গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
স্টাফ রিপোর্টার : ধূমপানের বিরুদ্ধে সর্বদাই সোচ্চার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। চিকিৎসকদের পরামর্শ দিয়েছেন ধূমপায়ী রোগীকে সেবা না দেয়ার, তরুণদের ধূমপান থেকে বিরত রাখতে অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার কথা বলেছেন, ধূমপায়ীদের মেডিকেলে ভর্তি না করার ঘোষণাসহ একটি ধূমপান মুক্ত সুন্দর প্রজন্ম গড়ে তুলতে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সমাজের সর্বস্তরের জনগণকে এগিয়ে আসার আহŸান জানিয়েছেন। অথচ নিজ মন্ত্রণালয়কেই ধূমপান মুক্ত করতে পারেননি। এমনকি স্বাস্থ্য মন্ত্রীর কক্ষে প্রবেশের আগে ধূমপানের গন্ধে দর্শনার্থীরা অস্বস্তিতে পড়েন। একাধিক সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করেছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়ালে ধূমপানমুক্ত পরিবেশ লেখা সাইন থাকলেও তা ওখানেই সীমাবদ্ধ। একাধিক সাংবাদিক বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেছেন সচিবালয়ে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ে এভাবে ধূমপানের দৃশ্য চোখে পড়ে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যেভাবে দেখা যায়। একাধিক সাংবাদিক অভিযোগ করে বলেন, অন্যান্য মন্ত্রণালয়ে জণসংযোগ কর্মকর্তার রুমে গিয়ে সাংবাদিকরা আড্ডা দিলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে পড়তে হয় বিপাকে। অধিকাংশ ঠিকাদার ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা এখানে তাদের ধূমপান জোন হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ধূমপানের গন্ধে সাংবাদিকরা এখানটায় ঢুকতে পারেন না। যদিও কিছু ধূমপায়ী সাংবাদিককে প্রায়শই ধূমপান করতে দেখা যায় জণসংযোগ কর্মকর্তা পরিক্ষিৎ চৌধুরীর কক্ষে। একাধিক সাংবাদিক অভিযোগ করে বলেন, এই কক্ষে বসেই নির্ধারিত হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন ঠিকাদারদের ভাগ্য। আর তাই ঠিকাদাররাও বাধ্য হয়ে এখানটায় আড্ডা জমাতে বাধ্য হন।
এদিকে গত রোববারও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে সাংবাদিক সম্মেলনে স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের কাছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ধূমপানমুক্ত নয় কেন এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আপনারা প্রমাণ দেন। আমি ব্যবস্থা নিব। অবশ্য বিকেলে প্রশ্ন করা ওই সাংবাদিককে পরিক্ষিৎ চৌধুরী ফোন দিয়ে জানান, আমার রুমে ধূমপান হয় এটা মন্ত্রী ও সচিব দু’জনেই জানেন। এটা নতুন কি? এটা নিয়ে কেন কথা বলেন।
সূত্র মতে, বরাবরই ধূমপানের বিরুদ্ধে সোচ্চার স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এরই অংশ হিসেবে তিনি জানান, বর্তমান সরকার জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে ২০১৩ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে এবং ২০১৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বিধিমালা প্রকাশ করে। আইনের বিধিমালা অনুসারে আগামী ২০১৬ সালের মার্চ মাস থেকে সকল তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেটের উভয় পাশে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী ব্যবহৃত হবে উল্লেখ করেন তিনি।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তামাকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে মিডিয়া ক্যাম্পেইনের উদ্বোধনীতে তিনি জানান, আগামী বছর থেকে এমবিবিএস ও বিডিএস ভর্তির সময় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীকে অধূমপায়ী হওয়ার সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে। ভর্তি পরীক্ষায় পাসের পরও শিক্ষার্থী যদি ধূমপায়ী হয় তবে তাকে ভর্তি করা হবে না এমন বিধিবিধান রাখার উদ্যোগ নেওয়া হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বিভিন্ন সময়েই ধূমপানের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসার আহŸান জানিয়েছেন। তিনি রোগীদের ধূমপান না করার পারমর্শ দিতে চিকিৎসকদের প্রতিও আহŸান জানান। স্বাস্থ্যমন্ত্রী চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলেন, আমি সব চিকিৎসকের প্রতি আহŸান করবো-আপনারা রোগী দেখার সময়ে বলবেন, তারা যদি ধূমপান করে, তাহলে তাদের সেবা দেয়া হবে না। চিকিৎসকদের এ ধরনের সতর্কবার্তা সাধারণ মানুষের মধ্যে ধূমপানভীতি গড়ে উঠতে সাহায্য করবে।
নাসিম বলেন- আসুন, তামাকমুক্ত বিশ্ব গড়ে তুলতে আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করি। ধূমপানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। যাতে করে তরুণ সমাজ ধ্বংসের পথে না যায়। একটি সুন্দর প্রজন্ম গড়ে তুলতে তামাকের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
গেøাবাল এ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) ২০০৯ অনুসারে, বাংলাদেশে ৪৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক সেবন করেন। এ হিসেবে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪ কোটি ১৩ লাখ, যার মধ্যে ২৩ শতাংশ (২ কোটি ১৯ লাখ) ধূমপানের মাধ্যমে তামাক ব্যবহার করেন এবং ২৭ দশমিক ২ শতাংশ (২ কোটি ৫৯ লাখ) ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করেন। ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারের প্রবণতা নারীদের মধ্যে বেশি পরিলক্ষিত হয়। বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর ৬৩ শতাংশ লোক অর্থাৎ ১ কোটি ১৫ লাখ কর্মক্ষেত্রে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন। ৪৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৪ কোটি ৩০ লাখ মানুষ পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। দি টোব্যাকো এটলাস অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ পুরুষ ও ৫ দশমিক ৭ শতাংশ মহিলা তামাক ব্যবহারের কারণে মারা যায়। যা অন্যান্য নিম্ন আয়ের দেশের গড় থেকে বেশি। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার একদিকে যেমন জনস¦াস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ, অপরদিকে জাতীয় অর্থনীতি তথা সমৃদ্ধির প্রধান অন্তরায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।