পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রায় একদশক বন্ধ থাকার পর ২৭৩০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬৫১টি স্কুল, ৫৫৭টি মাদরাসা এবং ৫২২টি কারিগরি প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে জানা যায়। হাজার হাজার নন এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বছরের পর বছর ধরে এমপিওর জন্য আন্দোলন করছে। তাদের জন্য সুখবর যে, জমাট বরফ শেষ পর্যন্ত গলেছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী বিশেষভাবে ধন্যবার্দাহ। স্কুলের পাশাপাশি ৫ শতাধিক মাদরাসাকে নতুন এমপিওভুক্তির বিষয়টিও সরকারের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। অনেক অপেক্ষার পর প্রায় তিন হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি একটি দীর্ঘ অচলাবস্থা ভাঙ্গার শুভ সূচনা হিসেবে গণ্য হবে। এখনো প্রায় ৭ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও’র জন্য অপেক্ষা করছে। পর্যায়ক্রমে নির্ধারিত মানদন্ড ও নীতিমালা অনুসারে মানোত্তীর্ণ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই এমপিওভুক্ত হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে সরকার একটি এমপিওভুক্তির নীতিমালা ও গাইডলাইন প্রকাশ করেছে। বিশেষত: গ্রেডিং পদ্ধতি অনুসরণে গৃহিত এমপিও নীতিমালা বাস্তবায়নের ফলে এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে অপচয়-দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা অনেকটাই কমে আসবে বলে প্রত্যাশা করা যায়।
শিক্ষা মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। আমাদের সংবিধানে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য অবৈতনিক ও মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। নতুন শিক্ষানীতি অনুসারে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত উন্নীত করা হয়েছে। অতএব অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমনিতেই সরকারের স্বীকৃতি, অনুদানের আওতায় আসার কথা। যত্রতত্র যথেচ্ছভাবে গড়ে ওঠা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হবে, এমন দাবীও অবান্তর। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য মানদন্ড হিসেবে নীতিমালা ও গ্রেডিং পদ্ধতি অনুসরণের সরকারি সিদ্ধান্তের আওতায় অবশিষ্ট অপেক্ষমান হাজার হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হলে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিদ্যমান বৈষম্য, বিশৃঙ্খলা, অসন্তোষ অনেকটাই কমে আসবে । শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির সাথে একদিকে যেমন লাখ লাখ শিক্ষার্থীর মানসম্মত শিক্ষার অধিকারের প্রশ্ন জড়িত, অন্যদিকে হাজার হাজার শিক্ষকের কর্মসংস্থান ও উপযুক্ত পারিশ্রমিকের নিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে এসব শিক্ষক পরিবারের জীবনমান উন্নয়নে ইতিবাচক ভ’মিকা রাখবে। নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির মধ্য দিয়ে দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৩০ হাজার ৫৭৪টিতে। শিক্ষাখাতে সরকারের ব্যয় বছরে আরো কয়েক হাজার কোটি টাকা বাড়ল। এটাই স্বাভাবিক। দেশের জনসংখ্যা বাড়ছে জনপদের আকার বিস্তৃত হওয়ার সাথে সাথে জাতীয় বাজেটের আকারও ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে হিসেবে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি একটি চলমান প্রক্রিয়া।
দেরিতে হলেও সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নতুন এমপিওভুক্তির দ্বার উন্মুক্ত করেছে। এটা খুবই আশাব্যঞ্জক পদক্ষেপ। এখন প্রয়োজন শিক্ষার কাঙ্খিত মানোন্নয়নে উপযুক্ত উদ্যোগ গ্রহণ করা। গত চারদশকে দেশের শিক্ষাখাতের বাজেট ও শিক্ষার হার বাড়লেও শিক্ষার মানের ক্রমাবনতি ঘটেছে। প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রাজনৈতিক দলবাজি, দুর্নীতি, বৈষম্য, অস্বচ্ছতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। শিক্ষার মানহীনতার এটা অন্যতম কারণ। এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকদের শিক্ষার মান ও দক্ষতা বৃদ্ধির কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যে সব বেসরকারী ও নন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাবলিক পরীক্ষাসহ সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রমে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হচ্ছে, সে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এমপিওভুক্তি অথবা সরকারি অনুদানের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পুরনো ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নানা কারণে পিছিয়ে পড়ছে এবং বিশৃঙ্খলা ও মামলাবাজির শিকার হচ্ছে সে সব প্রতিষ্ঠানের সমস্যা নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একশ্রেণীর শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির নিয়োগ বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য, কোচিং বাণিজ্য এবং রাজনৈতিক দলবাজির সুযোগ বন্ধ করা না হলে শিক্ষার সামগ্রিক মানোন্নয়ন অসম্ভব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মান এবং এমপিও খাতে সরকার বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করলেও মানসম্মত শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ সম্পৃক্ত যুগোপযোগি শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়নে সরকারের উদ্যোগ অপ্রতুল। স্থানীয় কোন্দল ও রাজনৈতিক কারণে দেশের হাজার হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মামলাবাজির শিকার হচ্ছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত পরিচালনা পরিষদ না থাকায় শিক্ষকদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়না। শিক্ষার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদ্যমান সমস্যা নিরসনের পাশাপাশি অস্বচ্ছতা ও বৈষম্য দূর করতে উপযুক্ত নজরদারি বাড়াতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।