পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ভারত থেকে বাংলাদেশে লোকানুপ্রবেশ অব্যাহত আছে। গত শনিবারও ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় ২১ জনকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। (বিজিবি)। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, কর্নাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরু থেকে আটক হওয়া ৫৭ জনকে পশ্চিমবঙ্গে পাঠানো হয়েছে। এখন তাদের বাংলাদেশে পুশইন করার চেষ্টা চলছে। পশ্চিমবঙ্গের একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাজ্য গোয়েন্দা বিভাগ, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং বিএসএফ ঠিক করছে কোন সীমান্ত দিয়ে তাদের পার করা হবে। ওদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলেছে, বনগাঁ সীমান্ত দিয়েই তাদের পাঠানো হবে। হঠাৎ করেই মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ বেড়ে গেছে। গত ১০ দিনে বিজিবির হাতে অন্তত ২০৩ জন অনুপ্রবেশকারী আটক হয়েছে। ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা উল্লেখ করেছে, গত ক’দিনে বেঙ্গালরুতে আটক ৮২জনকে পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে আরো জানা গেছে, ভারতের নানা স্থান থেকে ‘বাংলাদেশী’ বলে প্রধানত বাংলাভাষী মুসলমানদের আটক করে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে জড়ো করা হচ্ছে, যাদের সময় ও সুযোগ মতো বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হবে। নি:সন্দেহে এটা ভারতের একটা ভয়ংকর পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপ একদিকে বাংলাদেশের দুর্নামের কারণ অন্যদিকে তা হতে পারে সীমান্তে অস্বস্তি ও উত্তেজনার উপলক্ষ। দুর্ভাগ্যজনক হলেও বলতে হচ্ছে, ভারতের এত বড় একটা পদক্ষেপের বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণ তেমন কিছু জানেনা। সরকার কতটুকু জানে, তাও বলার উপায় নেই। সীমান্ত এলাকায় বিশেষত মহেশপুরে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। এতে সরকারের কোনো বিচলন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো উচ্চবাচ্য নেই। কেন তার এই নিরবতা, সেটা জনমনে বড় প্রশ্ন।
বাংলাদেশী অনুপ্রবেশের অভিযোগ ভারতের মোটেই নতুন নয়। এটা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অতীতে এই অভিযোগ বার বার তোলা হয়েছে এবং বিভিন্ন সময় পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে পুশইনের অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। এটা যে, ভারতের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অতি সহজ-সাধারণ একটি চাল, তাতে সন্দেহ নেই। অতীতে যাদের বাংলাদেশী বলে পুশইন করা হয়েছে, বাংলাদেশ তাদের তাৎক্ষণাৎ পুশব্যাক করেছে। সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। পুশইনের সকল অপচেষ্টা থামিয়ে দিয়েছে। বাস্তবে প্রমাণিত হয়েছে, ভারতের অভিযোগ কিছুমাত্র সত্য নয়। পুশইনকৃত এবং একই লক্ষ্যে সীমান্তে জড়ো করা লোকেরা একবাক্যে বলেছেন, তারা ভারতের নাগরিক, বাংলাদেশের নয়। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মানবাধিকার সংগঠন এই পুশইন পুশইন খেলাকে তিরস্কার করেছে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছে। এবার অনেকই জানেন, আসামে অনুপ্রবেশকারী সনাক্ত করতে নাগরিকত্বপঞ্জি করা হয়েছে। এর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, যাতে ১৯ লাখ লোকের কোনো স্থান হয়নি। বাংলাভাষী মুসলমানদের বাংলাদেশী বলে তাড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্য এই নাগরিকত্বপঞ্জি করা হলেও সেটা বুমেরাং হয়ে গেছে ক্ষমতাসীন বিজেপির কাছে। দেখা গেছে, ওই ১৯ লাখের