Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হেনস্তা সত্তে¡ও অদম্য প্রিয়াঙ্কা

উত্তরপ্রদেশে প্রেসিডেন্ট শাসনের দাবি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ভারতের উত্তরপ্রদেশে চলছে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বিরোধী বিক্ষোভ। শনিবার উত্তপ্ত রাজপথে নেমে পুলিশের কাছে হেনস্তার শিকার হন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। গাড়ি আটকে দেয়া হয় তার। পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে প্রায় আড়াই কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটেই সাবেক আইপিএস অফিসার তথা সমাজকর্মী এসআর দারাপুরির পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। এই ঘটনার প্রতিবাদ করে উত্তরপ্রদেশে প্রেসিডেন্ট শাসনের দাবি জানিয়েছে কংগ্রেস।

শনিবার দারাপুরীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে তাকে আটকানোর জন্য পুলিশ গলা টিপে ধরে বলেও অভিযোগ। এরপরই রাজ্যে প্রেসিডেন্ট শাসন জারি করার দাবি তোলে কংগ্রেস। এই প্রেক্ষিতে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে পুলিশের কাছে। যেসব পুলিশকর্মী জড়িত ছিল, তাদের সাসপেন্ড করে বিভাগীয় তদন্তের দাবি করা হয়েছে। গতকাল রোববার তাকে হেনস্তার প্রতিবাদে উত্তরপ্রদেশ-সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ কর্মসূচি হচ্ছে।

শনিবার বিকেলে দারাপুরীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল কংগ্রেস নেত্রীর। কিন্তু, পুলিশ তাকে বাধা দেয়। এরপর গাড়ি ছেড়ে এক কর্মীর বাইকে চেপে গন্তব্যের দিকে রওনা হন প্রিয়াঙ্কা। কিন্তু, তাতেও আসে বাধা। শেষ পর্যন্ত, বাধ্য হয়ে হাঁটতে শুরু করেন নেত্রী। আর এভাবেই প্রায় আড়াই কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে দারাপুরীর স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। তারপরই সাংবাদিকদের সামনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন প্রশাসনের বিরুদ্ধে। প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘এটা কী ধরনের পুলিশি ব্যবস্থা! রাজ্যজুড়ে পুলিশি জোরজুলুম চালাচ্ছে যোগী সরকার। এমনকী সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করতে দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশি সন্ত্রাসের জেরে রাজ্যজুড়ে চ‚ড়ান্ত আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।’ এদিন পুলিশের বিরুদ্ধে তাকে হেনস্তার করারও অভিযোগ তুলেছেন প্রিয়াঙ্কা। প্রিয়াঙ্কার জানান, পুলিশ তার গলা টিপে দেয়। ঘাড়ধাক্কাও দেয়, যার জেরে তিনি মাটিতে পড়ে যান। যদিও বাধাদানের প্রসঙ্গে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বক্তব্য, প্রিয়াঙ্কার যাত্রায় উত্তেজনা বাড়ত। আইনশৃঙ্খলার অবনতিও হতে পারত।

প্রথমে লখনউয়ের একটি স্থানে পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হয় প্রিয়াঙ্কাকে। সেই বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে যাওয়ার পর পলিটেকনিক স্কোয়ারের কাছে ফের তার গতি রোধ করে পুলিশ। জানায়, এর থেকে আগে আর এগোনো যাবে না। সঙ্গে সঙ্গে প্রিয়াঙ্কা পালটা জানতে চান, কেন তাকে আটকানো হচ্ছে? কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশের সঙ্গে নেত্রীর রীতিমতো উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় শুরু হয়ে যায়। এরপরই গাড়ি থেকে নেমে পড়েন সোনিয়া-তনয়া। সোজা হাঁটা শুরু করেন দারাপুরীর বাড়ির দিকে। প্রিয়াঙ্কার এই কীর্তিতে সকলেই চমকে যান। পলিটেকনিক স্কোয়ার থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার পায়ে হেঁটে শেষ পর্যন্ত দারাপুরীর বাড়িতে পৌঁছন প্রিয়াঙ্কা। কথা বলেন তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে।

