পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রটি ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। বেকার থেকে যাচ্ছে লাখ লাখ কর্মোপোযোগী মানুষ। সরকারি হিসেবে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখের মতো হলেও এ সংখ্যাটি নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, দেশে বেকারের সংখ্যা কয়েক কোটি। যে হারে কর্মসংস্থান হওয়ার কথা, সে হারে না হওয়ায় এ সংখ্যা ক্রমবর্ধমানহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে বছরে ২২ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। এদের মধ্যে কাজ পায় মাত্র ৭ লাখ। এর মধ্যে শিক্ষিত-অশিক্ষিত বেকার রয়েছে। পত্রপত্রিকার হিসাব অনুযায়ী, দেশে উচ্চ শিক্ষিত বেকার প্রায় পৌনে এক কোটি। প্রতি বছর এর সাথে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন বেকার। তথ্য অনুযায়ী, কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় মাধ্যম বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান শতকরা ৯৫ ভাগ বেকারের কর্মসংস্থান করে। এর মধ্যে এককভাবে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান করছে পোশাকশিল্প। এ খাতে প্রায় ৪০ লাখ লোক কাজ করছে। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থার অবদান মাত্র ৫ শতাংশ। অবশ্য দেশি এসব পরিসংখ্যানের সাথে বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার হিসাবের মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান পরিলক্ষিত হয়। বছর পাঁচেক আগে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা ৩ কোটি। কয়েক বছরের মধ্যে তা দ্বিগুণ হবে। যা মোট জনসংখ্যার ৩৯.৪০ শতাংশ হবে। হিসাবটি কয়েক বছর আগের হলেও এর যে খুব পরিবর্তন হয়েছে, তা বলা যায় না। বরং বেকারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এর সাথে নতুনভাবে যুক্ত হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ও মালয়েশিয়া থেকে ফেরত আসা শত শত শ্রমিক। শুধু এসব দেশ থেকেই নয়, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকেও মানুষ দেশে ফিরছে। ফলে দেশের বেকারত্বের হারের সাথে তারাও যুক্ত হচ্ছে। লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে বিদেশ যাওয়া হতাশ এসব মানুষ দেশে ফিরে কী করবে, কোথায় কর্মসংস্থান হবে, তার নিশ্চয়তা নেই। এই যখন পরিস্থিতি তখন পত্র-পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, দেশে বিদেশি কর্মী কাজ করছে প্রায় সাড়ে ১০ লাখ। এর মধ্যে শুধু ভারতেরই রয়েছে প্রায় ৫ লাখ। এছাড়া চীন, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ডসহ উন্নত বিশ্বের কর্মীও রয়েছে। এরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চ বেতনে কর্মরত। বিশেষ করে গার্মেন্ট শিল্প-কারখানায় বিভিন্ন উচ্চপদে এরা কাজ করছে। সিপিডির এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, এ খাতের ১৩ শতাংশ বা ৪০০ কারখানায় বিদেশি কর্মীরা কাজ করছে। আর এ খাতসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিদেশিরা দেশ থেকে বছরে নিয়ে যাচ্ছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এসব তথ্য-উপাত্ত এখানে তুলে ধরার কারণ হচ্ছে, আমাদের দেশে যেখানে কোটি কোটি বেকার নিদারুণ দুঃখ-কষ্ট ও হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে, সেখানে অবলীলায় বিদেশিরা এ দেশ থেকে বিপুল অংকের অর্থ নিয়ে যাচ্ছে। চাকরির বাজারে ক্রমশঃ তাদের আধিপত্য। অথচ দেশে শিক্ষিত-অশিক্ষিত কোটি কোটি বেকারের কর্মসংস্থান হচ্ছে না। দেশে বিদেশিদের এই বিপুল কর্মসংস্থানের চিত্র দেখে বিস্মিত এবং দুঃখিত না হয়ে পারা যায় না।
দুই.
