Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যোগীর রাজ্যে ৫ সহস্রাধিক বিক্ষোভকারী আটক

পুলিশের বাধায় আড়াই কিমি হাঁটলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী

মুহাম্মদ সানাউল্লাহ | প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

শক্ত হাতে দমননীতি গ্রহণ করেছে উত্তর প্রদেশ সরকার। মিরাঠ, সম্ভল, কানপুর, ফিরোজাবাদ, লখনউসহ বিভিন্ন জায়গায় কার্যত খানা তল্লাশি চালাচ্ছে যোগীর পুলিশ। সহিংসতা রুখতে ইতোমধ্যে ৪৯৮ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের অভিযোগে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়েছে ৫ হাজারের বেশি বিক্ষোভকারীকে। গ্রেফতার হয়েছেন ১২৪৬ জন। সোশ্যাল মিডিয়ার উপরও চলছে কড়া নজরদারি। উত্তর প্রদেশ পুলিশ সূত্রে খবর, প্রায় ২১ হাজার পোস্টকে আপত্তিকর হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১০৩৮০ টুইট, ১০৩৩৯ ফেসবুক পোস্ট এবং ইউটিউবের ১৮১ ভিডিয়ো। সোশ্যাল মাধ্যমে আপত্তিকর পোস্ট করার অভিযোগে ৯৫টি মামলা করা হয়েছে।

