Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলতে গিয়ে ফেরেনি নুপুর!

চট্টগ্রামে আয়াতের ছয় টুকরো লাশ উদ্ধারের পর নিখোঁজ আরো এক শিশু

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০২ এএম

বাসা থেকে খেলতে বের হয়ে আর ফেরেনি শিশু ফারজানা আক্তার নুপুর। হন্যে হয়ে সম্ভাব্য সব এলাকায় খুঁজে না পেয়ে তার বাবা থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছেন। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পাঁচ দিনেও তার সন্ধান মেলেনি। নগর পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন- তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই তদন্ত করে যাচ্ছেন।
নগরীর ইপিজেড থানার বন্দরটিলা এলাকায় পাঁচ বছরের শিশু আলিনা ইসলাম আয়াতকে তুলে নিয়ে খুনের পর লাশ ছয় টুকরো করে ভাসিয়ে দেওয়া হয় সাগর ও খালে। পিবিআইয়ের তল্লাশি অভিযানে লাশের খন্ডিত কিছু অংশ উদ্ধারের এক মাস না যেতেই গত ১৭ ডিসেম্বর শনিবার নিখোঁজ হলো ১০ বছরের শিশু নুপুর। তার ভাগ্যে কী ঘটেছে তা নিয়ে শঙ্কিত তার পরিবার। থামছে না স্বজনদের আহাজারি। পুলিশও নিখোঁজ রহস্যের কোন ক‚ল-কিনারা করতে পারেনি এখনো।
নুপুরের বাবা নুরুল আমিন পেশায় ব্যক্তিগত গাড়ি চালক। তাদের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর তিতা হাজেরা গ্রামে। বাসা নগরীর খুলশি থানার ৪ নম্বর ওয়ারলেস কলোনীতে। স্বামীর সাথে বনাবনি না হওয়ায় তিন বছর আগে নুপুরের মা পারভীন আক্তার সংসার ছেড়ে চলে যান। নুপুর ও তার ছোট ভাইকে নিয়ে সঙ্কটে পড়েন তাদের বাবা নুরুল আমিন। মেয়েকে বায়েজিদ থানা এলাকার পাহাড়িকা আবাসিক এলাকায় ভাগনী মিতু ইসলামের কাছে পাঠিয়ে দেন। আর শিশুপুত্রকে পাঠান মামার বাড়িতে। মিতু ইসলাম একটি বিউটি পার্লারে চাকরি করেন। পাহাড়িকা আবাসিক এলাকার ৫ নম্বর সড়কে এস আর ম্যানশনে ফুফাতো বোন মিতুর তৃতীয় তলার বাসায় থাকতেন নুপুর। তার বাবা ওয়ারলেস কলোনীর বাসাতে একা থাকেন। নুপুর একটি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। গত তিন মাস তার পড়ালেখা বন্ধ।
নুপুরের বাবা নুরুল আমিন জানান, শনিবার বিকেল ৩টায় পাহাড়িকা আবাসিক এলাকার বাসা থেকে প্রতিদিনের মতো খেলতে বের হয় নুপুর। তবে রাত ৯টা পর্যন্ত বাসায় না আসায় তারা এলাকায় ব্যাপক খোঁজাখুঁজি করেন। তার সন্ধান চেয়ে এলাকায় মাইকিংও করা হয়। এরপর তিনি বায়েজিদ বোস্তামি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। নুরুল আমিন বলেন, কন্যাকে খুঁজতে গিয়ে তিনি ওই আবাসিক এলাকার বেশ কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ দেখেন।
তাতে দেখা যায়-খয়েরি রঙের প্যান্ট আর কালো গেঞ্জি পরা নুপুর অনেকটা নাচতে নাচতেই বাসা থেকে রেব হচ্ছে। সেখানে তাকে খুব হাশিখুুশি দেখা যায়। কিছুদূর গিয়ে খেলার সাথীদের সাথে কিছুক্ষণ খেলাধূলাও করে। এরপর তাকে আর আশপাশে কোথাও দেখা যায়নি। পরে তিনি শুনতে পান ওই দিন রাত ৯টায় ষোলশহর এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে নুপুরকে দেখা গেছে। এরপর তিনি সেই রেস্টুরেন্টে যান। রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার জানিয়েছেন- শিশুটি রেস্টুরেন্টের সামনে ঘোরাফেরা করছিল। তাকে এ অবস্থায় দেখে এক লোক ওই শিশুটিকে বিরিয়ানি খেতে বলে। তখন সে তার কাছে টাকা নেই জানায়। পরে ওই লোক তাকে রেস্টুরেন্টে ডেকে নিয়ে বিরিয়ানি খাওয়ায়। তবে খাওয়া শেষে নুপুর কোথায় গেছে তা জানেন না বলে জানান ওই ম্যানেজার।