রেমিটেন্স নিয়ে আমাদের গর্বের সীমা নেই। প্রতি বছরই রিজার্ভ হৃষ্টপুষ্ট হয়ে ফুলে ফেঁপে উঠছে। তবে এই রিজার্ভের যোগানদাতা যে তরুণ, তার জমিজমা, বসতবাটি বিক্রি করে বিদেশে গিয়ে যে দিন-রাত হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খাটছে, তাতে আমাদের সরকারের ভূমিকা কতটুকু? সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসগুলো প্রবাসী শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখছে? বরং আমরা দেখছি, এক্ষেত্রে সরকারের তেমন জোরালো কোনো উদ্যোগ নেই। বলা হয়, অবৈধভাবে বা বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বিদেশ গিয়ে অনেকে বিপদে পড়ছে এবং ফেরত আসছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যেমন করেই হোক, যারা বিদেশ গিয়ে পৌঁছেছে, সরকার কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে তাদের বৈধ করার উদ্যোগ নিতে পারে। দুঃখের বিষয়, সরকারের তরফ থেকে এ ধরনের উদ্যোগ দেখা যায় না। আমরা জানি, কর্মক্ষম এবং কর্মস্পৃহ অনেক তরুণ নিজ প্রচেষ্টায় ঝুঁকি নিয়ে বিদেশ-বিভূঁইয়ে যায়। এখনও যাচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, একটি দেশের মানুষ আরেকটি দেশে গিয়ে মুটে-মজুরের কাজ করে অর্থ উপার্জন করে দেশে পাঠাবে, আর তা নিয়ে সরকার গর্ব করবে, এটা কতটা সীচীন হতে পারে? মর্যাদাশীল কোনো জাতি চাইবে না, তার দেশের মানুষ বিদেশ গিয়ে দিন-মজুরের কাজ করুক। খুপড়ি ঘরে গাদাগাদি করে থাকুক। সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিকরা তাদের নিচু দৃষ্টিতে দেখে বলুক অমুক দেশের ফকির-মিসকিন। আমাদের দেশ থেকে যেসব তরুণ কামলা খাটতে যায়, কোনো কোনো দেশ তাদের এই দৃষ্টিতেই দেখে। অথচ রাষ্ট্রের সম্মান রক্ষার্থে তরুণদের কর্মসংস্থান দেশে করার ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া উচিত। তা করতে না পারার ব্যর্থতা যে রাষ্ট্রের, তা সরকার ভাবে বলে মনে হয় না। আমরা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়া নিয়ে গর্ব করছি। আগামী দশ বছরে দেশে একজনও বেকার থাকবে না বলে ঘোষণা দিচ্ছি। কিন্তু বেকারত্ব কমানোর কোনো উদ্যোগ নিতে পারছি না। উল্টো প্রবাসীদের আয় নিয়ে উচ্ছ¡সিত হচ্ছি। রেমিট্যান্স নিয়ে সরকার ক্রেডিট নিচ্ছে। অথচ প্রবাসে যেসব শ্রমিকের মৃত্যু হয়, নীরবে লাশ হয়ে দেশে ফেরে এবং পরবর্তীতে তাদের পরিবার কী ধরনের দুর্দশায় পড়ে, সারকারকে এ ব্যাপারে দায়িত্ব নিতে দেখা যায় না। মৃত্যুবরণকারী প্রবাসী শ্রমিক যে রাষ্ট্রের কোষাগার সমৃদ্ধ করতে ভূমিকা রেখে গেল, তার স্বীকৃতিটুকুও দেয়া হয় না। এটা প্রবাসী শ্রমিকদের দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে! বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব মতে, দেশে এখন প্রায় চার কোটির বেশি মানুষ দরিদ্র সীমার মধ্যে রয়েছে, যা মোট জনসংখ্যার ২৪.৪৭ শতাংশ। বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব মতে যে ব্যক্তির দৈনিক আয় ১.২৫ ডলার বা প্রায় ৯৭ টাকা সে দরিদ্র। এ হিসাবে দেশের ৪ কোটিরও বেশি মানুষ দৈনিক এ আয় করতে পারছে না। তারা দরিদ্র রয়ে গেছে। এর সাথে বেকার বা যার কোনো আয় নেই তা যুক্ত করলে দেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী দারিদ্র্য সীমার মধ্যে রয়েছে। যে তরুণ বেকার, বাবা-মায়ের উপর নির্ভরশীল, সে তো আরও দরিদ্র। অথচ সরকারের মধ্যে এ প্রবণতা দেখা যায়, দেশের মানুষ খুব সুখে-শান্তিতে আছে। এটা যে শুভংকরের ফাঁকি, তা স্বীকার করে না। সরকার তাদেরকেই গণনায় ধরছে যাদের আয় আকাশ ছোঁয়া। তাদের উন্নতিকে উন্নয়নের মাপকাঠি মনে করছে। এই খÐিত উন্নয়নকেই সরকার ব্যানার আকারে তুলে ধরে বলছে, আমরা অনেক উন্নতি সাধন করছি। অবশ্য সরকার দেশে বেকারের সংখ্যা কম দেখাবে, এটাই স্বাভাবিক। বেকারের সংখ্যা বেশি দেখানোর অর্থ তার ব্যর্থতা। কোনো সরকারই এই ব্যর্থতা দেখাতে চায় না। বেকারের সংখ্যা নিরূপণে যদি বেকার নিবন্ধনের ব্যবস্থা থাকত, তাহলে হয়ত বেকারের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যেত।
তিন.
