মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তুলনামুলক একটি লেখায় ভারতের সাংবাদিক করণ থাপার ‘ভারতীয় নাগরিক হওয়ার চেয়ে বাংলাদেশের উইপোকা হওয়া অনেক বেশি আকর্ষণীয়’ বলে একটি মন্তব্য করেছেন। ‘হাউ বাংলাদেশ ইজ আউটপারফরমিং ইন্ডিয়া’ শীর্ষক তার এ লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে হিন্দুস্তান টাইমসে।
সত্তরের দশকে বাংলাদেশকে ‘আন্তর্জাতিক ঝুড়ি’ বলেছিলেন হেনরি কিসিঞ্জার। সন্দেহ নেই সে সময় পরিস্থিতি সে রকমই ছিল। টেলিভিশনের ভিডিওতে ঘন ঘন ভয়াবহ বন্যার যে সব ছবি দেখা যেতো সে সময়, তাতে এই বৈশিষ্ট্যটাই উঠে আসে। সে কারণে এই বিবরণটা টিকে গেছে। তবে আজ বাংলাদেশ একটা ভিন্ন দেশ। বিশ্ব এখন বাংলাদেশের ব্যাপারে মত বদলাচ্ছে। কিন্তু, এরপরও গত সপ্তাহে ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি বলেছেন, ‘ভারত যদি বাংলাদেশীদের নাগরিকত্বের প্রস্তাব দেয়, তাহলে বাংলাদেশের অর্ধেক খালি হয়ে যাবে। নাগরিকত্বের প্রতিশ্রæতি দেয়া হলে অর্ধেক বাংলাদেশী ভারতে চলে আসবে।’
বক্তব্যের অক‚টনৈতিক ও আগ্রাসী দিক বাদ দিলেও রেড্ডি বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, বাংলাদেশের সত্যিকারের অবস্থা সম্পর্কে তিনি একেবারেই অজ্ঞ। আরও খারাপ দিক হলো তিনি জানেন না যে, ভারতের সাথে তুলনায় বাংলাদেশ অধিকাংশ খাতে না হলেও বহু সূচকে অনেক ভালো করছে, যে সূচকগুলোর দ্বারা জীবনযাত্রার মান নির্ধারিত হয়।
প্রথমত, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি এমন হারে বাড়ছে, যেটা দেখে ভারতীয়রা হিংসা করতে পারে। তাদের প্রবৃদ্ধি যেখানে ৫ শতাংশে নেমে গেছে, সেখানে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের দিকে যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন যেখানে বেপরোয়াভাবে চেষ্টা করছেন বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য এবং চীনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য ১৫% হারে কর্পোরেট ট্যাক্সের প্রস্তাব দিচ্ছেন, সেখানে বাংলাদেশ সেই দুটি দেশের একটি যেখানে এটা আগে থেকেই চলছে। ফলে লন্ডন আর নিউ ইয়র্কের নামি দামি সড়কগুলোতে গেলেই দেখা যাবে মেড ইন বাংলাদেশের কাপড়, কিন্তু লুধিয়ানা আর ত্রিপুরার তৈরি কাপড় দেখা যাবে না। বিস্ময়ের কিছু নেই যে, বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রফতনি ২০১৯ অর্থবছরে দুই অঙ্কের কোঠায় চলে গেছে; যেখানে ভারত এখনও বহু পিছিয়ে।
তবে, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড একটি দিক মাত্র যেটার মাধ্যমে ভারত থেকে আলাদা হয়ে গেছে বাংলাদেশ। অন্যগুলো আরও জোরালো। স্পষ্টভাবে বললে, ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে জীবনযাত্রা অনেক বেশি আকর্ষণীয়। শুধু তথ্যগুলো দেখলেও তা বোঝা যায়। বাংলাদেশে পুরুষ ও নারীর প্রত্যাশিত জীবনকাল ৭১ আর ৭৪ বছর। ভারতে এটা হলো ৬৭ আর ৭০। এই বড় ছবিটা খুঁটিয়ে দেখলে পার্থক্যটা আরও প্রকট হয়ে উঠবে। ভারতে প্রতি হাজারে নবজাতকের মৃত্যুর হার ২২.৭৩ জন, বাংলাদেশে এই হার ১৭.১২। শিশুমৃত্যুর হার ভারতে ২৯.৯৪ আর বাংলাদেশে ২৫.১৪। পাঁচ বছরের কম বয়সীদের মৃত্যুর হার ভারতে ৩৮.৬৯, আর বাংলাদেশে ৩০.১৬। নারীদের ক্ষেত্রে, বাংলাদেশে ১৫ বছরের বেশি বয়স্ক নারীদের মধ্যে ৭১ শতাংশ শিক্ষিত, ভারতে এই হার ৬৬ শতাংশ। বাংলাদেশে শ্রমক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণের হার ৩০% এবং এই হার আরও বাড়ছে; অন্যদিকে ভারতে এই হার ২৩% এবং গত এক দশকে এটা ৮% কমেছে। সবশেষে, হাইস্কুলে কতজন বালক বালিকা ভর্তি হচ্ছে- সেই সূচক দিয়ে বোঝা যায় ভবিষ্যতের উন্নয়ন কতটা হবে। ভারতে এই হার ০.৯৪ আর বাংলাদেশে ১.১৪। অর্থাৎ, বাংলাদেশে পরিস্থিতি শুধু ভালোই নয়, সেটা আরও ভালোর দিকে যাচ্ছে। আর ভারত আরো পিছিয়ে যাচ্ছে।
এ কারণে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, ‘কিছু ভারতীয় নাগরিক অর্থনৈতিক কারণে অবৈধভাবে বাংলাদেশে ঢুকছে।’ তিনি ঠিকই বলেছেন। মানুষ তাদের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য অভিবাসী হয়, আর বাংলাদেশে জীবনযাত্রা সুস্পষ্টভাবেই উন্নততর। কেউ যদি ভারতীয় মুসলিম হয়ে থাকেন, যে হামলার ভয়ে ভীত কারণ মাংসের ব্যবসা করে, কোন হিন্দুর প্রেমে পড়ায় যার বিরুদ্ধে লাভ-জিহাদের অভিযোগ তোলা হয়েছে, বা যে নাগরিকত্ব হারানোর ভয়ে ভীত, তাহলে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে আসার ব্যাপারে সে প্রলুব্ধ হতেই পারে। এ সমস্ত পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে করণ থাপার বলেছেন, ভারতে বৈধ নাগরিক হয়ে থাকার চেয়ে বাংলাদেশে উঁইপোকা হয়ে থাকাটা অনেক আকর্ষণীয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।