মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে উত্তাল ভারতের রাজধানী দিল্লির উত্তর-পূর্ব জেলায় জারি করা হল ১৪৪ ধারা। রোববার থেকেই নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ থেকে চরম অশান্তি ছড়ায়। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভ চলাকালীন পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মঙ্গলবারও অশান্তি ছড়ায় দিল্লির সিলামপুর ও ব্রিজ পুরি এলাকায়। ঘটনার তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং কমপক্ষে চারটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। এদিকে এই আইনের বৈধতা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে নোটিশ দিল দেশটির শীর্ষ আদালত।
সংবাদসংস্থা এএনআই জানিয়েছে, পূর্ব দিল্লিতে হিংসাত্মক প্রতিবাদের পরেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে সমস্ত বড় সমাবেশ। নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে মঙ্গলবার উত্তপ্ত হয় দিল্লির সিলামপুর এলাকা, পুলিশকে লক্ষ্য করে পাঁথর ছোঁড়ার অভিযোগ ওঠে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি এবং কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে পুলিশ। দিল্লি পুলিশ দাবি করছে, এই ধরণের অশান্তি যারা ছড়াচ্ছে তারা আসলে সমাজবিরোধী, বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে এর আগেও তাদের জড়িয়ে পড়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
রোববার সন্ধ্যায় জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণের প্রতিবাদেই ওই দিন শুরু হয় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। অন্তত দু’জন পুলিশকর্মী আহত হন বলে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি গাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলেও অভিযোগ ওঠে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শ‚ন্যে গুলি চালাতে হয় পুলিশকে। দিল্লি পুলিশের এক পদস্থ কর্মকর্তা জানান, দুপুর ১টা নাগাদ বিক্ষোভ শুরু হয়, একটি গুরুত্বপ‚র্ণ ক্রসিং-এ জমা হন বিক্ষোভকারীরা, তারপরেই ওই বিক্ষোভ থেকে উত্তেজনা ছড়ায়। নাগরিকত্ব আইন, জাতীয় নাগরিকপঞ্জী ইস্যুতে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সেøাগান দিতে থাকেন সিলামপুরের বিক্ষোভকারীরা। তারপরেই বিক্ষোভের আঁচে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। দিল্লি মেট্রো রেলের তরফ থেকে জানানো হয়, ৬টি মেট্রো স্টেশনের প্রবেশ ও প্রস্থানের গেট বন্ধ করে দিতে হয় ওই উত্তপ্ত পরিস্থিতির জেরে।
বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে যে সব অমুসলিম মানুষরা ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন তারা এবার ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এরই বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন দেশের অসংখ্য মানুষ। নতুন আইনটির মাধ্যমে ধর্মের ভিত্তিতে বিবেচনা করে অবৈধ অভিবাসীদের দেশের নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া সংবিধানের মূল কাঠামোর পরিপন্থী। এই আইন নাগরিকদের জীবন ও মৌলিক অধিকার তথা সাম্যের অধিকার লঙ্ঘন করে, দাবি বিক্ষোভকারীদের।
এদিকে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে নোটিশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ওই আগামী ২২ জানুয়ারি ওই আইনের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে করা মামলার পরবর্তী শুনানি হবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে। তবে আপাতত ভারতের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চ ওই আইনের প্রয়োগ স্থগিত রাখার আবেদন খারিজ করে দিয়ে বলেন, আগামী ২২ জানুয়ারি ‘এই আইনটি স্থগিত রাখার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে’। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতা করে প্রায় ৬০টি আবেদন জমা পড়ে সুপ্রিম কোর্টে। বিতর্কিত এই আইনটির বিরোধিতা করে আরো অনেকের মতো দেশের শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা জয়রাম রমেশ, ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগ এবং অসমে ক্ষমতাসীন বিজেপির সহযোগী দল অসম গণ পরিষদ এবং ডিএমকে। ভারতের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ এই আবেদন গ্রহণ করে। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন বিআর গাভাই এবং স‚র্য কান্ত।
বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে আবেদনকারীরা যুক্তি দেখিয়েছেন যে, ধর্মের ভিত্তিকে কখনোই নাগরিকত্ব প্রদান করা যায় না। তারা আরও বলেন যে, নতুন আইনটির মাধ্যমে ধর্মের ভিত্তিতে বিবেচনা করে অবৈধ অভিবাসীদের দেশের নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া সংবিধানের ম‚ল কাঠামোর পরিপন্থী। এই আইন নাগরিকদের জীবন ও মৌলিক অধিকার তথা সাম্যের অধিকার লঙ্ঘন করে।
এদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে বার্তা দিয়ে বললেন, ‘দেশে আগুন লাগানো নয়, নেভানো আপনার কাজ।’ এদিন তিনি জানান, জাতীয় লাগরিক পঞ্জি ও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন আসলে ‘একই ললিপপের দু’পিঠ।’ টানা তিনদিন ধরে এই আইনের বিরুদ্ধে মিছিলে অংশ নিলেন মুখ্যমন্ত্রী। গতকাল বুধবার সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘আপনি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কেবল একজন বিজেপি নেতা মাত্র নন। দয়া করে দেশে শান্তি বজায় রাখুন।’ এরপরই তিনি বলেন, আপনারা ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ করতে পারেননি। করেছেন ‘সবকা সাথ সর্বনাশ’। সিএএ ও এনআরসি প্রত্যাহার করুন। নাহলে আমিও দেখব আপনারা এটা এখানে কী করে কার্যকর করেন। সূত্র : এনডিটিভি।