প্রশাসনের এই তৎপরতায় বাহŸা জানিয়েছে যোগীর দফতর। অশান্তির জেরে সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিপূরণ অনেকাংশে আদায় করা গেছে বলে প্রশাসনের তরফে দাবি করা হয়। বুলন্দশহরে প্রায় ৬ লক্ষের বেশি টাকা তোলা হয়েছে। এক ভিডিয়ো দেখা গেছে, সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের নাগরিকরা সেই অঙ্কের ডিমান্ড ড্রাফ্ট তুলে দিচ্ছেন সরকারি অফিসারের হাতে। উল্লেখ্য, উত্তর প্রদেশে অশান্তির জেরে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ১৯ জনের। এক তৃতীয়াংশ জায়গায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ। উত্তর প্রদেশ আর্মড কনস্ট্যাবুলারির ১২ হাজার জওয়ান এবং তিন হাজারের বেশি আধা সেনা টহল দিচ্ছে যোগীর রাজ্যে।
সিএএ-এনআরসি আসলে নোটবন্দি ২! : রাহুল গান্ধীর
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ও দেশজুড়ে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি(এনআরসি) বলবৎ করার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পথে নেমেছে পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ ভারত। আর সিএএ-এর প্রতিবাদে গতকাল ফের একবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার দল এবং আরএসএস-কে আক্রমণ করলেন রাহুল গান্ধী। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে যোগ দিয়ে আসামে যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারের পাশে থাকতে এবং নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাহুল গতকাল আসামে যান। এদিন আসামের জনসভায় রাহুল গান্ধী বলেন, বিজেপি দেশের মানুষের কথা শুনছে না। আর তাই আসামের জনসভায় দাঁড়িয়ে রাহুল গান্ধীর হুঁশিয়ারি, বিজেপিকে আসামের ইতিহাস, পরিচয়, সংস্কৃতি ও ভাষা ধ্বংস করতে দেবেন না। রাহুল গান্ধীর স্পষ্ট জবাব, নাগপুর থেকে আসামকে পরিচালনা করা যাবে না। আসাম চলবে আসামের জনগণের দ্বারা।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে দেশের মধ্যে আসামে প্রথম উঠেছিল বিক্ষোভের ঝড়। আর সেই ঝড় শান্ত হওয়ার পর এদিন আসাম যান রাহুল গান্ধী। সফরের আগে দিল্লিতে কংগ্রেসের ১৩৫তম প্রতিষ্ঠা দিবসে রাহুল গান্ধী সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করে বলেন, জাতীয় নাগরিক নিবন্ধীকরণ এবং সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের পদক্ষেপ ২০১৬ সালে বিজেপি সরকারের ‘ডিমনিটাইজেশন’ বা নোটবন্দি পদক্ষেপের থেকেও বিপর্যয়কারী হিসাবে প্রমাণিত হবে।
আসামের ডিটেনশন সেন্টার সম্পর্কে কেন্দ্রকে মিথ্যা দোষারোপ করেছেন রাহুল গান্ধী। এমন অভিযোগ ইতোমধ্যে বারেবারে করেছে কেন্দ্রের শাসক দল। সেই অভিযোগেরই পাল্টা জবাব এদিন দেন রাহুল। তিনি বলেন, সবাই আমার টুইট দেখেছেন? আমি নরেন্দ্র মোদির ভাষণও শেয়ার করেছিলাম ওই টুইটে যেখানে তিনি বলছেন, ভারতে কোনও ডিটেনশন সেন্টার নেই, অথচ একই ভিডিওতে একটি ডিটেনশন সেন্টারের ছবি রয়েছে। আপনারাই এবার সিদ্ধান্ত নিন কে মিথ্যাচার করছে।
সিএএ নিয়ে রাহুল গান্ধীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি নোটবন্দির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এই পদক্ষেপকে নোটবন্দি-২ বলা যেতে পারে। যা নোট বাতিলের পদক্ষেপের থেকেও আরও বিপর্যয় সৃষ্টিকারী পদক্ষেপ হবে। সমস্ত দরিদ্র মানুষকে নিজেদের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর ফলে তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।
রণংদেহী প্রিয়াঙ্কা, আড়াই কিমি হেঁটে পৌঁছলেন ধৃত সমাজকর্মীর বাড়ি
সিএএ বিরোধী বিক্ষোভে উত্তপ্ত উত্তরপ্রদেশ। এর মধ্যেই রণংদেহী মেজাজে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। গতকাল সমস্ত পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে প্রায় আড়াই কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে প্রাক্তন আইপিএস অফিসার তথা সমাজকর্মী এসআর দারাপুরির সঙ্গে দেখা করলেন তিনি। এরই মধ্যে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন প্রিয়াঙ্কা। যোগী শাসনে উত্তরপ্রদেশে পুলিশি জোর জুলুম চলছে বলে তোপ দাগেন তিনি।
গত ১৯ ডিসেম্বর সিএএ বিরোধী আন্দোলন ঘিরে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছিল লখনউতে। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সমাজকর্মী দারাপুরিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদিন বিকেলে ধৃত সমাজকর্মীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার কর্মসূচি ছিল প্রিয়াঙ্কার। পুলিশের বাধার জেরে গাড়ি ছেড়ে এক সময় বাইকে করে গন্তব্যেরে পথে রওনা দেন তিনি। তাতেও সমস্যা মেটেনি। যার জেরে বাধ্য হয়ে হাঁটা শুরু করেন।
যাত্রাপথে শহরের ১০৯০ নামক স্থানে পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হয় তাকে। সেই বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে যাওয়ার পরে পলিটেকনিক স্কোয়ারের কাছে ফের তার গতিরোধ করেন উর্দিধারীরা। আগে যাওয়া যাবে না বলে পুলিশের তরফে তাকে জানিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু তিনিও যে অত সহজে ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নন, তা বুঝিয়ে দেন কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক। কি কারণে তাকে পথে আটকান হচ্ছে, উপস্থিত পুলিশকর্তাদের কাছে জানতে চান। সে সময় পুলিশের সঙ্গে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর রীতিমতো উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় শুরু হয়।
এর পরে গাড়ি থেকে নেমে পড়েন সোনিয়া-তনয়া। সোজা হাঁটা লাগান প্রাক্তন আইপিএস অফিসার তথা সমাজকর্মী এসআর দারাপুরির বাড়ির দিকে। শীতের পড়ন্ত বিকেলে লউনউয়ের প্রিয়াঙ্কার এই হাঁটায় উপস্থিত সকলে চমকে যান। পলিটেকনিক স্কোয়ার থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার পায়ে হেঁটে শেষ পর্যন্ত দারাপুরির বাড়িতে পৌঁছেন প্রিয়াঙ্কা। কথা বলেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে।
পুলিশের এই ধরনের আচরণে তীব্র ক্ষোভ উগরে গিয়ে দিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। এই যাত্রাপথেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘এটা কী ধরনের পুলিশি ব্যবস্থা! রাজ্যজুড়ে পুলিশি জোর জুলুম চালাচ্ছে যোগী সরকার। এমনকী সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করতে দেয়া হচ্ছে না। পুলিশি সন্ত্রাসে চারদিকে চ‚ড়ান্ত আতঙ্কের পরিবেশ।’
মোদি-শাহ হলেন এ যুগের দুর্যোধন-দুঃশাসন : যশবন্ত
দিল্লির ‘টুকরে টুকরে’ গ্যাংয়ের একটা শিক্ষা হওয়ার দরকার। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সেই মন্তব্যেরই কড়া জবাব দিলেন একসময়ের ডাকসাইটে বিজেপি নেতা যশবন্ত সিনহা। তিনি টুইটে মোদি-অমিত জুটির নতুন নামকরণ করেন। তাদের নাম দেন দুর্যোধন আর দুঃশাসন। যশবন্ত সিনহা টুইট করেন, দেশের সবথেকে ভয়ঙ্কর টুকরে টুকরে গ্যাংয়ে মাত্র দু-জন সদস্য রয়েছেন। তাদের একজন হলেন দুর্যোধন, আর একজন দুঃশাসন। তারা দুজনেই বিজেপিতে রয়েছেন। তাদের সামলে চলুন। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের সমালোচনা করে তিনি একথা লেখেন টুইটারে। বিজেপি নেতার সমালোচনায় বিদ্ধ এদিন মহাভারতের উদাহরণ তুলে ধরেন প্রাক্তন বিজেপি নেতা। মহাভারতের দুই ভিলেন চরিত্র হলেন দুর্য়োধন আর দুঃশাসন। তাদের সঙ্গে একই আসনে বসালেন মোদি-শাহকে। বর্তমান ভারতের দুর্যোধন আর দুঃশাসন হলেন মোদি-শাহ। প্রাক্তন বিজেপি নেতার সমালোচনায় বিদ্ধ হলেন তারা। শহুরে নকশাল আর টুকরে টুকরে গ্যাং সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন রূপায়ণের পর সারা দেশে আগুন জ্বলছে। বাদ যায়নি দিল্লিও। তারই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হিংসা ছড়ানোর জন্য দায়ী করেন কংগ্রেসকে। বিক্ষোভকারীদের শহুরে নকশাল বলে কটাক্ষ করেন তিনি। আর দোসর অমিত শাহ বলেন, টুকরে টুকরে গ্যাংয়ের একটা শিক্ষা হওয়া দরকার। সূত্র : ওয়ান ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, জি নিউজ, টাইমস অব ইন্ডিয়া।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