পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের আন্দোলনের দাবি বাস্তবায়ন ঘটতে চলেছে। ২০১৮ সালে কোটা বিরোধী আন্দোলনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাবির যৌক্তিকতা মেনে নিয়ে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন। যদিও শিক্ষার্থীরা বাতিলের দাবি করেন নি, তারা কোটা সংস্কারের দাবি তুলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের ঘোষণা দিলেও সরকারের নির্দেশনা, প্রশাসন ও পিএসসির মতামতের প্রয়োজন ছিল। এতদিনে সেই নির্দেশনা ও মতামত পাওয়া গেছে। সে মোতাবেক অষ্টম গ্রেড থেকে ১ম গ্রেড পর্যন্ত কোনো কোটা থাকবে না। সেই সাথে অষ্টম ও তদূর্ধ্ব গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা বণ্টন পদ্ধতি সংক্রান্ত পরিপত্র সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। কোটা আন্দোলনের সময় গঠিত কোটা পর্যালোচনা কমিটি ৯ম থেকে ১৩ম গ্রেড পর্যন্ত কোটা বাতিলের সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দিয়েছিল। প্রায় দেড় বছর পর সোমবারের মন্ত্রীপরিষদ সভা সে প্রস্তাবেরই অনুমোদন দিল। এর ফলে সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া গ্রহণের ব্যবস্থা নিশ্চিত হলো। এতে বিদ্যমান অযৌক্তিক নিয়োগ পদ্ধতি ও মেধাবীদের বঞ্চনা অনেকটাই দূর হবে বলে আশা করা যায়।
সরকারি চাকরিতে যোগ্য ও মেধাবীদের জায়গা করে নেয়ার ক্ষেত্রে কোটা প্রথার পাশাপাশি আরো বেশকিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। বিশেষত নিয়োগের ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতা, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক প্রভাব মেধাবীদের জন্য প্রতিবন্ধক হিসেবে বিবেচিত হয়। স্বাধীনতার পর সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ কোটা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। এ ছাড়া অনগ্রসর অঞ্চল, সংখ্যালঘু, উপজাতীয় ও প্রতিবন্ধীদের জন্যও কোটা বরাদ্দ রয়েছে। সরকারি চাকরিতে ২৫৮ প্রকারের কোটা ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানা যায়। তবে ইতোমধ্যে দেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা ও বৈশ্বিক ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটলেও বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমান বাস্তবতা ও মেধাবী ও যোগ্যদের স্থান পাওয়ার প্রতিবন্ধকতা দূর করা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছিল। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির ক্ষেত্রে সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও বর্তমান জনপ্রশাসনের দুর্বলতা এবং আমলাতন্ত্রের অদক্ষতা ও অযোগ্যতা অনেকটাই স্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে বিভিন্ন সময়ে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি নানা দিকনির্দেশনার পর ও বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প সঠিকভাবে ও সময়মত বাস্তবায়ন করতে পারছে না। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, লালফিতার দৌরাত্ম্য, দীর্ঘসূত্রিতা ইত্যাদি অভিধাগুলো অদক্ষতা ও অযোগ্যতারই বহিঃপ্রকাশ। এর ফলে প্রতি বছর জনগণের রাজস্ব থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি-অব্যবস্থপনায় অপচয় ও লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। দেশি-বিদেশি ঋণের জালে বন্দি হয়ে পড়ছে দেশের সরকার ও জনগণ।
দেশের সম্ভাবনাময় খাতসমূহের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, বিনিয়োগ ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণসহ সামাজিক-অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশ্নে যে সব বাধা বিপত্তির কথা বলা হয়, তার কেন্দ্রে রয়েছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, অদক্ষতা, অযোগ্যতা ও দুর্নীতি। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে কোটা প্রথা ও রাজনৈতিক পক্ষপাতের কারণে অদক্ষ, অযোগ্য ও দুর্নীতিবাজদের ব্যাপক অনুপ্রবেশ ঘটেছে। জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত অযোগ্য, অদক্ষ, দলবাজ চাটুকারদেরই জয়জয়কার। তারা নিজ নিজ পেশা ও দায়িত্বের বদলে ক্ষমতাসীন মহলের রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা এবং ব্যক্তি ও গোষ্ঠিগত স্বার্থ রক্ষায় সদা ব্যস্ত থাকেন। আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজ বাস্তবতায় তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, জনগণের সম্পদের সুষম বণ্টন এবং সামাজিক-রাজনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে যেমন একটি দক্ষ ও যোগ্য আমলাতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। একইভাবে বৈদেশিক বিনিয়োগ, দেশি-বিদেশি কর্মসংস্থান এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সম্পর্কোন্নয়নের প্রত্যাশাও কূটনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক দক্ষতা ও স্বচ্ছতার উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। আমাদের বৈদেশিক কর্মসংস্থানের প্রশ্নে বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সাথে বিদ্যমান সমস্যা, প্রতিবেশী দেশের সাথে পানি বণ্টন বা সীমান্ত সমস্যা নিরসনে আমাদের আমলাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্নবিদ্ধ। কোটা ও দুর্নীতিমূলক নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ হলে দেশের যোগ্য ও মেধাবীরা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে আসীন হওয়ার মধ্য দিয়েই কেবল এ ধরনের সমস্যা নিরসন হতে পারে। কোটা প্রথা বাতিল ও সংস্কারের মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকার সে লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করল। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।