গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
ফ্রিজে সামান্য দাগ ফেলানোর অভিযোগে এক গৃহপরিচারিকাকে জখম ও নির্মম নির্যাতনের পর বাসা থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নারীনেত্রী সাঈদা সুলতানা এনির বিরুদ্ধে। রাজধানীর উত্তরায় এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার ওই তরুণী বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজেই অমানবিক ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।
নির্যাতনকারী বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী সাঈদা সুলতানা এনি ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক নেত্রী। অধ্যয়নকালে ছিলেন বুয়েটের একটি হলের ভিপি। নারীর অধিকার ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে শাহবাগের রাজপথ থেকে টেলিভিশন টকশোতেও বক্তব্য শোনা গেছে এই নেত্রীর। এমন নারীনেত্রীর হাতেই গৃহপরিচারিকাকে নির্যাতনের ঘটনায় শাস্তি দাবি করেছেন অনেকেই।
নির্যাতনের শিকার তরুণী জানান, ‘উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ৭ নম্বর রোডের ৩৩ নম্বর বাসার ষষ্ঠ তলায় কাজ করতাম। অপর এক গৃহকর্মী কাজ করার সময় ফ্রিজে দাগ ফেলে দেয়। এতে বাসার মালিক আমার ওপর অপবাদ দেয় এবং আমাকে অনেক মারধর করে, একপর্যায়ে আমি প্রাণভয়ে বাড়ি থেকে বের হতে চাইলে তিনি আমাকে গেট লাগিয়ে আবার মারধর করেন। পরে অনেক কষ্ট করে কোনোরকম সেখান থেকে বের হয়ে আমি পুলিশের কাছে যাই।’
নির্যাতিত তরুণীর পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গেছে, সাঈদা সুলতানা অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও চড়াও হচ্ছেন ওই গৃহপরিচারিকার ওপর।
নির্যাতনের শিকার তরুণী ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘এই করোনার মহামারিতে মানুষ এমন হিংস্র কিভাবে হতে পারে। আজ গরিব হয়ে জন্ম নিয়েছি বলে, বড় লোকদের হাতে মার খেয়ে চুপ থাকতে হচ্ছে, কারণ পুলিশ শুধু বড়লোকদের, আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে ছোট একটা জবে ঢুকেছিলাম, এর মধ্যে করোনার জন্য চাকরি শেষ পর্যন্ত করতে পারি নাই, ভাবলাম বসে থেকে কি হবে, এক পরিচিত ভাইয়ের মাধ্যমে এক বড়লোকের বাড়িতে একটা প্রতিবন্ধী মেয়ে দেখাশোনা করার জন্য কাল যাই। সামান্য একটা ভুলের কারণে, যেই ভুলটা আমি করি নাই, ফ্রিজ পরিষ্কার করা নিয়ে একটু দাগ হওয়ার কারণে, কাল থেকে আজ সকাল পর্যন্ত আমাকে আটকে রেখে এমন নির্যাতন করে, আমি বার বার বলছি ম্যাম আমাকে যেতে দেন, উনি পরে আমার একটা ভিডিও ধারণ করে, যেখানে আমাকে জোরপূর্বক বলতে বলে যে আমি উনার বাসা থেকে ইচ্ছাকৃত চলে যাচ্ছি, আমি মারের ভয়ে বলতে বাধ্য হয়েছি, তারপর আমি থানায় যাই, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি, পুলিশ আমার সঙ্গে আসছে ঠিক কিন্তু, উনার সাথে ফোন কথা বলে, আমাকে বলছে আপনি বাসায় যান, আমরা দেখছি ব্যাপারটা। জানি আমি এটার আর কিছু হবে না, তাই আপনাদের সাথে কথাটা শেয়ার করলাম, মানুষ কোন সময় এমন সিদ্ধান্ত নেয় কারো বাসায় কাজ করার সেটা অবশ্যই বুঝতে পারছেন। পরিস্থিতি মানুষকে অসহায় করে ফেলে, যখন মা-বাবার মুখের দিকে তাকাই তখন আর কোনো কিছু মাথায় আসে না।’
এ বিষয়ে ছাত্রইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি মারুফ বিল্লাহ এক গণমাধ্যমকে বলেন, ব্যক্তির দায় কখনো সংগঠনকে দিয়ে লাভ নেই। সাঈদা সুলতানা এনি যেটা করেছেন সেটা নিঃসন্দেহে অপরাধ। কিন্তু সেটা সোশ্যাল মিডিয়া বা ব্যক্তিগত ট্রায়ালে শাস্তির চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভুক্তভোগী তরুণীর সুরক্ষা।
ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল বলেন, একটিভিস্ট হিসেবে চিনতাম। তিনি ছাত্র ইউনিয়ন করতেন জানি না। তবে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের সমর্থনে বুয়েটে হলের ভিপি নির্যাচিত হয়েছিলেন। যাই হোক তার অপকর্মের দায় সংগঠনের নয়, বরং তিনি যেটা করেছেন সেটা তো অপরাধই। তবে একটিভিস্ট হিসেবে, নারীবাদী হিসেবে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের সাবেক শিক্ষার্থীর দ্বারা এ ধরনের কাজ আরও বড় অপরাধ। আমরা দলের পক্ষ থেকে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
উত্তরা পশ্চিম থানার ডিউটি অফিসার এসআই নাহিদ জানান, ভুক্তভোগী তরুণী নিজেই থানাই এসেছেন। তার একটা অভিযোগ নেয়া হয়েছে। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে মামলা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।