মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারতের বিক্ষোভকারীরা পোস্টকার্ড প্রচারণা শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে তারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে হাজার হাজার পোস্ট কার্ড পাঠিয়ে তাকে মুসলিমবিরোধী বিবেচিত বিরোধপূর্ণ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএএ) থেকে সরে আসার আহ্বান জানাচ্ছে।
ভারতীয় রাজধানী নয়া দিল্লির মুসলিম প্রাধান্যপূর্ণ শাহিনবাগের বিক্ষোভকারীরা গত শনিবার নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে বাধ্য না করার জন্য হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতার প্রতি আহ্বান জানিয়ে পোস্ট কার্ড পাঠায়।
গত মাসে পাস হওয়া সিএএ-এ পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারতে যাওয়া অভিবাসীদেরকে দ্রুত গতিতে নাগরিকত্ব প্রদান করার ব্যবস্থা রয়েছে।
সরকার বলছে, নির্যাতিত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি ও খ্রিষ্টানদেরকে সহায়তা করার জন্য এই আইন করা হয়েছে। কিন্তু এতে মুসলিমদের জন্য সহায়ক কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। বিরোধী দল ও অ্যাক্টিভিস্টেরা বলছেন, সিএএ ভারতের সেক্যুলার সংবিধানের লঙ্ঘন। তারা এই আইনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছে। আগামী সপ্তাহে এ ব্যাপারে শুনানির কথা রয়েছে।
নাগরিকত্ব হারানোর শঙ্কা
ভারতের ১৩শ’ কোটি জনসংখ্যার ১৩ ভাগ মুসলিম। তাদের আশঙ্কা, এনআরসি ও সিএএর মাধ্যমে তাদের কোণঠাসা করা হচ্ছে। তবে ক্ষমতাসীন বিজেপি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। অবশ্য বিজেপি গত মাসে জাতীয় জনসংখ্যা নিবন্ধন (এনআরপি) চালু করেছে। বিরোধীরা বলছে, এটা আসলে এনআরসিরই একটি পর্যায়।
আমাদের সাথে এসে চা পান করুন
এদিকে শাহিনববাগে যখন পোস্ট কার্ড আন্দোলন চলছে, তখন এক মাস ধরে এক মহাসড়কে বিক্ষোভ করে যাওয়া নারীরা তাদের সাথে এসে চা চান করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন। সেখানে একটি পোস্টারে বলা হয়েছে, আমরা আমাদের সাথে চা পান করার জন্য শাহিনবাগে আসতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
সিএএ বাতিলের প্রস্তাব আনুন : সব রাজ্যকে মমতা
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে নিয়মিত জনসভা করছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার রাজ্যে এই আইন এবং প্রস্তাবিত এনআরসি ও এনপিআর কার্যকর হতে দেবেন না বলেও জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘আমি উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও বিরোধী শক্তিশাসিত রাজ্যগুলিকে আর্জি জানাচ্ছি এনপিআর শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে রাজ্য সরকারগুলির উচিত এটি ভাল করে পড়ে দেখে নেয়া। আমি সব রাজ্যকে সিএএ-র বিরুদ্ধে বাতিলের প্রস্তাব পেশ করতে আবেদন জানাচ্ছি’।
প্রসঙ্গত, এরই মধ্যে কেরালা ও পাঞ্জাব সংশোধিত আইন বাতিলের প্রস্তাব পাস করেছে। কেরালা সরকার দেশের প্রথম রাজ্য সরকার হিসেবে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। পাঞ্জাবের বিধানসভাতেও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বাতিলের প্রস্তাব পাস হয়েছে। কেরালার পর দ্বিতীয় রাজ্য হিসেবে এই আইন তাদের রাজ্যে কার্যকর না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
পাঞ্জাবের মন্ত্রী ব্রহ্ম মহিন্দ্রা বিধানসভায় বিষয়টি উত্থাপন করে বলেন, গত ডিসেম্বরে সংসদে পাস হওয়া নতুন নাগরিকত্ব আইন পাঞ্জাবসহ দেশজুড়ে ক্ষোভ ও সামাজিক অস্থিরতার সৃষ্টি করেছে। এই আইনকে ‘বৈষম্যমূলক’ বলে অভিহিত করা হয়। প্রস্তাবে বলা হয়, ‘এটা স্পষ্ট যে, সিএএ দেশের নিরপেক্ষ ভাবমর্যাদা, যা সংবিধানের প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য, তার পরিপন্থী। ফলে কক্ষ থেকে সিএএ বাতিলের প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে ভারত সরকারকে। যাতে ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব প্রদানের মাধ্যমে কোনও বৈষম্যকে এড়ানো সম্ভব হয় এবং ভারতের সমস্ত ধর্মীয় সংগঠনের জন্য আইনের সাম্য নিশ্চিত করা যায়’।
এক কোটি বাংলাদেশি মুসলিমকে ফেরত পাঠানো হবে : দিলীপ ঘোষ
ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি দিলীপ ঘোষ রাজ্যটিতে অবৈধভাবে বাস করা এক কোটি বাংলাদেশি মুসলিমকে ফেরত পাঠানো হবে বলে হুমকি দিয়েছেন। গত রোববার চব্বিশ পরগনার এক সমাবেশে দেয়া ভাষণে তিনি একথা বলেন।
ভাষণে দিলীপ ঘোষ বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) প্রতিবাদকারীদের বাঙালিবিরোধী ও ভারতের ধারণার বিরোধী বলে অভিহিত করেন। তিনি দাবি করেন, পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী এক কোটি অবৈধ মুসলিম সরকারের দুই রুপির ভর্তুকির চাল খেয়ে বেঁচে আছে। আমরা তাদের ফেরত পাঠাবো।
দিলীপ ঘোষ আরও বলেন, এই অবৈধ বাংলাদেশি মুসলিমরা রাজ্যে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরে জড়িত। যারা সিএএ’র বিরোধিতা করছে তারা ভারত ও বাঙালি বিরোধী। তারা ভারতের ধারণার বিরোধি। তাই তারা হিন্দু শরণার্থীদের নাগরিকত্ব পাওয়ার বিরোধিতা করছে।
সিএএ’র বিরোধিতাকারী প্রখ্যাত ভারতীয়দের সমালোচনা করে বিজেপি নেতা বলেন, তাদের মন অনুপ্রবেশকারীদের জন্য কাঁদে। কিন্তু হিন্দু শরণার্থীদের বেলায় তাদের কোনও জবাব নেই। এটা হলো দ্বিচারিতা।
গত ডিসেম্বরে ভারতে নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার প্রণীত এই আইনটিকে বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়েছেন বিরোধীরা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আইনটির বিরোধিতায় অন্যতম জোরালো স্বরে পরিণত হয়েছেন। তবে বিজেপি আইনটির সমর্থনে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে।
এর আগে শনিবার দিলীপ ঘোষ বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তিন থেকে চার মাস সময় দেবেন। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া সবাইকেই সিএএ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ফরম পূরণ করতে হবে। রাজ্য বিজেপির সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ব্যক্তিদের কেবলমাত্র ভারতে প্রবেশের তারিখটা জানাতে হবে। অন্য কোনও কাগজপত্র দেখাতে হবে না। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে আসা সবাইকেই নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। সূত্র : আল-জাজিরা, আউটলুক ইন্ডিয়া, এনডিটিভি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।