Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নাগরিকত্ব বিল নিয়ে ভারতের দ্বিগুণ ক‚টনৈতিক সঙ্কট

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ভারতের জন্য এটা দ্বিগুণ ক‚টনৈতিক সঙ্কট হয়ে দাঁড়িয়েছে, যদিও সেটা কখনও ভিন্নরকম ছিল কি-নি সন্দেহ। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের ভারত সফর বাতিল করার ২৪ ঘন্টা পর জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য বার্ষিক ভারত-জাপান সম্মেলনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছেন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশ্বস্ত করেছে যে, ভারত ও জাপান ‘পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে’ জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সফরের জন্য ভিন্ন সময় নির্ধারণের ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। কিন্তু নয়াদিল্লী যে ঝামেলা তৈরি করেছে, সেদিক থেকে মনোযোগ সরানোর জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এটা একটা ব্যর্থ প্রচেষ্টা মাত্র। দক্ষিণ এশিয়ায় গোলাপি বলের ক‚টনীতি নিয়ে যে রোমান্টিক পরিবেশ তৈরির চেষ্টা হয়েছিল, সেটাও বিলীন হয়ে গেছে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান যদিও ভারতের পার্লামেন্টে পাস হওয়া সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল (সিএবি) নিয়ে এখনও কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে কাশ্মীরের মর্যাদা নিয়ে ভারতের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ইমরান খানের যে তীব্র প্রতিক্রিয়া, সেটা এখন তার নিত্যদিনের অংশ হয়ে গেছে। সেটাকে যদি মানদÐ বিবেচনা করা হয়, তাহলে এই আইনের ব্যাপারেও তার প্রতিক্রিয়াটা বোঝা যাবে।

এটা খুবই হতাশাজনক যে, কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী অগ্রগতির পর বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের সমীকরণটাও তিক্ত হয়ে উঠেছে। যদিও এটা পুরো আলাদা ইস্যু যে হাউজ অব এলডার্সের তৃণম‚ল সদস্যরা ভোট দেননি। বিশেষ করে, এই বিলে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে আসা ধর্মীয় সহিংসতার শিকার অভিবাসীদেরকে প্রায় তাৎক্ষণিক নাগরিকত্ব দেয়া হয়েছেৃ শুধুমাত্র মুসলিম ছাড়া।

তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত হিসেবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ১৩ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের ভারত সফর বাতিল করেছেন, যেখানে তাদের ষষ্ঠ ‘ইন্ডিয়ান ওশান ডায়ালগে’ অংশ নেয়ার কথা ছিল। উভয়েই তারা নিজের দেশের অবস্থানকে মোটামুটি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। সিএবির ভাষ্য নিয়ে ঢাকা হতাশ, বিশেষ করে এই অভিযোগের কারণে যে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের বিরুদ্ধে নির্যাতন চালানো হচ্ছে।

যেভাবে তাৎক্ষণিক দিল্লী সফর বাতিল করা হয়েছে, সেটাকে নাগরিকত্ব বিলকে জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান হিসেবে বিবেচনা করা যায়। ১৪ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ায় এই আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকালে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়েছে বিক্ষোভকারীরা।

মি মোমেন ঢাকার মানসিকতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন যখন তিনি বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ নাকচ করে দেন। ঢাকায় বিজয় দিবস ও বুদ্ধিজীবী দিবস উদযাপনের জন্য তার উপস্থিত থাকা প্রয়োজন মর্মে যে কারণের কথা তিনি উল্লেখ করেছেন, সেটা মোটেই আশ্বস্ত হওয়ার মতো কোন কারণ নয়।

বিজয় দিবসে তিনি থাকতেই পারেন, যেটা বাংলাদেশ ও ভারতে উভয় দেশেই ১৬ ডিসেম্বর উদযাপিত হয়। কিন্তু ‘ইন্ডিয়ান ওশান ডায়ালগ’ শেষ হতো ১৫ ডিসেম্বর। সে কারণে এটা কোন গ্রহণযোগ্য যুক্তি হতে পারে না।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেটা বলে থাকে যে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক একটা সোনালী অধ্যায় পার করছে, সেটা একটা আত্ম-প্রতারণাকর বক্তব্য ছাড়া কিছুই নয়।

পাকিস্তানে সুফি এবং আহমাদিয়ারাও সংখ্যালঘু হিসেবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। বøাসফেমি আইনের নামে সংখ্যালঘুদের হত্যা করা হয়েছে, নারীদেরকে সম্পদ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, ধর্ষণ, অপহরণ ও জোর করে ধর্মান্তরিতকরণ ও বিয়ে দেয়া হয়েছে, ধর্মীয় প্রার্থনায় জায়গায় ভাংচুরের বিষয়টি না হয় বাদই দিলাম।

স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল ক‚টনৈতিক নৌকাকে ভালোমতোই নাড়িয়ে দিয়েছে।
কিন্তু জাপান যথেষ্ট বদান্যতা দেখিয়ে এগিয়ে এসেছে এবং বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের মতোই তাৎক্ষণিক এই বিলের নিন্দা জানিয়েছে। এর মাধ্যমে বার্তা পরিস্কার বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। ভারতের ক‚টনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা এখন হুমকির মুখে রয়েছে। সূত্র : এসএএম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