যে দেশে চার কোটি মানুষ দরিদ্র সীমা অতিক্রম করতে পারেনি এবং কোটি কোটি বেকার থাকে, সে দেশ অর্থনৈতিকভাবে দ্রæত উন্নতি করছে, এ কথা বিশ্বাস করা কঠিন। সরকারের কথা মতো যদি উন্নয়নের চাকাটি তরতর করে এগিয়ে যেত, তাহলে এতো মানুষ দরিদ্র ও বেকার থাকাত না। কর্মসংস্থানের এই আকালের মধ্যে যদি বিদেশিরা এসে হানা দেয়, তাহলে কোটি কোটি বেকারের দুঃখ ঘুচবে কি করে? নিবন্ধের শুরুতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১০ লাখ বিদেশি কাজ করছে। এদের বেশির ভাগই কর্মকর্তা পর্যায়ের। তাদের একেক জনের বেতন পাঁচ বাংলাদেশী কর্মকর্তার মোট বেতনের চেয়েও বেশি। অর্থাৎ এক বিদেশি কর্মকর্তা পাঁচ জন দেশীয় কর্মপ্রত্যাশীর জায়গা দখল করে রেখেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গার্মেন্ট খাতে ২০ হাজার বিদেশি কর্মী কাজ করছে। তাদের বেতন গার্মেন্ট খাতে দেশীয় শ্রমিকের মোট বেতনের প্রায় অর্ধেক। এ থেকে বোঝা যায়, বিদেশি কর্মীরা এদেশ থেকে কী পরিমাণ অর্থ নিয়ে যাচ্ছে। বিদেশিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ দেয়া হয়েছে ভারতীয়দের। সিপিডি’র এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, বাংলাদেশে প্রায় ৫ লাখ ভারতীয় কাজ করছে। তারা বছরে ৩.৭৬ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা তাদের দেশে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ দেশটির পঞ্চম রেমিট্যান্স প্রদানকারী দেশ। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, একদিকে আমাদের তরুণরা বিদেশে গিয়ে চরম প্রতিকূল পরিবেশে থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা দেশে পাঠাচ্ছে, অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে বিদেশিরা হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে। পার্শ্ববর্তী ভারত বাংলাদেশকে তার অন্যতম শীর্ষ রেমিট্যান্স আহরণকারী দেশে পরিণত করেছে। যেখানে বাংলাদেশে কর্মক্ষম বেকার উপচে পড়ছে, সেখানে বিদেশিদের এই আধিপত্যকে সরকার অবলীলায় মেনে নিচ্ছে। এক্ষেত্রে নীতিমালা থাকলেও তা যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে না। দুঃখজনক হচ্ছে, যোগ্য বাংলাদেশী চাকরিপ্রার্থী থাকা সত্তে¡ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিদেশিদের নিয়োগ দেয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশী কর্মী ছাঁটাই করে বিদেশিদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে বলে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এ ধারণা বদ্ধমূল, বিদেশিদের নিয়োগ দিলে তাদের প্রেস্টিজ বাড়ে। তাদের এ মানসিকতা যে দেশকে দেশের কর্মক্ষম বেকারদের উপহাস করা, তা তাদের বিবেচনায় নেই। তাদের মধ্যে এ বোধটুকু কাজ করছে না, যদি দেশের একজন বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়, তবে দেশের অনেক বড় উপকার হয়। একজন বেকারের কর্মসংস্থানের কারণে একটি পরিবার দারিদ্র্যমুক্ত হয়। দেশের অর্থনীতি গতি লাভ করে। দেশের টাকা দেশে থেকে যায়। তাদের এ মানসিকতা দেশপ্রেমহীনতা ছাড়া কী বলা যেতে পারে? তারা এটা মনে করে না, আমাদের দেশ মধ্যপ্রাচ্য বা ইউরোপ-আমেরিকার মতো উন্নত দেশ নয় যে, বাইরের দেশ থেকে শ্রমিক আমদানি করে কাজ করাতে হবে। যেখানে আমাদের দেশের শিক্ষিত-অশিক্ষিত বেকার তরুণরা উন্নত দেশে মজুরের কাজ করার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশ যাচ্ছে, সেখানে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদেশিদের চাকরি দেয়া কি তাদেরকে উপেক্ষা, উপহাস ও অবহেলা করা নয়? আমাদের বিদেশিপ্রীতি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এ বোধ কে জাগাবে? বাংলাদেশে বিদেশি কর্মকর্তা ও কর্মচারি যে নিয়োগ করা যাবে না, তা নয়। বিনিয়োগ বোর্ড একটি নীতিমালা করে দিয়েছে। নীতিমালায় বলা আছে, একজন বিদেশি নিয়োগ দিতে হলে তার বিনিময়ে পাঁচজন বাংলাদেশি নিয়োগ দিতে হবে। পাশাপাশি এ কথাও বলা আছে, নিযুক্ত বিদেশি নাগরিকের কাজের ক্ষেত্রে বাংলাদেশিকে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করে বিদেশিকে বিদায় করে দিতে হবে। নীতিমালা যথাযথভাবে করলেও, বিদেশিদের নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো তার কোনো তোয়াক্কা করছে না। বিনিয়োগ বোর্ড বা সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানও এ নীতিমালা অনুসরণ করছে কিনা, তা তদারকি করছে না। করলে এভাবে স্বেচ্ছাচারি মনোভাব দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশি কর্মী নিয়োগ দিতে পারত না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের হিসাবে, বাংলাদেশে অবস্থানকারী বৈধ বিদেশি আছেন ১ লাখের উপরে। অথচ বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে বিদেশি আছে প্রায় ১০ লাখ। এদের বেশিরভাগ ট্যুরিস্ট ভিসায় এলেও তাদের মূল লক্ষ্য কাজ করা। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার কয়েক দিন আগে ছুটি নিয়ে দেশে গিয়ে নতুন করে আবার ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে আসে। অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো লাখ লাখ বিদেশিকে নিয়োগ দিয়ে একদিকে যেমন হাজার হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে চলে যাওয়ার পথ তৈরি করে দিচ্ছে, তেমনি বাংলাদেশের কর্মসংস্থানের পথটিকেও রুদ্ধ করে দিচ্ছে। বিদেশি চাকুরেদের এই অবাধ সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া যে দেশের বেকারত্বের হার অধিক বাড়িয়ে দেয়া এবং যুব সমাজকে হতাশার দিকে ঠেলে দেয়া, তা কেউই আমলে নিচ্ছে না।
চার.
