Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সহিংস বিক্ষোভ পূর্ব দিল্লি চেন্নাই কলকাতায়

জামিয়ায় হামলার বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি সোনিয়ার ষ বিপুল সংখ্যক আসন মানেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা নয় : প্রণব মুখার্জি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম | আপডেট : ৭:৫৪ এএম, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯

ভারতে মুসলিম বিদ্বেষী নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। বিতর্কিত আইনটির প্রতিবাদে গতকালও দিল্লির রাজপথ রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে। গত দুই দিনের মতো এদিনও ব্যাপক সংখ্যক লোক এই আইনের প্রতিবাদে সড়কে নেমে আসেন। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সিলামপুর এলাকায় দিল্লি পুলিশের খন্ডযুদ্ধ হয়। ঘটনার জেরে সাতটি মেট্রো স্টেশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জামিয়ায় ছাত্রদের ওপর হামলার প্রতিবাদে চেন্নাইয়ের নানান জায়গায় বিক্ষোভ দেখায় ছাত্র-ছাত্রীরা। প্রতিবাদে সোচ্চার বলিউডও। গতকাল প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দর সাথে দেখা করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন কংগ্রেসনেত্রী সোনিয়া গান্ধী। কলকাতায় দ্বিতীয় দিনের মতো শপথবাক্য পাঠ করিয়ে রাজপথে হেঁটেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আবারো জোর দিয়ে বলেছেন, কোন ভাবেই এনআরসি হতে দেয়া হবে না। এর একদিন আগে রাজ্যে ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্ট্রারের কাজও বন্ধ করে দেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তবে এত কিছুর পরও অমিত শাহ আবারো ঘোষণা করেছেন সিএএ-এনআরসি তারা লাগু করবেনই। বিক্ষোভকারীরা সরকারি সম্পত্তিতে কোনো ধরনের সহিংসতা চালালে দেখামাত্রই গুলির নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী সুরেশ অঙ্গদি। নতুন আইনের অধীন ভারতের নাগরিকত্বের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তানের সংখ্যালঘু হিন্দু, খ্রিষ্টান ও শিখ স¤প্রদায়। জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার ঘটনার সঙ্গে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাÐের তুলনা করলেন শিবসেনা প্রধান তথা মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে। এদিকে জামিয়া ও আলিগড়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে হার্ভার্ড, ইয়েল, কলম্বিয়া, স্ট্যানফোর্ড ও টাফসের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০০ এরও বেশি বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী। বিবৃতিতে তারা জানান, আমরা পুলিশ সহিংসতা বন্ধের দাবি জানাই এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন থেকে তাদের সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহারের আহŸান জানাচ্ছি। সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, আনন্দবাজার পত্রিকা, এনডিটিভি, এবিপি আনন্দ ও টাইমস অব ইন্ডিয়া।
ভারতে মুসলিম বিদ্বেষী নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। বিতর্কিত আইনটির প্রতিবাদে গতকালও দিল্লির রাজপথ রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে। গত দুই দিনের মতো এদিনও ব্যাপক সংখ্যক লোক এই আইনের প্রতিবাদে সড়কে নেমে আসেন। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সিলামপুর এলাকায় দিল্লি পুলিশের খÐযুদ্ধ হয়। ঘটনার জেরে সাতটি মেট্রো স্টেশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এদিকে ভারতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বাতিলের দাবিতে গতকাল ফের রাজপথে নামেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তার নেতৃত্বে বিক্ষোভে অংশ নেন অভিনেত্রী ও সংসদ সদস্য মিমি চক্রবর্তী ও নুসরাত জাহান। মিছিল শুরুর আগে মমতা বলেন, ‘নাগরিকত্ব আইন, জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর বিরুদ্ধে যে সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন হচ্ছে, সেগুলোকে সমর্থন জানাই। পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি হতে দেব না। কাউকে বাংলা ছেড়ে যেতে দেব না।’
মমতা বলেন, ‘বিজেপি ভাবছে দেশ দখল করে নিয়েছি। সংখ্যার জোরে আইন পাস করানো যায়। মানুষের সমর্থন না পেলে কার্যকরী হয় না। সংবিধান মেনে নাগরিকত্ব আইন হয়নি। কবে বিল পাস হবে, আগে জানানো হয়নি। না জানায় অনেক সংসদ সদস্য পৌঁছতে পারেননি’। দিন কয়েক আগে বিক্ষোভকারীদের কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘পোশাক দেখলেই বোঝা যায়, কারা বিক্ষোভ করছে।’ মোদির এমন বক্তব্য নিয়েও তাকে একহাত নেন মমতা। তিনি বলেন, ‘পোশাক দেখে কি আন্দোলনকারীকে চেনা যায়?’
