মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
সিএএ’র ‘ভালদিক’ বোঝাতে গিয়ে গণধোলাই খেলেন বিজেপি নেতা। ঘটনাস্থল যোগী আদিত্যনাথের রাজ্য উত্তরপ্রদেশ। আমরোহা জেলার মুসলিম অধ্যুষিত লাক্কাদা মহল্লায় সিএএ’র ভালদিক বোঝাতে গিয়েছিলেন বিজেপির সংখ্যালঘু সেলের নেতারা। সেখানেই গেরুয়া শিবিরের নেতার উপর চড়াও হন স্থানীয় বাসিন্দারা। শেষ অবধি প্রাণ বাঁচিয়ে ওই এলাকা থেকে চম্পট দেন ওই নেতারা। পরে তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই ঘটনায় শুক্রবার এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। ঝাড়খন্ডের নয়া মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে গতকাল শপথ নিয়েছেন ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা নেতা হেমন্ত সোরেন। সেই অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে বিজেপিবিরোধী শিবিরের মিলনমেলা। যুবসমাজকে কাছে টানতে বছরের শেষ ‘মান কী বাত’-এ বললেন, ‘আজকের যুব স¤প্রদায় অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা ও স্বজনপোষণ পছন্দ করে না। এদিকে নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভের কারণে ভারতের বিভিন্নস্থানে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখতে বাধ্য করছে সরকার। এতে প্রতি ঘন্টায় অপারেটরদের লোকসান হচ্ছে ২.৪ কোটি রুপি বলে জানিয়েছে শীর্ষ স্থানীয় একটি লবি গ্রæপ।
সিএএবিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হয়েছে গোটা দেশ। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অবস্থা হয়েছিল যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশের। আন্দোলনের জেরে দেশজুড়ে প্রায় ৩০ জনের মৃত্যু হয়। বিদেশেও আন্দোলনের আঁচ ছড়ায়। কেন্দ্র সরকারকে দেশ-বিদেশের শিক্ষার্থী, তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের বিরোধিতার মুখেও পড়তে হয়। যার জেরে ঘরে-বাইরে চাপে পড়ে বিজেপি। এরপরই দলের অভ্যন্তরে সিদ্ধান্ত হয়, বাড়ি-বাড়ি গিয়ে সিএএএনআরসির ভালদিক বোঝানো হবে। জনমতের হাওয়া নিজেদের পালে টানতে তৎপর হয় বিজেপি। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুক্রবার থেকে উত্তরপ্রদেশে কর্মসূচি শুরু করেছে বিজেপি। তারপরই এই বিপত্তি।
শুক্রবার আমরোহার বিজেপির জেলা সম্পাদক মুর্তাজা আগা কোয়াজমি লাক্কদা মহল্লায় যান। সেখানে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে এই নয়া আইন সম্পর্কে বোঝাতে শুরু করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘সিএএ-এনআরসি ভারতীয় কোনও মুসলিমের অধিকার কেড়ে নেবে না। বরং শরণার্থীদের অধিকার পাকাপোক্ত করবে’। স্থানীয় সূত্রের খবর, তার এই কথা শুনেই এলাকার বাসিন্দারা ক্ষেপে যান। ওই বিজেপি নেতাকে আক্রমণ করেন। কোনওরকমে ঘটনাস্থল থেকে পালান তিনি।
এ প্রসঙ্গে আক্রান্ত বিজেপি নেতা মুর্তাজা আগা কোয়াজমি বলেন, ‘ওই দিন আমি লোক্কাদা এলাকার একটি দোকানে গিয়েছিলাম আমি। সেখানে সিএএ-এনআরসি নিয়ে মানুষকে বোঝাচ্ছিলাম। হঠাৎই স্থানীয় এক বাসিন্দা রাজা আলি আমাকে আক্রমণ করে। গলা টিপে মারার চেষ্টা করে। কোনওরমকে পালিয়ে এসে তার নামে এফআইআর দায়ের করি’। তবে এই ঘটনায় গেরুয়া শিবিরকে যে বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ঝাড়খন্ডে একজোট বিরোধীরা
ঝাড়খন্ডের নয়া মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে গতকাল রোববার শপথ নিলেন ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা নেতা হেমন্ত সোরেন। সেই শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার দুপুরেই পড়শি রাজ্যে পৌঁছে যান মমতা। রাতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে আসেন ঝাড়খন্ডের ভাবি মুখ্যমন্ত্রী। মমতার পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নেন তিনি। প্রত্যাশা মতোই হেমন্তের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হয়ে উঠল বিরোধী ঐক্যের এক মিলনস্থল। উপস্থিত ছিলেন রাহুল গান্ধী, সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজা, অশোক গেহলট, স্ট্যালিন, কমলনাথ, তেজস্বী যাদব, শরদ যাদব প্রমুখ।
হেমন্ত সোরেনের শপথ অনুষ্ঠান যেন বিরোধী ঐক্যের মঞ্চ হয়ে উঠল। গেরুয়া শিবিরের দাপটকে রুখে দিয়েছে হেমন্ত সোরেন নেতৃত্বাধীন জেএমএম-কংগ্রেস ও আরজেডি জোট। রাঁচির মোহরাবাদী মাঠে আদিবাসী অধ্যুষিত ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন ভূমিপুত্র হেমন্ত সোরেন।
ঝাড়খন্ড বিধানসভা নির্বাচনে ধরাশায়ী হয়েছে বিজেপি। গতবারের চেয়ে তাদের ১২টি আসন কমেছে। জামশেদপুর-পূর্বে হেরেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাসও। ২৫টি আসনেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে বিজেপিকে। সেখানে বিরোধী জোটে জেএমএম ৩০টি, কংগ্রেস ১৬টি এবং আরজেডি ১টি আসন পেয়েছে। দেশজুড়ে নয়া নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে আন্দোলন-বিক্ষোভের আবহে ঝাড়খন্ডের এই জয় বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।
সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলেও বিরোধী ঐক্যে ফাটলের সুযোগ নিয়ে নাগরিকত্ব বিলকে রাজ্যসভায় পাশ করিয়ে নিতে পেরেছিল বিজেপি। কিন্তু নাগরিকত্ব সংশোধনী বিরোধী প্রবল হাওয়ার মধ্যে দেশের বিজেপি-বিরোধী দলগুলির ঐক্যবদ্ধ ছবি তুলে ধরতে মরিয়া বিরোধী দলগুলি। হেমন্ত সোরেনের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান বিজেপি-বিরোধী দলগুলির কাছে কার্যত সেই সুযোগ করে দিয়েছিল। বাস্তবেও তাই ঘটল।
শনিবার রাতেই হেমন্ত সোরেনের দফতর থেকে রোববারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। যেই তালিকায় নাম ছিল প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখোপাধ্যায়েরও। কিন্তু তিনি আসেননি এদিনের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে।
‘বিশৃঙ্খলা ও স্বজনপোষণ যুবসমাজের অপছন্দের জিনিস’ : মোদি
‘আজকের যুব স¤প্রদায় অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা ও স্বজনপোষণ পছন্দ করে না। সিস্টেমের ওপর ভরসা রেখে বিভিন্ন বিষয়ে স্পষ্টভাষায় নিজেদের বক্তব্য রাখতেও পিছপা হন না তারা।’ গতকাল বর্ষশেষের ‘মান কী বাত‘ অনুষ্ঠানে এই মন্তব্যই করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আগামী দশকে যুবরা দেশ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা নেবেন বলেও দাবি করেন তিনি। তাদের ভ‚য়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘আজকের যুবরা অন্যরকমভাবে জীবনকে দেখে। একদিকে তারা যেমন সোশ্যাল মিডিয়াতে সাবলীল তেমনি সমাজ, দেশ ও পরিবেশের কথাও ভাবেন। আজকের এই অত্যাধুনিক প্রজন্মই আগামী দশকে ভারতের চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে। বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর রাখার পাশাপাশি নিয়ম ও শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন কাটাতেও অভ্যস্ত। বিশ্বের যে কোনও বিষয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করতেও চিন্তা করে না তারা।’
এরপর নাম না করে কংগ্রেস ও গান্ধী পরিবারের স্বজনপোষণের রাজনীতিকে কটাক্ষ করেন তিনি। বলেন, ‘আজকের যুবরা অনেক জিনিস পছন্দ করলে স্বজনপোষণের রাজনীতি একদম সহ্য করতে পারেন না। সমাজে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা ও বিশৃঙ্খলাতে তাদের অনীহা আছে। মাঝে মধ্যে কিছু মানুষ তাদের ভুলপথে চালানোর চেষ্টা করলেও সফল হয় না।’
স¤প্রতি হয়ে যাওয়া সূর্যগ্রহণ নিয়েও আজ মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, ‘২৬ তারিখ আমিও সূর্যগ্রহণ দেখার চেষ্টা করেছিলাম। আকাশে মেঘ থাকায় আমার সে ইচ্ছা পূরণ হয়নি। তবে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ তা উপভোগ করেছেন।’
ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ভারতে প্রতি ঘন্টায় লোকসান ২.৪ কোটি রুপি
নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভের কারণে ভারতের বিভিন্নস্থানে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখতে বাধ্য করছে সরকার। এতে প্রতি ঘন্টায় অপারেটরদের লোকসান হচ্ছে ২.৪ কোটি রুপি। শীর্ষ স্থানীয় একটি লবি গ্রুপ গত শুক্রবার এ কথা বলেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম অনুযায়ী চলমান বিক্ষোভে নিহতের সংখ্যা ২৬। বিক্ষোভ দমাতে সরকার মোতায়েন করেছে হাজার হাজার পুলিশ। পাশাপাশি মোবাইলে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এর ফলে ইন্সটাগ্রাম, টিকটককের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে পারছে না ভোক্তারা। সরকারের এমন আচরণের কড়া সমালোচনা করেছেন ইন্টানেট স্বাধীনতা বিষয়ক অধিকারকর্মীরা। শুক্রবার উত্তর প্রদেশের কমপক্ষে ১৮টি জেলায় মোবাইলে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়। টেলি যোগাযোগ বিষয়ক একটি সূত্র এ কথা বলেছেন। একটি ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠানো এমন নির্দেশনা দেখতে পেয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে বলা হয়েছে, রাজধানী নয়া দিল্লির বাইরে ২৮ ডিসেম্বর সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘন্টা বাসায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা থাকবে না।
সুইডেনের টেলি যোগাযোগ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান এরিকসনের মতে, বিশ্বে স্টার্মফোনে সবচেয়ে বেশি ডাটা ব্যবহার করেন ভারতীয়রা। তারা প্রতি মাসে গড়ে ৯.৮ গিগাবাইট ডাটা ব্যবহার করেন। ফেসবুক ও এর ম্যাসেঞ্জার সেবাদানকারী হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের সবচেয়ে বড় বাজার হলো ভারত। তাই সেলুলার অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (সিওএআই) বলেছে, এসব বিক্ষোভ দমনের জন্য প্রথম অ্যাকশন হওয়া উচিত নয় ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া। সিওএআইয়ের সঙ্গে রয়েছে ভারতীয় এয়ারটেল, ভোডাফোনে আইডিয়া, রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের জিও ইনফোকম। সূত্র : বিজনেস টাইমস, আনন্দবাজারপত্রিকা, টাইমস অব ইন্ডিয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।