নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
দীর্ঘদিন ধরে বড় ইনিংসের দেখাই পাচ্ছিলেন না তামিম ইকবাল। সর্বশেষ ইনিংসগুলোতে তার স্কোর- ৮, ০, ১৯, ২, ২৪। সঙ্গে স্ট্রাইক রেট নিয়েও ছিল সমালোচনা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে এক সেঞ্চুরিতে কয়েকটি অতৃপ্তি প‚রণ করেছেন তিনি। ২৩ ইনিংস পর দেখা পেয়েছেন ১২তম সেঞ্চুরি। তার ব্যাটে ভর করে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে রেকর্ড ৩২২ রান সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ১৫৮ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। ছুঁয়েছেন প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে সাত হাজার রানের মাইলফলক। এক ইনিংসে এত রেকর্ড করার পর তাকে বাংলাদেশে ‘রেকর্ড’-এর বরপুত্র বললেও অত্যুক্তি হবে না।
জিম্ববুয়ের বিপক্ষে ২০০৯ সালে বুলাওয়েতে ১৫৪ রানের বিধ্বংসী সেঞ্চুরি করেছিলেন তামিম। বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এটাই ছিল সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। ১১ বছর পর সেই ইনিংস টপকে গেলেন তামিম নিজেই। মুম্বার বলে মুতম্বজির হাতে ক্যাচ তুলে দেওয়ার আগে ১৫৮ রানের ইনিংস খেলেন দেশসেরা ওপেনার। ১৩৬ বলে ২০টি চার ও ৩ ছক্কায় এই নান্দনিক ইনিংস খেলেন তিনি।
একই সঙ্গে দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরি খরাও দ‚র করলেন তামিম। দেশের মাটিতে পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সেঞ্চুরি ছিল তামিমের। আর পুরনো বন্ধু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ৯৫ রান। ২০১০ সালে চট্টগ্রামে এ স্কোর গড়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ ১০ বছর পর সেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও সেঞ্চুরি পেলেন ৩০ বছর বয়সী এ ব্যাটসম্যান। শুধু সেঞ্চুরিই নয়, একেবারে দেড়শ রানে পৌঁছে যান টাইগার ওপেনার। ঘরের মাঠে এত দিন ১৪৪ রান করে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস ছিল ইমরুল কায়েসের। এ রেকর্ডটি কেড়ে নেন চট্টগ্রামের বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। এর আগে ঘরের মাঠে নিজের সর্বোচ্চ ১৩২ রানের ইনিংস টপকে যান তামিম। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐ ইনিংস খেলেন তিনি।
১৫৮ রান করে ওয়ানডে ক্রিকেটে এখন বাংলাদেশর সেরা দুটি ইনিংস নিজের দখলে নিলেন তামিম। কেবল তা-ই নয় সেরা ১০টি ইনিংসের মধ্যে ৬টির মালিক এ মারকুটে ওপেনার। সেরা দশে থাকা বাকি চারটি ইনিংসের মালিক মাহমুদউল্লাহ, সাকিব আল হাসান, ইমরুল কায়েস ও মুশফিকুর রহিম। ইনিংস বিরতিতে টিভি সাক্ষাৎকারে তামিম কথা বললেন তার ইনিংস নিয়ে। দুঃসময়ে তার ওপর আস্থা রাখায় কৃতিত্ব দিলেন টিম ম্যানেজমেন্ট ও সতীর্থদের, ‘আমি ভালোই ব্যাট করছিলাম। বড় রান পাচ্ছিলাম না। টিম ম্যানেজমেন্টকে কৃতিত্ব দেব আমি। তারা যতœ নিয়েছে, বিশ্বাস রেখেছে। সতীর্থরা বিশ্বাস রেখেছে। নেটে ব্যাট ভালো করছিলাম। ম্যাচে হচ্ছিল না। জানতাম, কেবল একটি ইনিংসের ব্যাপার। ভালো লাগছে যে হয়েছে।’