এদিন ছাত্র-শিক্ষকদের তরফে বিভিন্ন জায়গায় শান্তি মিছিলের আয়োজন হয়। কলেজ স্ট্রিট চত্বরে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, আশুতোষ, স্কটিশচার্চ, যোগেশচন্দ্র চৌধুরী ও বিদ্যাসাগর কলেজর পাশাপাশি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং ছাত্র সংগঠন এআইডিএসও-র তরফে দফায় দফায় বিক্ষোভ, মিছিল, অবরোধ হয়। তবে সবই ছিল শান্তিপূর্ণ। হাওড়ায় দফায় দফায় অবরোধ-বিক্ষোভ হয়। বিশেষ করে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। দুপুর ১২টা নাগাদ ল²ীকান্তপুর লোকাল বহড়– স্টেশনে ঢোকার সময় শতাধিক বিক্ষোভকারী রেল লাইন থেকে পাথর তুলে ট্রেন লক্ষ্য করে ছুড়তে শুরু করেন। তাতে অন্তত ১৫ জন যাত্রী জখম হন।
নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিলের বিরোধিতা করার জন্য গত শনিবার কংগ্রেসকে একহাত নিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিলের প্রতিবাদে উত্তর-পূর্ব অশান্ত হয়ে ওঠার নেপথ্যে কংগ্রেসের ভ‚মিকা রয়েছে বলে অভিযোগ করলেন তিনি। ঝাড়খÐে একটি নির্বাচনী সভায় ভাষণ দিতে উঠে তিনি বলেন, ‘নাগরিকত্ব বিল পাশ হয়েছে বলে কংগ্রেসের পেটে ব্যথা শুরু হয়েছে। হিংসায় উস্কানি দিয়ে বেড়াচ্ছে এই দল।’
তবে নাগরিকত্ব বিল পাশের পরপরই উত্তর-পূর্ব ভারতে বিক্ষোভ শুরু হতেই নিজের পূর্বনির্ধারিত মেঘালয় এবং অরুণাচল প্রদেশ সফর বাতিল করে দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যদিও সফর বাতিল সম্পর্কে নর্থ বøকের তরফে কোনও কারণ উল্লেখ করা হয়নি। যা নিয়ে অনেকেই কটাক্ষ করেছিলেন।
এবার মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি-প্রবেশ
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে এবার মুখর চেন্নাই। গতকাল সকাল থেকেই তামিলনাড়ুর নানান জায়গায় ছাত্র-ছাত্রীরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। সূত্রের খবর, শান্তিপূর্ণ ভাবেই বিক্ষোভ চালাচ্ছিল ছাত্র-ছাত্রীরা। মূলত জামিয়ায় আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের উপর পুলিশের আক্রমণের নিন্দা করেই এই প্রতিবাদ। কিন্তু জামিয়ার কাÐের পরও এদিন পুলিশ মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে ঢুকে পড়ে।
আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
উত্তর প্রদেশ রাজ্যের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়েই চলেছে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। তবে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ দমাতে নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে সোমবার শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে ৩০ জন শিক্ষার্থী ও ১০ জন পুলিশ আহত হন। এর জেরে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ঢুকে ছাত্রদের জোর করে বের করে দিচ্ছে উত্তর প্রদেশ পুলিশ। তারা হলে হলে তল্লাশি চালাচ্ছে। সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে তারা ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে, যাদের মধ্যে ১৫ জন আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
বিচারবিভাগীয় তদন্ত চাইলেন সোনিয়া
গতকাল প্রেসিডেন্টের দ্বারস্থ হয়ে জামিয়া মিল্লিয়া ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানালেন কংগ্রেসের অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি সোনিয়া গান্ধীসহ বিরোধী দলের নেতারা। গতকাল প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে দেখা করেন কংগ্রেসের কপিল সিব্বল, এ কে অ্যান্টনি, গুলাম নবি আজাদ, আনন্দ শর্মা, আরজেডি-র মনোজ কুমার ঝা, সিপিআই-এর ডি রাজা, সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি, তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন।