এই ঘটনার পরেই সাংবাদিক বৈঠক করে উত্তরপ্রদেশে প্রেসিডেন্ট শাসনের দাবি জানান সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেসের নেত্রী সুস্মিতা দেব। তিনি বলেন, ‘যেভাবে চলন্ত গাড়িতে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে আটকানো হয়েছে, তাতে প্রাণহানিও হতে পারত। এক মহিলা পুলিশের ধাক্কায় হুমড়ি খেয়ে পড়েও যান নেত্রী। নেত্রী কখন, কোথায় যাবেন, তা আগে থেকে জানানো থাকলেও পুলিশ শনিবার সকালে এসে দাবি করে, সফরসূচি জানানো ছিল না। আসলে উত্তরপ্রদেশে এখন গুন্ডারাজ চলছে। গণতন্ত্র বলে কিছু অবশিষ্ট নেই। সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করতে দিচ্ছে না যোগী সরকার। বিক্ষোভকারীদের উপর নির্যাতন করছে পুলিশ। প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। গোটা ঘটনার তীব্র নিন্দা করছে কংগ্রেস। সেইসঙ্গে অবিলম্বে উত্তরপ্রদেশে প্রেসিডেন্ট শাসন জারির দাবি জানাচ্ছি।’

প্রসঙ্গত, গত ১৯ ডিসেম্বর সিএএ বিরোধী আন্দোলন ঘিরে হিংসা ছড়ায় লখনউতে। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন আইজি ও সমাজকর্মী ৭৩ বছরের এসআর দারাপুরীকে গ্রেপ্তার করেছে যোগীর পুলিশ। তারপর থেকেই জেলবন্দি রয়েছেন তিনি। সূত্র : টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া।



 

Show all comments
  • Rais Uddin ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১০ এএম says : 0
    ভারতীয় উপমহাদেশে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকতে চলেছেন নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী। দেখা যাক প্রতিবাদীরা কী করতে পারেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Helal Ahmad ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১১ এএম says : 0
    শুভ কামনা তাদের জন্য। এই আন্দোলনের মাধ্যমে অধিকারহারা মানুষেরা অধিকার ফিরে পাক।
    Total Reply(0) Reply
  • Azim Uddin ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১১ এএম says : 0
    মোদি ইচ্ছে করলে ভারতের জাতীয় নেতা হতে পারতো। কিন্তু তা না হয়ে সে রাবণই হল। হিন্দুত্ব বাদ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে খোদ হিন্দুদেরই তোপের মুখে পড়ল। কারণ, সে মনে করেছিল বাকি সব হিন্দু ও তার মতো চা বিক্রেতা। হিন্দুত্ববাদের ঝান্ডা কাজে লাগিয়ে সে একটা অপরিচিত ও অখ্যাত দলকে ভারতের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় নিয়ে যেতে পেরেছিল। কিন্তু দেশের বৃহত্তম সংখ্যালুগু মানুষকে বাদ দিয়ে গান্ধীর ভারত হতে যে পারেনা, তা কিন্তু এরই মধ্যে আমজনতা তাকে বুঝিয়ে দিয়েছে। নেতাজী সুবাস চন্দ্র বসু ভারতের রাষ্ট্র ক্ষমতায় না বসলেও উপমহাদেশের মানুষের হৃদয়ে পাকাপোক্ত ভাবে বসে গেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Afreen Alam ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১২ এএম says : 0
    সর্বশক্তিমান আল্লাহপাক তোমাদের সহায়ক হোন, আন্তরিক দোওয়া থাকল।
    Total Reply(0) Reply
  • Zillur Rahman ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১২ এএম says : 0
    বাহ, জাত-পাত ভুলে মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে, মনুষ্যত্বের পরিচিয় দেবে।তবেই না মানুষ!
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Romjan Ali ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:১২ এএম says : 0
    ভারতের মোদি সরকারের খেয়ে দেয়ে কোন কাজ নেই আছে শুধু হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিভাজন তৈরি করা
    Total Reply(0) Reply
  • shaik ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৫:০৩ এএম says : 0
    ......., ...... MUDI, Ahmit sha DHONGSHO hok
    Total Reply(0) Reply
  • Selim Mia ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ৭:৪২ এএম says : 0
    2000 সালে গুজরাটের দাঙ্গা বিজেপি মোদির সৃষ্টি যে দাঙ্গা বহু মুসলিম এবং হিন্দু আহত-নিহত হয়েছেন এই কুলাঙ্গার কে ভারতের ক্ষমতা থেকে ঝাঁটা করে নামানো উচিত এই সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টিকারী কুলাঙ্গার এর বিরুদ্ধে সমগ্র ভারতবাসী একত্র হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব শুধু নয় অধিকার ও বটে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