চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
॥ আট ॥
এটি তাদের জন্য দুনিয়ায় লাঞ্জনা এবং তাদের জন্য আখিরাতে রয়েছে মহাশাস্তি।’’ ডাকাতি প্রতিরোধে মুমিনদের এগিয়ে আসতে হবে। কোথাও ডাকাতির ঘটনা ঘটলে মুমিন নির্বিচার থাকতে পারে না। কেননা এটা ঈমানের পরিপন্থী আচরণ। এ প্রসঙ্গে নবী স. বলেছেন: ‘‘যখন কোনো লোক কোন মূল্যবান জিনিস ছিনিয়ে নেয় আর লোকেরা তা চেয়ে চেয়ে দেখতে থাকে তখন সে আর মুমিন থাকে না।’’ অতএব ডাকাতি সুস্থ সমাজব্যবস্থার পক্ষে খবুই ক্ষতিকর ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। এ কারণে ইসলামী আইনে ডাকাতি জঘন্য অপরাধ। ইসলামী সমাজে ডাকাতির কোন সুযোগ থাকতে পারে না। ডাকাতির পথও কারণ সর্বতোভাবে বন্ধ করা একান্তই আবশ্যক।
ইসলাম বিধান মতে ডাকাতির শাস্তি অপরাধভেদে কমবেশী হতে পারে। শাস্তির বিধান প্রয়োগ করার ব্যাপারে ইসলামী সরকারের স্বাধীনতা রয়েছে। অর্থাৎ বিচারক ইচ্ছা করলে তাকে হত্যা করতে পারবে, শূলে চড়াতে পারবে এবং বহিষ্কার করতে পারবে। এই মতটি ইবনে আব্বাস, হাসান, সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব ও মুজাহিদের। যে ডাকাত হত্যা ও সম্পদ হরণ এই দুই অপরাধই করে তাকে হত্যা করা হবে অতঃপর শূলে চড়ানো হবে। যে ডাকাত সম্পদ কেড়ে নেবে কিন্তু কাউকে হত্যা করবে না, তাকে শুধু হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে কাটা হবে। যে ডাকাত শুধু রক্তপাত করবে এবং সম্পদ হরণ করবে না তাকে হত্যা করা হবে। আর যে ব্যক্তি হত্যাও করবে না, সম্পদও হরণ করবে না, কিন্তু অস্ত্র নিয়ে বা অন্য কোন উপায়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করবে, তাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হবে। এটি শাফেঈ মাযহাবের মত।ইমাম শাফেঈ আরো বলেন, প্রত্যেককে তার অপরাধের মাত্রা অনুসারে শাস্তি দেয়া হবে। হত্যা ও শূল দুটোই যার প্রাপ্য, তাকে প্রথমে হত্যা করা হবে অথবা ৩ বার শুলে চড়িয়ে নামিয়ে রাখা হবে যাতে তার শাস্তি কে খুবই ঘৃণ্য ভাবে প্রকাশ করা যায়। আর যার কেবল হত্যার শাস্তি প্রাপ্য তাকে হত্যা করে লাশ আপনজনদের হাতে অর্পণ করতে হবে।
আল-কুরআন এর ঘোষণা ‘‘অথবা তাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে’’-এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ইবনে আব্বাস রা. বলেন: যাকে ধরা সম্ভব হবে না তার সম্পর্কে সরকার ঘোষণা দিয়ে দেবেন যে, যে ব্যক্তি তাকে ধরতে পারবে, সে যেন তাকে হত্যা করে। আর যে ধরা পড়বে, তাকে গ্রেফতার করে জেলে বন্দি করতে হবে। কেননা এতে করে অপরাধ বন্ধ হবে এবং এটাই তার বহিষ্কার। শুধু হত্যার ভয় দেখানো এবং সন্ত্রাস ছড়ানোই কবীরা গুনাহ। এর ওপর কেউ যদি জিনিসপত্র ছিনতাইও করে এবং খুন-জখমও করে, তবে সে তো এক সাথে অনেকগুলো কবীরা গুনাহ সংঘটিত করে। এ ছাড়া এ ধরণের অপরাধিরা সাধারণত মদখোরী, ব্যভিচার, সমকাম, নামায তরক ইত্যাদি কবীরা গুনাহেও লিপ্ত থাকে।
বাংলাদেশ দ-বিধির ভাষ্যে বলা হয়েছে, যদি কোন লোক উপরে বর্ণিত ডাকাতির সংজ্ঞায় বর্ণিত কর্মকা-ে জড়িত থাকে তাহলে বাংলাদেশ দ-বিধির ৩৯২ ধারা মোতাবেক ১০ বছর সশ্রম কারাদ-ে অথবা অর্থদন্ডে অথবা উভয় দেন্ড দন্ডিত হইতে পারে। আর এ ডাকাতি যদি প্রকাশ্য রাজপথে সংঘটিত হয়ে থাকে তাহলে তার শাস্তির মেয়াদ ১৪ বছর সশ্রম কারাদন্ডে অথবা অর্থদন্ডে অথবা উভয় দন্ডে দ-িত হতে পারে।
মানব পাচার ও অপহনের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায় করা ইসলাম ও প্রচলিত আইনে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অপহরণ একটি জঘন্য অপরাধ। রসূল স. দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেন, ‘‘তোমাদের এ শহরে আজকের দিন ও এ মাসের মতই তোমাদের পরস্পরের জীবন, সম্পদ ও সম্মান সম্মানীয়। প্রত্যেক মানুষকে সম্মান ও মর্যাদার সাথে চলতে দিতে হবে। এটা তার অধিকার। অপহরণের মাধ্যমে ব্যক্তির স্বাধীনভাবে চলার অধিকারকে হরণ করা হয়। তাছাড়া অপহরণকারী অপহৃত ব্যক্তিকে সাধারণত যেহসব কাজে নিয়োজিত করে তাও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনৈতিক ও অমানবিক। তাই এ অপরাধের সাথে জড়িত প্রায় সব দিক অবৈধ। আর অপহরণের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায় করা একটি প্রতারণা। ইসলামী আইনে সকল প্রকার প্রতারণা হারাম। প্রতারণা ও ধোঁকাবাজীকে অমার্জনীয় অপরাধ হিসেবে আল্লাহ্ বলেন: আর এভাবেই আমি প্রত্যেক জনপদে এর শীর্ষস্থানীয় অপরাধী লোকদেরকে এমনই করেছি যেন তারা নিজেদের ধোঁকা, প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে। এ প্রসঙ্গে রসূল স. বলেছেন: ‘‘যে ব্যক্তি প্রতারণা করে, সে আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয়।’’ অপহরণ শরীয়তের দৃষ্টিতে একটি জঘন্য অপরাধ। তাই ইসলামে অপহরণের শাস্তি অত্যন্ত কঠিন। আর অপহরণের ক্ষেত্রে সাধারণত চুরি ও প্রতারণাই প্রধান কৌশল হিসেবে অনুসৃত হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে যে কৌশলই অবলম্বন করা হোক না কেন, সার্বিকভাবে ইসলাম তা অবৈধ বলে সাব্যস্ত করেছে। কোন মানুষকে বিক্রি করা ইসলামে নিষিদ্ধ। এমন কি নিজের সন্তানকেও বিক্রি করার কারো অধিকার নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।