পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি এখনও। তাকে ভবন থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে কি-না, আর সেটা হলে কোন ভবন থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। মৃত্যুর আগে তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন কি-না, এসব বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, রুম্পাকে ভবন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। এ ঘটনায় কে বা কারা জড়িত তা তদন্ত না করে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়।
সূত্র জানায়, দুই বাড়ির মাঝ থেকে লাশ উদ্ধারের পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার ময়নাতদন্ত হয়। চিকিৎসকদের ধারণা, ধর্ষণের পর রুম্পাকে ছাদ থেকে ফেলে দেয়া হয়। রুম্পা স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী। তার বাবা পুলিশ পরিদর্শক রোকন উদ্দিন। তাদের বাড়ী ময়মনসিংহ হলেও থাকতেন মালিবাগের শান্তিবাগে। এদিকে, ময়মনসিংহের বাড়িতে গতকাল শুক্রবার সকালে তার নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে।
এর আগে গত বুধবার ৪ ডিসেম্বর রাত পৌনে ১১টার দিকে সিদ্ধেশ্বরীর ৬৪/৪ নম্বর বাসার নিচে ওই ছাত্রীর লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। যে জায়গায় এ ঘটনা, তার আশপাশে বেশকিছু ছেলে ও মেয়েদের হোস্টেল রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ঘটনার পরপরই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হত্যার আলামত সংগ্রহ করেন।
ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ওপর থেকে পড়েই তরুণীর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হতে তার দেহ থেকে হাইভেজেনাল সপসহ ভিসেরা সংগ্রহ করা হয়েছে। তা পরীক্ষানাগারে পাঠানো হবে। সেই রিপোর্ট এলে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেয়া হবে। তবে প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে।
রমনা থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম জানান, নিহতের বাবার নাম রোকন উদ্দিন। তিনি হবিগঞ্জ জেলায় পুলিশ ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত। ঘটনাস্থলের পাশে তিনটি ভবন আছে। এগুলোর যেকোনো একটা থেকে পড়ে রুম্পা মারা গেছেন। আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে, মামলা তদন্তাধীন। ইনজুরিগুলো পেয়েছি, সেগুলো দেখে মনে হচ্ছে উঁচু কোন জায়গা থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে। তার শরীর থেকে আলামত সংগ্রহ করে ফরেনসিকে পাঠানো হয়েছে।
নিহত রুম্পার চাচা নজরুল ইসলাম বলেন, হত্যার পর রুম্পাকে ছাদ থেকে ফেলে দেয়া হয়, এটা নিশ্চিত। তদন্ত চলছে, দেখা যাক কী হয়। তিনি আরও বলেন, আমার ভাতিজীর সঙ্গে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির একটি ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। তাদের ভেতরে ঝামেলা চলছিল বলে আমরা শুনেছি। তবে এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে ওই ছেলের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, তা আমরা জানি না। এ ব্যাপারে আমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। কর্তৃপক্ষ ওই ছেলেকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
নজরুল ইসলাম আরো বলেন, তার ভাতিজী পাশের একটি বাড়িতে টিউশনি করতে গিয়েছিল। সেখান থেকে সন্ধ্যার দিকে নিজ বাসায় নিচে যায় রুম্পা। এরপর রুম্পা দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়–য়া তার এক চাচাতো ভাইকে ফোন করে বাসার নিচে স্যান্ডেল আনতে বলে। পরে সে স্যান্ডেল নিয়ে এলে পায়ের হিল খুলে স্যান্ডেল পরে রুম্পা। এরপর ওই চাচাতো ভাইয়ের কাছে রুম্পা কানের দুল, মোবাইল, ঘড়ি, হিল জুতা ও টাকাসহ ব্যাগ দিয়ে দেয়। সেগুলো ওপরে নিয়ে যেতে বলে তাকে। একই সঙ্গে মাকে বলতে বলে, তার আসতে দেরি হবে।
এ দিকে রুম্পা হত্যার বিচার দাবিতে সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে যান। সেখানে তারা মানববন্ধন করেন। মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এএনএম আরিফুর রহমান, ইংরেজী বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শেখ নাহিদ নেওয়াজসহ শিক্ষকবৃন্দ অংশ নেন। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা রুম্পা হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত বিচার দাবি করেন।
পুলিশের রমনা জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার শেখ মোহাম্মদ শামীম বলেন, রুম্পাকে সিদ্ধেশ্বরীর সার্কুলার রোডের আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের পেছনের একটি বাড়ির ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হতে পারে। এ ঘটনায় রমনা থানার এসআই আবুল খায়ের বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আমরাও ধারণা করছি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনা কে বা কারা জড়িত, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারের একজন শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে সহপাঠী রিফাতের সঙ্গে রুম্পার ভাল সম্পর্ক রয়েছে। কয়েকদিন ধরে তাদের বন্ধত্বের মধ্যে টানাপোড়ন চলছে। তবে সেটি প্রেমের সম্পর্ক কি-না তা তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি।
স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শেখ নাহিদ নেওয়াজ বলেন, ৬৯ ব্যাচের ওরিয়েন্টশন ক্লাশ তিনি নিয়েছিলেন। রুম্পা একজন শান্ত ও ল²ী মেয়ে ছিল। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্রে বার্ড নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ ছিল না। ঘটনাটি তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এএনএম আরিফুর রহমান বলেন, ঘটনার পর শুক্রবার সকালে পুলিশের একটি টিম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে রুম্পা সম্পর্কে তথ্য জানতে চায়। আমরা যাবতীয় তথ্য দিয়েছি। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।