নুরুল আমিন বলেন, ওই রেস্টুরেন্টের উল্টেদিকে একটি হার্ডওয়ারের দোকানের সামনে সিসিটিভি আছে। তবে সময়ের অভাবে তিনি ফুটেজ দেখতে পারেননি। নুপুর তার মায়ের কাছে ফিরে গেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল আমিন বলেন, তার সাথে গত তিন বছর মেয়ে কিংবা আমার কোন যোগাযোগ নেই। তার মোবাইলও নেই। এরপরও আমি খবর নিয়েছি, তবে তার কাছেও নুপুর যায়নি।
বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস জাহান বলেন, শিশুটি নিখোঁজ হওয়ার পর থানায় সাধারণ ডায়েরি নেওয়া হয়েছে। এরপর সেটির তদন্ত চলছে। তদন্ত কর্মকর্তাকে নগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করি দ্রæত রহস্য উদঘাটন করা যাবে। জিডির তদন্ত করছেন থানার এসআই সৌরভ জয়।
তিনি বলেন, শিশু নুপুর নিখোঁজ হওয়ার সাধারণ ডায়েরি হত্যা মামলার মতোই গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে আশপাশের সবকটি সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব ফুটেজ মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। আবার কিছু কিছু এলাকায় সিসি ক্যামেরা নেই, কোথাও ক্যামেরা থাকলেও তা বিকল। শিশু হওয়ায় তার কাছে কোন মোবাইল ফোন ছিল না। ফলে ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তার অবস্থান নিশ্চিত করতে না পারায় তদন্তে বেগ পেতে হচ্ছে। নুপুরের মা তাদের ছেড়ে গেছে। বাবা নুরুল আমিন তার পেশায় ব্যস্ত। সবমিলিয়ে তারাও তেমন সময় দিতে পারছে না। তার বাবা ঘটনার জন্য কাউকে সন্দেহও করছে না। ষোলশহর এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে ওইদিন রাতে বিরিয়ানি খাওয়ার তথ্য নুপুরের বাবা পুলিশকে জানাননি বলেও জানান সৌরভ জয়। তিনি বলেন, আমরা আশাবাদি খুব শিগগির রহস্য উদঘাটন করা যাবে। উল্লেখ্য, নগরীতে চলতি বছর সাত জন শিশু অপহরণের পর ধর্ষণ ও খুনের শিকার হয়েছে।

 



 

Show all comments
  • Nazmul Hasan ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:০৩ এএম says : 0
    ডিজিটাল বাংলাদেশ। আবার নাকি স্মার্ট হবে। ঘুম আর খু নের স্মর্ট জানি কেমন
    Total Reply(0) Reply
  • Ruk Khan ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:০৩ এএম says : 0
    এগুলো কি হচ্ছে দেশে
    Total Reply(0) Reply
  • Riyadh Karim ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:০৩ এএম says : 0
    দেশকে শেষ করে দিয়ে জাতির মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খাচ্ছে আবার জাতির সাথে উপহাস করছে;
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Hakim ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:০৩ এএম says : 0
    ইয়া আল্লাহ একমাত্র তোমিই হেফাজতের মালিক।তোমি তাকে হেফাজত করে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দাও।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আয়াত

২৩ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