Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সড়ক দুর্ঘটনায় অপূরণীয় ক্ষতি

| প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:১১ এএম

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার বহুমুখী সামাজিক-অর্থনৈতিক বিরূপ প্রভাব বিদ্যমান। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু এবং দ্বিগুণ মানুষের পঙ্গুত্ব বরণ সমাজে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত সৃষ্টি করে। একটি দুর্ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারগুলো হয় পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম বা রোজগারি ব্যক্তিটিকে হারিয়ে নি:স্ব-অসহায় হয়ে পরে অথবা দুর্ঘটনায় পঙ্গু, অঙ্গহানি বা প্যারালাইজড হয়ে যাওয়া সদস্যকে নিয়ে পুরো পরিবারের দুর্ভোগের কোনো সীমা থাকে না। অতএব শুধুমাত্র অর্থনৈতিক ক্ষতির হিসাব কষে সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতির চিত্র বোঝানো সম্ভব নয়। তবে সড়ক দুর্ঘটনার কারণে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ক্ষতির চিত্রটিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনসহ দেশের নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে সড়ক দুর্ঘটনার এসব হিসাব নিকাশের চিত্র দীর্ঘদিন ধরেই প্রকাশিত হয়ে আসছে। ২০১৮ সালে দেশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের আন্দোলন পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রের ভীতকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের দাবী মেনে নিয়ে অনেক প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। তারই প্রেক্ষাপটে গত বছর সড়ক নিরাপত্তা আইন পাস হয়। যদিও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দাবী ও প্রভাবের কারণে এই আইনের বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা এখনো কাটেনি। গত বছরের নভেম্বর থেকে এই আইন কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও এখনো সড়ক মহাসড়েক তার বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না।

সড়ক-মহাসড়কে যন্ত্রদানবের প্রাণহরণের ঘটনা মোটেও কমেনি। বরং আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে সড়ক-মহাসড়কে পরিবহন দুর্ঘটনায় অন্তত ২০ জনের মৃত্যুর খবর জানা যায়। সড়ক দুর্ঘটনায় পিতা-মাতা ও আদরের সন্তানদের হারিয়ে পরিবার-পরিজনদের বুকফাঁটা কান্নার দৃশ্য নিত্যদিনের। সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সৃজনশীল উদ্ভাবনী প্রতিভার জন্য পুরস্কার প্রদান উপলক্ষে রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টি উইং স্কেফার ভারতীয় উপমহাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন। সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের জিডিপি’র ৩-৫ শতাংশ ক্ষতি হয় বলে তিনি তথ্য দেন। গত বছর(২০১৮-১৯) দেশজ উৎপাদন(নমিনাল জিডিপি) ছিল ৩১৭ বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতির পরিমান বছরে ১ লক্ষ কোটি টাকার বেশি। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের পক্ষ থেকে গত বছর উত্থাপিত রিপোর্ট অনুসারে ২০১৮ সালে দেশে সড়ক দর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে চার হাজার। এর আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ৫ হাজারের বেশি। তবে চলতি বছরের শুরু থেকে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ও প্রাণহানির ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে তরুণ প্রজন্মকে তাদের উদ্ভাবনী প্রতিভা নিয়ে এগিয়ে আসার আহŸান জানিয়েছেন বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধিরা। জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে এ বছর ৫জন শ্রেষ্ঠ তরুণ উদ্ভাবককে পুরস্কৃত করা হয়।মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওস্থ বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে এ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে এনে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে পারে বলে মন্তব্য করেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড় আন্দোলনে দেশব্যাপী দলমত নির্বিশেষে সব মানুষের সমর্থন থেকে বোঝা যায় দেশের মানুষ সড়ক দুর্ঘটনা, যানজট ও সড়কের অব্যবস্থাপনা নিয়ে কতটা উদ্বিঘœ ও বিক্ষুব্ধ। সড়ক দুর্ঘটনার সাথে প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার আশঙ্কার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন-অগ্রগতির নিবিড় সম্পর্ক থাকায় এটি দেশ ও জনগণের জন্য একটি অগ্রাধিকারমূলক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন গড়ে অন্তত ২৫জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত হচ্ছেন, এটি আগের হিসাব। সারাদেশে ২৪ ঘন্টায় ২০ জনের প্রাণহানির মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠার চিত্রই উঠে এসেছে। একদিকে মহাসড়কে বেপরোয়া গাড়ির প্রাণঘাতি দুর্ঘটনা অন্যদিকে রাজধানীতে অস্বাভাবিক যানজটে নাগরিক জীবনের স্বাভাবিক গতিশীলতা স্থবির হয়ে পড়ার বাস্তবতা জিইয়ে রেখে দেশকে সামাজিক- অর্থনৈতিকভাবে সামনে এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা বাস্তবায়নসহ একবিংশ শতকের উপযোগী বাসযোগ্য জনপদ গড়ে তুলতে হলে সড়ক দুর্ঘটনা রোধের পাশাপাশি যানজট ও নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ মতামত এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নসহ সময়োপযোগী উদ্যোগ বাস্তবায়ন সরকারের সংশ্লিষ্ট সব মহলকে দ্রæত সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। কোনো প্রভাব বলয়ের চাপের কাছে নতি স্বীকারের সুযোগ এখানে নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক দুর্ঘটনা


আরও
আরও পড়ুন