শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
মাওলানা জালাল উদ্দীন রূমী রহ.
কাব্যানুবাদ : রূহুল আমীন খান
২০৫৩. এক যে ছিল বীনা বাদক ওমরী শাসন কালে
কেটে ছিল জোয়ানী তার বেশ আরামে খোশ হালে।
২০৫৪. সুরে তাহার যেত সবাই ব্যথা বেদন সব ভুলি
হয়ে যেত আত্মহারা গুলবাগেও বুলবুলি।
২০৫৫. তার সুমধুর কণ্ঠস্বর ও সুর লহরী সঙ্গীতের
পুলক দোলায় দুলত সবাই মৌজে মেতে মৌতাতের।
২০৫৬. হুশ ও খেয়াল হারিয়ে যেত খুলত মনের সব কপাট
ইস্রাফীলের সিঙ্গা ফুঁকে যেন সে এক হাশর মাঠ।
২০৫৭. ইস্রাফীলের সমানই সে করত সবায় টাল-মাটাল
ডানা মেলে উড়ত যেন বিশাল বপু হাতীর পাল।
২০৫৮. ইস্রাফীলের সিঙ্গা যখন উঠবে বেজে দোস্রা বার
জীবন পেয়ে জাগবে তখন হাজা মজা অস্থি হাড়।
২০৫৯. ওলীর মাঝে সুপ্ত তেমন ইস্রাফীলী দৃপ্ত সুর
জাগে তাতে মুর্দা হিয়া জ্বলে হোথা দীপ্ত নূর।
২০৬০. বাহ্য কানের নেই ক্ষমতা অতিন্দ্রিয় গান শোনার
দুনিয়াদারী গপগুজারী নেয় যে কেড়ে শক্তি তার।
২০৬১. মানবজাতি শুনতে না পায় অপ্সরাদের সুর ও গান
ভিন্ন জাতির প্রাণী তারা নয়কো কভু এক সমান।
২০৬২. মানুষ-পরী এক জগতের তবু বুঝা যায় না গান
রূহের জগৎ ভিন্ন জগৎ বুঝবে কী তার রূপ ও শান।
২০৬৩. মানব-পরী বন্দি উভয় এক জগতের সীমার মাঝ
রূহী জগৎ সীমার অতীত তায় কি চেনা সহজ কাজ ?
২০৬৪. ‘আর রহমান’ সুরার পানে বৎস কর দিষ্টি থির
উৎস ভূমি জানতে পাবে হেথা তুমি জিন পরীর।
২০৬৫. তাদের ঊর্ধ্ব গমন সীমার সাধ্য যদি জানতে চাও
একই সুরার ষাট আয়াতের মানের পানে চোখ ফিরাও।
২০৬৬. আউলিয়াদের গুপ্ত গানের জেনে রেখ খবর এই
লা-এর১ তুমি অংশ বিশেষ তোমার তো এ খবর নেই।
২০৬৭. অলিক খেয়াল-দেয়াল ভেঙে বেরিয়ে এস শীঘ্র ভাই
ওই অসীমের সত্তা ছাড়া ভিন্ন তোমার সত্তা নাই।
২০৬৮. মাথা থেকে চরণ তোমার দুনিয়াতে নিমজ্জিত
হওনি আজও মূল জীবনের ভূষণে সুসজ্জিত।
২০৬৯. আউলিয়াদের কার্যকলাপ পরীদেরও বাইর সীমার
শরণ নিবে যখন ওলীর পাবে তুমি হদিস তার।
২০৭০. বয়ান করি যদি আমি ওই বাতেনী গানের হাল
বেরিয়ে তারা আসবে যারা আছে গোরের অন্তরাল।
২০৭১. শুনবে যদি গুপ্ত সে গান দাও এগিয়ে কর্ণদ্বয়
নয় তা’ সুদূর তবে তোমার নিকট বলা বৈধ নয়।
২০৭২. স্মরণ রেখো আউলিয়াগণ যুগ যমানার ইস্রাফীল
ফুঁয়ে তাদের চেতন লভে জাগ্রত হয় মুর্দা দিল।
২০৭৩. দেহ-কানন ধারণ করে সে দিল্্ থাকে মোর্দাবৎ
ওলীর ফুঁয়ে পায় সে চেতন জাগ্রত হয় অকস্মাৎ।
২০৭৪. যিন্দা হয়ে কয় সে কথা এ ফুৎকারের আজব শান
মৃত লাশের ভেতর আবার খোদা-ই করেন জীবন দান।
২০৭৫. আওলিয়া-সঙ্গীতে যখন ফিরে পায় মুর্দা তন
হর্ষে মাতি মহোল্লাসে খোদার আশিক কয় তখন।
২০৭৬. মরে গিয়ে, মিশে গিয়ে ছিলাম খাকে, খাকই সার
উঠল রনি খোদার ধ্বনি যিন্দা হলাম পুনর্বার।
২০৭৭. খোদার বাণী নবী থেকে কিংবা কারো অসিলায়
পেতে পারে, যেমন পেলো সাধ্বি মেরি- ঈসার মায়।
২০৭৮. ক্ষণস্থায়ী এই বাঁধনে ছিন্ন কর ঘুরাও মুখ
শ্রবণ করো বন্ধু-সংগীত লাভ করিবে পরম সুখ।
২০৭৯. আওয়াজ এবং ধ্বনি তুমি কণ্ঠেতে শুনছ বান্দার
কণ্ঠ ধ্বনি বান্দারই ঠিক বাণী হলো খোদ খোদার।
২০৮০. আল্লা’ বলেন, আমি তোমার কণ্ঠ, আমি চোখ তোমার
যাইগো হয়ে সব অবয়ব হইগো তোমার খোশ-বেজার।
২০৮১. যাও খুশি হও, আমার দ্বারাই শোনো দেখো এ সংসার
আমি কেবল ভেদ তব নই তুমিও খোদ ভেদ আমার।
২০৮২. আমার ভালোবাসায় যখন করলে তুমি সব উজাড়
আমিও তখন হয়ে গেলাম তোমার বন্ধ- মদদগার।
২০৮৩. কভু আমায় বলি তুমি কভু তোমায় আমি কই
তুমি আমি এক হয়ে যাই এক বনে যাই ভিন্ন নই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।