Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নির্দেশ ছাড়া দেশত্যাগ করতে পারবেন না কর্মকর্তারা

ইচ্ছা করলেই ধর্মঘট ডাকা যাবে না

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

সরকারি চাকরিতে কর্মরত কর্মকর্তারা সরকারের নির্দেশ ছাড়া দেশত্যাগ করতে পারবেন না। একই সঙ্গে জনজীবন ব্যাহত হয় এমন কোনো ক্ষেত্রে ইচ্ছা করলেই আর ধর্মঘট বা হরতাল ডাকা যাবে না। এ লক্ষ্যে অত্যাবশ্যকীয় সেবা খাতে বেআইনিভাবে ধর্মঘট ডাকলে বা সমর্থন দিলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ডের বিধান রেখে অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা আইন ২০২২-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে আইনটির খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২০২১ সালের ৪ অক্টোবর মন্ত্রিসভা এই আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল। খসড়াটি চূড়ান্ত অনুমোদনের পর যাবে সংসদে। এরপর গেজেট আকারে এটি জারি করবে সরকার। আইনটিতে ১৪টি ধারা রয়েছে। ৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, সরকার কোন বিষয়গুলোতে অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা হিসেবে ঘোষণা করবে। ৫ ধারায় বলা হয়েছে, কতিপয় চাকরিতে কর্মরতদের নির্দিষ্ট এলাকা ত্যাগ না করার ক্ষমতা, আর ৫ ধারায় বলা হয়েছে ধর্মঘট, লকডাউন বা লে-অফ নিষিদ্ধ করার কথা। অনেক সময় শিল্পপ্রতিষ্ঠানে লে-অফ বা নক আউট করা হয়। সরকার যদি মনে করে এগুলো জাস্টিফায়েড না তাহলে এগুলো নিষিদ্ধ করতে পারবে। যে সেবাগুলোকে সরকার মনে করবে অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা সেগুলোর নাম ঘোষণা করা যাবে। কয়েকটি সেবার নাম এখানে উল্লেখ করা আছে। যেমন ডাক ও টেলিযোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, ই-কমার্স, ইলেক্ট্রনিক ও ডিজিটাল সেবা। সরকার মনে করে এই সেবাগুলো যখন খুশি তখন বন্ধ করে দিতে পারবে না।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দ্বিতীয়ত, ডিজিটাল আর্থিক সেবা যেমন মোবাইল আর্থিক সেবা, বিদ্যুৎ উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন এবং এর সাথে যোগ করা হয়েছে গ্যাস ও কয়লা। এগুলো অত্যাবশ্যক সেবা। এগুলোর বিষয়ে যদি কোনো অচলাবস্থা তৈরি হয় সেক্ষেত্রে সরকার ইন্টারফেয়ার করতে পারবে এবং যেখাবে নির্দেশ দেবে রাষ্ট্রীয় কল্যাণে সেভাবে পরিচালিত হতে হবে।

স্থল, পানি, রেল ও আকাশপথের যাত্রী বা পণ্য সেবাও অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বলে পরিচিত হবে। স্থল, সমুদ্র, নদী বা বিমানবন্দরের পণ্য খালাস, সশস্ত্র বাহিনীর পরিচালনায় কোনো প্রতিষ্ঠান বা এ সংক্রান্ত পরিষেবা। এর বাইরেও সরকার মনে করলে যে কোনো সেবাকে অত্যাবশ্যকীয় সেবা ঘোষণা করতে পারবে। আইনটির খসড়া অনুযায়ী দেশের প্রতিরক্ষার উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় পণ্য বা মালামাল উৎপাদনের কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত পরিষেবা, খাদ্যদ্রব্য ক্রয়, বিক্রয়, সংগ্রহ, সংরক্ষণ, মজুত বা বিতরণ কাজে নিযুক্ত সরকারি মালিকানাধীন বা সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত পরিষেবা, হাসপাতাল, ক্লিনিক, স্বাস্থ্যসেবা বা অনুরূপ প্রতিষ্ঠান এবং ডিসপেনসারি সম্পর্কিত কোনো পরিষেবা, ওষুধ উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন, ক্রয় বিক্রয়সহ এসব কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা কারখানার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত পরিষেবা, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিষেবা, তেলক্ষেত্র, তেল শোধনাগার, তেল সংরক্ষণ এবং পেট্রোলিয়াম বা পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ উৎপাদন, পরিবহন, সরবরাহ ও বিতরণের কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত পরিষেবা এবং টাকশাল ও নিরাপত্তামূলক মুদ্রণ কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত পরিষেবাকে সরকার গেজেট দিয়ে অত্যাবশ্যক পরিষেবা হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে।

