Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান থেকে বাদ ৪ রাজ্য

নাগরিকত্ব বিলের বিরুদ্ধে অবস্থানের শাস্তি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান থেকে পশ্চিমবঙ্গের পর এ বার বাদ দেয়া হলো মহারাষ্ট্র, বিহার এবং কেরালা রাজ্যকেও। তা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিরোধী শিবিরের রাজনীতিকরা। তাদের অভিযোগ, প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদি সরকার। পাশাপাশি, উত্তরবঙ্গে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রথম সভা করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিকে, উত্তরপ্রদেশে হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে ২৫ বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি), ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার (এনপিআর) এবং সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-র বিরুদ্ধে সুর চড়ানোতেই বাংলা, মহারাষ্ট্র, কেরালার মতো বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির ট্যাবলো বাদ দেওয়া হয়েছে বলে মত রাজনীতিকদের একাংশের। তবে বিহারে নীতীশ কুমারের জেডিইউ-এর সঙ্গে জোট সরকার রয়েছে বিজেপির। সে রাজ্যের ট্যাবলো বাদ দেয়া নিয়ে একাধিক জল্পনা উঠে আসছে।
রাজনৈতিক মহলের একটি অংশের দাবি, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলাপ-আলোচনার মধ্যেই লাগাতার জোট বিরোধী মন্তব্য করে যাচ্ছেন জেডিইউ নেতা তথা ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর, খাতায় কলমে যিনি দলের দু’নম্বর ব্যক্তি। এনআরসি, এনপিআর এবং সিএএ-র বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ করেছেন তিনি। তাতেই দুই দলের বিরুদ্ধে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এ ব্যাপারে নীতীশ কোনও পদক্ষেপ না নেয়াতেই আরও চটেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তাই তার ‘জল-জীবন-হরিয়ালি অভিযান’-এই তিনটি বিষয়ের উপর ট্যাবলো পাঠানো প্রস্তাব খারিজ করা হয়। যদিও এ নিয়ে বিহার সরকার বা বিজেপি’র পক্ষ থেকে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।

গতকাল শুক্রবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান থেকে বাদ পড়ায় ক্ষোভ উগরে দেন কেরালার আইনমন্ত্রী একে বালন। তিনি বলেন, ‘কেরালার ট্যাবলো বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার বিরোধী এমন সরকার আগে কেউ, কখনও দেখেছে?’

অনুষ্ঠান থেকে মহারাষ্ট্র বাদ পড়ায়, এর আগে কেন্দ্রের সমালোচনায় সরব হন এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পওয়ারের মেয়ে সুপ্রিয়া সুলেও। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘প্রজাতন্ত্র দিবস গোটা দেশের উৎসব। তাতে প্রত্যেক রাজ্যকে সমান গুরুত্ব দেয়ার কথা কেন্দ্রের। কিন্তু এই সরকার পক্ষপাতিত্ব করছে। বিরোধীদের দখলে থাকা রাজ্যগুলির সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করা হচ্ছে।’ একটি টিভি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রকে এক হাত নেন শিবসেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউতও। তিনি বলেন, ‘অনুষ্ঠান থেকে কেন বাদ দেয়া হল, সরকারকে তার কৈফিয়ত দিতেই হবে। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীরও উচিত বিষয়টি তদারকি করে দেখা। কী কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, তা জানতে হবে।’

দিল্লির রাজপথে প্রজাতন্ত্র দিবসের যে অনুষ্ঠান সূচি প্রকাশ করেছে কেন্দ্র, তাতে ২২টি ট্যাবলোর কথা উল্লেখ রয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশ, আসাম, ছত্তীসগঢ়, গোয়া, গুজরাত, হিমাচলপ্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীর, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ, মেঘালয়, ওডিশা, পাঞ্জাব, রাজস্থান, তামিলনাড়–, তেলঙ্গানা, উত্তরপ্রদেশ-এই ১৬টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ট্যাবলো থাকবে সেখানে। এ ছাড়াও, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, অর্থনৈতিক পরিষেবা সহ কেন্দ্রের মোট ৬টি বিভাগের ট্যাবলো থাকবে।

