নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
চট্টগ্রামের খেলাধুলার প্রাণকেন্দ্র এমএ আজিজ স্টেডিয়াম। ২০০১ সালের ১৫ নভেম্বর বিশ্বের ৮২তম টেস্ট ভেন্যু হিসাবে অভিষেক হয়েছিল এ স্টেডিয়ামের। বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের প্রথম টেস্ট জয় পেয়েছিল ২০০৫ সালে এখান থেকে। এছাড়া সিজেকেএস-এর প্রায় সবগুলোই আয়োজন করা হয় এ ভেন্যুতে। সেইসাথে যদি কোন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ম্যাচের সূচী থাকে তাহলে সিজেকেএস ইভেন্ট জটে পড়ে যায়। এসব আন্তর্জাতিক দলের অনুশীলন কিংবা প্রস্তুতি ম্যাচের কারণে সিডিউল ঘোষণার পরও নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যায় না সিজেকেএস-এর বিভিন্ন লীগ বা টুর্নামেন্ট। ফুটবল নিয়ে যেতে হয় ক্রিকেট মৌসুমে আবার ক্রিকেট চলে আসে ফুটবল মৌসুমে। কখনো কখনো দেখা যায় দিনক্ষণ ঘোষণা করেও শেষ করা যায় না কোন কোন ইভেন্টসমূহ। বছরের ক্রীড়াপঞ্জি হয়ে যায় অনেকটা এলোমেলো। এর প্রধান কারণ হলো চট্টগ্রামে মাঠ সংকট।
গত কয়েক দশকে চট্টগ্রামে তৈরি হয়নি কোন মাঠ। বরং আগে যে মাঠগুলো ছিল সেগুলো হয়ে গেছে সংকুচিত। যেমন আউটার স্টেডিয়ামের মাঠ। এখানে অনুষ্ঠিত হতো ক্রিকেটার তৈরির নার্সারী বলে খ্যাত স্টার যুব ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, আকরাম খান, ফজলে রাব্বী রুবেল, নাফিস ইকবাল, আফতাব, নাজিম উদ্দিন, তামিম ইকবালরা উঠে এসেছে এ আউটার স্টেডিয়াম থেকে। জাতীয় ফুটবলার আশীষ ভদ্রও খেলেছেন এ মাঠে। সেই মাঠটি প্রথমে খেলার অনুপযোগী হয়ে পড়ে যখন এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইট স্থাপন করা হয়। এই ফ্লাডলাইটের দুটি টাওয়ার স্থাপন করতে গিয়ে মাঠের একটি অংশ চলে যায়। পূর্বপাশে মার্কেট করতে গিয়ে চলে গেছে আরো একটি অংশ। বাকি যেটুকু রয়েছে কিছু অংশে নির্মিত হয়েছে আন্তর্জাতিক সুইমিং কমপ্লেক্স। অবশিষ্ট যেটুকু আছে তাতে আউটার স্টেডিয়ামে হ্যান্ডবল, ভলিবল, কাবাডি, হকি এসব ইভেন্ট ছাড়া খুব বেশি খেলাধুলা সম্ভব নয়। তাছাড়া বর্তমানে তারুণ্যের বড় একটি অংশ জড়িত হয়ে গেছে ক্রিকেটের সাথে। এসব তরুণদের ভালবাসা এত প্রবল যে তারাও আউটার স্টেডিয়ামের মাঠের অবশিষ্ট অংশে হয়তো ক্রিকেট খেলছে নয়তো অনুশীলন করছে। এসব তরুণদের মাঠ থেকে বঞ্চিত করে এখানে অন্য ইভেন্ট হলে তারা যাবে কোথায়। তাই চট্টগ্রামে এখন মাঠের সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।
আজ থেকে ২০ বছর আগে কলেজিয়েট স্কুল মাঠ, পলোগ্রাউন্ড কিংবা জাম্বুরি মাঠ ছিল ফুটবল ও ক্রিকেটারদের মিলনামেলা। এখানে কমপক্ষে ১০ থেকে ১২টি দল অনুশীলন করতো সকাল-বিকালে। অনেকগুলো ক্রিকেট টুর্নামেন্টও হতো এখানে। জাম্বুরি মাঠ ব্যস্ত থাকতো ফুটবলাদের অনুশীলন আর নানা টুর্নামেন্টের আয়োজনে। কলেজিয়েট মাঠও প্রাণবন্ত থাকতো ফুটবলার ও ক্রিকেটারদের পদচারণায়। এ তিনটি মাঠই এখন খেলাধুলার অনুপযুক্ত। পলোগ্রাউন্ড বছরের বেশিরভাগ সময়জুড়ে থাকে মেলায়। জাম্বুরি মাঠতো হয়ে গেছে শিশু পার্ক, বাকি অংশেও পার্ক বানিয়েছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। সেখানে নেই এখন কোন খেলাধুলার পরিবেশ। কলেজিয়েট স্কুল মাঠ বালিতে ভরা অসমতল। কিছুদিন আগে এলাকার তরুণ এ মাঠটা কিছুটা ফুটবল উপযোগী করে এখানে শেষ করেছে মেয়র কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট। লালদীঘির যে মাঠটি আছে সেটি মুসলিম হাই স্কুলের মাঠ। সেখানে কিছু অংশে গাড়ি পার্কিং করায় খেলার পরিবেশ নেই। এছাড়া বর্তমানে যে স্থানে রেডিসন ব্লু হোটেল নির্মিত হয়েছে সেখানেও অনেক দল অনুশীলন করতো। এছাড়া জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের মাঠটিও ছিল খেলাধুলার উপযোগী। এ মাঠে ঈদগাহ নির্মাণ করা হয়েছে। তার মধ্যে কিছু অংশে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ সামগ্রী রাখা হয়েছে। ফলে ফুটবল কিংবা ক্রিকেট লীগসহ অন্যান্য ইভেন্টের খেলাধুলা শুরু হলে অনুশীলনের জন্য পাগলের মতো ছুটতে হয় দলগুলোকে। কিন্তু অনুশীলন করার মাঠ কোথায়? হয়তো যে মাঠগুলো আছে সেগুলো খেলার অনুপযোগী। তারপরও বাধ্য হয়ে অনুশীলন করতে হয় তাদের হতশ্রী এসব মাঠে। মাঠ সংকটের কারণে ফুটবলার কিংবা ক্রিকেটারসহ অন্যান্য খেলোয়াড় অনুশীলনের সুযোগ পাচ্ছে না। ফলে চট্টগ্রাম থেকে গড়ে উঠতে পারছে না কোন খেলোয়াড়।
