Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দিল্লির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নিয়ে কেন চুপ ভারতের পার্লামেন্ট?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০২০, ১২:০১ এএম

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে যে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রায় পঞ্চাশটির মতো প্রাণহানি ও আড়াইশোরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন - তা নিয়ে দেশের পার্লামেন্টে সরকার কোনও আলোচনাই হতে দিছে না। বিরোধীরা বাকি সব প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে দিল্লির দাঙ্গা নিয়ে বিতর্কের জন্য নোটিশ দিলেও লোকসভার স্পিকার জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে হোলি উৎসব মিটে যাওয়ার পরেই তিনি এ বিষয়ে কথা বলার অনুমতি দেবেন। হৈচৈ করার জন্য লোকসভায় বিরোধী কংগ্রেসের সাতজন এমপিকে বাজেট অধিবেশন শেষ না হওয়া পর্যন্ত সাসপেন্ড করা হয়েছে। তারা অধিবশনে আসতে পারবেননা। রাজ্যসভাতেও চেয়ারম্যান তথা দেশের উপপ্রেসিডেন্ট ভেঙ্কাইয়া নাইডু বলেছেন, পরিস্থিতি ‹স্বাভাবিক› হওয়ার আগে দিল্লির দাঙ্গা প্রসঙ্গ সভায় তোলা যাবে না।

এই ইস্যুতে বৃহস্পতিবার টানা তৃতীয় দিনের মতো ভারতের পার্লামেন্টে তুমুল বিতন্ডা হয়েছে - মুলতুবি করে দিতে হয়েছে উভয় সভাই।

বস্তুত দিল্লির দাঙ্গা নিয়ে পার্লামেন্টে ঝড় তোলার জন্য বিরোধী দলীয় এমপি-রা চেষ্টা চালিয়ে যাছেন এ সপ্তাহের গোড়া থেকেই। সে জন্য তারা বিধিমাফিক নোটিশ দিয়েছেন, সভায় স্লোগান দিছেন - কিন্তু লোকসভা বা রাজ্যসভা কোথাওই তারা মুখ খুলতে পারেননি।
ভাইস প্রেসিডেন্ট ভেঙ্কাইয়া নাইডু রাজ্যসভায় এদিনও ঘোষণা করেছেন, তিনি এই অধিবেশনে বিষয়টি তুলতেই দেবেন না। এমনকি, দিল্লির দাঙ্গা নিয়ে বিরোধীরা সভায় কী স্লোগান দিছেন সেটাও রিপোর্ট করতে মি নাইডু মিডিয়াকে নিষেধ করেছেন - কারণ তার কথায় এটা পার্লামেন্ট, বাজার নয়! কেন দাঙ্গা নিয়ে এখন আলোচনা নয়, তার যুক্তি হিসেবে দুই সভাতেই চেয়ারম্যান ও স্পিকার একই যুক্তি দিয়েছেন।

রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বলছেন, আমাদের এখন অগ্রাধিকার হল পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে তোলা। তারপর আমরা আলোচনা করব, কীভাবে এ ধরনের অবস্থা ঠেকানো যায়। লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা-ও অবিকল একই যুক্তি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, হোলির ছুটির পর যখন পার্লামেন্ট বসবে তখন দাঙ্গা নিয়ে আলোচনার কথা ভাবা যাবে।
রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদ পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, সরকারকে যখন দিল্লির অবস্থা নিয়ে জিজ্ঞেস করা হছে, বিবৃতি আসছে পরিস্থিতি নাকি শান্ত ও স্বাভাবিক।

কিন্তু সভায় আলোচনা চাইলে বলা হছে পরিস্থিতি আগে শান্ত হোক। অবস্থা যদি নিয়ন্ত্রণেই থাকে, তাহলে সভায় তো বিতর্ক হতে দেয়া উচিত। শুধু কংগ্রেসই নয়, বিতর্কের দাবিতে সরব হয়েছে তৃণমূলও - যে দলের নেত্রী মমতা ব্যানার্জি ইতিমধ্যেই দিল্লির দাঙ্গাকে গণহত্যা বলে বর্ণনা করেছেন।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও দেশের অন্যতম প্রধান বিরোধী নেত্রী মিস ব্যানার্জি বলেছেন, দিল্লিতে যেভাবে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, আমি মনে করি এটা একটা প্ল্যানড জেনোসাইড বা পরিকল্পিত গণহত্যা। কিন্তু সভার ভেতরে বলার সুযোগ না পেয়ে তৃণমূল এমপিরাও চোখে কালো কাপড় বেঁধে আর ঠোঁটে আঙুল দিয়ে তাদের প্রতিবাদ জানাছেন পার্লামেন্টের বাইরে, গান্ধীমূর্তির সামনে। তৃণমূল এমপি মহুয়া মৈত্রর কথায়, সরকার যেভাবে চোখ বুজে ছিল এবং দাঙ্গার প্রথম তিন দিন পুলিশ নীরব দর্শকের ভ‚মিকায় ছিল তার বিরুদ্ধেই এটা আমাদের প্রতীকী প্রতিবাদ।

রাজধানীর বুকে এতগুলো প্রাণহানির পরেও সরকার মুখ বুজে আছে - দেশের ভেতরে যেমন, বাইরেও তারা ভারতের সম্মানকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে, বলছেন মিস মৈত্র। অথচ দুদিন আগেই প্রধানমন্ত্রী মোদি দুই সভা মিলিয়ে পৌনে চারশ’ বিজেপি এমপি-র সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন, সেখানেও তিনি দিল্লির দাঙ্গার প্রসঙ্গ তোলেননি। বিজেপি নেত্রী মীনাক্ষী লেখি ওই বৈঠকের পর জানান, প্রধানমন্ত্রী আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন ক্ষমতা ভোগ করতে নয় - বিজেপি দেশসেবা করতে এসেছে।

বন্দে মাতরম বা ভারতমাতা কি জয়ের মতো স্লোগানকে সা¤প্রদায়িক রং দেয়ার চেষ্টা হছে বলেও মোাদজি সতর্ক করে দিয়েছেন। কিন্তু দিল্লির ভয়াবহ দাঙ্গার পর প্রায় দশদিন কেটে গেলেও আজ পর্যন্ত সেই মোদি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতীয় গণতন্ত্রের পীঠস্থান সংসদে তা নিয়ে কোনও বিবৃতি দেননি, মুখও খোলেননি। এমনকি সভার স্পিকাররা মুখ খুলতে দেননি বিরোধী দলীয় সদস্যদের। সূত্র : বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