নাগরিকত্ব সংশোধন আইন নিয়ে তীব্র উত্তেজনাকর অবস্থার প্রেক্ষিতে ভারতে বাংলাদেশী পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। অক্টোবরে স্থলবন্দর দিয়ে বৈধ কাগজপত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে পর্যটকদের ভারতে প্রবেশে বিধিনিষেধ শিথিল করার ঘোষণা দেয় ভারত। কিন্তু রিপোর্ট বলছে, পর্যটকদের ভ্রমণ আগের অবস্থায় নেই। তারা ভ্রমণ বাতিল করছেন। নাগরিকত্ব সংশোধন আইন নিয়ে উত্তেজনার পর একটি সংবাদ মাধ্যম রিপোর্ট করেছে যে, পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুরে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশী পর্যটকের প্রবেশ শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ কমে গেছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য হিন্দু।
এতে বলা হয়, সংবাদ মাধ্যমটি হিলি ইমেগ্রেশন চেকপোস্টে জরিপ চালায়। এই স্থল বন্দর দিয়ে আগে কমপক্ষে ৮০০ বাংলাদেশী প্রতিদিন ভারতে প্রবেশ করতেন।
কিন্তু ওই চেকপোস্টের সূত্রগুলো বলেছেন, সেই সংখ্যা এখন কমে এসেছে ৩০০ তে। ভারতের বিভিন্ন অংশে প্রতিবাদ বিক্ষোভের কারণে ট্রেন চলাচল বাতিল হয়েছে। এতে অনেক শহরে যাতায়াতে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে পর্যটকদের অনেকে জরুরি অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে বাধ্য হচ্ছেন বিমানে সফর করতে।
হিলি বন্দরের কর্মকর্তাদের মতে, ডিসেম্বরের প্রথম ১৫ দিনে ভারতে গিয়েছেন ৩৩৮৩ জন বাংলাদেশী। একই সময়ে বাংলাদেশে এসেছেন ৮০৮ জন ভারতীয়। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় অর্ধাংশে এই সংখ্যা কমে এসে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১৮৩২ এবং ৪৭। বাংলাদেশ হাই কমিশনের একটি সূত্র বলেছেন, সীমান্তের কাছাকাছি থাকেন এমন ব্যক্তিরা প্রধানত স্থল বন্দরের চেক পোস্ট ব্যবহার করে থাকেন।
তবে আখাউড়া বন্দরে এর কোন প্রভাব পড়েনি। একটি কূটনৈতিক সূত্র বলেছেন, নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরুদ্ধে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের বিক্ষোভের দিকে নজর রাখছেন বাংলাদেশী জনগণ। তারা অনাবশ্যক এমন ভ্রমণ আপাতত বন্ধ রাখছেন। ওই সূত্রটি বলেন, আখাউড়া এবং বেনাপোল ট্রানজিট পয়েন্ট দিয়ে চলাচল আগের মতোই আছে। বাংলাদেশী কর্মকর্তারা বলছেন, পর্যটক কমে যাওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পিছিয়ে পড়ার পাবলিক ধারণা। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের একটি মন্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করেন একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, অমিত শাহ বাংলাদেশী অভিবাসীদেরকে ‘উইপোকা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এমন উক্তি বাংলাদেশীদের আহত করেছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আমাদের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। সরকারি পর্যায়ে এই সম্পর্ক শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে। গড়পরতায় সব বাংলাদেশী লক্ষ্য রাখছেন, ভারতে কি ঘটছে। তাদেরকে আগের মতো সেখানে স্বাগত জানানো হচ্ছে না বলে তারা মনে করেন।
অক্টোবরে নয়া দিল্লি সফরে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা। ওই সময় একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছিলেন তারা। সেই বিবৃতির যে মেজাজ তার বিরুদ্ধে যায় এই পর্যটক কমে যাওয়া এবং ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ওই সফরের সময় দুই দেশের স্থল সীমান্তে ভ্রমণকারীদের জন্য বিধিনিষেধ তুলে নিতে রাজি হয় ভারত। এর উদ্দেশ্য দুই দেশের মানুষের সঙ্গে মানুষের এবং ব্যবসায়িক সম্পর্ককে উন্নত করা। ২০১৭ সালে আকাশপথে বাংলাদেশী ভ্রমণকারীদের বিরুদ্ধে একই রকম বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করেছিল ভারত।
আগামী মাসে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘রাইসিনা ডায়ালগ’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে দিল্লি আসছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তার নির্ধারিত ওই সফরের দিকে সবার দৃষ্টি এখন। এর আগে এ মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন তার ভারত সফর বাতিল করেন। বাতিল করা হয় যৌথ নদী কমিশনের টেকনিক্যাল মিটিং। ধারণা করা হয়, নাগরিকত্ব সংশোধন আইন পাস এবং বাংলাদেশী সংখ্যালঘুদের অবস্থা নিয়ে মন্তব্যে অসন্তুষ্ট হয়ে থাকতে পারে ঢাকা।