তামিমের ফর্ম নিয়ে যত না আলোচনা ছিল, তার চেয়ে বেশি প্রশ্ন ছিল তার ব্যাটিংয়ের ধরন ও অতিরিক্ত ডট বল খেলা নিয়ে। চলতি সিরিজের প্রথম ম্যাচেও ৪৩ বলে মাত্র ২৪ রান করেছিলেন তিনি। নিজের সমস্যা কাটাতে আগের দিন ঐচ্ছিক অনুশীলনে ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জিকে নিয়ে বাড়তি অনুশীলন করেছিলেন। সংবাদমাধ্যমে ম্যাকেঞ্জি বলেছিলেন, তামিমের বর্তমান অবস্থা কাটিয়ে প্রথম পাওয়ার প্লেতে দুটির বেশি বাউন্ডারি মারলেই হবে। গতকাল কোচের চাওয়ার চেয়ে বাড়তি কিছুই দিলেন তামিম। প্রথম ১০ ওভারে তার ব্যাট থেকে আসে দশটি দর্শনীয় চার। একই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে ৭ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তামিম। রেকর্ড গড়ার তৃপ্তি অবশ্যই আছে। তবে তামিমের কাছে ইনিংস গড়ার প্রক্রিয়াটাই আসল, ‘রেকর্ড ভালো। তবে প্রক্রিয়াই আসল। শুরুতে ভাগ্য ভালো ছিল, কিছু বল প্যাডে লেগেছে। পরে এগিয়ে গেছি ভালোভাবে।’
প্রথম ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান লিটন দাস এবার রান আউট হয়েছিলেন সপ্তম ওভারেই। তিন ওভার পর তামিমের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউটে বিদায় নেন নাজমুল হোসেন শান্তও। লম্বা সময় পর্যন্ত ব্যাটিংয়ের দায়িত্ব পড়েছিল তাই তামিমের ওপরই।
তৃতীয় উইকেটে তিনি মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে গড়েন ৮৭ রানের জুটি। পরের উইকেটে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে তার জুটি ছিল ১০৬ রানের। তামিম কৃতিত্ব দিলেন দুই সতীর্থকে, ‘কাউকে না কাউকে ৪০ ওভার পর্যন্ত ব্যাট করতে হতো। আজকে আমার দিন ছিল। পরে মুশি (মুশফিক) ও রিয়াদ ভাইও (মাহমুদউল্লাহ) খুব ভালো সমর্থন দিয়েছে।’
এরআগে অনেক দিন ধরেই সেঞ্চুরি খরায় ভুগছিলেন তামিম ইকবাল। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে সেন্ট কিটসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০৩ রানের ইনিংস খেলেন। এর মাঝে ২৩টি ওয়ানডে ইনিংসে সেঞ্চুরির দেখা পাননি বাঁহাতি ওপেনার। সেঞ্চুরি পাচ্ছিলেন না বলে বেশ কড়া সমালোচনা হয় তামিমকে ঘিরে। গত বিশ্বকাপেও বড় ইনিংস না খেলতে পারার জন্য খোঁটা শুনতে হয়। এমনকি অন্য ফরম্যাটেও তামিমের ব্যাট জ্বলে উঠতে পারছিল না। অবশেষে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরির মধ্য দিয়ে ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙলেন তামিম। দীর্ঘদিনের রান-পিপাসা মেটানোর জন্য জিম্বাবুয়াকেই বেছে নিলেন বাংলাদেশ ওপেনার। পুল, ফ্লিক, লেগ গøান্স, স্ট্রেট ড্রাইভ, কভার ড্রাইভসহ দারুণ সব শটে আগেকার সব আক্ষেপ জুড়ালেন তিনি। ইনিংসটি মাঠ থেকে দেখেছেন সাবেক অধিনায়ক ও প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। তার দৃষ্টিতে তামিমের ইনিংসটি তার দেখা অন্যতম সেরা ইনিংস, ‘দেশের অন্যতম সেরা ইনিংস। মনে রাখার মতো ইনিংস ছিল। সিলেটে যারা এসেছে, ইনিংসটি দেখেছে, তারা নিশ্চয়ই অনেকদিন মনে রাখবে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।