পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ও মৃত্যুর হার দুই-ই বাড়ছে। বেসরকারী সংগঠন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’(নিসচা) এর হিসাবে গত বছর ৪৭০২টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে, যাতে মারা গেছে ৫২২৭ জন। এর আগের বছর ৩১০৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৪৩৯ জন মারা যায়। দেখা যাচ্ছে, এক বছরে সড়কে দুর্ঘটনা বেড়েছে ১৫৫৯টি এবং প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েছে ৭৮৮জন। প্রাণহানি বৃদ্ধির হার ১৮ শতাংশ। প্রতিদিন গড়ে ১৮জনের বেশি মারা গেছে। এক বছরের ব্যবধানে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ও মৃত্যুর হারে এই বৃদ্ধি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ প্রসঙ্গে এও স্মরণ করা যেতে পারে, সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। সব দুর্ঘটনা ও হতাহতের হিসাব থানায় লিপিবদ্ধ হয় না বা সংবাদপত্রে আসে না। এ কারণেই এ বিষয়ক পরিসংখ্যানে সংগঠন ভেদে পার্থক্য দেখা যায়। নিসচা ২০১২ সালে থেকে সড়ক দুর্ঘটনাসংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, অশিক্ষিত ও অদক্ষ চালক, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, অসচেতনতা, অনিয়ন্ত্রিত গতি, রাস্তা নির্মাণে ত্রুটি, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব এবং আইনের যথারীতি প্রয়োগ না করাই দুর্ঘটনার কারণ। সড়ক দুর্ঘটনার এসবই প্রকৃত কারণ এবং নিসচাই নয়, অন্যান্য সংগঠনের পর্যবেক্ষণ, সমীক্ষা ও বিভিন্ন গবেষণায় এ কারণগুলোই উল্লেখিত হয়েছে। কারণ জানা থাকার পরও সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ও মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা কেন সম্ভব হচ্ছে না এবং প্রতি বছর তা বাড়ছে কেন, সেটাই প্রশ্ন। সড়ক দুর্ঘটনার মানবিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি ব্যাপক, যা নির্ণয় করাও কঠিন। এক হিসাবে দেখা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় যারা মৃত্যুবরণ করে, তাদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। এই পরিবারগুলো রীতিমত পথে বসে যায়। আহতদেরও অনেকে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলে তাদের পরিবারও বিপন্ন হয়ে পড়ে। দুর্ঘটনা কবলিত যানবাহন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আর কাজে আসেনা। এতে যে আর্থিক ক্ষতি হয়, তা অপূরণীয়। সবচেয়ে বড় কথা, জীবনের চেয়ে দামী কিছু নেই, সড়ক দুর্ঘটনা সেই জীবনকেই হরণ করে নেয়, যার সংখ্যা ফি বছরই বাড়ছে।
নিসচার প্রতিবেদনে বেশ কিছু দিক উঠে এসেছে, যা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। জেলাভিত্তিক হিসাবে সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা জেলায়, ৩০৯টি। এতে নিহত হয়েছে ৩৩৫ জন ও আহত হয়েছে ৩২৭জন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে খাগড়াছড়িতে ৭টি, যাতে নিহত হয়েছে ২৭জন, আহত হয়েছে ১০জন। অন্যদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মানুষ নিহত হয়েছে ময়মনসিংহে, ৪৮৮জন। আর সবচেয়ে কম নিহত হয়েছে ঝালকাঠিতে, ৫জন। দেখার বিষয়, ঢাকায় দুর্ঘটনা এবং ময়মনসিংহে নিহতের সংখ্যা বেশি হওয়ার প্রকৃত কারণ কি? প্রতিবেদন মতে, সড়ক দুর্ঘটনায় পথচারী নিহত হয়েছে ২৬৬১ জন, যা মোট নিহতের অর্ধেক। বলা হয়েছে, পথচারীরা গাড়ি চাপায়, পেছন থেকে ধাক্কাসহ বিভিন্নভাবে দুর্ঘটনায় পড়েছে। ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা, চলাচল ও রাস্তা পারাপারের সময় মোবাইল ফোনে কথা বলা, জেব্রাক্রসিং ও পথচারী পারাপার, আন্ডারপাস, ও ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার না করা পথচারী নিহত হওয়ার কারণ। প্রতিবেদনে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বাড়ার উদ্বেগজনক তথ্য রয়েছে। বলা হয়েছে, গত বছর মোটরসাইকেলে ১০৯৮টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, যাতে ৬৪৮জন চালক ও আরোহী নিহত হয়েছে। বিআরটিএ’র মতে, দেশে মোটরসাইকেলের সংখ্যা ২৭ লাখ ৮৬৯৪টি। কিন্তু চালকের লাইসেন্স আছে ১৩ লাখ ৬০৯০৩টি। নিসচার চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন এ প্রসঙ্গে বলেছেন, এতে প্রতীয়মান হয়, সোয়া ১৪ লাখ চালক অবৈধভাবে তাদের মোটরসাইকেল চালাচ্ছে। চালকের লাইসেন্সবিহীন নবিস চালকেরা সঙ্গতকারণেই দুর্ঘটনা ও মর্মান্তিক পরিণতির শিকার হচ্ছে।
নিসচার পক্ষ থেকে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কমাতে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, ট্রাফিক সংকেত মেনে চলা, যততত্র পার্ক না করা, ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং বন্ধ করা, সড়ক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় স্কুলের পাঠ্যতালিকাভুক্ত করা, গণমাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানো, দক্ষ চালক তৈরিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রধান সড়ক-মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করা এবং সড়কের ত্রুটি দূর করা। বলা বাহুল্য, এসব সুপারিশের মধ্যে নতুনত্ব তেমন কিছু নেই। যেহেতু সড়ক দুর্ঘটনার প্রধানতম কারণ চালকের অদক্ষতা এবং প্রতিযোগিতাপ্রবণ মনোভাব, সুতরাং সর্বাগ্রে চালকের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও ট্রাফিক আইন সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে মানবিক মূল্যবোধ ও ধৈর্যের শিক্ষাও দিতে হবে। সর্তকতা ও সচেতনতার অভাব দুঘর্টনা ও প্রাণহানির অন্যতম প্রধান কারণ হওয়ায় পথচারী, যাত্রী, চালক-সবাইকে সচেতন করার পদক্ষেপ নিতে হবে। গণমাধ্যমে এমনভাবে প্রচারণার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে সবাই ট্রাফিক আইন সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে সক্ষম হয়। বিশেষ করে পথচারী ও যাত্রীদের অধিক সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। তারা সচেতন হলে প্রায় অর্ধেক দুর্ঘটনা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। আইনের কার্যকর প্রয়োগ সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। দু:খজনক হলেও বলতে হচ্ছে, আইন আছে কিন্তু তার যথাযথ প্রয়োগ বাস্তবক্ষেত্রে তেমন নেই। সড়ক-মহাসড়কে ছোট ও ধীরগতির যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ হলেও অবলীলায় তা চলছে এবং ছোটবড় দুর্ঘটনায় কারণ হচ্ছে। মোটরসাইকেল চালকদের জন্যও নানা নির্দেশনা রয়েছে। তা তারা মানছেনা এবং মানানোর ব্যবস্থাও করা হচ্ছে না। সড়ক-মহাসড়কে বেপরোয়া ও প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালানো বন্ধ করা সম্ভব হয়নি এতদিনেও। আইনের প্রয়োগই যদি না হয়, তবে আইন করা আর না করা একই কথা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।