শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
কবি মারুফ সাহেব শুরুতেই মেলায় হাজির। বই আর মেলা আছে বলেই তিনি ঢাকা শহর ধন্য করতে এসেছেন। তা না হলে যানজট, ধুলাবালির এ শহরে তিনি আসতেন না। মুখোশ পরে স্টলে বসে থাকায় মানুষজন চোর দেখা দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। একজন বয়স্ক মহিলা তার বইটা হাতে নিতেই কবি মারুফ লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ান। সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলেন, খুব ভালো বই। পড়ে মজা পাবেন।
মহিলা চোর দেখা চোখে কবি মারুফের দিকে তাকান। খসখসে গলায় বলেন, আমি মজার বই খুঁজছি না।
-বিরহ ব্যাথাও আছে।
-বিরহ ব্যাথা দিয়ে এ বয়সে আমি কী করব?
-প্রেম বিরহ না থাকলে তো আপনি কবি হতে পারবেন না।
-আমি কবি হতে যাব কেন!
ভারী প্যাচালে মানুষ। প্রতিটা ভাল কথার ঝগড়াটে জবাব। পেয়াঁজ কোয়ালিটির মহিলা। এ জাতীয় মহিলাদের প্রতিটি কথায় ঝাঁঝ থাকে। তাদের সংস্পর্শে চোখে পানি চলে আসে।কবি মারুফ কাঁদো কাঁদো গলায় বলেন, আপনার বই কিনতে হবে না, কবিও হতে হবে না। আমাকে ক্ষমা করুন।
মহিলা রুদ্র মূর্তির রুপ ধারন করে হাতের বইটা কবির মুখের উপর ছুড়ে ফেলে বলে, ফালতু কোথাকার.....। শব্দ গুলো মেলায় আগত মানুষের ভীড়ে মিশে যায়।হাসি, আনন্দের সাথে কটুকথার সংমিশ্রণ কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেনা।
মহিলা চলা যাবার কিছুক্ষণ পর মুজাহিদ আসে। মুজাহিদ তার চাচাতো ভাই। সস্ত্রীক এসেছে। ঢাকা থাকে। নিশ্চয়ই দুটো বই নেবে। সারাদিন বই কেনা-বেচা না হলেও ঘাটাঘাটি হয়েছে। মুজাহিদ ঘাটাঘাটি না করে বইটি নেয়। মুখোশ পরে থাকায় কবি কে সে চিনতে পারেনি।কবিও নিজেকে কিছুটা লুকিয়ে রাখেন। আগে বই কিনুক তারপর না হয় সেলফি তোলা যাবে। মুজাহিদ তার কর্মকান্ড চালাতে থাকে।একবার স্টাইল দেয় সে, আরেকবার তার বউ। ক্যামেরা অন, স্টাইল, একশন, ফ্লাস। ফ্লাসের সাথে কবি মারুফের বুকের ভেতর ধুক করে ওঠে। খুশির আলোয় আলোকিত হয়। শুধু নেয়া নয়, সাথে ফেসবুকে প্রচার হবে। সেই প্রচার দেখে আরও দশজন আসবে। বর্তমানে অবশ্য কবি মারুফ ফেসবুকের ওপর ভীষণ নাখোশ। ফেসবুকে তিন মাস ধরে হইচই করে শুভ কামনা আর অভিনন্দন প্রাপ্তি ছাড়া কাজের কাজ কিছু হয়নি। ফেসবুকের কেউ কথা রাখেনি। ফেসবুক প্লেট গ্লাস হলে ছুড়ে ফেলা যেত। ফেসবুক ভাংগা ঝনঝন শব্দে খুশি হয়ে কবি মারুফ কিছুটা হলেও মনের দুঃখ ভুলতে পারতেন।ফেসবুক ভাঙ্গা যায়না।ছবি তোলা শেষে মুজাহিদ বই গুলো আবার সাজিয়ে রেখে চলে যায়।কবি মারুফ অবাক ব্যাথিত হৃদয়ে বসে পড়ে।প্রকাশক হামিম সাহেব তাচ্ছিল্যের সুরে বলে, বই তো চলেনা কবি।
-না চললে কী করবো।বইয়ের সাথে তো আর চাকা লাগানো যায় না।
হামিম সাহেব একটা বড় নিঃশ্বাস নেন।যেন কবির বই না চলাতে তিনি বড়ই মর্মাহত।যদিও তার মুখে দুঃখ কষ্টের চিহ্ন নেই।আক্ষেপের ভাষায় বলেন, আরে ভাই চাকা লাগান, মটর লাগান।বই চালান।
-এবারে তো বহু কসরত করলাম আর কী করা যায়!আমি আর পারছি না....