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সংবাদমাধ্যমে সোনিয়া গান্ধী বলেন, ‘খুবই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের উপর যে আচরণ করল পুলিশ, তাতে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। পড়ুয়াদের মারধর করেছে পুলিশ, গণতন্ত্রে এটা কখনই মেনে নেওয়া যায় না’। মহিলাদের হোস্টেলে পুলিশের ঢোকা নিয়েও আপত্তি তুলেছেন সোনিয়া। অন্যদিকে, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে যেভাবে উত্তাল দেশের বিভিন্ন প্রান্ত, সেই প্রেক্ষিতে এই আইন রদের দাবিও তোলেন বিরোধীরা।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে রাজধানীর জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হিংসার ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেফতার করল দিল্লি পুলিশ। যদিও তারা কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন বলেই জানিয়েছেন পুলিশের মুখপাত্র।
বিপুল সংখ্যক আসন মানেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা নয় : প্রণব মুখার্জি
বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে গোটা ভারতে যখন তোলপাড় চলছে, তখন গুরুত্বপূর্ণ এক মন্তব্য করলেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি। তিনি সোমবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ী স্মরণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেন, নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে কেউ স্থায়ী সরকার গঠন করতে পারে। কিন্তু তার মানেই যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মত তার পক্ষে রয়েছে, এমন নয়। তাই নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন মানেই সংখ্যাগরিষ্ঠের সরকার নয়। এটিই আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্রের মূলকথা।’
নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা সরকার কেন সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সরকার নয়, তার ব্যাখ্যাও করেন ভারতের এই সাবেক প্রেসিডেন্ট। প্রণব মুখার্জি বলেন, ভারতে কখনই কোনো দল বা ব্যক্তি ৫১ শতাংশ ভোটারের ভোট পেয়ে ক্ষমতায় আসেনি। ১৯৫২ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত কখনই এমন নজির নেই। পÐিত জওহরলাল নেহরু ১৯৫৭ সালে ৪৮০টির মধ্যে ৩৭১ আসনে জিতে সরকার গড়েছিলেন। কিন্তু তিনি ৪৭.৭৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। ১৯৮৪ সালের নির্বাচনে রাজীব গান্ধী ৫১৪টির মধ্যে ৪০৪ আসনে জিতলেও ৫১ শতাংশ ভোট তিনিও পাননি। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি তিনশ’র বেশি আসনে জিতলেও ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে।
পুলিশি তাÐবে সরব বলিউড
জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন বলিউডের নায়ক-নায়িকা ও কলাকুশলীরা।
টুইটবার্তায় তাপসী বলেন, ‘এটি কী শুরু নাকি শেষ- তাই ভাবছি। যাই হোক না কেন, এই ভ‚খÐের নতুন নিয়ম লেখা হচ্ছে। যারা এই নিয়মের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবেন না, তাদের কপালে কী লেখা আছে, সেটিই দেখা যাচ্ছে। এটি হৃদয় চুরমার করা একটি ভিডিও এবং আশা করি সবারই একই অবস্থা।’
বলিউড নির্মাতা অনুরাগ কশ্যপ টুইট করেন, ‘ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেছে... আর চুপ থাকা যায় না। এই সরকার স্পষ্টতই ফ্যাসিবাদী... আর যখন দেখছি যারা আওয়াজ তুললে কাজ হবে, সেই কণ্ঠস্বরগুলো চুপ করে আছে, রাগ হচ্ছে।’
শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ জানানোর গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে জানিয়ে মনোজ বাজপেয়ি টুইটে লেখেন, ‘এমন সময় আসতেই পারে, যখন অন্যায় প্রতিরোধের শক্তি আমাদের নাও থাকতে পারে। কিন্তু এমন সময় কখনই আসবে না, যখন আমরা প্রতিবাদ করতে ব্যর্থ হব। শিক্ষার্থী এবং তাদের প্রতিবাদ করার গণতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষে আছি! প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়নের নিন্দা জানাই।’
জামিয়া মিলিয়ার সাবেক শিক্ষার্থী পরিচালক অলংকৃতা শ্রীবাস্তব টুইট করেন, ‘আমি জামিয়াতে পড়াশোনা করেছি। ওখানেই আমি চলচ্চিত্র নির্মাণের পাঠ নিয়েছি। আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুদের পেয়েছি ওখানেই। একটা সময় যখন আমি নিজেকে নিয়ে সংশয়ে থাকতাম; জীবনের পথে কীভাবে এগোব, সে ভাবনায় জর্জরিত থাকতাম, তখন ওখানেই আশার আলো দেখেছিলাম, অনুপ্রেরণা পেয়েছিলাম। কিন্তু আজ আমার ভেতরটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে ক্যাম্পাসে আক্রান্ত ছাত্রছাত্রীদের জন্য।’
অলংকৃতার মতোই টুইটারে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন পরিচালক-অভিনেত্রী কঙ্কনা সেনশর্মা ও অভিনেত্রী স্বরা ভাস্কর।
সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করলে দেখামাত্রই গুলি : রেলমন্ত্রী
বিক্ষোভকারীরা সরকারি সম্পত্তিতে কোনো ধরনের সহিংসতা চালালে দেখামাত্রই গুলির নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী সুরেশ অঙ্গদি। মুর্শিদাবাদের রেল স্টেশনে আগুন দেয়ার পর মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সতর্কবাতা দিয়ে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আমি জেলা প্রশাসন এবং রেলের কর্তৃপক্ষকে বলেছি, কেউ যদি সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করে, তাদের দেখামাত্র গুলি করতে হবে। একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে আমি এই নির্দেশ দিচ্ছি। দেশজুড়ে নাগরিকত্ব বিল নিয়ে প্রতিবাদের মধ্যেই এ বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন দেশটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
তিনি বলেন, যেখানে পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্বের রাজ্যে রেল ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন, সেখানে এই ধরনের কাজকে বরদাশত করা হবে না। রেলমন্ত্রী বলেন, রেলের পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং পরিচ্ছন্নতার জন্য প্রায় ১৩ লাখ মানুষ দিনরাত কাজ করছেন। অথচ বিরোধীদের মদদে কিছু সমাজবিরোধী দেশে এই ধরনের সমস্যা তৈরি করছে। বল্লবভাই প্যাটেলের মতোই বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের কড়া পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান তিনি।
নাগরিকত্ব আইন প্রত্যাখ্যান পাকিস্তানি সংখ্যালঘুদের
নতুন আইনের অধীন ভারতের নাগরিকত্বের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তানের সংখ্যালঘু হিন্দু, খ্রিষ্টান ও শিখ স¤প্রদায়। পাকিস্তানের হিন্দু কাউন্সিলের পৃষ্ঠপোষক রাজা আসার ম্যাংগøানি বলেন, পাকিস্তানের হিন্দু স¤প্রদায় সর্বসম্মতিক্রমে এই আইন প্রত্যাখ্যান করেছে। এটা সা¤প্রদায়িকভিত্তিতে ভারতকে বিভক্ত করার শামিল। তিনি বলেন, এটা পাকিস্তানের পুরো হিন্দু স¤প্রদায়ের পক্ষ থেকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সর্বসম্মত বার্তা। একজন সত্যিকার হিন্দু কখনোই এই আইন সমর্থন করতে পারেন না। এই আইন ভারতের নিজস্ব সংবিধান লঙ্ঘন করেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। পাকিস্তানি পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ সিনেটের এক খ্রিষ্টান সদস্য বলেন, এই আইন ধর্মীয় স¤প্রদায়গুলোকে পরস্পরের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
