পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : মুসলিম উম্মাহর অস্তিত্ব উন্নয়ন ও অগ্রগতি সম্পর্কীয় বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে দেশের আলেম উলামা, পীর-মাশায়েখের ঐক্যবদ্ধ হওয়া সময়ের দাবি হলেও কাক্সিক্ষত বিষয়ে তাদের ঐক্য তেমন দেখা যায় না। এদিক দিয়ে গত ১০ ডিসেম্বর হাটহাজারিতে অনুষ্ঠিত উলামা সম্মেলন ছিল ব্যতিক্রম। এতে দীর্ঘদিন যাবত বিচ্ছিন্ন মেরুতে অবস্থানকারী আলেম নেতৃবৃন্দ হঠাৎ করেই যেভাবে কথিত ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেলেন তা মূলত দেশ ও জাতির জন্য এক অশনিসংকেত ছাড়া আর কিছু নয়। গতকাল ইনকিলাবে প্রেরিত এক বিবৃতিতে তওহীদি জনতা বাংলাদেশের যুগ্ম আহ্বায়ক মোসাদ্দেক বিল্লাহ এসব কথা বলেন। তিনি হেফাজতে ইসলামের আমির, হাটহাজারি মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা আহমদ শফীর সভাপতিত্বে মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদ, মাওলানা আবদুল হালীম বোখারী প্রমুখের বৈঠক এবং কিছু প্রমাণিত ধর্ম ও সমাজবিরোধী আলেমের সমন্বয়ে কওমী মাদরাসা সনদের স্বীকৃতি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সংবাদে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, শাহবাগে গমনকে যিনি তার জীবনের সেরা পুণ্যময় কাজ বলে মন্তব্য করে, ১৬ কোটি মানুষের ঘৃণা ও ধিক্কার কুড়িয়ে, এক অবাঞ্ছিত ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেনÑ তাকে সাথে নিয়ে আল্লামা শফী ঈমানদার জনগণের কী স্বার্থ উদ্ধার করবেন তা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। যেসব দালাল আল্লামা শফীর দস্তখত নকল ও তার নামের অন্যায় ব্যবহার করে কওমী কমিশনের নামে প্রতারণা করল, যারা আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখের বিরুদ্ধে গিয়ে নাস্তিক-মুরতাদ চক্রের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে অভিশপ্ত দরবারি আলেম সাব্যস্ত হল, তারা কি হাটহাজারি গিয়ে আল্লামা শফীসহ দেশের শীর্ষ আলেমদের সামনে ভুল স্বীকার করে, জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে আল্লাহর কাছে তওবা করেছে ? যদি না হয় তাহলে এদের সাথে নিয়ে কিসের ঐক্যবদ্ধ কমিটি আর সরকারের সাথে কিসের লিয়াজোঁ কমিটি হল ? কারা কোন অধিকার বলে শাহবাগ ও শাপলা চত্বরকে একাকার করে দিল ? অসংখ্য শহীদের রক্ত, লাখো মানুষের কষ্ট, ঘাম ও সংগ্রাম আর ধর্মপ্রাণ কোটি মানুষের আহাজারি আর চোখের পানিকে তারা কী মূল্য দিলেন। আল্লামা শফী কি করে নাস্তিক-মুরতাদদের আস্থাভাজন ইমাম ও পছন্দের আলেম ফরিদউদ্দিন মাসুদ গং-এর সাথে হাত মিলাতে পারলেন। বিপরীত দুই মেরুর আলেমরা কোন নেপথ্য শক্তির ইংগিতে কোন উদ্দেশ্যে এক হয়ে যাচ্ছে, ধর্মপ্রাণ জনগণ তাও জানতে চায়। শীর্ষ আলেমরা অতীতে ঈমানী আবেগ নিয়ে জাতিকে যত কথা বলেছেন, যত উদ্বুদ্ধ করেছেন সবই কি তাহলে মিথ্যা ? শাপলা চত্বরে ভীত সন্ত্রস্তÍ মজলুম মানুষের কষ্ট ও জীবনদান, অগণিত মানুষের রক্ত, ঘাম, অশ্রু ও হাহাকার পেছনে ফেলে আল্লামা শফী এবং তার উপদেষ্টা ও সহকর্মীরা কোন হাতের ইশারায় তাদের চির আদর্শিক প্রতিপক্ষের সাথে হাত মিলালেন। কোন শক্তির কলকাঠিতে ‘বাঘে-মোষে এক ঘাটে পানি খাওয়ার’ পরিবেশ তৈরি হল তওহীদি জনতা তাও জানতে চায়।