-পারতে হবে কবি।পাকা ড্রাইভার না হলে এ জগতে টিকতে পারবেন না।
পড়ন্ত বিকালে সূর্য যখন অন্যদিক আলোকিত করতে এদিকে মৃদু আলো বিলিয়ে জানান দেয় আজকের, এ দিনের বেলা শেষ; কবি মারুফ তখন মলিন মুখে স্টলের বাইরে বসে থাকে। চুপচাপ। টিভি সাংবাদিক বইমেলার নিউজ কাভার করতে এসে একজন মধ্যবয়সী ফিটফাট মানুষ কে চুপচাপ মলিন মুখে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, প্রানের মেলায় মলিন মুখে বসে আছেন কেন?
-মন খারাপ। বিরহ ব্যাথা নিয়ে বসে আছি।
-কেন?
-আমার বই বিক্রি হচ্ছে না।
-আচ্ছা, আপনি লেখক?
-হু।কবি।
কবি শুনেই টিভি সাংবাদিক তার লোকজন নিয়ে তাকে ঘিরে ধরেন।ক্যামেরাম্যান মেশিনগান তাক করার মতো তার দিকে ক্যামেরা তাক করে।সহযোগীর মাইক্রোফোন নিয়ে হুড়োহুড়ি।উপস্থাপক বলেন, একটা ছোট্ট সাক্ষাতকার।
-ছোট,বড় যে কোন টাইপ সাক্ষাতকার নিতে পারেন।
শুরু হয় সাক্ষাতকার।‘আপনার নামটা বলুন প্লিজ।’
-আমার নাম জানেন না! কবি মারুফ।
-ও আচ্ছা, কবি মারুফ।
কবি মারুফ খুব র্স্মাট ভাবে ঘাড় নাড়ে।‘হু,কবি মারুফ।’
-কবি শব্দটা কী আপনার নামের অংশ?
-নামের অংশ হবে কেন? আমি কবি তাই কবি মারুফ।
-আপনি কবি সেটা তো মানুষ বলবে।আপনি কেন?
কবি মারুফ তো তো করে।তোতা পাখি যেমন শিখিয়ে দেওয়া ভাষা ছাড়া অন্যকিছু পারেনা ঠিক তেমন। যেন ভুলে গেছেন সব কথা।কিছুক্ষন সময় নিয়ে বলে, মানুষ বলে তাই আমিও বলি।
-ও আচ্ছা।গুড।
-আপনার সাহিত্য জগতে আসার কারন কী?
-কারন আবার কী! কবিদের দেখে আমার কী কবি হতে মনে চায় না?
-হ্যাঁ, আপনি অন্যান্য কবিদের সাহিত্য চর্চা দেখে অনুপ্রানিত হয়েছেন। তা আপনার প্রিয় কবির নাম কী?
-আসলে ওভাবে করে আমার কোন কবি নেই।
-আপনার প্রিয় কোন কবি নেই?
-আমিই তো প্রিয় কবি।আমার আবার প্রিয় কবি থাকবে কেন?
কথা শুনে হঠত করে রেগে যান টিভি সাংবাদিক।চিতকার করে বলেন, ক্যামেরা বন্ধ।কবি না ছাগল......
কবি মারুফও রেগে যান, কী বললেন!
-ছাগল বলেছি। আরও খারাপ কিছু বলতে মনে চাইছে।
ঢাকায় নতুন, তারপর আবার সাংবাদিক।কবি মারুফ চুপ করে যান।কথা বাড়ালে আরও কী বলে বসে কে জানে।মেলা চলে, বেলাও যায়।কবি মারুফ যেমন ছিলেন তেমনি বসে থাকেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।