মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতা ক্রমেই সীমানা ছাড়াচ্ছে। বৃহস্পতিবার কর্নাটকে দুজন ও লখনউতে একজনের মৃত্যু হয়েছিল। গতকাল উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বিক্ষোভকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, দেশবিরোধীদের ওপর প্রতিশোধ নেওয়া হবে। আর সকাল থেকেই উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ দেখাতে শুরু করে বিক্ষোভকারীরা। এদিন সন্ধ্যায় শোনা গেল, মৃত্যু ঘটেছে ৬ জন বিক্ষোভকারীর। পুলিশ স‚ত্রে খবর, বিজনৌরে মারা গিয়েছেন দু’জন বিক্ষোভকারী। সম্ভাল, ফিরোজাবাদ, মেরঠ ও কানপুরেও একজন করে মারা গিয়েছেন। তবে পুলিশের গুলিতে কারও মৃত্যু হওয়ার কথা অস্বীকার করা হয়েছে। এদিকে, দিল্লিতে বিক্ষোভ দেখানোর সময় সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কন্যা শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়কে আটক করা হয়।
সিএএ বিরোধী আন্দোলন ঘিরে বৃহস্পতিবারই রক্তাক্ত হয়েছিল লখনউয়ের রাজপথ। বৃহস্পতিবার রাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে এক ব্যক্তির। বিক্ষোভকারীদের দাবি, এ দিন বিক্ষোভ চলাকালীন পুলিশ গুলি চালিয়েছিল। তাতেই জখম হয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। কর্নাটক থেকেও পুলিশের গুলিতে দু-জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল।
বৃহস্পতিবারই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ জানিয়ে দিয়েছিলেন, বিক্ষোভকারীদের বুঝে নেবে তার প্রশাসন। অভিযুক্তদের সম্পত্তি বেচে সরকারি সম্পত্তির হিসেব নেয়া হবে। অশান্তির আঁচ পেয়ে বুধবার রাত থেকেই সারা উত্তরপ্রদেশে ১৪৪ ধারা জারি করেছিল প্রশাসন। চার জনের বেশি লোকের জমায়েতের উপর জারি করা হয়েছিল নিষেধাজ্ঞা। সংবেদনশীল এলাকা হওয়ায় সকাল থেকে বিশাল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। সেই নির্দেশ উপেক্ষা করেই এদিন লখনউতে মিছিল করে সমাজবাদী পার্টি-সহ একাধিক সংগঠন। কারফিউ উপেক্ষা করেই বিক্ষোভে শামিল হয় মানুষ। মিছিল আটকানোর চেষ্টা করা হলে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে।
একই ঘটনা ঘটে বৃহস্পতিবারও। বুলন্দশহর, কানপুর, গাজিয়াবাদে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। সেখানেই বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে গুলি চলে বলে অভিযোগ। যদিও পুলিশ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
এঘটনায় মোদি সরকারের সমালোচনা করে বিরোধী দল কংগ্রেসের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সোনিয়া গান্ধী বলেছেন, ‘ভুল সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করার অধিকার সবার। কিন্তু মানুষের প্রতিবাদকে সম্মান করে না বিজেপি। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বৈষম্যমূলক’।
এদিকে, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে গতকাল বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজধানী। দিল্লিতে কংগ্রেসের হয়ে বিক্ষোভ দেখানোর সময় পুলিশের রোষে পড়লেন সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কন্যা শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বাড়ির কাছে কংগ্রেসের প্রতিবাদ আন্দোলন চলাকালীন আটক করা হয় দিল্লি কংগ্রেসের মহিলা শাখার প্রধানকে । ‘আমাদের আটক করে মন্দির মার্গ থানায় নিয়ে আসা হয়েছে’, টুইট করলেন দিল্লি কংগ্রেসের মহিলা শাখার প্রধান শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়।