চট্টগ্রামের খেলোয়াড়দের অনুশীলনের জন্য মাঠ সংকট দেখে ইস্পাহানি গ্রুপ অব কোম্পানিজের চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক ও বিসিবির সাবেক পরিচালক মির্জা সালমান ইস্পাহানি বলেন, এটি চট্টগ্রামের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক। খেলাধুলার উন্নয়নের জন্য স্বাধীনতার পর থেকে সিজেকেএস প্রথম বিভাগ ক্রিকেট, পরবর্তীতে প্রিমিয়ার ক্রিকেট এখনও পর্যন্ত স্পন্সর করে আসছি (ইস্পাহানি গ্রুপ)। এছাড়া ফুটবলে দীর্ঘ ৩০ বছর যাবৎ মহানগরী ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে পাইওনিয়র ফুটবল লীগসহ আরো কিছু জাতীয় ইভেন্টেও স্পন্সর করছি। এসব খেলোয়াড়রা যদি মাঠ সংকটের কারণে অনুশীলন করতে না পারে তাদের প্রতিভা বিকশিত হবে কিভাবে? যুবসমাজকে খেলাধুলার দিকে মনোনিবেশ করা না গেলে তাদের নৈতিক অবক্ষয় রোধ করা যাবে না। এজন্য তিনি চট্টগ্রামে আরো দুই-তিনটি স্টেডিয়াম নির্মাণের দাবি জানান জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে।
চট্টগ্রামে যে দুটি মাঠ রয়েছে তার একটি এমএ আজিজ স্টেডিয়াম। অপরটি হচ্ছে ক্রিকেটের জন্য বিশেষায়িত জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পাশাপাশি স্থানীয় কিছু ক্রিকেট খেলার আয়োজন করা হয়। কোন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হলে তার জন্য মাঠ পরিচর্যা করতে সময় লেগে যায় অনেক। ফলে খুব কম সময় সিজেকেএস এ মাঠটি ব্যবহার করতে পারে। তখন সিজেকেএস-এর আওতায় বিভিন্ন ইভেন্টের খেলাগুলো সম্পন্ন করতে হয় এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে। এতে মাঠে অত্যধিক চাপ পড়ে যায়। অনুশীলনে আসা ক্রিকেটাররা দুঃখ করে বলেন, অনুশীলনের জন্য একটি মাঠ খুঁজে পাই না। ফলে স্টেডিয়ামের সামনে ছোট একটি মাঠে তাদের অনুশীলন করতে হচ্ছে। এতে হচ্ছে না সঠিকভাবে কোন খেলোয়াড়দের অনুশীলন। যার প্রভাব পড়ছে মাঠে। পারছে না খেলোয়াড়রা লড়াইয়ে টিকে থাকতে। এমন মাঠ সংকটের মধ্যদিয়ে চলছে চট্টগ্রামের খেলাধুলা। মাঠ সংকট কবে কাটবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। নেই কোন কারো কাছে সদুত্তর। চট্টগ্রামে যে দুটি স্টেডিয়াম রয়েছে এগুলো জাতীয় পরিষদের সম্পদ। এছাড়া যেসব মাঠ রয়েছে সেসব মাঠের সংস্কার বা ব্যবহার করা অন্য কারো পক্ষে সম্ভব নয়। স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান যদি মাঠ সংস্কারের জন্য এগিয়ে আসে তাহলে কিছুটা হলেও খেলোয়াড়রা অনুশীলনের সুযোগ পাবে। এতে খেলোয়াড়রাও বেশ উপকৃত হবে। তবে এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ দেয়া যায়। কারণ তারা তাদের স্টেডিয়ামটাকে অন্তত কিছু ফুটবল বা ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজনে সহযোগিতা করে। এছাড়া চট্টগ্রাম কলেজের প্যারেড মাঠ কিছুটা হলেও সমতল এবং খেলোয়াড়দের অনুশীলনের পরিবেশ ঠিক থাকায় সকাল-বিকাল যে যেভাবে সুযোগ পাচ্ছে অনুশীলন করে যাচ্ছে। বর্তমানে খেলার মাঠ দিন দিন যেভাবে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে সামনের দিনগুলোতে চট্টগ্রামে খেলাধুলা চালানো অত্যন্ত কঠিন হয়ে যাবে বলে ক্রীড়া সংগঠকরা মনে করছেন। আর এভাবে চলতে থাকলে বেরিয়ে আসবে না জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করার মতো কোন ক্রীড়াবিদ। তাই চট্টগ্রাম ক্রীড়ামোদীদের দাবি অন্তত আরো দুই-তিনটি স্টেডিয়াম নির্মাণ। কিন্তু কেউ যেন শুনছে না ক্রীড়াবিদ বা ক্রীড়া সংগঠকদের এই আকুতি। খেলার মাঠ সংকটের কোন সুরাহা হলো না এখনো। মাঠ সংকটে কেটে গেল আরো একটি বছর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।