্টেশন দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ৫০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করে। একইভাবে রাজধানী ঢাকায় ১৬৮টি রুটে ৪৫০০টি পাবলিক বাস চলাচল করে যার মাধ্যমে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ যাত্রী রাজধানীর একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যাওয়া আসা করে। ফলস্বরূপ ধূমপায়ীদের দ্বারা প্রতিনিয়ত অসংখ্য অধূমপায়ীব্যক্তি পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাবের শিকার হচ্ছে। গ্যাটস সার্ভে-২০১৮ অনুযায়ী প্রায় ৪৪ শতাংশ (২৫ মিলিয়ন) প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি পাবলিক পরিবহনে ভ্রমনকালে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। পরোক্ষ ধূমপান প্রত্যক্ষ ধূমপানের ন্যায় সমান ক্ষতিকারক। এছাড়া বাস টার্মিনাল ও রেলস্টেশনের আশেপাশে অসংখ্য তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ের দোকান রয়েছে যার মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ট্যাপস ব্যান ও সচিত্র সতর্ক বানী বিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর করেছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে আইন, ১৮৯০ এবং বিআরটিএ যথাক্রমে ট্রেন কম্পার্টমেন্ট ও গণপরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ করেছে এবং ‘ধূমপান নিষিদ্ধ’ সাইন বা স্টিকার লাগানোর বিধান রাখা হয়েছে। তা’সত্বেও আইনের দূর্বল প্রয়োগের কারণে বাস ও ট্রেন কম্পার্টমেন্ট সহ বাস টার্মিনাল ও রেল স্টেশনগুলোতে ধূমপান অব্যাহত রয়েছে। এদেশে তামাক সেবন জনিত কারণে বছরে প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার ২৫৩ মানুষ মারা যায়। এই পরিস্থিতিতে, অবিলম্বে যদি জরুরি ব্যবস্থা গৃহিত না হয় তবে আগামী কয়েক দশকে তামাকের কারণে মৃত্যের সংখ্যা দ্বিগুন হয়ে যাবে।
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ ও সংশোধিত ২০১৩ অনুযায়ী পাবলিক প্লেস ও পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ধূমপান নিষিদ্ধ এবং পাবলিক প্লেস ও পাবলিক ট্রান্সপোটের মালিক, তত্বাবধায়ক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইনের উদ্দেশ্য পালনে বাধ্য অন্যথায় তাদের জরিমানাযোগ্য শাস্তি প্রদান করা হবে। সূতরাং বাস মালিক সমিতি, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, রেলওয়ে বিভাগ, বিআরটিএ, জনপ্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও নাগরিক সমাজ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর প্রয়োগের সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
বর্তমান আইন অনুযায়ী, ‘পাবলিক প্লেসে ও ‘পাবলিক পরিবহনে’ ধূমপানের জরিমানা ৩০০ টাকা। পাবলিক প্লেস ও পরিবহন ধ‚মপানমুক্ত রাখতে না পারলে মালিক বা ব্যবস্থাপকদের জরিমানা হবে ৫০০ টাকা। আর ‘পাবলিক প্লেস বা ‘পাবলিক পরিবহনে’ ধূমপানমুক্ত এলাকার সাইন বা সতর্কবার্তা দেওয়া না থাকলে জরিমানা হবে এক হাজার টাকা।
এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাবনা হলো:
# তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পুলিশকে সরাসরি জরিমানার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। তাই আইন সংশোধনীর মাধ্যমে পুলিশকে এ ক্ষমতা দেওয়া হলে তামাক নিয়ন্ত্রণে আশানুরূপ সফলতা আসবে;
#গাড়িতে ও বাস টার্মিনালগুলোতে ধূমপানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রদানে অভিযোগ বক্স স্থাপন করা এবং অভিযোগ প্রাপ্তি সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং আইন অমান্যকারীদের জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা জোড়দার করার লক্ষে বাস টার্মিনালগুলোতে মোবাইল কোর্ট বসানোর ব্যবস্থা করা;
#গাড়িতে ও বাস টার্মিনালগুলোতে ধূমপানের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ জানানোর জন্য নির্দিষ্ট অভিযোগ প্রদানের নাম্বারের ব্যবস্থা করা এবং তদানুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা;
#মোবাইল কোর্টের পাশাপাশি টার্মিনালে দায়িত্বরত পুলিশের হাতে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে;
#ট্রাফিক পুলিশকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে কাজে লাগাতে হবে। সড়ক নিরাপত্তার মতো ধূমপানের বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রেও ধ‚মপায়ীদের নিরূৎসাহিত করতে হবে;
#পরিবহন শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বাস টার্মিনালগুলোতে অবাধে ধ‚মপান বন্ধের পাশাপাশি টার্মিনাল এলাকায় যত্রতত্র সিগারেটের দোকান যাতে বসতে না পারে সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দিতে হবে;
#ধূমপানের চাহিদা কমানো সহ তামাক পণ্যের সহজলভ্যতা কমানোর দিকে মনোনিবেশ করা এবং গণপরিসর ও গণপরিবহন শতভাগ ধ‚মপানমুক্ত রাখতে চালক, হেল্পার, যাত্রী সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা জরুরি;
#রাজধানীর গণপরিবহন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা এবং গণপরিবহনে ধ‚মপান নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর ও বাস্তবায়নে বাস মালিক সমিতির উদ্যোগে মনিটরিং ব্যবস্থা জোড়দার করা।
গণপরিবহণসহ পাবলিক প্লেসে ধূমপান সম্পূর্ণরুপে বন্ধ করতে হলে জনসচেতনতার পাশাপাশি আইনের সঠিক প্রয়োগ করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় এসব জায়গায় পাবলিক নির্দ্বিধায় ধুমপান করে যাচ্ছে। কোনো সাধারণ পাবলিক এ বিষয়ে কোনোরূপ প্রতিবাদ করলে বাস কর্তৃপক্ষ দ্বারা তাদেরকে মারধরসহ নানারকম হয়রানী ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। তাই প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে যেহেতু আমাদের হাতে আইন আছে তাই এটার যথাযথ প্রয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারী সংগঠনগুলো তামাক বিরোধী সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নানামূখী পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও সরকারের এবং বাস কর্তৃপক্ষর সদয় দৃষ্টির অভাবে আইনের বাস্তবায়ন ফলপ্রসু হচ্ছেনা। তাই তামাক বিরোধী সচেতনতা বৃদ্ধি ও ধূমপান নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পাশাপাশি বাস কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট মহলগুলিকে আরও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে এবং গণপরিবহণ ও পাবলিক প্লেসগুলোতে ধূমপান নিয়ন্ত্রণ আইন প্রয়োগে আরও কঠোর হতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।