আনোয়ার লাল দীন নামের এই সিনেট সদস্য আরও বলেন, এটা মৌলিক মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘনের শামিল। আমরা সরাসরি এই আইন প্রত্যাখ্যান করছি। পাকিস্তানের ক্ষুদ্র শিখ স¤প্রদায়ও এই আইনের নিন্দা জানিয়েছে। বাবা গুরু নানকের নেতা গোপাল সিং বলেন, কেবল পাকিস্তানেরই না, গোটা বিশ্বের শিখ স¤প্রদায় এই আইন প্রত্যাখ্যান করছে।
জালিয়ানওয়ালা বাগ মনে করিয়ে দেয় : উদ্ধব ঠাকরে
জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েরপড়ুয়াদের ওপর হামলার ঘটনার সঙ্গে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাÐের তুলনা করলেন শিবসেনা প্রধান তথা মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে। গতকাল মহারাষ্ট্র বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, ‘দিল্লিতে যেভাবে ক্যাম্পাসে পুলিশ ঢুকেছে এবং পড়–য়াদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে. আমার জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘটনা মনে পড়ে গেল। আমরা শিক্ষার্থীদের ভয় দেখাতে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাÐের মতো ঘটনা তৈরি করছি’, নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ এবং পড়ুয়াদের ওপর রোববার রাতের ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন উদ্ধব ঠাকরে। তিনি বলেন, ‘একটি দেশ বা রাজ্যে, যেখানে যুব সমাজ ক্ষুব্ধ, সেখানে শান্তি আসতে পারে না। যুবারা আমাদের শক্তি। যুবশক্তি একটি বোমা, আমি সরকারকে অনুরোধ করব যেন, সেটিতে আগুন না ধরায়’।



 

Show all comments
  • Md Sharif Uddin ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৫৪ এএম says : 0
    ভারত টুকরো টুকরো হওয়া সময়ের দাবি মাত্র
    Total Reply(0) Reply
  • Raj Ahmed ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
    অপমানজনক বিদায় অপেক্ষা করছে মোদী নামের ধর্মান্ধের জন্য
    Total Reply(0) Reply
  • Mirza Nusrat Linda ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৫৫ এএম says : 0
    মোদীজির উপায় নাই
    Total Reply(0) Reply
  • Aminul Islam ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৫৬ এএম says : 0
    এনআরসি নিপাত যাক
    Total Reply(0) Reply
  • Azharul Islam Akash ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৫৭ এএম says : 0
    হতে পারে এই নাগরিকত্ব বিলের কারনেই ভারতে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার চূড়ান্ত রুপ নিবে। যার ফলশ্রুতিতে ভারতকে চূড়ান্তভাবে জয় করবে মুসলমান।
    Total Reply(0) Reply
  • চৌধুরী হাটহাজারী বাংলাদেশ ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১০:০৭ এএম says : 0
    অবশ্যই ঈমানদারদের জয় হবে। তবে বেশি বেশি দোয়া করতে হবে এবং আল্লাহ পাক এর আদেশ নিষেধ পরিপূর্ণ ভাবে পালন করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Shanto Farabi ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১০:৫৫ এএম says : 0
    আল্লাহ আমার ভাইদের তুমি সহায় হও
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