বিষয়টি নিয়ে আরো কিছু ব্যক্তি ও সংগঠন বিবৃতি দিয়েছেন। অনেকেই ইনকিলাবকে দুই বিপরীত মতাদর্শের আলেমদের ঐক্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে নেপথ্যের সব কাহিনী নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের অনুরোধও করেছেন তারা। ইনকিলাব এ বিষয়ে বিশদ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করবে। এ পর্যায়ে কথা হয় রাজধানীর বিশিষ্ট আলেম ও খতীব, মুফাসসিরে কোরআন মাওলানা কামাল উদ্দিন গাজীর সাথে। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, আল্লামা আহমদ শফী আমাদের সকলের মুরব্বী, তিনি কেন কী করছেন তা সঠিকভাবে না জেনে আমাদের মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে ১০ তারিখের বৈঠকের বিস্তারিত বিবরণ আমরা এখনও পাইনি। শুনেছি, সরকার ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তত্ত্বাবধানেই দীর্ঘদিন ধরেই শাহবাগ ও শাপলা চত্বরের দূরত্ব ঘোচানোর চেষ্টা চলছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্ট, হেফাজতে ইসলাম এখন সম্পূর্ণরূপে সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কওমী মাদরাসাও সরকারের আওতায় নেয়া হবে। দেশের আলেম-উলামা ও তওহীদি জনতাকে আল্লামা আহমদ শফীর মাধ্যমে সরকার তাদের সমর্থক বানাতে চাইছে। কওমী মাদরাসাগুলোও সরকার তার আয়ত্তে নেয়ার জন্য আল্লামা শফীর মাধ্যমে বিপরীত মেরুর সব আলেমকে ঐক্যবদ্ধ করে আগামী নির্বাচনের মাঠ সমান করার কাজে নিয়োজিত করতে চাইছে। এ যোগাযোগগুলো তদারক করছেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগের ধর্ম সম্পাদক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে দায়িত্ব প্রাপ্ত কিছু ব্যক্তি। বেফাক ও হেফাজতের কিছু দায়িত্বশীলের সাথে আমরা কথা বলে জানতে পেরেছি ৬ এপ্রিল, ২০১৩’র পর থেকে গত তিন বছর ঈমানী আন্দোলন তথা নাস্তিক-মুরতাদবিরোধী গণজাগরণের গোটা বিষয়টিকে পুঁজি করে হেফাজতের এক শ্রেণীর লোক নিজেদের পকেট ভারী করেছে। দফায় দফায় কর্মসূচি দেয়া ও স্থগিত করা, মামলা খাওয়া ও রেহাই পাওয়া, সরকারী নানা কর্তৃপক্ষ ও সংস্থার কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা নেওয়া ইত্যাদি কাজ খুব নিপুণ ভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। এসব নিয়ে মিডিয়া একসময় সোচ্চার থাকলেও বর্তমানে অনেকটাই নীরব। বলা হয়, আল্লামা শফীর খুব কাছের লোকেরা নানাভাবে অর্থ সম্পদ ও সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে বর্ষীয়ান এ অভিভাবকের ব্যক্তিত্ব ও ইমেজের মারাত্মক ক্ষতি করে ফেলেছেন। সরকারী মহলেও এখন হেফাজত নেতার সে প্রথম