এদিকে, গতকাল উত্তরবঙ্গে সিএএ বিরোধী প্রথম সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদির উদ্দেশ্যে তীব্র আক্রমণ করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিলিগুড়িতে নাগরিকত্ব আইন বিরোধী মিছিল শুরুর আগে ক্ষুদিরাম মূর্তির সামনে সভা থেকে বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে বিরোধীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ‘পাকিস্তানকে প্রশ্ন করুন’ মন্তব্যের জবাব দেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বলেন, ‘অধিকারের কথা বললে পাকিস্তানে যাও। খাবার চাইলে পাকিস্তানে যাও। চাকরি চাইলে পাকিস্তানে যাও। বাংলাদেশ, নেপালের কথা তো আপনি বলেন না। আপনি কি পাকিস্তানের রাষ্ট্রদ‚ত? রোজ পাকিস্তান পাকিস্তান করেন। পাকিস্তানের সঙ্গে এদেশের তুলনা করছেন, আপনার লজ্জা করে না?’ তৃণমূল নেত্রী সাফ জানিয়ে দেন, ‘আমরা হিন্দুস্তানকে ভালোবাসি। হিন্দুস্তান নিয়ে আলোচনা করতে চাই। ঐক্যবদ্ধ হিন্দুস্তান দেখতে চাই।’

শিলিগুড়ির মাল্লাগুড়ি থেকে বাঘাযতীন পার্ক পর্যন্ত মিছিলের আগে সভা থেকে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে এদেশের তুলনা করছেন! আপনার লজ্জা করে না?’ উত্তরবঙ্গে সিএএ-এনআরসি বিরোধী প্রথম সভা থেকে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ফের সরব হন তৃণম‚ল নেত্রী। বলেন, ‘নাগরিকত্ব আইন সভ্যতার, সমাজের লজ্জা। মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। আমরা সবাই নাগরিক। মনে রাখবেন, এ রাজ্যে সিএএ, এনপিআর হতে দেব না। এ রাজ্য থেকে কাউকে কোথাও যেতে হবে না। গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ আর কর্নাটকে শুধু ওদের (বিজেপি) সরকার রয়েছে। বাকি গোটা দেশে বিরোধীদের সরকার।’

শিলিগুড়ির সভা থেকে দেশের ভারতের রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজকে রাস্তায় নেমে শান্তিপ‚র্ণ ভাবে প্রতিবাদ করতে আহŸান করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। সেøাগান তোলেন, ‘এই বিজেপি চাই না। বিজেপি-কে বাদ দাও।’

অন্যদিকে, উত্তরপ্রদেশে বিক্ষোভে সক্রিয়ভাবে হিংসা ছড়ানোর জন্য পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া (পিএফআই)-কে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। সেই সঙ্গে এই সংগঠনের ২৫ জন সদস্যকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে হিংসায় জড়িত থাকার সমস্ত প্রমাণ রয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে সবথেকে বেশি উত্তাল হয়ে উঠেছে ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্য। ইতিমধ্যে সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২১ জনের। সরকারি ও বেসরকারি প্রচুর সম্পত্তির ক্ষতিও হয়েছে। এর ক্ষতিপূরণের জন্য মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নির্দেশ মতো বিক্ষোভে জড়িত মানুষদের কাছে নোটিস পাঠিয়েছে প্রশাসন। বিষয়টি নিয়ে বিতর্কও শুরু হয়েছে।

উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন স‚ত্রে আরও জানা গিয়েছে, গত ১৯ ডিসেম্বর থেকে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয় উত্তরপ্রদেশে। এই বিক্ষোভে হিংসা ছড়ানোর জন্য পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের শামলি জেলা থেকে মোট ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ১৪ জন পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার সদস্য বলে জানা গিয়েছে। যদিও যোগী সরকার নিজেদের প্রতিহিংসা পূরণের জন্য বেছে বেছে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকেই গ্রেপ্তার করছে বলে অভিযোগ জানিয়েছে বিরোধীরা। সূত্র : এনডিটিভি, টিওআই, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