Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শ্রীপুরে প্রাথমিকে নোট-গাইড ব্যবহার

সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য : উদাসীন কর্তৃপক্ষ

| প্রকাশের সময় : ১৮ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শ্রীপুর (গাজীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা : গাজীপুরের শ্রীপুরে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রায় ১৬৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নোট ও গাইড বই কিনতে বাধ্য করার অভিযোগ পাওয়া গেছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে।
শিক্ষার্থীদের নোট-গাইড ব্যবহারের প্রতিকার চেয়ে ২০ নং টেপিরবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লুৎফর রহমান ফরহাদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ গাজীপুর জেলা প্রশাসক, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করলেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় দেখা যাচ্ছে। প্রভাবশালী শিক্ষা অফিসার শক্ত খুঁটির জোরে বহাল তবিয়তেই রয়ে গেছেন। নোট-গাইড বই ব্যবহার বন্ধ করার জন্য সচেতন অভিভাবকরা বারবার অনুরোধ করলেও কৌশলী শিক্ষা অফিসারের চাহিদা পূরণে শিক্ষকরা অবাদে নোট-গাইড বই ব্যবহার চালিয়ে যাচ্ছেন। অভিযোগে জানা যায়, গত তিন মাস ধরে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান শিক্ষকদের তার অফিসে ডেকে নোট, গাইড ও সাজেশন বই শিক্ষার্থীদের কিনতে বাধ্য করার আদেশ দিয়েছেন এবং প্রতিটি বইয়ের মূল্য বাবদ ১০০ টাকা করে আদায় করতে বলেছেন।
টেপিরবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লুৎফর রহমান ফরহাদ জানান, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্র্তা কামরুল হাসান যোগদানের পর থেকেই নোট ও গাইড বইয়ের প্রচলন শুরু করে তা বাধ্যতামূলক হিসেবে মৌখিক নোটিশ জারি করেছেন। সরকারিভাবে এসব নিষিদ্ধ থাকার পরও এগুলো বাধ্যতামূলক করায় প্রতিকার চেয়ে বিভিন্ন দফতরে তিনি অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগের সত্যতা থাকা সত্তে¡ও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাজীপুর ইউনিয়নের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমাদের এসব বই বিক্রি করার জন্য আদেশ করেছেন। অনেক সময় শিক্ষা কর্মকর্তার আদেশ মানতে আমরা বাধ্য। মাওনা ১ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল কবির খান বলেন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের আদেশেই আমরা ছাত্রছাত্রীদের হাতে এসব বই বিক্রি করেছি। একই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফামমিদা আক্তার বলেন, প্রধান শিক্ষক আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বই দিয়েছেন।
এ ছাড়াও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার সনদপত্রে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কামরুল হাসানের স্বাক্ষরকৃত শিক্ষার্থীর নামবিহীন ও অন্যান্য তথ্য লেখাবিহীন সনদপত্র অভিভাবকের হাতেও রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, শ্রীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার গাজীপুর সদর উপজেলায় কর্মরত থাকাকালীন অবস্থায় বিভিন্ন অনৈতিক ও দুর্নীতির অভিযোগে গাজীপুর শিক্ষক সমাজের ব্যানারে তার বিরুদ্ধে পোস্টার ও লিফলেট ছাপিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে শিক্ষক সমাজ। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগে দু’টি বিভাগীয় মামলা করা হয়।
তিনি বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনকালে অন্যান্য বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকাদের নিয়ে পরিদর্শনে যান, যা নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে শিক্ষক মহলে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল হাসান তার বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব নোট ও গাইড সাজেশন সরকারিভাবে অবৈধ, কেউ হয়তো নিজেরা লাভবান হতে আমার উপর দোষ চাপাচ্ছেন, এর সাথে আমি জড়িত নই।
গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিউল আলম বলেন, নানা অনিয়মের বিষয়ে আমি সংবাদ পেয়েছি, তদন্তপূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড: দেওয়ান হুমায়ুন কবির জানান, শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে, তদন্ত করে দোষী প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নোট-গাইড
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