Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জেএনইউ হামলায় শিক্ষার্থীদের উপরই দায় চাপালেন উপাচার্য, ভারতজুড়ে বিক্ষোভ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২০, ৪:১১ পিএম

ক্যাম্পাসে মুখোশধারীদের তাণ্ডবের ঘটনায় ফের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি সঙ্ঘাতের রাস্তা ধরলেন দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) উপাচার্য এম জগদেশ কুমার। বর্ধিত হস্টেল ফির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ চালিয়ে আসছেন যে শিক্ষার্থীরা, রোববারের ঘটনার জন্য ঘুরিয়ে ফিরিয়ে জন্য তাদেরই দায়ী করলেন তিনি। তার দাবি, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েক জন হিংসার রাস্তা ধরাতেই জেএনইউয়ে এমন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।

বর্ধিত হস্টেল ফি-র বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিবাদ চালিয়ে আসছেন জেএনইউয়ের শিক্ষার্থীদের একাংশ। পরীক্ষায় জন্য নাম রেজিস্ট্রেশনও বয়কট করেছেন তারা। সেই নিয়ে আন্দোলন চলাকালীনই গতকাল সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসের চড়াও হয় একদল মুখোশধারী। পাথর, লোহার রোড, লাঠি নিয়ে হস্টেলে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় তারা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বেধড়ক মারধর করে। এমনকি তাদের হাত থেকে নিস্তার পাননি অধ্যাপকরাও।

অথচ তার পর রাত পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। কোনও মন্তব্য করা হয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকেও। তা নিয়ে ইতিমধ্যেই সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে সোমবার সকালে টুইটারেই প্রথম মুখ খোলেন উপাচার্য এম জগদেশ কুমার। আর সেখানেই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কাঠগড়ায় তোলেন তিনি। জগদেশ কুমার লেখেন, ‘আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েক জন হিংসার রাস্তা বেছে নেওয়াতেই আজ এমন পরিস্থিতি জেএনইউ-তে। যারা আন্দোলনে অংশ নেননি, তাদেরও পড়াশোনাতেও ব্যাঘাত ঘটানো হয়েছে। পরীক্ষায় নাম নথিভুক্তিকরণ প্রক্রিয়ায় বাধা দিতে সার্ভারেরও ক্ষতি করেছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে নাম নথিভুক্তিকরণে বাধা দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্ম অচল করে দেয়াই ওদের উদ্দেশ্য। এটা একধরনের গুন্ডামি, যা জেএনইউয়ের নীতির পরিপন্থী। কাউকে রেয়াত করা হবে না। কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’

তবে তার মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছে জেএনইউয়ের ছাত্র সংসদ। বিজেপি আইটি সেলের সঙ্গে পরামর্শ করে গতকালের ঘটনার অভিমুখ ঘুরিয়ে দিতেই তিনি এমন মন্তব্য করছেন বলে দাবি তাদের। এ দিন তাদের টুইটার হ্যান্ডলে লেখা হয়, ‘রাতে দীর্ঘ ক্ষণ বিজেপির আইটি সেলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাদের সঙ্গে পরামর্শ করেই গতকালের হামলার ঘটনার অভিমুখ ঘুরিয়ে দিতে চাইছেন উপাচার্য। কিন্তু আদতে কী ঘটেছিল, তা উনি ছাড়া সকলেই জানেন। এখনও পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। প্রত্যেকেই তাণ্ডবের সাক্ষী থেকেছে।’

উপাচার্যের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে মুখ খুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের সংগঠনও। তাকে সরানোর দাবিতে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে খোলা চিঠি দিয়েছেন অধ্যাপকরা। তাতে বলা হয়, ‘ইট-পাথর, লোহার রড এবং লাঠি হাতে একটা দলকে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। হস্টেলে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর ও তাণ্ডব চালায় তারা। তাতে ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশী ঘোষ-সহ অনেকেই আহত হয়েছেন। অধ্যাপকদের ডাকা বৈঠকেও হামলা চালানো হয়। এর জন্য সরাসরি জেএনইউ কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করছি আমরা। গোটা ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের আর্জি জানাচ্ছি আমরা। কিন্তু এম জগদেশ কুমার দায়িত্বে থাকাকালীন তা সম্ভব নয়। অবিলম্বে ওকে সরানো হোক।’

অন্য দিকে, গতকালের ঘটনার পর এ দিন সকালে পদত্যাগ করেন সাবরমতী হস্টেলের সিনিয়র ওয়ার্ডেন রামাবতার মীনা। সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অব স্টুডেন্টসকে চিঠি লিখে পদত্যাগ করেন তিনি। তাতে তিনি লেখেন, ‘নিরাপত্তারক্ষীদের কাছ থেকে সাবরমতী হল্টেলে হামলার খবর জানতে পারি। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ফের হামলা হয় সেখানে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছি আমরা। এর নৈতিক দায় স্বীকার করে ইস্তফা দিচ্ছি।’

মুখোশধারীদের তাণ্ডবের প্রতিবাদে এ বার পথে নামলেন দেশের বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকালে গেটওয়ে অব ইন্ডিয়ার সামনে জমায়েত করেন মুম্বইয়ের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। দিল্লি ও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও পথে নামেন। দুপুরে পথে নামেন কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং পুণের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার শিক্ষার্থীরাও।

মুম্বইয়ে গেটওয়ে অব ইন্ডিয়ার সামনে জমায়েত করছেন বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। জেএনইউয়ে মুখোশধারীদের হামলার তীব্র প্রতিবাদ করছেন তারা। সেই সঙ্গে স্লোগান এবিভিপি-র বিরুদ্ধে স্লোগানও চলছে। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দোষীদের কড়া শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন অভিনেতা সুশান্ত সিংহও। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি নিয়ে মুখ খোলায় একটি টেলিভিশন শো থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে সম্প্রতি অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি।

জেএনইউ-তে তাণ্ডবের প্রতিবাদে এ দিন জয়পুরে পথে নামেন রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া (এনএসইউআই)-র সদস্যরা। তার পাল্টা হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বিক্ষোভের ডাক দেয় এবিভিপি-র শিক্ষার্থীরাও। তা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সঙ্ঘর্ষ বাধে। তা হাতাহাতির পর্যায়েও পৌঁছে যায়। তবে এই পরিস্থিতির জন্য দু’পক্ষই পরস্পরকে দায়ী করেছে।

ইতিমধ্যেই জেএনইউ-তে হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জেএনইউয়ের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও। লন্ডনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির তরফেও জেএনিউয়ের পাশে থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