দিককার ভাব-গাম্ভীর্য ও শ্রদ্ধাবোধ নেই। সরকারের এক ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও পুলিশের উপর মহল থেকে রাজধানীর শীর্ষ আলেমদের বৈঠকে মন্তব্য করা হয়েছে যে, আল্লামা শফীর লোকজনের পেছনে আমরা অনেক বড় বিনিয়োগ করে ফেলেছি। যার ফলে আন্দোলনের আর কোন পথ খোলা নেই। এসব প্রসঙ্গ হেফাজতের কেন্দ্রীয় ফোরামে তোলেন না কেন প্রতিবেদকের এ প্রশ্নের জবাবে মাওলানা জামালউদ্দিন গাজী বলেন, এ সবই ‘ওপেন-সিক্রেট’। আমরা শত সহস্র ছাত্র, ভক্ত আল্লামা শফীকে তার খোদাপ্রদত্ত জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার আসনেই আমৃত্যু দেখতে চাই। কিন্তু তার কাছের লোকেরাই যদি তাকে ছোট করে তখন আমাদের আর কী করার থাকে ? আল্লামা শফীকে তার কাছের লোকেরাই ডোবাচ্ছে। এ বিষয়ে বেফাক ও হেফাজতের মুরব্বীদের খোঁজ-খবর রাখতে হবে, খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে আল্লামা শফীর ইমেজ রক্ষায় ভূমিকা নিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে কওমী ইসলামী আন্দোলনের আহ্বায়ক শায়খুল হাদীস মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এই প্রতিবেদককে বলেন, ৬ এপ্রিল, ২০১৩’র পর থেকে আল্লামা শফীর যে আপসকামী ভূমিকা তার উপযুক্ত কারণ রয়েছে। তিনি নিজ প্রতিষ্ঠান, সন্তান ও সম্পদের সুরক্ষার পাশাপাশি দেশের ধর্মীয় পরিবেশ-পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্যই ‘সরকারের সাথে শত্রুতা নয়’ নীতি বেছে নিয়েছেন। কিন্তু তার উচিত ছিল ‘আন্দোলন ও সংগ্রাম’ নামক কঠিন কাজগুলো অতীত জীবনের মতই সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করা। হঠাৎ তিনি আন্দোলনে নামলেন, কিন্তু নেতাসুলভ সাহস দেখাতে পারলেন না। তিনি একজন নীতিবান আদর্শ ব্যক্তি, কিন্তু আল্লাহর পথে জীবন দেয়ার বা পদবী, সম্মান, সন্তান-সম্পদ ইত্যাদি কোরবানী করার মত সাহস তার নেই। তার সন্তান ও কাছের লোকদের উপরও তার নিয়ন্ত্রণ নেই। যে জন্য শাপলা চত্বর ট্রাজেডির পর থেকে তার ভূমিকা জাতিকে শুধু হতাশই করেছে। বর্তমানে তিনি যে শাহবাগী গ্রুপের সাথে একীভূত হয়ে কওমী মাদরাসার নিয়ন্ত্রণ ইসলাম বিদ্বেষী বিশ্বশক্তির হাতে তুলে দেয়ার পথে এগুচ্ছেন, এ নিয়ে জাতি তার অনুপুংখ ব্যাখ্যা আশা করে। সরকারের লোকজনের সাথে তার যে নিঃশর্ত গভীর সম্পর্ক এর ভিত্তি কী তা তাকেই স্পষ্ট করতে হবে। সরকার কি তার ১৩ দফা মেনে নিয়েছে ? সংবিধানে কি আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপিত হয়েছে ? তার দেয়া পাঠ্যসূচি সংশোধনের দাবি কি পূরণ করা হয়েছে? যদি জবাব নেতিবাচক হয়ে থাকে তাহলে তিনি কোন হিসাবে সরকারের এত প্রিয়ভাজন হয়ে গেলেন। সরকারও তার এতটা আস্থাভাজন কিসের ভিত্তিতে হল ? কোন নেপথ্য ইশারায় তার মাদরাসা ও অফিস এখন শাহবাগ ও শাপলা চত্বরের মিলনকেন্দ্র? শহীদের রক্ত ও আহতের কান্না কি এত দ্রুতই তার স্মৃতি থেকে মুছে গেল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।