Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুষ্টিয়ায় অবাধে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ নোট গাইড

এস এম আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়া থেকে | প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০২০, ১২:০২ এএম

সরকার যখন শিক্ষার মান উন্নয়নে ব্যস্ত ঠিক তখনই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী শিক্ষার মান কমাতে বদ্ধপরিকর। ইতোমধ্যে সরকার বিনামূল্যে সারাদেশের শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়েছে নতুন বই। কিন্তু বিগত বছরগুলোর মতো এবারো নিষিদ্ধ নোট-গাইড, গ্রামার বইয়ের অবাধ বাণিজ্য বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন অভিভাবক-শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকরা। নিষিদ্ধ এসব নোট-গাইড, গ্রামার বইয়ের বাণিজ্যের সঙ্গে এক শ্রেণির শিক্ষকদের সহায়তায় সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে বলে মনে করেন অভিভাবকরা। তাদের ধারণা ওই সিন্ডিকেটের কারণেই বন্ধ করা যাচ্ছে না অসাধু এই ব্যবসা। ফলে শিক্ষকদের সহায়তায় গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটটি প্রতিবছরই হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, ৫০% কমিশনে ওইসব নিষিদ্ধ গাইড বই ঢাকা থেকে কিনে নেয় কুষ্টিয়াতে ১৫% কমিশনে বিক্রয় করছে ওই সিন্ডিকেট। জানা যায়, ১৯৮০ সালে একটি আইনে এসব বই ছাপা ও বাজারজাত করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে এ আইন কার্যকর হচ্ছে না। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই অনেকটা প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে নোট-গাইড বই। গত বছরের সারাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানাবিধ কারণে ব্যস্ত সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আর এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে চক্রটি বিপুল উদ্দীপনা নিয়ে বিক্রি শুরু করেছে এসব নোট-গাইড বই।
শিক্ষার্থীরা বলছে, স্কুল থেকেই এসব বই কিনতে অনেক সময় শিক্ষকরা উদ্বুদ্ধ করেন। শিক্ষকরা ক্লাসে এসে বুকলিস্ট দিয়ে দেন। ওই লিস্ট অনুযায়ী নোট, গাইড, গ্রামার ও ব্যাকরণ বই কিনতে বলা হয়। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই কিনতে হয় নির্দিষ্ট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের এসব সহায়ক বই।
অভিভাবকরা বলছেন, শিক্ষকদের পরামর্শ অনুযায়ী ছেলে-মেয়েদের ভালো ফলের আশায় বুকলিস্ট অনুযায়ী বই কিনতে হচ্ছে। এসব নোট বা গাইড বই কেনার সময় ভাবারও অবকাশ থাকে না নিষিদ্ধ কিনা। মূলত এক ধরণের বাধ্যবাধকতা থেকেই এসব বই কেনা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ মার্কেটের পুথিঘর, পপি, ছাত্রবন্ধু, বইঘড়, ঞ্জানকোষ, নবপুথিঘড়, গ্রস্থমেলা, বুক প্যালেস, আদর্শ লাইব্রেরি, সাহিত্য কোষ, আমিন বুক ডিপো, বই বিতান, বই ঘড়, বই পরিচয়, স্টুডেন্ট লাইব্রেরি ও জেলা উপজেলার সকল ছোট বড় লাইব্ররিতে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বই। এসব লাইব্রেরিতে অন্তত ৫০টি পাবলিকেশন্সের বই বিক্রি হচ্ছে। প্রতিযোগিতার এই বাজারে বেশি ব্যবসা করার জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষকদের ম্যানেজ করছে কমিশন দিয়ে নিষিদ্ধ নোট ও গাইড বইয়ের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে এসব বই কিনতে অনেক সময় শিক্ষার্থীদের বাধ্যও করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বছরের শুরুতেই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষকদের আকৃষ্ট করতে নানাভাবে প্রস্তাব দেয়। কখনো বিভিন্ন উপহার দিয়ে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বই কিনতে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিতে বলা হয়। কখনো কখনো ঘুষ দেয়া হয়। টাকার পরিমাণ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ভেদে ২০ হাজার থেকে লাখও ছাড়িয়ে যায়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়কে আসবাবপত্র দিয়ে থাকে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান।
শিক্ষাবিদরা মনে করেন এমন অবস্থা চলতে থাকলে শিক্ষার মান ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গাইড


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