পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলা ও আরো হামলার আশংকা দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে বিনিয়োগ ও রফতানিতে এ প্রভাব বড় আকারে দেখা দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সরকারের তরফে অবশ্য এ ধরনের আশঙ্কাকে আমল দেয়া হচ্ছে না। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় বিনিয়োগে সামান্যতম নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে কোনো প্রভাব পড়বে না। তারা যাই বলুন, সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এর প্রভাব বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে কিছু না কিছু পড়বেই। আর যদি সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা অব্যাহত থাকে, তবে অনিবার্যভাবেই অর্থনীতি ও উন্নয়নের বিভিন্ন খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়তে পারে তৈরী পোশাক রফতানি। এর মধ্যেই কিছু আলামত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানের দুটি সম্মেলন স্থগিত হয়ে গেছে। বিদেশী ব্যবসায়ীরা তাদের সফরগুলোও বাতিল করেছেন। বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং এসোসিয়েশন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, সন্ত্রাসী হামলার কারণে তৈরী পোশাক খাত চলতি মওসুমে দুই থেকে আড়াই বিলিয়ন ডলারের অর্ডার হারাতে পারে। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চলতি মওসুমে (জুলাই-আগস্ট) ৬০ শতাংশ পোশাকের অর্ডার হয়ে থাকে। এর মধ্য ১৫ থেকে ২০ শতাংশ অর্ডার অন্যদেশে চলে গেলে এ খাতে দুই থেকে আড়াই বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হবে। সংগঠনের সভাপতি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, এইচ এন্ড এম বাংলাদেশ থেকে তার ব্যবসা সংকোচনের কথা ভাবছে। আরও অনেক বিদেশী ক্রেতা নতুন করে ব্যবসা সম্প্রসারণ না করার চিন্তা করছেন। এছাড়া অনেক বায়িং হাউসকে ক্রেতারা তাদের নেতিবাচক অবস্থানের কথা জানিয়েছেন।
রফতানি আয়ের ৮২ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক রফতানি থেকে। এই খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়লে মোট রফতানি আয়ে তার প্রতিফলন ঘটবে স্বাভাবিকভাবেই। একই কারণে অন্যান্য পণ্যের রফতানিও কমে যেতে পারে। তৈরি পোশাক ক্রেতাদের জোট এলায়েন্স অবশ্য আশ্বাস দিয়েছে, সন্ত্রাসী হামলা সত্ত্বেও পোশাক আমদানি অব্যাহত রাখবে। তবে এ আশ্বাসের ওপর খুব একটা ভরসা রাখতে পারছেন না রফতানিকারকরা। তাদের মতে, সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা দূর করে আস্থার পরিবেশ নিশ্চিত করা না গেলে রফতানি ও রফতানি আয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। তাদের এই আশঙ্কা এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়। বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং এসোসিয়েশনের তরফ থেকে তৈরি পোশাক খাতকে বাঁচাতে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য সৃষ্টির তাগিদ দেয়া হয়েছে। আসলে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত উদ্যোগ ও পদক্ষেপের মাধ্যমেই সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা দূর করা সম্ভব। না হলে তৈরি পোশাকসহ গোটা রফতানি খাত অনিরাপদ হয়ে পড়বে। সদ্যবিদায়ী ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রফতানি আয় ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার দাঁড়িয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি। এতে রফতানি বাড়ার সম্ভাবনা স্পষ্টতই প্রতিভাত হয়। কিন্তু উপর্যুপরি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ও হামলার আশঙ্কা থেকে যে অনিরাপত্তা ও অনাস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বা হতে যাচ্ছে, তাতে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরে রাখা কতটা সম্ভব হবে সেটাই বড় প্রশ্ন।
চলতি অর্থবছরের জন্য ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অবশ্যই সম্ভব যদি কাক্সিক্ষত পরিবেশ, উদ্যোগ ও প্রণোদনা নিশ্চিত করা যায়। একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা ও হামলার আশঙ্কা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি, শিল্পের সংকট এবং নানা বাধা ও প্রতিবন্ধকতা যে হুমকি তৈরি করেছে তা দূর করার বিকল্প নেই। সরকার সন্ত্রাস দমনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এতে জনগণ, ব্যবসায়ী মহল ও আন্তর্জাতিক মহলের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই যেন বেপরোয়া সন্ত্রাসীদের রোখা সম্ভবপর হয়ে উঠছে না। এই প্রেক্ষাপটে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার দাবি উঠেছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের দক্ষতা বাড়ানোর তাগিদ উচ্চারিত হয়েছে। এখন যেহেতু সন্ত্রাসবাদ ইতোমধ্যে বৈশ্বিক চরিত্র ধারণ করেছে, সুতরাং দরকার হলে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নেয়ার কথাও বলা হয়েছে। এই বিষয়গুলো সরকারকে বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। জনগণের মধ্যে, ব্যবসায়ীদের মধ্যে এবং বিদেশী ক্রেতাদের মধ্যে যে ভীতি, আতঙ্ক ও আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে, সর্বোচ্চ জাতীয় অগ্রাধিকারে তা দূর করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।