পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। একবার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে দেয়ার কিছু সময় পরই আবার দখল হয়ে যায় সেই জায়গা। চারদিনের মাথায় মাথায় সেখানে আবার অভিযান পরিচালনা করে দখলমুক্ত করে ডিএনসিসি। গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, দুইবার উচ্ছেদ করা সেই স্থান আবারও বেদখল হয়ে গেছে। পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের অংশ হিসেবে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেললাইনের দু’পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে টানা অভিযান পরিচালনা করছে রেলওয়ে। কিন্তু উচ্ছেদের পর পরই রেললাইনের দু’পাশ আবার দখল হয়ে যাচ্ছে। রেললাইন ঘেঁষে উঠছে দোকান, ঘরবাড়ি। গত মাসের শেষ সপ্তাহে মতিঝিল টিএন্ডটি কলোনির ভেতরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে বিটিসিএল। কয়েক দিনের মাথায় সেখানেও আবার নতুন করে ঘরবাড়ি তোলা হচ্ছে। এদিকে, রাজধানীর ফুটপাথ দিনে দখলদারমুক্ত করলে রাতের মধ্যেই আবার দখল হয়ে যায়। অথচ একটা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে গেলে দুই লাখ টাকার বেশি খরচ হয়। শুধু দুই সিটি কর্পোরেশনের নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযানের হিসাব ধরলে বছরে গুনতে হয় ২ কোটি টাকার বেশি। বিশেষ অভিযানে এই খরচ আরও বেশি। একইভাবে রেলওয়ে বা অন্যান্য সংস্থার অভিযানের খরচ আরও অনেক বেশি। অর্থাৎ এই উচ্ছেদ উচ্ছেদ খেলায় সরকার বছরে অর্ধশত কোটি টাকা গচ্চা দিচ্ছে। এর সাথে আছে উচ্ছেদকালে জনগণের ভোগান্তি ও হয়রানি। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ড. আবদুল মতিন ইনকিলাবকে বলেন, সরকার ইচ্ছা করলেই এই ‘উচ্ছেদ উচ্ছেদ খেলা’ বন্ধ করতে পারে। তিনি বলেন, যারা সরকারি জায়গা-জমি দখল করে ব্যবসা বা বসবাস করছে তারা হলো অভ্যন্তরীণ শরণার্থী। এরা পেটের দায়ে রাজধানীতে আশ্রয় নিয়ে জীবিকার তাগিদে একটা কিছু করছে। এদেরকে ব্যবহার করে কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা চুটিয়ে ব্যবসা করছে। হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। টাকার জোরে এরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে রেখেছে। যে কারণে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করার পর আবার তারা একই জায়গা দখল করার সাহস করছে। এটা বন্ধ করতে হলে সরকারকে কঠিন হতে হবে। সরকার যদি মনে করে অবৈধ দখলদারদেরকে আর দখল করতে দেয়া হবে না; তবে তা যে কোনো ক্ষেত্রে সম্ভব।
উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীতে যে কোনো উচ্ছেদ অভিযানে কমপক্ষে দুটো ভেকুর প্রয়োজন হয়। একেকটা ভেকুর ভাড়া ভ্যাটসহ ৬০ হাজার টাকা। বড় ধরনের অভিযানে কমপক্ষে ৩০ জন শ্রমিক নিতে হয়। যাদের জনপ্রতি মজুরি দিনে ৬শ’ টাকা। এদেরকে আবার দুপুরের খাবার ও দুই বোতল পানি সরবরাহ করতে হয়। এ ছাড়া অভিযানের জন্য শ’দুয়েক পুলিশ সদস্যের প্রয়োজন হয়। এদেরকেও দুপুরের খাবার ও দুই বোতল করে পানি সরবরাহ করতে হয়। শুধু তাই নয়, পুলিশ সদস্যদেরকে রাজারবাগ পুলিশ লাইন থেকে আনার দায়িত্বও অভিযান পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের। অর্থাৎ পুলিশ সদস্যদেরকে আনা নেয়ার ভাড়াও বহন করতে হয়। একজন ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, এই খরচ হিডেন হিসেবে দেখা হয়। সব কিছু মিলিয়ে একেকটা উচ্ছেদ অভিযানে প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়। দুই সিটি কর্পোরেশন মিলে মাসে কমপক্ষে চারটি অভিযান পরিচালিত করে। এতে বছরে তাদের খরচ হচ্ছে ২ কোটি টাকা। তবে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হলে বছরে অভিযানের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। একইভাবে রেলওয়ে, গণপূর্তসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ অভিযান মিলিয়ে বছরে কমপক্ষে অর্ধশত কোটি টাকা খরচ হয়। যেহেতু উচ্ছেদের পরপরই আবার সেই জায়গা দখল হয়ে যায় তাই সেটাকে গচ্চা হিসাবেই দেখা হয়।