মহেশপুরে আরো ৫জন আটক
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে বিশেষ সংবাদদাতা : দৃশ্যত বিক্ষোভ কিছুটা কমলেও ভারত জুড়ে এনআরসি আতঙ্ক থামছে না। এনআরসি আতঙ্কে বাংলাদেশ সীমান্তমুখী বাংলাভাষীরা ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছেন। বিভিন্ন সীমান্তে পুশ ইন বেড়েই চলেছে। বিজিবির হাতে আটকের সংখ্যার চেয়ে সীমান্তের ফাঁকফোকর দিয়ে ঢুকে পড়ছে এপারে। ঝিনাইদগের মহেশপুর সীমান্তে বিজিবির হাতে আরো আটক হয়েছে ৫জন অনুপ্রবেশকারী।
ভারতীয় পত্রিকার মাধ্যমে জানা যায়, এনআরসি নিয়ে বিক্ষোভের দাপট কমে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে। কিন্তু মোটেও কমেনি আতঙ্ক। ওপারের একাধিক সূত্রে জানায়, বিশেষ করে বাংলাভাষীরা এখন গ্রেফতার আতঙ্কে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে ছুটছেন।
আমাদের ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতা জানান, ভারত থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের আসা অব্যাহত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার জলুলি বিওপির সীমান্ত পিলার ৫২ মেইন পিলারের পাশে লেবুতলা থেকে ১জন আটক হয়। গত মঙ্গলবার ৪ জন নারী পুরুষ শিশুকে অবৈধ অনুপ্রবেশকরী হিসেবে আটক করেছে মহেশপুর বিজিবি ৫৮ ব্যাটেলিয়ানের বিশেষ টহল দল।
বিজিবি জানায়, ৫৩/১ এস হতে ৩০০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার মগদাসপুর কারবালার নিকট হতে ২জন পুরুষ ১ জন নারী ও ১জন শিশু সহ মোট ৪ জন অত্র ব্যাটেলিয়ানের হাতে আটক হয়। আটককৃত ৫ জনকে অবৈধ ভাবে সীমান্ত অতিক্রম করার অপরাধে পাসপোর্ট অধ্যাদেশ ১৯৭৩ এর ১১(গ) ধারায় মহেশপুর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। এই নিয়ে গত দুই মাসে মহেশপুর ৫৮ ব্যাটেলিয়ানের হাতে ৩২০ জন আটক হলো। বিজিবি জানায়, দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তের অন্যান্য পয়েন্টেও কঠোর নজরদারি রাখা হচ্ছে। ভারত থেকে অনুপ্রবেশ রুখে দিতে সতর্কাবস্থাায় রয়েছে বিজিবি।
নাগরিকত্ব আইনের সঙ্গে ভারতের মুসলমানদের কোনও সম্পর্ক নেই : শাহি ইমাম
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের সঙ্গে এদেশের মুসলমানদের কোনও সম্পর্ক নেই। দিল্লির জামে মসজিদের শাহি ইমাম একথা জানালেন। পাশাপাশি এনআরসি প্রসঙ্গেও তার বক্তব্য, এটি এখনও আইনে পরিণত হয়নি। কয়েক দিন আগে রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল পাস হয়েছে। এরপর থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শুরু হয়েছে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। সেই আন্দোলনের প্রসঙ্গে শাহি ইমাম বলেন, আন্দোলন ভারতের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে তা নিয়ন্ত্রণে করা উচিত। নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইনে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ভারতে ২০১৫ সালের আগে আসা অমুসলিম শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার পথ প্রশস্ত করার কথা বলা হয়েছে। বিলটি রাজ্যসভায় পাস হওয়ার পর থেকেই উত্তর-পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষোভ শুরু হয়। ক্রমে তা ছড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও।
এই আইনের বিরোধিতা করে বিরোধী দলগুলি এবং প্রতিবাদীরা সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন জমা দিয়েছে। তাদের দাবি, এই আইনে ধর্মীয় বৈষম্যের ভিত্তিতে বিভাজন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর পোস্ট করা একটি ভিডিওতে জামে মসজিদের শাহি ইমাম সঈদ আহমেদ বুখারি বলেন, ‘প্রতিবাদ ভারতের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। কেউ আমাদের এটা করা থেকে আটকাতে পারবে না। যদিও এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, এটা নিয়ন্ত্রিত ভাবে হওয়া উচিত। নিজেদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি আরও বলেন, ‘নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন এখন আইনে পরিণত হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে রয়েছে এনআরসি। যা ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু এখনও আইনে পরিণত হয়নি। সিএএ-র অধীনে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আগত মুসলিম শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। ভারতের মুসলিমদের এর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই।’
ইমাম আহমেদ বুখারি সকলকে সংযত হওয়ার আবেদন করেছেন। গত রবিবার জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে অশান্তির প্রেক্ষিতেই তিনি এই আর্জি জানান। মঙ্গলবার প্রতিবাদ দেখা গিয়েছে প‚র্ব দিল্লির সিলামপুর ও ব্রিজপুরীতে। সেখানেও পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়া ও গাড়ি ভাঙচুর করার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশও পরিস্থিতি সামলাতে লাঠিচার্জ করে ও টিয়ার গ্যাস ছোঁড়ে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।