বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
রাষ্ট্রীয় নিষ্ঠুরতা এবং প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বিনা অপরাধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তির দাবীতে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই ডে-নাইট ইলেকশানে ভোট কেটে ব্যালট বাক্স ভরে ক্ষমতা জবরদখল করেছে বর্তমান সরকার। অবৈধ সরকারের নিষ্ঠুর প্রতিহিংসার শিকার হয়ে আজ দীর্ঘদিন কারাবন্দী ৩ বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে রাজনৈতিক জীবনে ৫ বারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের সবক’টি বিভাগ থেকে মোট ২৩ টি আসনে নির্বাচিত দেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। মিথ্যা বানোয়াট ঘষামাজা নথির ভিত্তিতে মামলায় তাঁকে সরকার আজ ৬৬৮ দিন বন্দী করে রেখেছে, যা অত্যন্ত অমানবিক এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
সকল মামলায় একের পর এক জামিন পেলেও সর্বোচ্চ আদালতকে নজীরবিহীনভাবে ব্যবহার করে সর্বশেষ ২ টি মামলায় নানান অপকৌশল করে তাঁর জামিন প্রাপ্তি দীর্ঘায়্ত করছে সরকার।
বক্তারা বলেন, খালেদা জিয়ার শারিরীক অবস্থা এখন উদ্বেগের গন্ডি পেরিয়ে দারুন সংকটাপন্ন। তাঁর অসুস্থতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি যে নেত্রী পায়ে হেটে আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন সময়ের পরিক্রমায় তাঁর হাত-পা এখন বেঁকে গেছে। প্রিজন সেলে বন্দী দেশনেত্রী এখন অন্যের সাহায্য ছাড়া উঠে দাঁড়াতে পারছেন না, সোজা হয়ে বসতে পারছেন না, নিজের হাতে খাবার তুলে খেতে পারছেন না। অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে, তিনি পঙ্গু হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। অথচ তাঁর শারিরীক অবস্থা নিয়ে হাসপাতাল কতৃপক্ষ সরকারের হুকুমে অসত্য সংবাদ পরিবেশন করছেন যা এর গভীর চক্রান্তের অংশ।
খালেদা জিয়া একজন নারী এবং বয়োবৃদ্ধ - এসকল বিবেচনায় পৃথিবীর যে কোন সভ্য গণতান্ত্রিক দেশের বিচার ব্যবস্থায় তিনি জামিন পাওয়ার হকদার। তাঁর পরিবারের সদস্যরা বারবার দাবী করছেন যে, জামিন পেলে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে। পরিবারের এই মানবিক আবেদনেও স্বৈরাচার সরকারের কোন সাড়া নেই।
বক্তারা আরো বলেন, মারাত্মক অসুস্থ দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার জামিনের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগ এক নজীরবিহীন আচরণ করেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেশনেত্রীর শারিরীক অবস্থা সম্পর্কিত মেডিকেল রিপোর্ট নির্দিষ্ট সময়ের প্রদানে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে গুরুতর অপরাধ করা সত্বেও আবার তাদেরকে সময় দিয়েছে। অথচ জামিন আবেদনকারী আইনজীবীদের কোন বক্তব্য আমলে নেননি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ। এইধরণের গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর মামলার জামিন শুনানির ঠিক পূর্বের দিন দেশের সর্বোচ্চ নির্বাহী প্রধানমন্ত্রী বলেছেন জেলে খালেদা জিয়া রাজার হালে রয়েছেন, এ এক জঘন্যতম নিষ্ঠুর রসিকতা তো বটেই, অপরদিকে বিচার বিভাগের উপর নির্বাহী বিভাগের সরাসরি প্রভাব বিস্তারের বিপদজনক অপচেষ্টা ।তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীর এহেন হুংকারের পর চিকিৎসকদের এতটা দু:সাহস দেখানোর সুযোগ থাকে না যে, খালেদা প্রকৃতপক্ষে অসুস্থ একথা বলার বা লেখার। উল্টো ন্যায়বিচার বঞ্চিত আইনজীবীদের ন্যায্য প্রতিবাদ সম্পর্কে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। সরকারি ষড়যন্ত্র এবং টালবাহানা করে দেশনেত্রীর জামিন পাবার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অপচেষ্টা থেকে সরকারকে বিরত থাকার আহবান জানিয়ে সভায় বক্তারা আইনি প্রক্রিয়া থেকে বিএনপিকে রাজপথের আন্দোলনে ঠেলে দিলে তার পরিণতি সম্পর্কেও ভেবে দেখতে হবে হলে সরকারকে হুশিয়ার করে দেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতির বক্তৃতায় নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, দেশে চলছে উন্নয়নের নামে লাগামহীন দুর্নীতি, দু:শাসনে বিপর্যস্ত রাষ্ট্র, হাজার হাজার কোটি দুর্নীতিলব্ধ টাকা সরকারী দলের নেতা ব্যবসায়ীরা বিদেশে পাচার করে দিয়েছে, ব্যাংকগুলি নি:স্ব হয়ে গেছে, অর্থনীতি খোবলা হয়ে গেছে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলি সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপে নিষ্ক্রিয় হয়ে জনপ্রত্যাশার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। নির্বিচার দু:শাসনে বাংলাদেশে কেউ আজ নিরাপদ নয়। আর এসব দুষ্কর্ম নির্বিঘেœ সম্পন্ন করা এবং ক্ষমতাকে অবৈধভাবে দীর্ঘায়িত কুটকৌশলের অংশ হিসেবে বেগম খালেদা জিয়াকে সরকারই ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বন্দী করে রেখেছে।
পেঁয়াজ চালসহ প্রায় প্রতেকটি নিত্যপণ্যের বাজার সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধিতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে, অথচ সরকার তার ব্যর্থতা ঢাকতে প্রতিদিন এরমধ্যে বিএনপি’র ষড়যন্ত্রের পুরনো অচল বস্তাপচা গল্প ফাঁদছে। দেশের মানুষের দুর্গতি আর হাহাকারের মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রী বিদেশে ছিলেন, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বিনোদনমূলক এয়ারশো উপভোগ করতে দুবাই ভ্রমণ করেছেন। সরকারের মন্ত্রীদের নানাবিধ বালখিল্য মার্কা কথাবার্তায় এখন আর মানুষের আলাদা করে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখার প্রয়োজন পড়ে না।
এই দু:সহ অবস্থা থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে হলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ব্যতীত আর কোন গত্যন্তর নেই। দেশের স্বার্থে গণতন্ত্রের স্বার্থে খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনকে বেগবান করতে রাজপথেই এর সমাধান খুঁজতে হবে। দেশকে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির অবস্থা থেকে বাঁচাতে হলে অবিলম্বে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিতে হবে বলে সমাবেশ থেকে জোর দাবী জানানো হয়।
রবিবার দলীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু।
সভায় কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মাওলানা আঃ মান্নান। সভায় বক্তৃতা করেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি, শাহারুজ্জামান মোত্তুজা, মীর কায়সেদ আলী, জাফরউল্লাহ খান সাচ্চু, অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান মন্টু, শেখ আঃ রশিদ, এড. ফজলে হালিম লিটন, সিরাজুল হক নান্নু, সাইফুর রহমান মিন্টু, কামরুজ্জামান টুকু, মোল্লা মোশাররফ হোসেন মফিজ, খায়রুল ইসলাম জনি, রেহানা ঈসা, নাজমুল হুদা সাগর, একরামুল হক হেলাল, মোল্লা কবির হোসেন, শরিফুল ইসলাম বাবু প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।