চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
॥ দুই ॥
তার বাদীকে জিজ্ঞাসা করা হল, তুমি তোমার মুনীবকে কেমন দেখেছ? বাদী সহজ-সরল ছিল, সে বলল, মুনীব তো অনেক নেককার, ভালো মানুষ, তবে মনে হয় তিনি বড় কোনো গুনাহ করেছেন, তাই সারা রাত শুধু কাঁদেন আর নামায পড়েন। তিনি সর্বদা রোযা রাখতেন। প্রতি রাতে পনের পারা কুরআন তিলাওয়াত করতেন।
শরীয়তের এমন অগাধ জ্ঞান ছিল ও শরীয়তের এমন পাবন্দ ছিলেন যে, আছিম বলেন, আমরা একবার তার নিকট যাই। তিনি তখন বড় ওড়না দিয়ে মুখম-লসহ নিজেকে ঢেকে নেন। তখন তিনি বয়োবৃদ্ধা, আমরা বললাম কুরআনে তো আছে- যেসব বয়োবৃদ্ধা নারী, যাদের বিবাহের বয়সই শেষ, তারা যদি সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তাদের অতিরিক্ত বস্ত্র খুলে রাখে তাতে কোনো দোষ নেই। -সূরা নূর (২৪) : ৬০। তিনি জবাবে বললেন, আয়াতের পরের অংশে কী আছে পড়, আমরা বললাম- (তবে এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্য উত্তম।) বলে উঠলেন, এজন্যই এ বড় ওড়না। হিশাম বলেন, তিনি আমাদের বলতেন, হে যুবকরা! আমল যা করার যৌবনেই কর। কেননা আমার নিকট যৌবনের আমলই আমল এবং যৌবনে যত করা যায় পরে ততটুকু হয় না।
মোটকথা, ইলম, ইবাদত, আখলাকসহ সব গুণে তিনি ছিলেন অনন্য। এসব গুণাবলীতে তিনি অনেক পুরুষকে ছাড়িয়ে যান। হাসান বসরী তো সবার নিকট প্রসিদ্ধ, তেমনি হাফসার ভাই ইবনে সীরীনও তাবেয়ীদের শীর্ষ ব্যক্তিত্ব। কেউ কেউ বলেন, হযরত হাফসা এদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। ইসলামী ইতিহাসে বিচারক ইয়াস ইবনে মুয়াবিয়া বিরাট এক ব্যক্তিত্ব। বিচারকার্যে তার দক্ষতা ও তার বুদ্ধির প্রখরতা প্রবাদ হয়ে রয়েছে। বলা হয়, পূর্ণ বুদ্ধিমান ব্যক্তি প্রতি শতাব্দীতে একজন করে জন্ম নেয়। ইয়াস তাদের একজন। এ ইয়াস ছিলেন বসরার বিচারক। তিনি বলেন, আমি যাদেরকে দেখেছি তাদের সবার থেকে হাফসাকে শ্রেষ্ঠ দেখেছি। তখন তাকে প্রশ্ন করা হল, হাসান বসরী, ইবনে সীরীন থেকেও? তিনি বললেন, হাঁ, তাদের থেকেও। আবু দাউদ বলেন, নারী তাবেয়ীদের মধ্যে সেরা হলেন হাফসা। তারপর আমরা, তারপর (ছোট) উম্মুদ দারদা। প্রসিদ্ধ ইতিহাসবিদ ইমাম সফদী ও ইমাম যাহাবী তার জীবনী এভাবে সমাপ্ত করেন- তার সময়কার উপমাহীন এক মহান নারী। ফকীহা- দ্বীনী ইলমে প্রাজ্ঞ। অনেক বড় মর্যাদার অধিকারী মহীয়সী নারী।
হযরত হাফসার পিতা হলেন সীরীন। কূফাতে তাদের বাড়ী ছিল। তিনি অমুসলিম ছিলেন। হযরত আবু বকর রা.-এর খেলাফতকালে খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ কূফা জয় করেন। তখন সীরীন যুদ্ধবন্দী হন। বন্দীদের মদীনায় নিয়ে আসা হয়। বণ্টনে তিনি নবীজীর খাদেম হযরত আনাস রা.-এর ভাগে পড়েন। হযরত আনাস রা. তাকে কিছু মুক্তিপণের বিনিময়ে মুক্ত করে দেন। এরপর মুসলমান হন। তিনি পাতিল তৈরি করতেন আর এর ব্যবসা করতেন। ব্যবসা ভালো হয়। বিবাহের সময় হলে হযরত আবু বকর রা.-এর বাদী সাফিয়্যাকে বিবাহ করেন এবং বড় ওলীমা করেন। অনেক সাহাবী তাতে শরীক হন এবং দুআ করেন। আল্লাহর মহিমা, এ গোলাম সীরীনের পরবর্তী যে কয়জন সন্তানই হয় সবাই ইলম, আমল, প্রজ্ঞা, দুনিয়াবিমুখতা ইত্যাদিতে শীর্ষে পৌঁছেন।
হাফসা বিনতে সীরীনের আলোচনা তো হল। মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন (ইবনে সীরীন)-এর প্রসিদ্ধি জগৎজোড়া। কুরআন-হাদীসের ইলম, ইবাদত ও পরহেযগারী তো আছেই, স্বপ্নের ব্যাখ্যা প্রদানের ক্ষেত্রে তার পরে তার মু কোনো ব্যক্তি জন্ম নেয়নি। তাদের আরেক ভাই হলেন ইয়াহইয়া ইবনে সীরীন। তিনি মহামারীতে ভাই-বোনদের মধ্যে সর্বপ্রথম মারা যান। তিনি এণ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন যে, কারো কারো মতে, তিনি হাফসা ও ইবনে সীরীন থেকেও শ্রেষ্ঠ। তাদের আরেক ভাই হলেন আনাস ইবনে সীরীন। তিনিও অনেক বড় মুহাদ্দিস। হাদীসের কিতাবে তার বর্ণনা পর্যাপ্ত। তাদের এক বোনের নাম কারীমা। তিনি বোন হাফসার মত এত ইবাদত করতেন যে, বোনের মত পনের বছর তার নামাযের ঘর থেকে বিনা প্রয়োজনে বের হননি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।