মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নিহত স্বজনদের লাশ নিতে জিটিবি হাসপাতালে মর্গের সামনে দীর্ঘ লাইন। কম করে ৫ থেকে ৬টি পরিবার অপেক্ষায়। লাশ চিহ্নিত করবেন তারা। পরিবারগুলোর কান্নায় ধর্ম নেই। হিন্দু-মুসলমান মিলে মিশে দাঁড়িয়ে। নিজেরা নিজেদের স্বান্তনা দিচ্ছেন।
২৬ বছরের রাহুল সোলাঙ্কি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিথর দেহে পড়ে আছেন। পাশেই আরেকটি লাশ। পাশেই বসে রয়েছেন ৬৪ বছরের সদরুদ্দিন। ৩২ বছরের ছেলে মোহাম্মদ ফুরকানকে হারিয়েছেন তিনি। বুলেট তার শরীরের এক পাশ দিয়ে ঢুকে বেরিয়েছে আরকে পাশ দিয়ে। তিনিও ছেলের লাশ সনাক্ত করবেন।
পরিবারগুলো অপেক্ষা করে আছেন মর্গের সামনে। প্রিয়জনের দেহ নিয়ে যাবেন। দাফন বা শেষকৃত্য হবে। জিটিবি হাসপাতালে ২৫ জনকে আগেই মৃত ঘোষণা করা হয়। এখন নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৭। জিটিবি হাসপাতালের সুপার সুনীল কুমার গৌতমের কথায়, ‘একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করার আবেদন রয়েছে। পুলিশের থেকে সেই আবেদন আসছিল না। হাসপাতালে যারা ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশই গুলিবিদ্ধ। বাকিরা হয় অগ্নিদগ্ধ, না হয় ছুরিতে আহত’।
সোমবার থেকে ওই পরিবারগুলো হাসপাতাল ছাড়েননি। লাশ নেয়ার অপেক্ষায় সময় যাচ্ছে তাদের। ২৬ বছরের শাহবাজ আলম চিৎকার করে কাঁদছেন। ওর প্রিয় বন্ধু আর নেই। তিনি বললেন, ‘ওকে যখন হাসপাতালে আনা হয়, তখন মৃত। লাশগুলো কখন পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হবে, দুদিন ধরে হাসপাতাল কিছু জানাচ্ছে না’।
মোহাম্মদ ফুরকানের বাবা বৃদ্ধ সদরুদ্দিনের কথায়, ‘এই শহরে ৪০ বছর ধরে বাস করছি। শিখ দাঙ্গা চোখের সামনে দেখেছি। মনে আছে, বহু শিখকে বাঁচিয়েছিল হিন্দু, মুসলমান। গত দু’দিনেও মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখেছি। দুর্ভাগ্য’।
নিহতদের ধর্মীয় পরিচয় গোপনের চেষ্টা!
উত্তরপ্রদেশের বুলন্দ শহরের মেয়ে শাজিয়া তাকিয়ে ছিল নির্নিমেষে, ফ্যালফ্যাল করে। মাত্র মাসকয়েক আগে দিল্লির অটোচালক শাহিদের সঙ্গে বিয়ের পরই তার এই শহরে পা রাখা, এখন শাজিয়ার গর্ভে শাহিদেরই তিন মাসের সন্তান। দিল্লিতে গুরু তেগবাহাদুর হাসপাতালের মর্গের সামনে সেই শাহিদের লাশ নেওয়ার জন্যই অপেক্ষা করছিল ওই তরুণী, যার বয়স খুব বেশি হলে সবেমাত্র কুড়ি হবে! ভারতের রাজধানীতে বহু বছরের মধ্যে বীভৎসতম ও নৃশংস সা¤প্রদায়িক দাঙ্গায় যাদের প্রাণ গেছে, শাহিদ তাদেরই একজন। সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ সে যখন নিজের অটোরিকশা নিয়ে বেরিয়েছিল, একটি বুলেট এসে তাকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয়। এক লহমায় তোলপাড় হয়ে যায় শাহিদ-সাজিয়ার ছোট্ট নতুন সংসার। কিন্তু মঙ্গলবার সারাদিন অপেক্ষার পরও পরিবারের হাতে শাহিদের দেহ তুলে দেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শুধু শাহিদ কেন, দাঙ্গায় নিহতদের কারও দেহই বুধবার সকালের আগে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। বলা হয়েছে, ময়নাতদন্ত শেষ হওয়ার আগে আর দিল্লি পুলিশের অনুমতি ছাড়া কোনও লাশই ছাড়া যাবে না। পরে বুধবার আলাদাভাবে অন্তত পাঁচটি লাশ তাদের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটাই দিনের আলাদা আলাদা সময়ে, আলাদা আলাদা গেট দিয়ে পুলিশি পাহারা দিয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে- পরিবারের মাত্র এক-দুজন সদস্যের উপস্থিতিতে। তারা প্রত্যেকেই ছিলেন মুসলিম। লক্ষণীয় বিষয় হলো, হতাহতদের ধর্মীয় পরিচয় কী, তা নিয়ে প্রশাসন একেবারে মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। গুরু তেজ বাহাদুর হাসপাতাল নিহতদের নাম-ধাম পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমকে জানাতে সরাসরি অস্বীকার করেছে।
মৃতদের পরিবারপিছু ১০ লাখ টাকার ঘোষণা কেজরিওয়ালের
জাফরাবাদে সহিংসতায় নিহতদের পরিবারপিছু ১০ লাখ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেয়ার কথা ঘোষণা করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। আর যারা তাদের নাবালক সন্তানদের হারিয়েছেন তাদের দেয়া হবে পাঁচ লাখ টাকা। জখমরা রাজ্যের যেকোনও সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা করাতে পারবেন বলেও জানান। সেই সঙ্গে এই হিংসার ফলে যাদের ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছে তাদের পাঁচ লাখ টাকা করে আর্থিক অনুদান দেয়ার কথাও ঘোষণা করেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠকে করে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে চলা সংঘর্ষের ফলে দিল্লিতে এখনও পর্যন্ত মোট ৩৫ জনের মৃত্যু হওয়ার কথা জানা গিয়েছে। তাদের পরিবারপিছু ১০ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে। আর এই সংঘর্ষের ফলে যাঁরা চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছেন তাদের পাঁচ লাখ এবং যারা মারাত্মক জখম হয়েছেন তাদের দু’লাখ টাকা করে দেয়া হবে। অল্প চোট পাওয়া মানুষদের দেয়া হবে ২০ হাজার টাকা করে।’
ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা ঘোষণার পাশাপাশি দাঙ্গাকারীদের উদ্দেশ্যেও কড়া বার্তা দেন কেজরিওয়াল। বলেন, ‘যারা এই ঘটনায় জড়িত প্রমাণিত হবে তাদের কড়া শাস্তি দেয়া হবে। আর আম আদমি পার্টির কোনও সদস্য যদিও এতে জড়িত থাকার অভিযোগ ধরা পড়ে। তাহলে তার শাস্তি অন্যদের থেকে দ্বিগুণ হবে। জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে কোনও রকম সমঝোতা করব না আমরা।’
ওআইসি ও জাতিসঙ্ঘের নিন্দা
ভারতের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইসলামী সম্মেলন সংস্থা ওআইসি ও জাতিসঙ্ঘ। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ও কংগ্রেস সদস্যরাও। সূত্র : ওয়েবসাইট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।