প্রণব কন্যা শর্মিষ্ঠা সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেন, দিল্লি মহিলা কংগ্রেসের প্রায় ৫০ জন মহিলা সদস্যকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবারও বড় কোনও সমাবেশ আয়োজনের নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে বিক্ষোভ দেখানো হয় দিল্লিতে। বিতর্কিত আইনের প্রতিবাদে কয়েক হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রায় কয়েকশো মানুষকে সাময়িকভাবে আটক করে দিল্লি পুলিশ। আটক রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ছিলেন ডি রাজা, সীতারাম ইয়েচুরি, নীলোৎপাল বসু, বৃন্দা করাত, অজয় মাকেন, সন্দীপ দীক্ষিত এবং সমাজকর্মী যোগেন্দ্র যাদব ও উমর খালিদ সহ অনেকেই।
বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে প্রথমে পুলিশের নাগালের মধ্যে এলেও পরে দিল্লি পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে পালান চন্দ্রশেখর আজাদ। শুক্রবার দুপুর নাগাদ সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভের ঢেউ আছড়ে পড়ে দিল্লির জামে মসজিদের কাছে। পুলিশের বাধাকে উপেক্ষা করেই ভীম সেনা প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদ মসজিদ এলাকায় ওই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন। বিক্ষোভ ঘিরে এলাকায় চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। জামে মসজিদের ম‚ল ফটকের কাছে সংবিধানের প্রতিলিপি হাতে বিক্ষোভে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শোনা যায় তাকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আটক করা হয় চন্দ্রশেখর আজাদকে। কিন্তু পরে পুলিশকে ফাঁকি দেন তিনি। গোটা এলাকায় ড্রোন ক্যামেরা মারফৎ নজরদারি চালাচ্ছে দিল্লি পুলিশ।
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে যে তারা জামে মসজিদের বাইরে কোনও প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করার অনুমতি দেয়নি। কিন্তু তা সত্তে¡ও ওই অঞ্চলে জমায়েত হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশন (ডিএমআরসি) জানিয়েছে, জামা মসজিদ, চাওরি বাজার এবং লাল কেল্লা মেট্রো স্টেশনগুলিতে ঢোকা ও বেরোনোর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং ট্রেনগুলি সেখানে থামবে না, জানিয়েছে দিল্লি মেট্রো রেল কর্পোরেশন (ডিএমআরসি)।
ভীম সেনার সমর্থনকারীরা শুক্রবার জামা মসজিদ থেকে যন্তর মন্তর পর্যন্ত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় বিক্ষোভ মিছিল করার পরিকল্পনা করে। ভীম সেনা প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদ বলেন, ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করেই ওই অঞ্চল থেকে বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন তিনি। সেই মতো দুপুর ১ টা নাগাদ জামা মসজিদ চত্বরে ভিড় জমাতে থাকেন প্রতিবাদীরা। অবস্থা বেগতিক দেখে চন্দ্রশেখর আজাদকে আটক করে পুলিশ।
অন্যদিকে, ফেজটুপি আর লুঙ্গি পরে ট্রেনে পাথর ছোঁড়ার অভিযোগে ছয় বিজেপি কর্মীকে আটক করল মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ। রাধামাধবতলায় ট্রেনে পাথর ছোঁড়ার সময় তাদের হাতেনাতে ধরে ফেলে স্থানীয়রা। সংশোধিক নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় দেশজুড়ে অশান্তির ঘটনায় কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিক্ষোভকারীদের পোশাক নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘পোশাক দেখেই বোঝা যায়, কারা হিংসা ছড়াচ্ছে।’ কিন্তু এই গ্রেপ্তারির ঘটনায় মুখ পুড়ল বিজেপিরই। যদিও অভিযুক্তদের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই মন্তব্য করেছে গেরুয়া শিবির।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবারই রানি রাসমনি অ্যাভিনিউয়ের প্রতিবাদী সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বিজেপির ফাঁদে পা দেবেন না। ওরা হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে চাইছে। ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট পেয়েছি, বিজেপি তাদের কর্মীদের জন্য ফেজটুপি কিনছে, যাতে অশান্তি করার সময় ছবি তুলে মুসলিম স¤প্রদায়কে বদনাম করতে পারে। যুব স¤প্রদায়ের মধ্যে হিংসা-দ্বেষ ছড়িয়ে দেয়ার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে ভুয়া ভিডিও তৈরি করছে।’ মমতার এই মন্তব্যকে অনেকটাই মান্যতা দিচ্ছে রাধামাধবতলার ঘটনা।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে আসামের গুয়াহাটিতে যে সহিংসতা হয়েছিল, তার জন্য সরকার দায়ী করছে মুসলমানদের একটি দল এবং কংগ্রেসের কয়েকজন মুসলমান নেতাকে। তাদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। তবে ‘পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া’ নামে মুসলিমদের ওই সংগঠনটি তাদের কোনো সদস্যের সহিংসতায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করছে।
প্রতিবাদকারীরা বলছেন, এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে বিজেপি সরকার আসামের সাধারণ মানুষের আন্দোলনের মধ্যে ধর্মীয় আর সা¤প্রদায়িক বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করছে। বিজেপি এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে যে পুলিশ বহু ঘণ্টার ভিডিও দেখে ৮,০০০ মানুষকে চিহ্নিত করেছে, যারা সেদিনের সহিংসতার সময়ে হাজির ছিল।
রাজধানী দিসপুরের সচিবালয় আর লাগোয়া গুয়াহাটি শহরে শঙ্করদেব কলাক্ষেত্রর সামনে যে সহিংসতা হয়েছিল ১০ ও ১১ তারিখে, তাতে তৃতীয় কোনো শক্তি জড়িত ছিল বলে প্রথম থেকেই বলা হচ্ছিল।
সেই তৃতীয় শক্তি যে আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ছাত্র সংগঠন - অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন বা আসু নয়, তার বাইরের কোনো শক্তি, সেটাও বলা হচ্ছিল সরকারি আর ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে।
স¤প্রতি রাজ্যের দ্বিতীয় গুরুত্বপ‚র্ণ মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেন, পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া এবং কংগ্রেসের কয়েকজন নেতাই ওই সহিংসতার সঙ্গে জড়িত বলে তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ। তিনি যাদের নাম করেন, ঘটনাচক্রে তাদের বেশিরভাগই মুসলমান।
এই ঘোষণার পরেই শুরু হয় ধরপাকড়। গ্রেপ্তার হন বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী। গ্রেপ্তার হন পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার রাজ্য সভাপতি। সংগঠনটির আসাম রাজ্য সহ-সভাপতি আবু সামা আহমেদ সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলছেন, সরকার স্পষ্ট করে প্রমাণ দেখাতে পারবে না যে পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া বা পি এফ আই সেদিনের সহিংসতায় জড়িত ছিল।
বৃহস্পতিবারও গুয়াহাটির চাদমারিতে ছিল অসমিয়া শিল্পী সমাজের এক প্রতিবাদ সভা। ওই সভায় হাজির ছিলেন চলচ্চিত্র সংগঠন ফিল্ম ফ্রেটার্নিটি, আসামের সাধারণ সম্পাদিকা গরিমা শইকিয়া। বিবিসিকে তিনি বলেছেন, ‘হিন্দু-মুসলিম, অসমিয়া বাঙালী বা অসমিয়া আর উপজাতিদের মধ্যে সংঘাত বাঁধানোর চেষ্টা চলছে। এটা জানি না যে এই সংঘাত সরকার বাঁধাচ্ছে না কোনও তৃতীয় শক্তির হাত আছে এর পিছনে। কিন্তু এটা বলতে পারি, যারাই এটা করুক না কেন, তারা আন্দোলনের ম‚ল উদ্দেশ্যটা ঘুরিয়ে দিতে চাইছে!’
নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনের আরেক নেতা, কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির প্রধান অখিল গগৈকে মাওবাদীদের সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে গ্রেপ্তার করে সন্ত্রাসবাদ দমন এজেন্সির (এন আই এ) হাতে তুলে দিয়েছে আসাম পুলিশ। সূত্র: বিবিসি, এনডিটিভি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।