বিশ্বের কোনো দেশই বেকারত্ব থেকে মুক্ত নয়। উন্নত বিশ্বেও বেকারত্ব রয়েছে। তবে তাদের বেকারত্ব আর আমাদের দেশের মতো উন্নয়নকামী দেশের বেকারত্বের ধরণ এক নয়। সেখানে সরকারিভাবে বেকারদের ভাতা দেয়ার নিয়ম রয়েছে। যদিও সেসব দেশের বেকাররা এ ভাতা নেয়াকে অসম্মানজনক মনে করে। আবার ইউরোপের বেশ কিছু দেশ আছে, যাদের জনশক্তি কম এবং কাজ করার মতো পর্যাপ্ত লোকবলের অভাব রয়েছে। তারা অন্যদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি আমদানি করে। আমাদের দেশে দক্ষ জনশক্তির অভাব থাকলেও কর্মক্ষম বিপুল জনগোষ্ঠী রয়েছে। এদের বেশিরভাগই তরুণ। বলা যায়, তারুণ্যে ভরপুর একটি দেশ। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তরুণ জনগোষ্ঠীর এ সুবিধা যদি কাজে লাগানো যায়, তবে বাংলাদেশ দ্রæত অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করবে। এই জনগোষ্ঠীকে বোঝায় পরিণত না করে কাজে লাগানোর সব ধরনের ব্যবস্থা দ্রæত গ্রহণ করতে না পারলে এ সম্পদ হারিয়ে যেতে সময় লাগবে না। সরকারের এদিকে তেমন মনোযোগ আছে বলে মনে হয় না। বলার অপেক্ষা রাখে না, কর্মসংস্থানের মূল ক্ষেত্র হচ্ছে বিনিয়োগ। এর মাধ্যমে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা ও অন্যান্য ক্ষেত্র গড়ে তোলা হয়। বিনিয়োগের এ ক্ষেত্রটি বিগত কয়েক বছর ধরে ঋণাত্মক পর্যায়ে রয়েছে। সরকার মুখে মুখে বিনিয়োগের প্রাচুর্যের কথা বললেও বাস্তবতা হচ্ছে, নতুন শিল্প-কারখান গড়ে উঠা দূরে থাক, বিদ্যমান অনেক কারখানা বিশেষ করে গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কর্ম সংস্থানের সবচেয়ে বড় খাত গার্মেন্টের শত শত কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে বলে ইতোমধ্যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বেকার হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। বিদ্যমান বেকারের সংখ্যার সাথে কর্মচ্যুত বেকার যুক্ত হয়ে বেকারত্বের মিছিলটিকে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ করে তুলছে। এই বেকারদের অনেকে হতাশ হয়ে আত্মহত্যা থেকে শুরু করে মাদকাসক্তি ও সন্ত্রাসের পথ বেছে নিচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে পরিবারিক ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা। বেকাররা পরিণত হচ্ছে পরিবার, সমাজ ও দেশের বোঝায়। এই বেকারের দেশই আবার কোনো কোনো দেশ তাদের আয়ের অন্যতম উৎসে পরিণত করেছে। কেবল আমরাই পারছি না, এ মরুদ্যান রক্ষা করতে। ইচ্ছাকৃতভাবে বিদেশিদের হাতে তা ছেড়ে দিচ্ছি। একদিকে জনশক্তি রপ্তানি করছি, অন্যদিকে আমদানি করছি। আমাদের বেকার তরুণরা একটি চাকরির সন্ধানে হন্যে হয়ে ঘুরছে, বিদেশ যাওয়ার জন্য সর্বস্ব বিক্রি করছে, অন্যদিকে আমাদেরই প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশিদের নিয়োগ দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা দেশ থেকে চলে যাওয়ার রাস্তা করে দিচ্ছে। এ অবস্থা যদি চলতে থাকে, তবে আমরা যে উন্নতির কথা বলছি, তা মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েই থাকবে। দেশের বেকারত্বের রাশ টেনে ধরতে সরকারকে অবশ্যই এ দিকে মনোযোগ দিতে হবে। বিদেশি নিয়োগের ক্ষেত্রে নীতিমালা কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান বিদেশিদের নিয়োগ দিচ্ছে, তাদেরও দেশের বেকারত্বের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। দেশ প্রেমের পরিচয় দিয়ে দেশের মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। দেশের টাকা দেশে রেখে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হবে।
ফধৎঢ়ধহ.লড়ঁৎহধষরংঃ@মসধরষ.পড়স
ঢাকা সিটি নির্বাচন ও ইভিএম বিতর্ক
আজম জহিরুল ইসলাম
সনাতন ধর্মের লোকদের স্বরসতী পূজার কারণে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তারিখ পেছাতে বাধ্য হয়েছে নির্বাচন কমিশন। যদিও কমিশন অনড় ছিলো নির্ধারিত তারিখেই নির্বাচন করবে বলে। ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচন দুদিন পিছিয়ে ১ ফেব্রæয়ারি নির্ধারণ করায় একটি অহেতুক বিতর্ক এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে। সনাতন ধর্মের লোকজনও দাবি জানিয়ে আসছিল একই দিনে পূজা ও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে না। রাজনৈতিক দলগুলোও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের আশংকা করছিল। স্পর্শকাতর এই বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আদালত পর্যন্তও গড়ায়। পাশাপাশি ১ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় এসএসসি পরীক্ষাও দুদিন পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। ১ তারিখের পরীক্ষা যথারীতি ৩ ফেব্রæয়ারি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যখন নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে দেশের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনা ও বিতর্ক বিদ্যমান রয়েছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে কিনা, ভোটাররা নির্বিঘেœ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে কিনা এবং ইভিএম ব্যবহারের ফলে একজনের ভোট অন্যজনের মার্কায় চলে যাবে কিনাÑ এসব প্রশ্ন ভোটারদের মনে বারবার উঁকি দিচ্ছে। এখনও তারা দ্বিধাদ্ব›েদ্ব আছে নির্বাচনের দিন দুই সিটিতে কী হতে যাচ্ছে! নির্বাচনের নামে প্রহসন নাকি সুষ্ঠু ভোট হতে যাচ্ছে?
নির্বাচনী প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি অর্থাৎ বড় তিন দলই আচরণবিধি লংঘন করে চলেছে। এর মধ্যে পোস্টার ছেড়া, নির্বাচনী কাজে বাধা দেয়া, গণসংযোগের সময় হামলা, গাড়ি ভাঙচুরসহ নানা কর্মকাÐের কথা উল্লেখ করা যায়। প্রতিদিনই নির্বাচনী পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। বড় দু’দল থেকে শুরু করে অন্যান্য ছোটখাটো দলও নির্বাচন কমিশনে আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগ তুলে ধরেছে। দুই সিটির কোথাও কমিশনের বেঁধে দেয়া আচরণবিধি মেনে চলছেন না প্রার্থী ও তার সমর্থকরা। কমিশনে অভিযোগ করেও প্রত্যাশিত ফল পাচ্ছে না কোনো দলই। নির্বাচন কমিশন যেন ‘কানে দিয়েছে তুলো, পিঠে বেঁধেছে কুলো’।
এদিকে ইভিএম নিয়ে সন্দেহ ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে আওয়ামী লীগ বাদে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যেই। তারা ইভিএম নামের এই যন্ত্রটিকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস এবং আস্থায় নিতে পারছে না। ভোটারদের মনেও সংশয় কাজ করছে পছন্দের প্রার্থীকে তারা নির্দ্বিধায় ভোট প্রয়োগ করতে পারবে কিনা। ইভিএম যন্ত্র সম্পর্কে মানুষের মনে নেতিবাচক ধারণা জন্মেছে, এই যন্ত্রের সাহায্যে ভোট দিলে সেই ভোট পছন্দের প্রার্থীর বাক্সে যাবে, না ইঞ্জিনিয়ারিং করে তার ভোট অন্য প্রার্থীরা নিয়ে নেবে? এদিকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে নির্বাচনের জন্য ৩৫ হাজার ইভিএম প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রয়োজনীয় ইভিএম ছাড়াও ৫০ শতাংশ বেশি ইভিএম প্রস্তুত থাকবে। প্রতি কেন্দ্রে ইভিএমের টেকনিক্যাল সাপোর্টের জন্য দুজন করে সেনা সদস্যও কাজ করবে।
এই ইভিএম নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘ইভিএম ভোটাধিকার হত্যার এক নিঃশব্দ দুরভিসন্ধি প্রকল্প। নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ভোটের দাবি করেন তিনি।’ মির্জা ফখরুলের কঠোর সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘ঢাকা সিটি নির্বাচনে পরাজয়ের আঁচ পেয়ে বিএনপি নেতারা আবোল-তাবোল বকছেন। যে কারণে তাদের মুখে পরাজয়ের সুর।’ এদিকে ইভিএম নিয়ে রীতিমতো সন্দেহ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম। সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিতে গিয়ে এক পর্যায়ে তিনি বলে ফেলেছেন, ‘বুথ দখল করে ইভিএমে জাল ভোট দেয়া সম্ভব।’ অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার আকস্মিক সংবাদ সম্মেলন ডেকে বলেছেন, ‘আমি নিজেই মনে করি, সিটি নির্বাচনে লেভেল ফিল্ড বলে কিছু নেই। লেভেল ফিল্ড কথাটা এখন একটা অর্থহীন কথায় পর্যবসিত হয়েছে।’ গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া বলেছেন, ‘দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করার জন্য ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচন করা হচ্ছে। ইভিএম হলো ইলেক্ট্রনিক ভোট ফ্রড (এইভিএফ)।’ ইভিএমকে গজব বলে মন্তব্য করে নাগরিক ঐক্যের আহŸায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘মানুষ যা তৈরি করে তা নিজের জন্য তৈরি করে। নির্বাচন কমিশনকে পেছন থেকে কেউ ইভিএম আমদানি করিয়েছেন ওদের নিজেদের জন্য।’ ইতিপূর্বে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা বলেছিলেন, সব দল চাইলে ইভিএমে ভোটিং হবে, না চাইলে না। এখনতো সরকারি দল আওয়ামী লীগ ছাড়া বিএনপিসহ অন্যান্য দল ইভিএমকে ‘না’ বলে আসছে। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, তাহলে কী কারণে, কাদের স্বার্থে বা কাদের ইঙ্গিতে এই যন্ত্রটির ব্যবহার থেকে সরে আসছে না কমিশন?
