Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুসলিম উম্মাহর মুক্তি কোন পথে

মাওলানা আহমদ মুমশাদ আলী নদভী | প্রকাশের সময় : ১ নভেম্বর, ২০১৯, ১:৫২ এএম

॥ এক ॥

পৃথিবীর যেখানেই মুসলমানরা বসবাস করছে সেখানে তারা নিজস্ব স্বকীয়তা, নিরাপত্তা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার ক্ষেত্রে প্রহশনের শিকার। মুসলমানদের মধ্যে বৃহত্তর একটি অংশ এর জন্য আমাদের রাজনৈতিক ক্ষমতাহীনতাকে দায়ী করেন। তারা মনে করেন, যদি মুসলমানদের হাতে ক্ষমতা ও নেতৃত্ব থাকতো তা হলে জাতি হিসেবে আমাদের এই অধপতন হতো না। আমরা এত সমস্যায় জর্জরিত হতাম না। তাদের দৃষ্টিতে, ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে আমাদের শক্তিশালী অবস্থানই এ সমস্যা নিরসনের পথ খুলতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা কি আসলে এমনই? রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাই কি সব সমস্যা সমাধানের মূলমন্ত্র? নাকি ভিন্ন কোনো উপায়ও আছে?
আমাদের চিন্তা ও চেতনায়, ভাব ও ভাবনায় সৃজনশীল, মননশীল এবং ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য হিন্দুস্তান, স্পেন, তুরস্ক ও মিশরের ইতিহাসে অনেক উপাদান আছে। যদিও এটা স্বতন্ত্র চিন্তা ও গবেষণার বিষয় যে, ইসলামী সমাজ-ব্যবস্থা প্রবর্তনের পথ ও পন্থা কী হবে, কিন্তু সেই ব্যবস্থা আমাদের হাতে নেই বলে আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকব, ভিন্ন কোনো উপায় খুঁজব না; তা কী করে হয়! আমরা যদি বর্তমানে বিভিন্ন উন্নত দেশ ও জাতির অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করি কিংবা একটু পিছনে গিয়ে মুসলিম ইতিহাসের গৌরবময় অধ্যায় দেখি, সেখানে আমরা আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য উত্তম পথ ও পাথেয় খুঁজে পাব। এ কাজটা আরো আগে করতে পারলে অতীত নিয়ে আফসোস করে আজ আমাদেরকে এভাবে কপাল ঠুকতে হতো না। ‘আমার বাবা বাদশাহ ছিলেন’ এ জাতীয় ডায়ালগ মেরে মিথ্যা শান্ত¦না খোঁজার অপপ্রয়াস চালাতে হতো না। ব্যর্থতার ঘøানি নিয়ে পদে পদে আমরা এভাবে বঞ্ছিত ও লাঞ্ছিত হতাম না।
কথা হলো, একটি জাতির হাত থেকে ক্ষমতার লাগাম ছুটে গেলে অথবা তারা তাদের রাজনৈতিক স্বকীয়তা ও কর্তৃত্ব হারিয়ে ফেললে তারা কি একেবারেই ধ্বংস হয়ে যায়? এর জন্য কি তারা ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়? তাদের কি আর কিছুই করার থাকে না? সুইজারল্যান্ড এমন একটি রাষ্ট্র যারা কখনও কোনো যুদ্ধে জড়ায়নি। উপনৈবেশিক শক্তি হিসেবে নিজেদের জাহির করেনি। অন্যের সম্পদ কুক্ষিগত করে কখনও নিজেদের কোষাগার সমৃদ্ধ করেনি। তারপরও তো সুখ, স্বাচ্ছন্দ, বিলাসিতা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক থেকে সুইজারল্যান্ড পৃথিবীর অন্যতম একটি সুখি রাষ্ট্র। জাপানের হিরোশিমা ও নাগাশাকিতে পারমানবিক বোমা হামলার পর কেউ কি ভেবেছিল যে, জাপান আবার মাথা তুলে দাঁড়াবে! অথচ সেই বিধ্বস্ত ও পর্যদুস্ত জাপানিরাই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার করে নিজেদেরকে উন্নতির স্বর্ণশিখরে নিয়ে গেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইসরাইল ও ইয়হুদি জাতি সারা বিশ্ব থেকে একঘরে হয়ে যায়। কারও সাথে তাদের কুটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু তারাও এটার ওপর হায় আফসোস করে হাত গুটিয়ে বসে থাকেনি। এই সম্পর্কহীনতাকে কাজে লাগিয়ে তারা তাদের আভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছে। তারপর সেগুলোর সমাধান করে আজ তারা সারা বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করছে। মাত্র ৬০ লাখ ইয়াহুদি ৭০০ কোটি মানুষের ওপর নিজেদের আধিপত্যের ছড়ি ঘুরাচ্ছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন অসংখ্য নজির আছে যেখানে একটি অধপতিত জাতি স্বমহিমায় ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজেদের অস্তিত্বের কথা জানান দিয়েছে। তারা অতীত নিয়ে পড়ে থাকেনি। কিন্তু আমরা কি সেখান থেকে শিক্ষাগ্রহণ করতে পেরেছি!
যদি ক্ষমতায় আরোহনই মুসলমানদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হতো তাহলে পৃথিবীর দুই তৃতীয়াংশ ভূখ- শাসন করার পর মুসলমানদের হাত থেকে ক্ষমতা ছুটে যাওয়ার পর অধ্যাবদি পৃথিবীর বুকে তাদের টিকে থাকার কথা ছিল না। ইসলাম ও মুসলমানের বিরুদ্ধে এত ঘাত-প্রতিঘাত ও ষড়যন্ত্রের পরও তারা যে আজও একটি জাতি হিসেবে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে, এটা কোনো মামুলি ব্যাপার নয়। মুসলমানরা খেলাফত-বঞ্চিত হওয়ার পরও তাদের নির্মূল করতে কোনো কুটকৌশল কাজে আসেনি। একথা মনে রাখা উচিত, আমরা যদি রাজনীতির মাঠের পাকা খেলোয়াড় নাও হই তবুও আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য এতটাই সতেজ ও সমৃদ্ধ যে, ইচ্ছা করলে আমরা আবারও মৃতপ্রায় মানবতাকে জাগিয়ে তুলতে পারি। তাতে প্রাণ সঞ্চার করতে পারি। কিন্তু এর জন্য পূর্বশর্ত হলো, আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যকে আগে প্রাধান্য দিতে হবে। সেটা কোনোভাবেই এড়ানো যাবে না। যদি ক্ষমতাই সবকিছু হতো তা হলে স্পেন, তুরস্ক, মিশর এবং আমাদের হিন্দুস্তানে মুসলমানদের হাত থেকে ক্ষমতা চলে যাওয়ার পর আমাদের নাম-নিশানা এবং অস্তিত্বও টিকে থাকত না। ইতিহাস থেকে শিক্ষাগ্রহণ করার জন্য মুদ্রার দুই পিঠই আমাদের সামনে আছে। সারা বিশ্বকে উন্নতি, অগ্রগতি এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতির পথ দেখানো বিভিন্ন দেশ ও জাতির অধপতনের দিকে দৃষ্টিপাত করলে খুব সহজেই এর সমাধান বের হয়ে আসবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুসলিম উম্মাহ


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