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর কাওরান বাজারে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। খোদ ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে যেসব জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে দেয়া হয়েছিল, দিন দুই গড়াতেই সেগুলোও পুনর্দখল হয়ে যায়। দুদিন পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর কাওরান বাজারের একই স্থানে ফের অভিযান পরিচালনা করে ডিএনসিসি। অবশ্য ওইদিন পুনঃউচ্ছেদের পাশাপাশি নতুন কিছু অবৈধ স্থাপনাও উচ্ছেদ করা হয়। গতকাল শুক্রবার সেই স্থানে গিয়ে দেখা গেছে, দুইবার উচ্ছেদ করা কাওরান বাজারের বেশির ভাগ জায়গা আবারও দখল হয়ে গেছে। ফুটপাথ ও রাস্তা মানুষ ও যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হলেও এখন সে স্থানে মালামাল রাখা হয়েছে। কোথাও কোথাও দোকান বা ঝুপরি ঘর তোলা হয়েছে। একই চিত্র দেখা গেছে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে রেললাইনের দু’পাশে। গোপীবাগ রেলগেটের আশপাশের এলাকায় আবার বেদখল হয়ে গেছে। জুরাইন রেলগেটের কাছে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি দোকান। এ ছাড়া রেললাইন ঘেঁষে গড়ে ওঠা যে সব বাড়িঘর উচ্ছেদ করা হয়েছিল সেগুলোর পরিবর্তে ঝুপরি ঘর তোলা হয়েছে। রেলওয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নজরুল ইসলাম গতরাতে ইনকিলাবকে বলেন, প্রয়োজনে আবার সেগুলো উচ্ছেদ করা হবে। উচ্ছেদে খরচ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটা উচ্ছেদ অভিযানের প্রস্তুতির জন্য অনেক আগে থেকে পরিশ্রম করতে হয়। সাথে লাখ লাখ টাকা খরচ তো আছেই। এক সাথে দুইশ’ পুলিশ পাওয়া যেমন কষ্ট তেমনি শ্রমিক পাওয়াও কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
একই জায়গায় উচ্ছেদ, তারপর দখল এবং আবার উচ্ছেদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা বন্ধ করা উচিত। কিভাবে বন্ধ করা যায় সেটা ভাবার সময় এসেছে।
এদিকে, উচ্ছেদ উচ্ছেদ খেলা নিয়ে নগরবাসীরও ক্ষোভ কম নয়। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আবুল হায়াত বলেন, উচ্ছেদ অভিযানের কারণে সড়ক বন্ধ করে রাখা হয়। জ্যামে বসে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কাওরান বাজারে কিছুদিন আগে একবার উচ্ছেদ করলো। দুই দিন পর আবার একই স্থানে উচ্ছেদ অভিযান। তাহলে আগের দিন যে উচ্ছেদ করলো সেগুলো আবার দখল হলো কিভাবে? আমিনুল ইসলাম নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, একবার উচ্ছেদের পর আবার দখল হচ্ছে আর সেটি উচ্ছেদে আবার অভিযান হচ্ছে। এতে তো সিটি কর্পোরেশনের লোকবল এবং সরঞ্জামাদির পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ও হচ্ছে। এই টাকা তো সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় হচ্ছে। আমার মতো অনেকের ট্যাক্সের টাকা। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে সিটি কর্পোরেশন কঠিন কোনো পদক্ষেপ নেয় না। কাউকে জেল বা জরিমানা তো করতে শুনলাম না। অবৈধ দখলদারদের কাউকে জরিমানা করলে তো এই টাকা উঠে আসতো। জেল দিলে হয়তো কেউ আর বসতো না। আসলে এটা তাদের নিজেদের মধ্যে একধরনের খেলা। প্রশাসনের লোকেরাই অসদুপায়ে তাদের বসায়। আবার তারাই উঠিয়ে দেয়। মাঝে কষ্ট হয় আমাদের মতো সাধারণ নাগরিকদের।
সিটি কর্পোরেশনের জায়গা দীর্ঘদিন অবৈধ দখলে থাকার ব্যর্থতা কর্পোরেশনের কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, এর দায় শুধু একা সিটি কর্পোরেশনের নয়। এর জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ব্যবসায়ী নেতারা দায়ী। যতবার দখল হবে ততবার উচ্ছেদ হবে।
তবে বারবার উচ্ছেদে সরকারি অর্থ ব্যয় হচ্ছে। কোনো স্থায়ী সমাধান কেন করা হচ্ছে না- এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসির ৫ নং অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (আনিক) মোহাম্মদ মাসুদ হোসেন বলেন, একবার উচ্ছেদের পর সেখানে পাহারা তো বসানো যায় না। তাই আবার বসে। অত লোকবলও নেই আমাদের। তাই কেউ কেউ হয়তো বসে পরে। তবে এটার এখন একটা স্থায়ী সমাধান হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। নগর ভবন থেকে একটি চিঠি পেয়েছি আমরা, যেখানে একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। এই কমিটির কাজ হবে উচ্ছেদ করা জায়গা যেন আবার দখল না হয়, তার তদারকি করা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।