মধ্যে ১৪ লাখই হিন্দু এবং বাকীটা মুসলমান। এখন ওই নাগরিকত্বপঞ্জি বিজেপির তরফেই বাতিলের দাবি তোলা হয়েছে। অবশ্য বিজেপি প্রধান ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গোটা ভারতে নাগরিকত্বপঞ্জি করার ঘোষণা দিয়েছেন। বস্তুুত, সরকারী উস্কানি, প্ররোচনা ও উদ্যোগের ফলেই ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অনুপ্রবেশকারী আটকের অভিযান চলছে, যার অনিবার্য প্রতিক্রিয়া আমরা সীমান্তে লক্ষ্য করছি। পর্যবেক্ষকদের ধারণা, আগামীতে ভারত থেকে অনুপ্রবেশের ঘটনা ও অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা আরো বেড়ে যেতে পারে। তাই পরিস্থিতির অধিক অবনতি ঘটার আগেই পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে বিষয়টি নিয়ে যথাযথ পর্যায়ে তৎপর হতে হবে। সরকারকেও ভারতের শীর্ষ রাজনৈতিক পর্যায়ে কথাবার্তা বলতে হবে। আসামে নাগরিকত্বপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর বাংলাদেশে নানা মহল থেকে অনুপ্রবেশের আশংকা ব্যক্ত করা হয়। এর প্রেক্ষাপটে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী এইমর্মে আশ্বস্ত করেন যে, এটা সম্পূর্ণভাবে ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এর সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই। ফলে, তার উদ্বেগের কিছু নেই। তাদের এই অভয়বাণী যে কথার কথা ছিল, এখন সেটা স্পষ্টতই প্রতিভাত হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক’দিন আগে কলকাতায় গিয়েছিলেন। তার অবস্থিতির সময়ও সেখান থেকে বাংলাদেশে পুশইন করা হয়েছে। এটা যে সাধারণ সৌজন্যের খেলাপ, সেটা বলাই বাহুল্য।
আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বাংলাদেশী কোনো নাগরিক ভারতে বসবাস করেনা। কাজেই, তাদের গ্রহণ করার কোনো প্রশ্ন ওঠে না। ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের বিদায়ী হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়োজ্জেম আলী এ প্রসঙ্গে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা এখানে উল্লেখ করা যায়। দিল্লীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ ভারতে যাওয়ার বদলে প্রয়োজনে ভূমধ্যসাগর সাঁতরে পাড়ি দিয়ে ইটালীতে যাবে। তিনি যথার্থই বলেছেন। বাংলাদেশীদের জন্য ভারত কিছুমাত্র আকর্ষণের কারণ নয়। বাংলাদেশের অর্থনীতি, জীবনযাত্রা, কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং নিরাপত্তা ভারতের তুলনায় অনেক বেশী। যে দেশে প্রতি ৪৬ মিনিটে একজন কৃষক আত্মহত্যা করে, একজন পিএইচডি ডিগ্রীধারী পিয়নের চাকরির জন্য দরখাস্ত করে, সে দেশে কী কারণে বাংলাদেশীরা অনুপ্রবেশ করবে? অনুপ্রবেশের এই তথাকথিত দাবী সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। এখানে ভারতের মানবাধিকারকর্মী রঞ্জিত সূরের একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করতে চাই। তিনি বলেছেন, ‘এটি একটি ভয়াবহ ঘটনা। কর্নাটক সরকার দেশের আইন-সংবিধান সব ধ্বংস করছে। কাউকে এভাবে ‘পুশব্যাক’ করা যায় নাকি? কোনো মামলা নেই তাদের বিরুদ্ধে। পুলিশ কী করে নিশ্চিত হলো যে, তারা বাংলাদেশী? তারা তো পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীও হতে পারে।’ পরিশেষে আমরা বলবো, যে কোনো মূল্যে পুশইন রুখতে হবে। সরকার ও দেশবাসীকে সতর্ক ও সোচ্চার হতে হবে। কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক পর্যায়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা যেমন চালাতে হবে তেমনি সীমান্তে এমন কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে, যাতে একজনও দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে না পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।