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার পূর্ব শর্ত হচ্ছে, নির্বাচনী মাঠের সুন্দর পরিবেশ। তারপর আছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকা। এ দুটির সমন্বয় না হলে যত চেষ্টা করাই হোক না কেনো নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে না। আজকে ঢাকা সিটির যে চিত্র আমরা দেখছি তাতে মনে হয়, না নির্বাচন নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। যদিও সরকার দলের নেতারা আশার বাণী শুনিয়ে যাচ্ছেন নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে এবং ফলাফলই যা-ই আসুক সরকারি দল তা মেনে নেবে। মানুষ তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, ঢাকা সিটি নির্বাচনে ভোটাররা যেন কোনো রকম বাধা-বিপত্তি ও ভয়ভীতি ছাড়াই তাদের পছন্দের প্রার্থীকে সিটি মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত করতে পারেন।
পত্রপত্রিকার রিপোর্টে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ১৯২ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১৮ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে আছে ভাঙচুরের মামলাও। আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতি এবং নারী নির্যাতনের মামলা। আর বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের নামে রয়েছে ভাঙচুর-সহিংসতা ও সরকারি কাজে বাধাদানের মামলা। ঢাকা উত্তরের ৩২৮ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে মামলা আছে ৮৭ জনের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ১০ জন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর প্রার্থীও আছেন। দক্ষিণের ৪১৭ জন প্রার্থীর মধ্যে ১০৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এর মধ্যে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন ৮ জন। এসব মামলা মাথায় নিয়েই মেয়র, কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাদের দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মাঠের আধিপত্য বজায় রাখতে চলছে অস্ত্রের মহড়াও। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকা চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের কেউ কেউ মাঠে নেমেছে তার পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে। ভোটের মাঠে অপরাধীদের অবাধ চলাচলে পুলিশ ও গোয়েন্দারাও চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। এই সুযোগে অনেক প্রার্থী কালো টাকা ছড়িয়ে দিচ্ছেন নির্বাচনী মাঠে। শীর্ষ সন্ত্রাসী ও আন্ডারওয়ার্ল্ডের মাফিয়ারাও ঘরে বসে নেই। তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে জেতাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে সন্ত্রাসী ও নাশকতার আশংকা করছে পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের লোকজন। এদের শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করাসহ মাঠের সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে না পারলে সবকিছু অন্য রকম হয়ে যেতে পারে। সুতরাং নির্বাচন কমিশনসহ সব রাজনৈতিক দলকে দুই সিটি নির্বাচনে সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে এগিয়ে আসতে হবে। নির্বাচন যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সে জন্য ইভিএম বাতিলসহ স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোটাধিকার প্রয়োগ, ভোটারদের কেন্দ্রে আনার ব্যবস্থা, জালভোট প্রতিহত, কেন্দ্র দখল বন্ধ, সন্ত্রাসী ও মাস্তানদের প্রতিরোধ এবং নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক, ছড়াকার, নাট্যকার
ই-পাসপোর্ট যুগে বাংলাদেশ
সাবেক আমলের কাগুজে পাসপোর্ট থেকে এমআরপি বা মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের প্রচলন শুরু হয়েছিল ৮ বছর আগে। ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপায়ণের হাত ধরে এমআরপি থেকে এখন ই-পাসপোর্ট যুগে প্রবেশ করেছি আমরা। আরো এক বছর আগেই ই-পাসপোর্ট চালুর পরিকল্পনা থাকলেও অবশেষে গত বুধবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ই-পাসপোর্ট প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ওইদিন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই প্রকল্পের উদ্বোধনের সময় প্রকল্প কর্মকর্তারা প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তাঁর ই-পাসপোর্ট তুলে দেন। এটি নি:সন্দেহে আমাদের জন্য একটি মাইলফলক অর্জন। প্রধানমন্ত্রী ই-পাসপোর্ট প্রকল্পকে মুজিব বর্ষের উপহার এবং জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে মাইলফলক বলে উল্লেখ করেছেন। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই প্রথম ই-পাসপোর্ট শুরু করল। ভারত-পাকিস্তানসহ সার্কভুক্ত কোনো দেশেই এখনো ই-পাসপোর্ট শুরু হয়নি। পাসপোর্ট নিয়ে নানা ধরণের হয়রানি জালিয়াতি এবং বিদেশে প্রবাসী কর্মীদের নানা ধরনের ভোগান্তির বিষয় নতুন করে উল্লেখের প্রয়োজন নেই। জাল পাসপোর্ট, গলাকাটা পাসপোর্টে বিদেশে যাওয়ার পর পুলিশের হাতে ধরা পড়ে আটক হওয়া বা শূন্যহাতে দেশে ফেরত আসার দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা এমআরপি’ হওয়ার পর অনেকটা কমে আসলেও এমআরপিতে কিছু অনিবার্য দুর্বলতা থাকায় বিদেশে বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট সংক্রান্ত জটিলতা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এহেন বাস্তবতায় ই-পাসপোর্ট প্রকল্প জাতির সামনে নতুন আশার আলো সঞ্চার করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের এটি বাস্তব অগ্রগতি হিসেবে গণ্য হতে পারে। এর রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমাদের আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
প্রায় এককোটি প্রবাসী কর্মী আমাদের রেমিটেন্স যোদ্ধা। এই রেমিটেন্স যোদ্ধারাই দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছেন। কিন্তু বিদেশের মাটিতে তাদের বিড়ম্বনা, অবমাননা এবং বঞ্চনার ধারাবাহিক ইতিহাস আমাদেরকে ব্যথিত ও হতাশ করে। পাসপোর্ট জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধ অনুপ্রবেশ বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন দেশের এয়ারপোর্টে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারিদেরকে অশেষ বিড়ম্বনা ও লজ্জাজনক অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়। ই-পাসপোর্ট সেই সব জালিয়াতি, বিড়ম্বনা ও আস্থার সংকট অনেকটাই দূর করবে বলে আশা করা যায়। সেই সাথে দেশের পাসপোর্ট অফিসগুলোতে পাসপোর্ট পেতে অস্বাভাবিক সময় ক্ষেপণ, বিড়ম্বনা, দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা, অতিরিক্ত খরচ ইত্যাদি অনাকাঙ্খিত বাস্তবতা থেকেও মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। ই-পাসপোর্ট বিদেশে বাংলাদেশি পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা ও নিরাপত্তা বাড়াবে এবং বিদেশ ভ্রমণে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়াকে সহজতর করবে। দক্ষিণ এশিয়া তো নয়ই, বিশ্বের অর্ধেকের বেশি দেশ এখনো ই-পাসপোর্ট চালু করতে পারেনি। বিশ্বের ১১৯তম দেশ হিসেবে ই-পাসপোর্ট যুগে প্রবেশ বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা বৃদ্ধিতেও ইতিবাচক ভ’মিকা রাখবে। ই-পাসপোর্টের সাথে সাথে বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিদ্যমান অস্বচ্ছতা, অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা দূর করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়া এবং এমআরপি চালুর পাশাপাশি কিছু সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে পাসপোর্ট অফিসগুলোকে ঘিরে দালাল চক্রের তৎপরতা অনেকটাই কমে এসেছে। তবে পাসপোর্ট পেতে অনাকাঙ্খিত বিড়ম্বনা এখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। গত সপ্তাহে ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, কাগজপত্র জমা দেয়ার পর ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে সউদিগামী অনেকে পাসপোর্ট পাচ্ছেন না। এখনো অতিরিক্ত খরচে দালালের মাধ্যমে জরুরী পাসপোর্ট পাওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ বলে জানাচ্ছেন ভুক্তভোগিরা। প্রথমে ঢাকার আগারগাঁওসহ কেন্দ্রীয় পাসপোর্ট অফিসসহ উত্তরা, যাত্রাবাড়ি-কেরানিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসকে ই-পাসপোর্ট সরবরাহের আওতায় আনা হলেও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশের সব পাসপোর্ট অফিস ও বিদেশের অফিসগুলোকে ই-পাসপোর্টের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সেই সাথে পাসপোর্ট অধিদফতর, ইমিগ্রেশন অফিসসহ সংশ্লিষ্ট সব দফতরের কর্মকর্তাদের ই-পাসপোর্ট যাচাই ও পর্যবেক্ষণের উপযোগী করে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নয়নসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। ই-পাসপোর্ট চালুর মধ্য দিয়ে অতীতের বিড়ম্বনা, অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতি বন্ধ হবে বলে আমরা আশাবাদি। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সর্বক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশন অন্যতম হাতিয়ার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত আগ্রহ ও তত্ত¡াবধানে মুজিববর্ষে ই-পাসপোর্ট চালুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নতুন মাত্রা ও মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে। প্রতিশ্রæত সময়ে নিশ্চিতভাবে পাসপোর্ট পেতে পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ যে সব গতানুগতিক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়, সেখানেও এনালগ যুগের মনোভাব পরিবর্তনে কার্যকর মনিটরিংসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ থাকতে হবে।
দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রাফিক আইন মানুন
রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের অন্যান্য শহরে যানবাহন বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও রয়েছে গাড়ির জন্য প্রযোজ্য বিশেষ আইন। গাড়ি চালাতে গিয়ে এগুলো অমান্য করলে জরিমানা কিংবা মামলা হতে পারে। ট্রাফিক আইন মানা আমাদের সবার প্রয়োজন। রাস্তা পারাপারে ফুট ওভারব্রিজ, আন্ডারপাস অথবা জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করতে হবে। যেখানে সেখানে রাস্তা পারাপার দÐনীয় অপরাধ। এ সময় হেডফোন ব্যবহার ও মোবাইল ফোনে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। হেঁটে চলার সময় ফুটপাত ব্যবহার করতে হবে। চলন্ত গাড়িতে ওঠা-নামা করা যাবে না। চালকদেরও মেনে চলতে হবে ট্রাফিক আইন। গাড়ি চালানোর সময় অবশ্যই সিটবেল্ট ব্যবহার ও গতিসীমা মেনে চলতে হবে।
মো. ওসমান গনি শুভ
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
চাকরির বাজারে ভারতীয়দের আধিপত্য দেশের বেকার তরুণদের কী হবে
কামরুল হাসান দর্পণ
দেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রটি ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। বেকার থেকে যাচ্ছে লাখ লাখ কর্মোপোযোগী মানুষ। সরকারি হিসেবে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখের মতো হলেও এ সংখ্যাটি নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, দেশে বেকারের সংখ্যা কয়েক কোটি। যে হারে কর্মসংস্থান হওয়ার কথা, সে হারে না হওয়ায় এ সংখ্যা ক্রমবর্ধমানহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে বছরে ২২ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। এদের মধ্যে কাজ পায় মাত্র ৭ লাখ। এর মধ্যে শিক্ষিত-অশিক্ষিত বেকার রয়েছে। পত্রপত্রিকার হিসাব অনুযায়ী, দেশে উচ্চ শিক্ষিত বেকার প্রায় পৌনে এক কোটি। প্রতি বছর এর সাথে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন বেকার। তথ্য অনুযায়ী, কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় মাধ্যম বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান শতকরা ৯৫ ভাগ বেকারের কর্মসংস্থান করে। এর মধ্যে এককভাবে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান করছে পোশাকশিল্প। এ খাতে প্রায় ৪০ লাখ লোক কাজ করছে। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থার অবদান মাত্র ৫ শতাংশ। অবশ্য দেশি এসব পরিসংখ্যানের সাথে বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার হিসাবের মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান পরিলক্ষিত হয়। বছর পাঁচেক আগে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা ৩ কোটি। কয়েক বছরের মধ্যে তা দ্বিগুণ হবে। যা মোট জনসংখ্যার ৩৯.৪০ শতাংশ হবে। হিসাবটি কয়েক বছর আগের হলেও এর যে খুব পরিবর্তন হয়েছে, তা বলা যায় না। বরং বেকারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এর সাথে নতুনভাবে যুক্ত হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ও মালয়েশিয়া থেকে ফেরত আসা শত শত শ্রমিক। শুধু এসব দেশ থেকেই নয়, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকেও মানুষ দেশে ফিরছে। ফলে দেশের বেকারত্বের হারের সাথে তারাও যুক্ত হচ্ছে। লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে বিদেশ যাওয়া হতাশ এসব মানুষ দেশে ফিরে কী করবে, কোথায় কর্মসংস্থান হবে, তার নিশ্চয়তা নেই। এই যখন পরিস্থিতি তখন পত্র-পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, দেশে বিদেশি কর্মী কা<
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।