পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশে প্রথম বারের মতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর তিন সপ্তাহ অতিক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে মৃতের সংখ্যাও। আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৮ এবং মৃতের সংখ্যা ৫। করোনার উপসর্গ নিয়ে বেশ কিছু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। একদিনেই এরকম ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। এসব তথ্য আমাদের জন্য অবশ্যই অশনিসংকেত। অথচ করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে উল্লেখ করার মতো কোনো অগ্রগতিই হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে পরীক্ষার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, পরীক্ষা, পরীক্ষা এবং পরীক্ষা। পরীক্ষার ওপর এত গুরুত্ব দেয়ার কারণ সহজেই অনুমেয়। আনুষ্ঠানিক চিকিৎসা শুরু করতে পরীক্ষার বিকল্প নেই। পরীক্ষার মাধ্যমেই কেবল জানা সম্ভব কারো দেহে করোনারভাইরাস আছে কিনা। পরীক্ষায় যদি পজিটিভ লক্ষণ স্পষ্ট হয়, তাহলেই তাকে চিকিৎসা দিতে হবে। বিগত দু’দিনে দেশে কোনো করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। এর অর্থ অবশ্যই এটা নয় যে, দেশে করোনা নির্মূল হয়ে গেছে। প্রতিদিন পরীক্ষা হচ্ছে সামান্য সংখ্যক সন্দেহভাজন ব্যক্তির। যেমন দু’দিনে পরীক্ষা হয়েছে মাত্র ১৬২ জনের। কিন্তু পরীক্ষায় অপেক্ষায় আছে আরও লাখ লাখ ব্যক্তি। তাদের মধ্যে যে কেউ করোনায় আক্রান্ত নেই, তা হলফ করে বলা যাবে না। ব্যাপকভিত্তিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হলেই কেবল এ বিষয়ে প্রকৃত চিত্র পাওয়া সম্ভবপর হতে পারে। সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের বেশিরভাগের পরীক্ষা করা খুব সহজ কাজ নয়। এটা অবশ্যই একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ এবং তা এড়িয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। এই ব্যাপকভিত্তিক পরীক্ষার জন্য বিপুল সংখ্যক পরীক্ষা কেন্দ্র যেমন দরকার তেমনি দরকার প্রশিক্ষিত লোকবল, প্রয়োজনীয় টেস্টিং কিট এবং পরীক্ষার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের নিশ্চিত নিরাপত্তা। এতদিনে বলতে গেলে এসবের কিছুই করা হয়নি। পরীক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠান একটির জায়গায় তিনটি হয়েছে মাত্র। অগ্রগতির এই নমুনা অত্যন্ত দু:খজনক।
পরীক্ষারই যখন এই হাল, তখন চিকিৎসার হাল কেমন, তা বিশদ বলার প্রয়োজন পড়ে না। এদিকে ঝুঁকির মাত্রা ক্রমাগত বাড়ছে। ইতোমধ্যে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে। অথচ বিদেশফেরতদের অধিকাংশেরই কোয়ারেন্টাইনে নেয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়া শহর থেকে গ্রামে জনস্থানান্তর চলছেই। বিদেশ ও শহরফেরতরা বেশির ভাগই হোম কোয়ারেন্টানে না থেকে ঘোরাফেরা ও মেলামেশাতেই ব্যস্ত। এ অবস্থায় করোনা দ্রুত ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। বিদেশ ও শহরফেরতদের ঘরে আটকানো, সারাদেশে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা, সন্দেহভাজনদের দ্রুত পরীক্ষার ব্যবস্থা করা এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত করাই এখনকার কাজ। এসব কাজে ত্রুটি হলে, ব্যত্যয় ঘটলে বিপদের শেষ থাকবে না। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালী প্রভৃতি উন্নত ও ধনীগুলোও এখন করোনার আঘাতে ধরাশায়ী। সুযোগ-সুবিধা, সম্পদ-সামর্থ, সচেনতা-দায়িত্বশীলতা অনেক বেশি থাকার পরও তাদের যদি এমন বেহাল অবস্থা হয়, তবে আমাদের কী হতে পারে, তা অনুমান করা মোটেই কঠিন নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে আগেই বলা হয়েছে, করোনা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশ। এখানে করোনার প্রকোপ বিস্তৃত হলে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যাবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ হাসপাতাল সুবিধা বিশেষত আইসিইউ ও ভেন্টিলেশন সুবিধাসহ অবকাঠামো সুবিধার ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি দূর করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সহায়তা করতে রাজি হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে নিয়ে এ বিষয়ে যে পরিকল্পনা করা হয়েছে, তাতে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে এবং বাস্তবায়নে সময় লাগবে ৩ থেকে ৬ মাস। ওদিকে জাতিসংঘ বলেছে, অতি দ্রæত ব্যবস্থা না নিলে বাংলাদেশে করোনা অতি দ্রæতগতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বলা বাহুল্য, এ আশংকা বাংলাদেশের জন্য খুবই উদ্বেগজনক।
করোনা যখন বাংলাদেশে প্রার্দুভূত হয়নি, এখন থেকে সরকারের তরফে অনেক লম্বা লম্বা কথা বলা হচ্ছে। তিন সপ্তাহ আগে যখন প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়, তখনও এ লম্বা কথায় ছেদ পড়েনি। ‘করোনা মোকাবিলার সকল প্রস্তুতি আমাদের আছে’ ‘করোনা আমাদের হারাতে পারবে না; আমরাই জিতব’, ইত্যাকার অনেক কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এখন বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, কোনো প্রস্তুতি, কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। বিদেশফেরতদের সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা, তাদের তাৎক্ষণিকভাবে ও পরবর্তীতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা, টেস্ট কিট সংগ্রহ, ব্যক্তি নিরাপত্তার জন্য সরঞ্জামাদি সংগ্রহ, পরীক্ষা কেন্দ্র ও হাসপাতাল প্রস্তুত করা ইত্যাদি কোনো কিছুই যথোচিত গুরুত্বসহকারে করা হয়নি। এখনও সবকিছু ঢিলেঢালাভাবেই চলছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তো বটেই, এমন কি সরকারেরও এব্যাপারে সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। যে কাজটি সর্বাগ্রে করা দরকার ছিল, সেই পরীক্ষার ব্যাপারটিই নিশ্চিত করা যায়নি। মানুষ যখন দেখে যে, একদিনে করোনার উপসর্গ নিয়ে ৭জনের মৃত্যু হয়েছে, তখন তাদের উদ্বেগ ও শংকার শেষ থাকে না। এমতাবস্থায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা সরকারের প্রতি আস্থা রাখা মানুষের পক্ষে সম্ভব হয় না। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস হারানো কোনো সরকারের জন্যই ভালো আলামত নয়। অতএব, এ মুহূর্তেই সরকারকে পূর্নশক্তি নিয়ে করোনা মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। সময় খুব বেশি হাতে বলে মনে হয় না। করোনা সংক্রমণের চতুর্থ বা শেষ ধাপের আমরা খুব কাছকাছি এসে দাঁড়িয়েছি। এখন তাকে ঠেকাতে না পারলে আমাদের হয়তো বহুগুণে খেসারত দিতে হবে। কাজেই, যা করার, এখনই করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।