তিনি বলেন, এর বাইরেও জনকল্যাণমূলক সেবা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এমন সেবা জননিরাপত্তা বা জনগণের জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সরবরাহ ও রক্ষণাবেক্ষণ সেবা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এমন সেবাকেও অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা ঘোষণা করতে পারবে। জনগণের অসহনীয় কষ্টের কারণ হলে বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে এবং দেশের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সারা দেশে বা দেশের কোনো অংশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ছয় মাসের জন্য কোনো চাকরি বা কোনো শ্রেণির চাকরি সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিষেবাকেও সরকার ছয় মাসের জন্য অত্যাবশ্যক পরিষেবা হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে। প্রয়োজনে এর মেয়াদ আরো ছয় মাস বাড়ানো যাবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলন, যদি কেউ এ জাতীয় অপরাধ করে তাহলে সাধারণভাবে ৬ মাসের কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা হবে। আবার বেআইনি ধর্মঘট চলমান রাখার জন্য যদি সমর্থন দেয় তাহলে ১ বছরের কারাদণ্ড ও অনূর্ধ্ব ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। অনেকগুলো অপরাধের কথা এখানে বলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের মালিক যদি বেআইনি লেআউট চালু করে সেক্ষেত্রে অনূর্ধ্ব ৬ মাস জেল ও অনূর্ধ্ব ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা দুটোই করা যাবে। কেউ যদি প্ররোচনা দেয় তাহলে মূল অপরাধে যে শাস্তি সেই শাস্তিই পাবে। বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেওয়া যাবে যদি সরকারি কোনো অফিস হয়। যেমন কোনো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের এমডি যদি লে-অফ ঘোষণা করে তাহলে এর বাইরেও ডিপার্টমেন্টাল প্রসিডিং হবে।



 

Show all comments
  • Ali Azgor Sohsg ১ নভেম্বর, ২০২২, ৬:৩৬ এএম says : 0
    এটা কেমন কথা, এই আইন তো সহজেই প্রতিবাদের রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছে। এটা গনতান্ত্রিক আইনের মধ্যে পড়ে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Riyadh Karim ১ নভেম্বর, ২০২২, ৬:০৮ এএম says : 0
    যারা চলে গেছে তাদের ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত??
    Total Reply(0) Reply
  • Hasan Tareque ১ নভেম্বর, ২০২২, ৬:০৮ এএম says : 0
    সরকার পরিবর্তন হলে শুধু রাজনীতিবিদরা একা কেনো দেশে থাকবে দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তারাও যেনো দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে তাই এই আইন খুবই কাজে দিবে। ভালো আইন
    Total Reply(0) Reply
  • Akash Khan ১ নভেম্বর, ২০২২, ৬:০৭ এএম says : 0
    মনে করেন এইটা গণতন্ত্রের নতুন বৈশিষ্ট্য।
    Total Reply(0) Reply
  • আরমান হোসাইন শান্ত ১ নভেম্বর, ২০২২, ৬:০৭ এএম says : 0
    শুধু বিএনপি সমাবেশের ডাক দিলেই এই ধর্মঘটের আওয়াজ শোনা যায়।
    Total Reply(0) Reply
  • Muhammad Bin Boktier ১ নভেম্বর, ২০২২, ৬:০৭ এএম says : 0
    কর্মকর্তারা জানে । যে জনগনের বিচার হবে শ্রীলঙ্কার স্টাইলে ।সুতরাং যারা ব্যাপক কামিয়েছে । তারা এখন বেগম পাড়ায় চলে যেতে চায় ।শান্তিতে থাকে চায় ।
    Total Reply(0) Reply
  • hassan ৫ নভেম্বর, ২০২২, ৪:৪০ পিএম says : 0
    আমরা মুসলিম আমাদের আইন হচ্ছে কুরআন আর তোমরা যদি মুসলিম হতে তাহলে কোরান দিয়েই দেশ শাসন হতো আরো উন্নত হতো মানুষ তোমাদের হাতে খুন হতো না গুম হত না হত না শত শত লোকের বিরুদ্ধে মিথ্যা কেস হতো না দেশের সম্পদ লুটপাট করে বিদেশে পাঠানো হতো না আমাদের দেশের স্বার্থ ইন্ডিয়ার কাছে বিনা পয়সায় বিক্রি করে দেওয়া হতো না ইন্ডিয়ার কাছে আমাদের স্বাধীনতা বিকিয়ে দেওয়া হতো না আর শুধু আইন প্রণয়ন করে তারা মুসলিম জেগে ওঠো মুসলিমরা কখনও মুরতাদ মুনাফিকদের পায়ের তলে থাকে না এদেরকে লাথি মেরে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করতে হবে এদেশে তাহলে আমরা এই দেশটাকে উন্নত করতে পারব কোন গরীব লোক থাকবে না কোন জালেম ধর্ষক চাঁদাবাজ গুম কারি গণহত্যাকারী লুটপাটকারী ধাপ্পাবাজ মিথ্যা বাদী থাকবে না>>আমরা সবাই মিলেমিশে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারব>>>কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন মুসলিমরা একটা দেহের মত মুসলিমদের মধ্যে দল হয় না আমরা একদল কেউ কারো সাথে মারামারি কাটাকাটি করে না সবাই সবাইকে সাহায্য করে
    Total Reply(0) Reply
  • Hasan Tareque ১ নভেম্বর, ২০২২, ৬:০৮ এএম says : 0
    সরকার পরিবর্তন হলে শুধু রাজনীতিবিদরা একা কেনো দেশে থাকবে দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তারাও যেনো দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে তাই এই আইন খুবই কাজে দিবে। ভালো আইন
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Hamid ১ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০৯ পিএম says : 0
    কোনো প্রকার পূর্বঘোষণা ছাড়া যে ৩/৪ অঞ্চলে পরিবহন ধর্মঘট হয়ে গেলো এবং বিএনপির বরিশাল সমাবেশ কেন্দ্র করে যে নৈরাজ্য চলছে এবং ৩-৫ নভেম্বর পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে তার কি হবে? এই সব আইন আর সরকারের অবস্থানের মাজেজা বুঝা খুবই কঠিন। বিদেশ যাওয়া সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞা কি ইঙ্গিত দেয়? আল্লাহ মালুম। দেশ কি তাহলে জয় বাংলা হয়ে গেল?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সরকারি চাকরিতে কর্মরত
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