পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
নদ-নদী দখলমুক্ত করার উদ্যোগ এখন অনেকটা নিস্ফল বিষয়ে পরিণত হয়েছে। একদিকে উচ্ছেদ, আরেক দিকে দখল, ইঁদুর-বেড়াল খেলায় রূপ লাভ করেছে। বিআইডবিøওটিএ ঢাক-ঢোল পিটিয়ে মহাআড়ম্বরে উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে দখলমুক্ত করার কিছুদিন যেতে না যেতেই তা আবার দখল হয়ে যাচ্ছে। ফলে দখলমুক্ত করার এ অভিযানে কোনো কাজই হচ্ছে না। অবৈধ দখলকারীরাও ভাল করে জানে এ অভিযান সাময়িক এবং লোক দেখানো। কিছুদিন গেলেই তা আবার তারা দখল করতে পারবে। বাস্তবেও তাই দেখা যাচ্ছে। গত বছরের শুরুর দিকে বেশ আয়োজন করে ধাপে ধাপে রাজধানীর চারপাশের নদী দখল করে গড়ে ওঠা বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদের অভিযান শুরু হয়। অভিযানে অনেক বড় বড় স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। ধারণা করা হয়েছিল, এবার হয়তো স্থায়ীভাবেই নদী অবৈধ দখলমুক্ত হবে। দেখা গেছে, এ ধারণা ভুল প্রমাণ করে অবৈধ দখলকারিরা ধীরে ধীরে তা পুনরায় দখল করে ফেলেছে। ফলে পুরো অভিযানটিই ব্যর্থতার বৃত্তে আটকে পড়েছে। এই অবৈধ দখল যে শুধু রাজধানীর চারপাশের নদ-নদীর ক্ষেত্রে ঘটেছে তা নয়, দেশব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ নদ-নদীর জায়গাও দখল হয়েছে। এ ব্যাপারে উচ্ছেদ অভিযান এবং এলাকাভেদে অবৈধ দখলকারীদের নামের তালিকা প্রস্তুত করা ও প্রকাশ করারও উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু বা সফল হচ্ছে না। অবৈধ দখলকারিরা বহাল তবিয়তেই রয়ে গেছে।
দেশের নদ-নদী মরে যাওয়া, দূষিত হওয়া এবং নাব্য হারানোর ক্ষেত্রে অবৈধ দখলকারিদের ভূমিকা অন্যতম। নদ-নদীর জায়গা দখল করতে করতে তা এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তা সরু খালে পরিণত হয়। দেখা যাবে, যেসব নদ-নদীর জায়গা দখল হয়েছে, সেগুলো মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। রাজধানীর চারপাশের চার নদীর কথা বিবেচনা করলেই এর প্রমাণ পাওয়া যাবে। যুগের পর যুগ ধরে নদীগুলো অবৈধ দখলের কবলে পড়ে মরে গেছে। এ নিয়ে পরিবেশবিদরা বহু আন্দোলন-সংগ্রাম করলেও কোনো লাভ হয়নি। মাঝে মাঝে বিআইডব্লিওটিএ অভিযান চালিয়ে দেখাতে চেষ্টা করে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। গত বছর ২৯ জানুয়ারি ঢাকার চারপাশের নদীর জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বধানে বিআইডব্লিওটিএ’র নেতৃত্বে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়। চার পর্বে পরিচালিত ৫০ দিনের অভিযানে ছোট-বড় মিলিয়ে ৪ হাজার ৭৭২টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ১২১ একর জায়গা উদ্ধার করা হয়। অবৈধ দখলদারদের জরিমানা ও মালামাল নিলামে বিক্রিও করে দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেয়, যে কোনো মূল্যে উচ্ছেদ অভিযান সফল করা হবে। উদ্ধারকৃত জায়গা সংরক্ষণ করে ওয়াকওয়ে, পার্ক নির্মাণসহ বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত করার মনোমুগ্ধকর ঘোষণাও দেয়া হয়। দেখা গেছে, এসব ঘোষণা আষাঢ়ে গল্পে পরিণত হয়। কিছুদিন না যেতেই অবৈধ দখলকারিরা পুনরায় তা দখলে নিতে শুরু করে। অর্থাৎ নদী অবৈধ দখলমুক্ত করা বা নদী উদ্ধারে যুদ্ধ ঘোষণার বিষয়টি হাকডাকে পরিণত হয়। এতে এটাও প্রতীয়মাণ হয়, অবৈধ দখলকারিরা সরকারের চেয়েও ক্ষমতাশালী। তাদের কবল থেকে নদী উদ্ধার করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। যদি সম্ভব হতো তবে উদ্ধারকৃত জায়গা কিভাবে পুনরায় দখল হয়? কারা এই ক্ষমতাশালী? বলা বাহুল্য, তারা সরকারি দল এবং এ সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া সরকারের পক্ষেও সম্ভব হচ্ছে না। সরিষার ভেতর ভূত বসবাস করলে তা যে বিতাড়িত করা যায় না, অবৈধ দখলকারিদের উচ্ছেদ না করতে পারার মধ্য দিয়ে তাই বারবার প্রমাণিত হচ্ছে। এই ভূত যতক্ষণ না বিতাড়িত করা হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত নদীর অবৈধ দখল বন্ধ করা সম্ভব হবে না। কেবল অভিযানের নামে ‘উচ্ছেদ উচ্ছেদ খেলা’ চলবে আর এ বাবদ সরকারের লাখ লাখ টাকা গচ্ছা যাবে।
নদ-নদীর অবৈধ দখলকারিদের বিরুদ্ধে যদি সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন না করে, তবে কোনো দিনই তা দখলমুক্ত হবে না। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং সংস্থাকে এ বিষয়টি উপলব্ধি করতে হবে, অবৈধ দখলকারিরা শুধু নদ-নদীর জায়গা দখল করছে না, নদ-নদী মেরে ফেলছে। জায়গা দখল করার অপরাধের চেয়ে একটি নদী মেরে ফেলা কত বড় অপরাধ বা অন্যায়, তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বুঝতে হবে। জরিমানা করা, জিনিসপত্র নিলামে বিক্রি করে দেয়ার মতো শাস্তি কি নদী মেরে ফেলার মতো অন্যায়ের শাস্তি হতে পারে? অবৈধ দখলকারীদের বিরুদ্ধে যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না করা হয়, তবে যতই অভিযান চালানো হোক না কেন, তা সফল হবে না। এতে কেবল সরকারের অর্থেরই অপচয় হবে, স্থায়ীভাবে অবৈধ দখলকারীদের উচ্ছেদ করা যাবে না। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না যে, অভিযান চালিয়ে অবৈধ দখলমুক্ত করা হবে, আর কিছুদিন না যেতেই তা পুনরায় দখল হয়ে যাবে। অভিযানের নামে এ ধরনের উচ্ছেদ উচ্ছেদ খেলা চলতে দেয়া যায় না। আমরা মনে করি, অভিযানে উদ্ধারকৃত জায়গা স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আলাদা কমিটি করে জায়গা দখলমুক্ত রাখার দায়িত্ব দিতে হবে এবং উদ্ধারকৃত জায়গা পুনরায় দখল হলে তার জবাবদিহির ব্যবস্থা করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।