নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
‘মেঘ দেখে কেউ করিস নে ভয়/আড়ালে তার সূর্য হাসে/হারা শশীর হারা হাসি/অন্ধকারেই ফিরে আসে’- সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের এই কবিতাটা কি ঋষভ পন্ত ও রবীন্দ জাদেজার রন্ধ্রে-রন্ধ্রে ছিল? প্রথমদিকের বিপর্যয়ের পর ২০০ রান ছোঁয়াকেও যখন বিলাসী স্বপ্ন মনে হচ্ছিল তখন কি দারুণ পালটা আক্রমণই করলো এই দুইজন। এই দুজন সম্ভবত নিশ্চিত ছিল, বুক চেতিয়ে ব্যাট করে গেলে শুরুর অন্ধকার সরে হাসিটা আবারও তাদের মুখে ফিরে আসবে। ঠিক যেভাবে সত্যেন্দ্রনাথের কবিতায় ফিরে এসেছে।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এজবাস্টন টেস্ট শুরুর আগে বিভিন্ন প্রশ্ন ঘোরাঘুরি করছিল ভারতীয়দের মনে। রোহিত শর্মার অনুপস্থিতিতে অধিনায়কত্ব কে করবেন? বিরাট কোহলি কি রানে ফিরবেন? সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গিয়েছে ২০ ওভারের সময় আসা বৃষ্টির আগে ও পরে। টসে হারে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হয় জসপ্রিত বুমরাহ বাহিনীকে। আর স্টোকস-ম্যাককালামের ইংল্যান্ড শুরু থেকেই চেপে ধরে প্রতিপক্ষকে। যা বতাদের বর্তমান ট্রেডমার্ক। জেমস অ্যান্ডারসন ও ম্যাথুজ পটসের বলিং তোপে পুড়ে ছাই হয়ে যায় পূজারা, কোহলিরা।
নিয়মিত দুই ওপেনার রোহিত ও রাহুল না থাকায় এদিন শুভমন গিলের সাথে ওপেনিংয়ে নামে মিডল ওর্ডার ব্যাটসম্যান চেতশ্বওয়ারা পূজারা। দলীয় রান ৫০ হবার আগে দুজনই ফেরেন অ্যান্ডারসনের অফ স্টম্পারে বাহিরে সুইংয় করা বলে। এরপর বৃষ্টির হানায় আম্পায়াররা নেন দ্রুত লাঞ্চ। প্রায় দুই ঘন্টা পর খেলা শুরু হলে ভারতীয়রা তাকিয়ে ছল কোহলির দিকে। কিন্তু কোহলি ইংলিশ পেসার পটসের স্টাম্পের বাহিরের ডেলিভেরি ছাড়তে গেলে দুর্ভাগ্যবশত বল ব্যাটে ছুঁইয়ে স্টাম্প ভেঙ্গে দেয়। ক্রিজে থাকার সময়টাই একবারও আত্মবিশ্বাসী মনে হয়নি ভারতের সাবেক অধিনায়ককে। আগের সেই আগ্রাসন, রান খিদে সব কিছু হারিয়ে যেন নিজেকেই খুজছেন এই ব্যাটসম্যান। হনুমা বিহারী ২০ রান করে কাটা পড়েছেন এই পটসেরই বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে। শ্রেয়াস আইয়্যার যখন অ্যান্ডারসনের বলে সিøপে ক্যাচ দেন তখন দলীয় সংগ্রহ তিন অংক ছুঁতে আরও ২ বাকি!
