মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
আন্দোলন স্থির করে নিল লক্ষ্য। নতুন বছরে নতুন সূর্য উঠবে। রক্ষা করতে হবে দেশের সংবিধান। তার জন্য জীবনের শেষ বিন্দু পর্যন্ত লড়াই চলবে। দিল্লিতে নতুন দশক বরণ করা হল নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ জানানোর মাধ্যমে। নতুন বছরের প্রথম প্রহরে হাজারো মানুষ মুক্ত কণ্ঠে গাইলেন ভারতের জাতীয় সংগীত। শীতের কামড়কে উপেক্ষা করেই দক্ষিণ দিল্লির শাহিনবাগের হাজারো মানুষ নতুন বছরের শুরুটাই করলেন এভাবে।
পাশাপাশি, তামলিনাড়ুতে এনআরসি বা জাতীয় নাগরিকরপঞ্জি আইন কার্যকর করতে দেয়া হবে না বলে জানিয়েছে শাসক জোট এআইএডিএমকে এবং বিজেপি’র শরিক দল পিএমকে। এদিকে, একাধিক রাজ্য সরকারের আপত্তি এড়িয়ে ঘুরপথে অনলাইনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব আইন চালু করার পরিকল্পনা করছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রাজ্যসভায় যে দিন পাশ হয়ে গেল নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, তার পর দিন থেকে শাহিনবাগে ‘ধর্না’য় বসেছেন অসংখ্য মানুষ। যত দিন যাচ্ছে, বাড়ছে লোকসংখ্যা। আরও আরও মানুষ এসে বসে পড়ছেন শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে। না কেবল মুসলিমরা নয়, জাতি-ধর্ম-ভাষা নির্বিশেষে মানুষ যোগ দিচ্ছেন। আসছেন বিশিষ্টরা। সেই শাহিনবাগ বছরের শেষ দিনের দুপুরে ডাক দিয়েছিল বর্ষবরণ উদযাপনের। না, আতসবাজি ফাটিয়ে নয়, ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনা পাঠ করে। জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে। ধর্মনিরপেক্ষতার সেøাগানে সেøাগানে।
বর্ষবরণ উদযাপন করতে কাতারে কাতারে মানুষ এসেছিলেন এ দিন শাহিনবাগে। আন্দোলনকারীদের কাঁধে কাঁধ মেলাতে। সেখানেই আলাপ শামিমার সঙ্গে। এই প্রবল ঠান্ডায় বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ঠায় বসে আছেন রাস্তার উপর তৈরি অস্থায়ী শামিয়ানায়। তার পাশেই ৯০ বছরের আসমা খাতুন। তিনিও বসে আছেন গত দুই সপ্তাহ। ‹‘ভারতীয় সংবিধানকে বাঁচাতে হবে, বাঁচাতেই হবে।’› একটাই কথা আউড়ে চলেছেন ৯০ বছরের আসমা। দেশ ভাগের সময় নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলেন পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসা শিখ উদ্বাস্তু পরিবারকে। আসমার কথায়, ‘যারা আজ নতুন করে দেশটাকে ভাঙতে চাইছেন, তারা দেশভাগ দেখেননি। দেখলে বুঝতেন, কী ভয়াবহ সেই দৃশ্য। পিছিয়ে দেবেন না দেশটাকে, পিছিয়ে দেবেন না।’
৩৩ বছরের শামিমা কয়েকমাসের ছোট্ট বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে শামিমা বললেন, ‘জীবনে কখনও কোনও বিক্ষোভে অংশ নিইনি। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে এখানে বসে আছি। বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে। কারণ ওর ভবিষ্যৎ, এই দেশের আরও হাজারো শিশুর ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া যায় না।’› অনেক দূরে আতশবাজি ঝলসে উঠল আকাশে। নতুন বছর আসছে।
‘সকলে উঠে দাঁড়াবেন দয়া করে।’ রাস্তার উপর তৈরি মঞ্চ থেকে অনুরোধ ভেসে এল। সারা দিন ধরে ওই মঞ্চে বক্তৃতা করে গিয়েছেন, গান গেয়ে গিয়েছেন বহু বিশিষ্ট মানুষ। কিন্তু এখন গাওয়া হবে জাতীয় সঙ্গীত। এক বছর থেকে অন্য বছরে চাকা ঘুরতে তখন কেবল উনিশ-বিশের তফাত। হাতে হাতে উড়ছে জাতীয় পতাকা। ১২টা বাজল। ঘণ্টা বাজিয়ে শুরু হল জাতীয় সঙ্গীত। বুকে হাত রেখে যারা গাইছেন জনগনমন, রাষ্ট্রের চোখে তারাই কি অনুপ্রবেশকারী? শেষ বেলায় প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন জামিয়া মিলিয়ার ছাত্র। খানিকক্ষণের নীরবতা। স্লোগানের রোল উঠল তারপর। আজাদি। আজাদি। আজাদি।
বছর আসে, বছর যায়। উৎসব হয়, উদযাপন হয়। কিন্তু ২০২০ সালের প্রথম রাতটা রেকর্ড ঠান্ডা উপেক্ষা করে যে ভাবে পালন করল শাহিনবাগ, যে প্রত্যয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানালো, তা এক কথায় অভ‚তপূর্ব। এমন দৃশ্যকল্প শতাব্দীতে দু’একবারই তৈরি হয়।
এদিকে, তামিলনাড়ুতে এনআরসি বা জাতীয় নাগরিকরপঞ্জি করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিল সে রাজ্যের শাসক জোট এআইএডিএমকে এবং বিজেপি’র শরিক দল পিএমকে। মঙ্গলবার ত্রিবান্দ্রামে তাদের জেনারেল কাউন্সিলের বৈঠকে এই বিষয়ে একটি রিজোলিউশন গ্রহণ করে পিএমকে। এর আগে বিজেপির আরও দুই শরিক দল জেডিইউ এবং শিরোমনি অকালি দল এনআরসি বিরোধিতার কথা ঘোষণা করেছে। পিএমকে তাদের রিজোলিউশনে বলছে যে ‘তামিলনাড়– কোনও প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সীমান্তে অবস্থিত নয়। শ্রীলংকা থেকে আসা শরণার্থীদের বিস্তারিত তথ্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রয়েছে। তাই তামিলনাড়–তে নতুন করে এনআরসি চালুর কোনও প্রয়োজন নেই। এনআরসি অকারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করবে।’
অন্যদিকে, বাংলা-সহ একাধিক রাজ্য সরকারের আপত্তি এড়িয়ে ঘুরপথে নাগরিকত্ব আইন চালু করতে পারে কেন্দ্র। প্রয়োজনে রাজ্য সরকারের কোনও পরিকাঠামো ব্যবহার না করে, অনলাইনে চালু করা হতে পারে পুরো প্রক্রিয়া। এমনটাই ইঙ্গিত দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। ইতিমধ্যেই অনলাইনে তথ্য আদান-প্রদান এবং নথি যাঁচাইয়ের প্রক্রিয়া কীভাবে সম্পন্ন করা যাবে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দাবি, এভাবে অনলাইনে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে, রাজ্যের আপত্তিতে কোনও অসুবিধা হবে না। কেন্দ্র যেহেতু রাজ্য সরকারের পরিকাঠামো ব্যবহারই করছে না, তাই রাজ্যের হস্তক্ষেপ করারও কোনও সুযোগ থাকছে না। সিএএ-র পাশাপাশি এনপিআরের পুরো প্রক্রিয়াও অনলাইনে করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। সূত্র : এনডিটিভি, টিওআই, পিটিআই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।