পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, অবিভক্ত ঢাকার সর্বশেষ সফল মেয়র বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক মন্ত্রী সাদেক হোসেন খোকা ৬৭ বছর বয়েসে গত সোমবার বাংলাদেশ সময় ১.৫০ মিনিটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। তিনি ২০১৪ সাল থেকে ক্যানসারে ভুগছিলেন। ঢাকা মহানগরীতে বিএনপি’র রাজনৈতিক নেতৃত্বে গত সাড়ে তিন দশক ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন সাদেক হোসেন খোকা। রাজনীতিতে আত্মনিবেদিত এই নেতা ঢাকা শহরের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নিয়ে এক শক্তিশালী বলয় গড়ে তুলেছিলেন। নিজ দলের দুর্দিনেও তিনি ব্যক্তিগত ক্যারিশমায় নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার গৌরব অর্জন করেন এবং অধিকার আদায়ের রাজনৈতিক আন্দোলনে তিনি বার বার রাজপথে রক্ত ঝরিয়েছেন এবং কারা নির্যাতন ভোগ করেছেন। বার বার জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হওয়া, বিএনপি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন এবং পর পর দুই মেয়াদে অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে তিনি জনপ্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন সময়ে নিজের দক্ষতা, যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁর ইন্তেকালের মধ্য দিয়ে শুধু বিএনপিই নয় দেশের রাজনৈতিক বলয়ে একজন বিচক্ষণ রাজনীতিবিদের চিরবিদায় ঘটল।
সাদেক হোসেন খোকার পৈত্রিক নিবাস মুন্সিগঞ্জের সৈয়দপুরে। তাঁর জন্ম ১৯৫২ সালের ১২ মে তারিখে ঢাকার গোপীবাগে। শৈশব কৈশোর থেকে রাজনৈতিক জীবনের সব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এবং শেষ সময় পর্যন্ত এই গোপীবাগেই কেটেছে তাঁর। গত পাঁচ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসিত ও ক্যানসারের চিকিৎসাধীন থাকার জীবনের শেষ সময়ে এসে তিনি ঢাকায় ফিরতে চেয়েছিলেন। তবে পাসপোর্টের মেয়াদ না থাকাসহ কিছু আইনগত জটিলতার কারণে তার সে শেষ ইচ্ছা পূরণ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালেই সাদেক হোসেন খোকার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি দুর্নীতি ও রাজনৈতিক মামলা হয়েছে। কয়েকটি মামলায়র তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে সাজার রায়ও হয়েছিল। সাদেক হোসেন খোকার মৃত্যুর পর দেওয়া এক বক্তৃতায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, সরকারি নির্যাতনেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সাদেক হোসেন খোকা। তবে নিউ ইয়র্কে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থার শেষ সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাদেক হোসেন খোকার খোঁজ খবর নিয়েছিলেন এবং আইনগত বাধা থাকলেও তাঁকে নির্বিঘেœ দেশে আসার ব্যবস্থা করার নির্দেশও সংশ্লিষ্টদের দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। সাদেক হোসেন খোকার মৃত্যুর পর বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং আওয়ামীলীগ নেতাদের পক্ষ থেকেও শোক প্রকাশ করা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীকাল বৃহষ্পতিবার মরহুম নেতার মরদেহ ঢাকায় এসে পৌঁছাবে বলে জানা গেছে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সাদেক হোসেন খোকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সে সময় দেশের প্রয়োজনে বন্ধুদের সাথে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অসম সাহসিকতা ও অসামান্য গৌরবময় ভূমিকা পালন করেন। একইভাবে রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথের লড়াকু সৈনিক হিসেবে তিনি বার বার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধার সম্মুখীন হয়ে মার খেয়েও পিছু হটে যাননি। জীবনের শেষ লগ্নে দেশে ফেরার প্রবল আকুতি ছিল তাঁর। অবশেষে তার প্রাণহীন দেহ দেশে ফিরছে। সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক নির্দেশনা ও সহযোগিতার কারণেই দ্রুততর সময়ে তার মরদেহ দেশে আনা সম্ভব হচ্ছে। কিংবদন্তি গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা, সফল ক্রীড়া সংগঠক, সফল রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী এবং অবিভক্ত ঢাকার শেষ সফল মেয়র হিসেবে সাদেক হোসেন খোকা মানুষের মাঝে স্মরনীয় হয়ে থাকবেন। ঢাকার মেয়র হিসেবে দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে দায়িত্ব পালনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন তিনি। এ কারণেই চারদলীয় জোট সরকারের আমলে মেয়র নির্বাচিত হয়েও এক-এগারোর পট পরিবর্তনের সময় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং মহাজোট সরকারের কয়েক বছরসহ একটানা ১০ বছর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে নিজের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণে সক্ষম হন। তাঁর মৃত্যুতে বিএনপি ও জাতীয় রাজনীতিতে যে শূন্যতা দেখা দিয়েছে তা সহজে পূরণ হবার নয়। সাদেক হোসেন খোকার মতো মুক্তিযোদ্ধা, সংগঠক ও রাজনীতিবিদ অনেকের অনুপ্রেরণার উৎস। তিনি স্ত্রী এক কন্যা ও দুই পুত্রের পাশাপাশি অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। আমরা তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা এবং মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।