যখন মনে হচ্ছিল ১৫০ রানে গুটিয়ে যাবে ভারতের ইনিংস তখন পন্ত ও জাদেজা মলম লাগাতে থাকে ভারতীয়দের ক্ষতে। প্রথম কিছুক্ষণ দেখেশুনে ব্যাট করার পরই চড়াও হন স্বাগতিক বোলারদের উপর। ঠিক যে অ্যাটাকিং ক্রিকেটর মন্ত্রে গিলে ইংল্যান্ড এখন উড়ছে সেই মন্রকেই বেঁছে নিয়েছিলেন স্বাগতিকদের বধ করতে। জ্যাক লিসের এক ওভারে তুললেন ১৪ রান তুলে পন্ত শুরু করেন ব্যাটিং প্রদর্শনীর। এরপর সারাটাক্ষণ ব্যাটিং করে গিয়েছেন আক্রমণাত্বক ভঙ্গিমায়।
কদিন আগে ঘরের মাঠে সাউথ আফ্রিকার সাথে টি-২০ সিরিজে পান্থের অধিনায়কত্ব ও ব্যাটিং নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়। সেই সমালোচকদের দিকেই যেনো ধেয়ে যাচ্ছিল তার এক একটা চার ও ছক্কা। ১১১ বলে ১৪৬ রানের ইনিংস খেলার সময় মেরেছেন ১৯টি বাউন্ডারি ও ৪টি ওভার বাউন্ডারি! ভেঙ্গেছেন ভারতীয় উইকেটকিপার হিসেবে করা সবচেয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড যা এতোদিন দখলে ছিল মহেন্দ সিং ধোনির। ২০০৬ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯৩ বলে শতক স্পর্শ করেছিলেন ধোনি। আর গতকাল এজবাস্টনে ব্রডের বলে পুল করে যখন তিন অংকের দেখা পেলেন পন্ত তখন বল খরচ হয়েছে মাত্র ৮৯টি। এই মহাকাব্যিক ইনিংস খেলার পথে আরেক জায়গায় পিছনে ফেলেছেন বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা শচীন টেন্ডুলকারকে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারতের হয়ে দ্রুত ১০০ ছক্কার রেকর্ডটি ছিল শচীনের। লিটল মাস্টারের লেগেছিল বরাবর ২৫ বছর। কিন্তু পাথ গতকাল লিসকে ছক্কা হাকিয়ে ২৪ বছর ২৭১ দিনে দেখা পেলেন ওভার বাউন্ডারির শতকের। জো রুটের বলে আউট হওয়ার আগে রবীন্দ জাদেজাকে নিয়ে গড়েছেন ২২২ রানের জুটি। সব সময় তেড়েফুঁড়ে খেলা জাদেজা এদিন ছিলেন শান্ত। কিন্তু রান তুলার কাজটা করে গিয়ে দলকে করেছেন বিপদমুক্ত। দিন শেষ করেছেন ১৬৩ বলে ৮৩ রানের এক দায়িত্বশীল ইনিংস খেলে। আর তাতেই প্রথম দিনে ভারত পায় ৭ উইকেটে ৩৩৮ রানের পুঁজি।
দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরুর ৫ ওভারের মধ্যেই ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরির দেখা পান অলরাউন্ডার জাদেজা। পটসের বলে চার হাকিয়ে ৯৬ থেকে একলাফে শতকে পৌঁছে উৎযাপন সারলেন চিরচেনা তরবারি নৃত্য দেখিয়ে। ৮৩তম ওভারে এন্ডারসনের বলে জাদেজা প্যাভিলিয়নে ফেরার সময় দলীয় সংগ্রহ ৯ উইকেটে ৩৭৭। এরপরের ওভার করতে আসেন অভিজ্ঞ বোলার ব্রড আর স্ট্রাইকে প্রথমবারের মত ভারতকে নেতৃত্ব দিতে নামা বুমরা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্রড একজন বিশাল বোলার তবে টি-২০ এবং টেস্টে একওভারে সবচেয়ে খরুচে বোলিং ফিগারটা এখন তার। ২০০৩ সালে দক্ষিন আফ্রিকার রবিন পিটারসনের একোভারে ২৯ রান নিয়েছিলেন ব্যাটিং এর রাজপুত্র ব্রায়ান লারা। গতকাল সেই ২৯ রান জাশপ্রীত বুমরা অতিক্রম করে ব্রডের ওভারে নিলেন ৩৫ রান। ওভারটা ছিল এমন ৪, ৫ (ওয়াইড), ৭ (নো বল), ৪, ৪, ৪,৬ এবং ১! ব্রড রান আটকানোর চিন্তা না করে এটাকিং ভল করে গিয়েছিলেন, যার ফলাফল বুমরাহর মতন একজন বোলারের কাছে রেকর্ড ৩৫ রান দেওয়া। উল্লেখ্যে ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক টি-২০র প্রথম আসরে এই ব্রডের এক ওভারে আরেক ভারতীয় যুবরাজ সিং হাকান ৬টি ৬।
এজবাস্টন টেস্টের ১ম ইনিংস ভারতীয়রা দেখে ফেলল অনেক রূপ! শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে গড়ল বহু রেকর্ডে। ভারতে গত ১৫ বছর ইংল্যান্ডের মাঠে টেস্ট সিরিজ জয়ের যে আকুলতা তা এবার পূর্ণতা পায় কিনা দেখা যাক। সিরিজে ভারত এগিয়ে ২-১ ব্যবধানে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।